সন্ধি হৃদয়ে হৃদয়ে পর্ব ৩৬

সন্ধি হৃদয়ে হৃদয়ে পর্ব ৩৬
লেখিকাঃ আসরিফা সুলতানা জেবা

একই সিরিয়ালে রাস্তার একপাশে দুটো রিকশার অবস্থান লম্বভাবে। অর্থাৎ একটার পশ্চাতে অপরটার স্থান। চালক দু’জনের মধ্যে একজন তাগড়া যুবক এবং আরেকজন বেশ বয়স্ক। চামড়া কুঁচকানো। নিঃশ্বাস টাও কেমন ভারী ভারী ঠেকছে মানুষ টার। দেহে কাঁপুনি ঈষৎ। তবুও পেটের ক্ষুধা, পরিবার সামলাতে সড়কে দিনরাত পরিশ্রম করে চলেছে। শ্রেয়ার অত্যন্ত কষ্ট হয় এসব চক্ষুগোচর হলে।

মনে মনে কত-শত বার ভাবে ওর যেদিন অনেক টাকা হবে এসব মানুষকে সাহায্য করবে। কেননা অভাব ও বুঝে। এতিমখানা থেকে স্কুল – কলেজে পড়ার খরচের ভার নিলেও কখনও অন্যান্য খরচের টাকা দেওয়া হতো না। ওই যে রাস্তার অন্য পাশে হাওয়ায় মিঠাইয়ের মেলা বসেছে, একটা সময় সেগুলো খাওয়ার জন্য দশ টাকাও ম্যানেজ করতে পারত না। থাকা,খাওয়া,পড়া সবই তো এতিমখানার অধীনে ছিল। কলেজে ওঠে মাদারের পারমিশনে দু একটা টিউশনি করত সেগুলো থেকে পাওয়া টাকাগুলো জমিয়েই রাখত। এক পয়সাও খরচ করতে গেলে কেঁপে উঠত বুক টা। ভাবনায় আসত -অকাজে, আলতু ফালতু শখ, আহ্লাদে টাকা নষ্ট করার মানে হয় না৷ মূলত পরিস্থিতিই আমাদের মনোভাব এমন করে তুলে। কিন্তু এখন ওর অভিলাষ জাগে ছু মে’রে একটা গোলাপি রঙের হাওয়ায় মিঠাই ছিনিয়ে আনতে। হলুদ আলোয় আরো মিষ্টি মিষ্টি লাগছে হাওয়ায় মিঠাইগুলো।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

প্রিয়ুর ডাকে দৃষ্টিভঙ্গ হয় শ্রেয়ার। কর্ণকুহরে আসে,
‘ স্যার কে বল আমরা রিকশায়-ই যাবো। ‘
নিমেষে চমকায় শ্রেয়া। ও এমনটাই বলবে বলবে ভাবছে। খোলা অম্বর এবং কৃষ্ণ মেঘপুঞ্জের নিম্নতলে চলবে রিকশা। সঙ্গে থাকবে অনুত্তেজিত, স্নিগ্ধ শীতল হাওয়া। উত্তাপে হাস ফাঁস প্রকৃতি কয়েক মিনিটে নিজস্ব রূপের পরিবর্তন ঘটিয়েছে। ঠান্ডা ঠান্ডা, নিরুত্তাপ পরিবেশ। ঘাড় টা আলতো ফিরিয়ে তাকায় অতীব প্রিয়তমের নিকট। তূর্য কানে মোবাইল ধরে রেখেছে। অনলাইন মাধ্যমে গাড়ি ভাড়া করার চেষ্টা। আঁচল আঁটকে যাবার সেই ঘটনার মিনিট খানেক পেরোয়। প্রিয়ু ও শ্রেয়াকে রিকশা থেকে নামিয়ে ইট পাথরের গঠিত ফুটপাতে দাঁড় করিয়ে রেখেছে তূর্য। চালক দু’জনের ভাড়া মিটিয়ে অস্থির মাখা কন্ঠে জানায়–‘ রিকশায় যাবে না। ‘

