সিক্ত সুভানুভব পর্ব ২২

সিক্ত সুভানুভব পর্ব ২২
লেখনীতে:- নূরজাহান আক্তার (আলো)

আজকে সকাল আটটার দিকে রোদের ফ্রাইট,আলো খুব সকালে ঘুম থেকে ওঠে আর নামাজ পড়ে নেয়। তারপর নিচে গিয়ে ব্রেক ফাস্ট রেডি করে রোদকে ডেকে তোলে।রোদ উঠে সাওয়ার নিয়ে একবারে রেডি হয়ে নিচে নামে আর সবাই একসাথে ব্রেক ফাস্ট করে নেয়।রোদের আম্মু আলোর দিকে তাকিয়ে দেখে মনটা খারাপ করে বসে আছে,রোদের আম্মু রোদের আব্বুকে ইশারা করে কিছু বলার জন্য। রোদের আব্বু আলোর দিকে তাকিয়ে বলে,,

বাপিঃআলো মামনি তুমি যাও রোদেকে এয়ারপোর্টে পযন্ত রেখে এসো।
আলোঃনা বাপি আমি যেয়ে কি করবো?
রোদঃতাও ঠিক আলো যেয়ে কি করবে?শুধু শুধু কষ্ট করার দরকার নাই।আমি একাই যেতে পারবো সমস্যা নাই।
আম্মুঃ কষ্ট কিসের রোদ,আলো যা তুই রেডি হয়ে নে।তুই রোদকে এয়ারপোর্ট পযন্ত রেখে আয়।
আলোঃ হুমম।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

রোদ সবার থেকে বিদায় নিলো আর আলো আর রোদ বেরিয়ে গেলো,, রোদ আর আলো পাশাপাশি বসে আছে বাট আলো মন খারাপ করে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে,ড্রাইভারও এসেছে এজন্য ওরা পেছনের সিটে বসে আছে। রোদ কিছু বলছে না আলোর দিকে তাকিয়ে আছে, ওরা জ্যামে আটকে যায় আর ড্রাইভ রোদকে জিজ্ঞাসা করে।

ড্রাইভারঃস্যার বলছিলাম যে কয়টার মধ্যে আমাদের এয়ারপোর্টে পৌঁছাতে হবে,,,,।আর এয়ারপোর্ট যেতে তো এখনো সময় লাগবে এখানে তো প্রচুর জ্যাম লেগে গেছে,,
রোদঃতুমি এয়ারপোর্ট না তুমি আর একটু সামনে যে বাস স্ট্যান্ড আছে এখানে গাড়ি থামাও।
আলোঃকেন?বাস স্ট্যান্ডে গাড়ি থামাবে কেন?তোমার জন্য এখানে ফ্রাইটের ব্যবসথা করবে?
রোদঃ এত বোঝা লাগবে না তোমার, বেশি বুঝলে সমস্যা দেখা দিবে।

ড্রাইভার বাস স্ট্যান্ডে এসে গাড়ি থামায় আর রোদ ড্রাইভারকে চলে যেতে বলে।আলো এবার অবাক হয়ে রোদের দিকে তাকিয়ে থাকে,কারন ড্রাইভ চলে গেলে আলো বাসায় যাবে কি রে?রোদ এক হাতে ট্রলি আর অন্য হাতে আলোর একহাত ধরে সামনে দিকে এগোতে থাকে।আলো রোদের দিকে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করছে, যে আসলে রোদ কি করতে চাচ্ছে?আলো রোদের হাত টান দিয়ে ধরে রোদকে থামায় আর জিজ্ঞাসা করে,,

আলোঃএই তোমার সমস্যা কি?তুমি এয়ারপোর্টে না গিয়ে এখানে আসলে,,ড্রাইভার কে চলে যেতে বললে, আমি যাবো কি করে?আসলে কি করতে চাচ্ছো তুমি?আমাকে কি বলবে?
রোদঃ চুপ কোন কথা না,,, সব জানতে পারবে আগে চলো তো।

রোদ আলোর হাত ধরে টেনে একটা ভি আই বাসে উঠায় আর আলোকে বসতে বলে নিজেও বসে পড়ে, আলো এবার রেগে গিয়ে বলে,,
আলোঃরোদ এসব কি হচ্ছে?আমাকে কেন এখানে বসালে?
রোদঃ কারন তুমি আমার সাথে রাঙামাটি যাচ্ছো।