শ্রেয়া উপলব্ধি করে তূর্য সেই ঘটনায় অত্যন্ত গম্ভীর হয়ে পড়েছে। সমস্ত আদলে তীব্র ভয় শঙ্কার ছাপ। সামান্য একটু ব্যাপারে এত উত্তেজনা,ব্যগ্রতা মানুষ টার। বাসা থেকে সিদ্ধান্ত নিয়ে আসা হয় আজ ওরা রিকশায় ঘুরবে। ঘটনা টা হওয়ার পর তূর্য মতামত পরিবর্তন করে ফেলেছে। শ্রেয়া সোজা হয়ে প্রিয়ুকে থেমে থেমে,লজ্জাতুর কন্ঠে বললো,
‘ আমি যদি ওনার সাথে এক রিকশায় চড়ি,আপত্তি আছে তোর?মানে একা খারাপ লাগবে বাকি রাস্তা টুকু?’
প্রিয়ু মুখ কালো করে ফেললো। স্বরনালী বিষন্ন, বেদনামিশ্রিত,

‘ আয়ুশের কথা মনে পড়ে যাবে বেশি বেশি। ওর শূণ্যতায় পুড়ে ছাড়খাড় হয়ে যাবো। ‘
মনে মনে এটা নিয়েই সন্দেহাতীত ছিল শ্রেয়া। একা একা নিশ্চয়ই মনোক্ষুণ্ণ হবে মেয়েটার। সুতরাং নিজের কল্পনার জগত উচ্ছেদ করার চিন্তা ভাবনা করলো। চিকন ওষ্ঠযুগল ছড়িয়ে স্মিত হাসলো। বললো,
‘ আমরা এক রিকশায় যাবো। দেখি স্যার কে ম্যানেজ করতে পারি কিনা। ‘

‘ হুম। এক রিকশায় তুই আর ভাইয়া যাবি। আরেকটায় আমি আয়ুশকে কল্পনা করে দিব্যি নিঃশ্বাস ফেলবো। আহা!’
কথাটা বলে প্রিয়ু মিটমিট করে হাসলো। এতে যারপরনাই অবাক শ্রেয়া। এত রূপ বদলে দক্ষ এই মেয়েটা। তবে খারাপ নয়,বরাবরই মানুষকে বিমোহিত করে একেক সৌন্দর্যে,রূপে। শ্রেয়া ওর হাত টা শক্ত করে চেপে ধরে বললো,
‘ শুনেছি সুন্দর মনের মানুষ জীবসঙ্গী হিসেবে একজন ভালো মনের মানুষই পায়। প্রমাণও পেলাম। তুই ও আয়ুশ ভাই দু’জন হলেও মন এক। বুঝি না কিভাবে তোদের ঋণ শোধ করবো। উপায় বলে দিবি প্রিয়ু?’
‘ তুই যতবার হেসেছিস আমাদের ঋণ শোধ হয়ে গিয়েছে। ‘

তৎক্ষনাৎ শ্রেয়ার অবরুদ্ধ চাহনি। বিমূঢ় কন্ঠস্বর,
‘ মানে?’
প্রিয়ু গর্বিত কন্ঠে আওড়ায়–‘ তোকে ভালো রাখা,হাসিখুশি রাখার জন্যই তো এতকিছু। এতেই ঋণ শোধ হয়ে গেল। এখন জলদি যা৷ যদি ক্যাব চলে আসে?’
শ্রেয়া ভীরু ভীরু পায়ে হাঁটে। গতি নেই হাঁটায়। কদম ছোট্ট ছোট্ট। খুব বেশিই ধীরস্থ। তূর্য মোবাইল কান থেকে নামিয়ে পকেটে পুড়ে নেয়। শ্রেয়াকে আসতে দেখে কপালে ভাঁজ পড়ে। ললাট স্পর্শ করে ভ্রুঁ যুগল। প্রশ্নবিদ্ধ চাহনি নিক্ষেপ করে বলে উঠলো,
‘ কিছু বলবে?’

শ্রেয়া অতিকায় ছোট্ট নিঃশ্বাস মুক্ত করে নাকের দু ছিদ্র মাধ্যমে। বড্ড এলোমেলো ও দ্বিধান্বিত গলায় বলে,
‘ আমরা রিকশায় যাবো। প্লিজ গাড়ি নিষেধ করে দিন। ‘
তূর্য হ্যাঁ বা না কোনো বর্ণ উচ্চারণ করলো না। শ্রেয়া জিজ্ঞাসা সূচক দৃষ্টি মেলে রাখে ঠাঁই। সেকেন্ডে পল্লব অল্পস্বল্প কেঁপে ওঠে। চাতক পাখি হয়ে আছে সে উত্তরের অপেক্ষায়। তূর্য গম্ভীর স্বরে বললো,
‘ রিস্ক নিতে পারবো না। আমরা ক্যাবেই যাবো। ‘
শ্রেয়া দমলো না। বুঝানোর ভঙ্গিতে বলে উঠলো,
‘ আমি সতর্ক থাকবো স্যার। প্রিয়ুও রিকশায় যেতে চাইছে। প্লিজ। ‘
‘ তোমার নিজের খেয়াল না রাখলেও চলবে। কিন্তু আমার বউয়ের কিছু হলে একদমই চলবে না আমার। একটা কথাও না আর। ‘

ঝাঁঝালো কন্ঠে কথাগুলো বলে উঠলো তূর্য। শ্রেয়া মলিন মুখে আগের স্থানে ফিরে যেতে নিলে হাতে চাপ অনুভব করে। শ্রবণ হয় চিন্তিত স্বর-‘ আমার কাছে তুমি আমার মানসিক শান্তি শ্রেয়সী। ‘
অভ্যন্তরে ঢেউ গর্জে ওঠে। অত্যধিক নিয়ন্ত্রণ হারা তার গতি। শ্রেয়ার ভূ তলে কম্পন। মন জুড়ে শীতল স্রোত বহমান। একটা বাক্যে এত শান্তি! এত সুখ,গভীর ভালোবাসার মিশ্রণ! তাছাড়া আর কি কি আছে তাতে?হারানোর ভয়?ও তো কোনোদিন, কস্মিনকালেও ভাবে নি কেউ ওর আপন হবে,ওকে হারানোর চিন্তায় কাতর থাকবে। ভালোবাসা কি এমন হয়?গম্ভীর, রগচটা, বদমেজাজি মানুষটাকে নরম করে ফেলে,নিভিয়ে দেয় সেই মানুষের তেজস্বী প্রদীপ। তূর্য হাত ছেড়ে দিয়ে সমুখে এসে দাঁড়ালো। শ্রেয়া স্পষ্টত দেখতে পাচ্ছে কালো কুচকুচে মণিতে বিচলতা।
আরক্ত কপোলে এক হাত রাখে তূর্য। নিমেষে শ্রেয়ার নির্নিমেষ নেত্রের চাউনি নত হয়। নত মুখশ্রীতে গভীর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে তূর্যর চক্ষুদ্বয়। ঠান্ডা গলায় বললো,

‘ তোমার ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দুঃখও আমায় এখন কষ্ট দেয় শুভ্রপরী। মানুষ তার প্রিয়জনকে ভালো রাখতে কত কি করে। কিন্তু আমি আমাকে ভালো রাখতে তোমার ছোট ছোট দুঃখও নিজের নামে করতে নিতে প্রস্তুত। আমরা রিকশায়-ই যাবো। বউয়ের একটা ইচ্ছে যদি পূরণ না করতে পারি কেমন জামাই হলাম?চলো। ‘
মৃদু হাসলো শ্রেয়া। নিচু স্বরে বললো-‘ আমি আপনার সাথে যাবো।’
তূর্য যেন ভুল শুনলো। সঠিক কিনা যাচাই করতে প্রশ্ন করলো,

‘ কি?’
এ যাত্রায় একটুখানি গলা উঁচায় শ্রেয়া। ঠোঁটে লাজুক হাসি,
‘ আমি আপনার সাথে এক রিকশায় যাবো। ‘
‘ কিন্তু প্রিয়ু?’
‘ ও সামনের রিকশায় থাকবে। আমি ও আপনি পিছনের টায়। ‘

তূর্য আর কোনো কিছু বললো না। দাঁড়ানো রিকশা দু’টো ডাকলো ফের। ক্যাবকে নিষেধ করলো, এমনকি অনলাইনে ভাড়া পর্যন্ত মিটিয়ে দিল। আজ গাড়ি ছাড়া বের হয়েছিল ওরা। উদ্দেশ্য একটুখানি ঘুরাঘুরি। যথারীতি প্রিয়ু সামনের রিকশায় বসলো,শ্রেয়া পিছনের টায়। তূর্য ওর শাড়ির আঁচল টা এবার ভালোভাবে ঠিকঠাক করে দিয়ে বলে উঠলো,
‘ অপেক্ষা করো। আমি আসছি। ‘

ওকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে চলে গেল। কিন্তু শ্রেয়া নির্বাক হয়ে পড়ে কিয়ৎক্ষণ পর।
তূর্য হাতে পাঁচ টা হাওয়ায় মিঠাইয়ের প্যাকেট নিয়ে সোজা প্রিয়ুর কাছে যায়। ওর হাতে দু’টো প্যাকেট ধরিয়ে দিয়ে ফিরে আসলো শ্রেয়ার নিকট। তখনও বিস্ময়ের পর্যায়ে শ্রেয়া। তিনটা প্যাকেট ওর কোলে রেখে পাশে বসে পড়ে। দুই হাতের সাহায্যে রিকশার হুডি তুলে দিয়ে বললো,

‘ বউ একটু বেশি পাওনা,তাই বউয়ের ভাগে তার পছন্দের হাওয়াই মিঠাই তিনটা। ‘
‘ আপনাকে কে বললো আমার পছন্দের?’– শ্রেয়ার কন্ঠে অবাকতা।
তূর্য একটা প্যাকেট খুলে ওর হাতে ধরিয়ে দিল। নির্লিপ্ত অভিব্যক্তি তার- ‘ তোমার দৃষ্টি বলেছে।’
যতক্ষণে স্বাভাবিক হয় শ্রেয়া ততখানি সময়ে হাওয়ায় মিঠাই বাতাসের আলিঙ্গনে চুপসে ছোট আকার ধারণ করেছে। তূর্যর ইশারায় সেই ছোট অংশই মুখে নিয়ে নিল।
দু’টো দেহ পাশাপাশি। শাড়ির ভাঁজে ভাঁজে শিহরণ,বাতাসের স্পর্শ এটাই তো চেয়েছিল শ্রেয়া। সকল জড়তা কাটানোর প্রচেষ্টায় ও। মৃদু গলায় বলে উঠলো,

‘ স্যার!’
‘ বলো। ‘
শ্রেয়া বলার মতো কিছু খুঁজে পাচ্ছে না। ডেকেও ফ্যাসাদে পড়ে গেল। ওর নড়াচড়া দেখে তূর্য কোমরে হাত রেখে কাছে টেনে আনলো। ফিসফিস করে বললো,
‘ বলো না কেন?শরম লাগছে?ভাবছো,একটু রোমান্স করতে স্যারের সাথে এক রিকশায় উঠলাম অথচ উনি পাত্তাই দিচ্ছে না। ‘
শ্রেয়া ভড়কে গেল। সরব করে কিছু বলতে চাইলে তূর্য হুস করে ওঠে। আরো গাঢ় হয় গলার স্বর,
‘ আসলে আমার একটু না অনেকবেশি আদর করতে মন চাইছে তোমাকে। কিন্তু রাস্তাঘাট তো। তাই ধৈর্য্য সহকারে একটুই করবো। ‘

শ্রেয়া বুঝে ওঠার পূর্বেই অনাবৃত কোমর চেপে নিজের বুকের কাছাকাছি নিয়ে আসে তূর্য। কপালে ছুঁয়ে দেয় শুষ্ক ওষ্ঠদ্বয়। নাকেও স্পর্শ পড়ে সেই অঙ্গের। নিমীলিত চক্ষুদ্বয়ে তূর্যর বক্ষে এক হাত রেখে নিশ্চুপে অনুভব করে তা শ্রেয়া।
প্রিয়ু রিকশায় বসে আকাশের তারা গুণছে। জানে এটা অসম্ভব ব্যাপার তবুও ক্ষুদ্র প্রয়াস। আকস্মিক রিকশা থামতেই নজর সরিয়ে সামনে ফেলতে প্রস্তুত হয় ও। সাথে সাথেই রিকশা টা হেলেদুলে ওঠে। ধপ করে পাশে বসে কেউ। ঘাড় বাঁকাতেই দেহ পিছিয়ে যায় অনেকখানি। মুহুর্তেই আয়ুশ টেনে বুকে জড়িয়ে ধরলো। হেসে বললো,
‘ তোমার ভাঙা কোমর দেখতে আসি নি। আমার সুস্থ, নাদুসনুদুস প্রিয়ুকে দেখতে এসেছি। ‘
আয়ুশের বুকে জোরে জোরে নিঃশ্বাস ফেলছে ও। সমস্ত প্রকৃতি, মানুষ, দিকবিদিক ভুলে বুকে তীক্ষ্ন দাঁত বিধিয়ে দিল। এতে হাসির মাত্রা বেড়ে গেলো আয়ুশের।

‘ ভয়ে আমাকে কামড়ানো হচ্ছে? ‘
‘ হ্যাঁ। কখন আসলে?’
‘ সকালে যখন আমার প্রিয়ু আমাকে ফেলে আসলো তখন থেকেই কেমন দম বন্ধ হয়ে আসছিল। ভার্সিটি থেকে বেরিয়েই এখানে ছুটে আসা। কি করলে প্রিয়ু?এত বছরের জাদু এখন কাজ করছে একসাথে। তুমি দূরন্ত এক জাদুকরী। ‘

ঘুরাঘুরি শেষে তূর্য, শ্রেয়া ফিরে আসে। সঙ্গে প্রিয়ু,আয়ুশও। শ্রেয়া প্রথমে স্তব্ধ হয়ে যায় হুট করে আয়ুশ কে দেখে। পরবর্তীতে তূর্য জানায় এটা পূর্বপরিকল্পিত। ওরা সকালে আসার পরপরই নাকি আয়ুশ ফোন করে বলে সন্ধ্যা নাগাদ চট্টগ্রাম থাকবে ও। চমকে দেবে ওদের, বিশেষ করে প্রিয়ুকে। এত বছর ধরে যেই ভালোবাসা চেয়েছে প্রিয়ু তার চেয়েও বেশি পাচ্ছে বলে মনে হয় শ্রেয়ার। কারণ প্রিয়ুর চাওয়া ছিল সীমিত।

আয়ুশের একটু যত্ন,ওর সাথে কথা বলাতেই খুশিতে লাফিয়ে ওঠতো। কখনও হয়ত কল্পনায়ও আনে নি ওকে আয়ুশ একদিন পাগলের মতোন ভালোবাসবে। শাড়িটা এখনও পাল্টানো হলো না ওর। এই লাল পাড়ের সাদা শাড়ি টা তূর্যর দেওয়া। একা একটা ফ্ল্যাটে,নির্জনে দু’টো হৃদয় একসঙ্গে বসবাস করবে আজ। রাত টা অতিরিক্ত দীর্ঘ মনে হচ্ছে শ্রেয়ার। প্রিয়ু ও আয়ুশ পাশের ফ্ল্যাটে। তূর্য শোবার ঘরে। শ্রেয়া সোফায় বসে কানের ঝুমকো জোড়া খুলছিল তখনই মোবাইলের শব্দে টেবিলের উপর তাকালো ও। তূর্যর মোবাইলের স্ক্রিনে মেহরিমার নাম্বার ভেসে ওঠেছে। কিছু একটা স্মরণে আসতেই নির্দ্ধিধায় কলটা রিসিভ করলো ও। সালাম দিয়ে কন্ঠে নম্রতা এঁটে নেয়,

‘ কেমন আছেন আম্মা?’
ওপাশ থেকে কড়া আওয়াজ আসে,
‘ তুমি কেন ফোন ধরেছো?তূর্য কোথায়?’

‘ উনি অন্য রুমে। আসার সময় দেখলাম আপনার প্রেশার বেড়ে গিয়ে শরীর খারাপ হয়ে পড়েছিল। এখন ঠিক আছেন?’
‘ তোমার না জানলেও চলবে। কথা বলো না তো। তোমার কন্ঠ শুনে আমার মেজাজ গরম হচ্ছে। এত জেনে কি লাভ? ‘
‘ আজ যদি আমার মা থাকত তাহলে সন্তান হিসেবে আমি আমার মায়ের খবর নিতাম আম্মা। জিজ্ঞেস করতাম কেমন আছে। অসুস্থ থাকলে চিন্তা করতাম। মা নেই কিন্তু আপনি আছেন। শাশুড়ি হলেও আপনাকে আম্মা ডাকি। আমি কি আমার আম্মার ভালোমন্দ জানতে চাইতে পারি না?’

সন্ধি হৃদয়ে হৃদয়ে পর্ব ৩৫

মেহরিমার কন্ঠের তেজ হারিয়ে ফেললেন নিমেষে। কি মধুর মেয়েটার বলা বাক্যগুলো! মা’য়ের জন্য কতটা আকুলতা। ভিতরটা হিম হয়ে আসে ওনার। পারলেন না আর ধমকে উঠতে। নিভে যাওয়া স্বরেই বললেন,
‘ তূর্য আসলে কল দিতে বলো। ‘

সন্ধি হৃদয়ে হৃদয়ে পর্ব ৩৭