আলোঃ আমি যাচ্ছি মানে কি?বাসার কাউকে বলা হয় নি,আর এভাবে এক কাপড়ে যাবো কিভাবে,,, তুমি কি পাগল হয়ে গেলা রোদ।আর এয়ার টিকিট বাদ দিয়ে বাসের টিকিট আসলো কি করে?
রোদঃ ওরে আমার question এর জাহাজ,,এত হাইপার হলে চলবে না তো।বাসার সবাই জানে রে পাগলি তুমি আমার সাথে যাচ্ছো।
বাপি কালকে দুটো এয়ার টিকিট দিয়েছিলো, তোমার আর আমার আমি পরে সেগুলো ক্যাসেল করে বাসের টিকিট নিয়েছি কারন এয়ারে গেলে তো তোমার আমার এই প্রথম জার্নি টা মনে থাকার মত হবে না,এজন্য আমাদের প্রথম জার্নি টা আমি স্পেশাল করতে বাস জার্নিটা বেষ্ট বলে মনে করছি।যদিও আমি এসব কিছু জানতাম না কালকে রাতে তুমি রুম থেকে বের হওয়ার পর বাপি এসে আমাকে বলে আর আমি এয়ার টিকিট বাদ দিয়ে বাসের টিকিট কাটি।এবার তো বুঝলেন ম্যম,,
আলোঃ এই কথা গুলো আগে বললে কি হতো?আমি কাল রাত থেকে এক কষ্ট পাচ্ছিলাম।আমাকে কষ্ট দিয়ে খুব মজা পাও তাই না?
রোদঃআরে বাবা রে এখন কাঁদছো কেন?আমি তো দেখতে চেয়েছিলাম আমিকোথাও গেলে তুমি কি করো?যদিও আমার খুব ভালো লাগছিলো তোমার এমন বিরহে থাকাটা,,আমার বউটা যে এত বর পাগল হবে আমি তো ভাবতেই পারি নি।
আলোঃআপনি আসলেই অসভ্য।
রোদঃহুমম ধন্যবাদ।

ওরা বসার পাঁচ মিনিট পরেই বাস ছেড়ে দেয়,আলো ভাবেনি আলো এত বড় সারপ্রাইজ পাবে,আলো রোদের ফোনটা থেকে রোদের আম্মুকে ফোন দেয়, আর এমন সারপ্রাইজ দেওয়া জন্য ধন্যবাদ দেয়,আরো কিছু কথা হয় বউ শাশুড়ির মাঝে, আলো যে কতটা খুশি সেটা ওর মুখটা দেখে বোঝা যাচ্ছে, রোদের বাবা মা চায়নি ওদের আলাদা করতে কারন কিছুদিন আগে যেহেতু অনেক ভুল বোঝাবুঝির পালা শেষ করছে।আলো কথা শেষ করে আর রোদের ফোন দিয়ে রোদকে দিয়ে দেয় আর রোদের কাধে মাথা রাখে,রোদ আলোর আঙুলের মাঝে আঙুল রাখে,,।

আলোঃ অনেক অনেক ধন্যবাদ এমন সারপ্রাইজ দেওয়া জন্য, আর রাতের জার্নি বেশ ভালো, তাহলে দিনে জার্নিটা বেছে নিলেন কেন?
রোদঃ প্রথমত আমি তোমাকে রেখে আসতে চাই নি,কারন তোমাকে রেখে আসলে আমি কাজে মন বসাতে পারতাম না।আর দিনের জার্নি বেছে নিলাম কারন রাতে না হলে পাহাড় গুলো দেখতে পারবে না,এক কথায় সেগুলো তোমাকে দেখানোর জন্যই এই জার্নিটা করলাম আর রাতে করলে এগুলো মিস করতাম।
আলোঃ ওহহ বুঝেছি,আমি রাঙামাটি কখনো যায়নি এজন্য কোন ধারনা নেই।এটা জানি রাঙামাটি পাহাড়ি জায়গা,,,
রোদঃ হুমম রাঙামাটি অসম্ভব সুন্দর আর মনোমুগ্ধকর একটা পরিবেশ উপভোগ করার জন্য রাঙামাটি জায়গাটা পারফেক্ট।আমি বেশ কয়েকবার গিয়েছি আর আমি যেহেতু আছি এবার তোমাকে সবকিছু দেখানোর দায়িত্বটা আমার। যদিও প্রথম দুইদিন অফিসের কাজে বিজি থাকবো,,তার পর ফ্রী হয়ে বাকি আটদিন ঘুরাঘুরি,,,,
আলোঃহুমম আমি খুব excited কারন আমি এমন ভাবে জার্নি করি নি এর আগে, সিঙ্গাপুর ছিলাম ওখানে কিছু কিছু জায়গা চিনি কিন্ত বাংলাদেশে তেমন কিছুই চিনি না, কারন ছোট থেকে তো কষ্টের মাঝে বড় হয়েছি এত বিলাসিতা করার সাহস হয় নি।
রোদঃ আলো প্লিজ এসব কথা বাদ দাও না,এখন এসব মনে করে কষ্ট পেও না প্লিজ।
আলোঃ ওকে ওকে আর বলছি না,,,

ভি আই পি বাস এজন্য কোন গ্যাদারিং নেই,শা শা করে বাস চলছে আর আলো বাইরে দিকে তাকিয়ে আছে,আজকে আকাশটা খুব সুন্দর ভাবে সেজেছে, রাস্তা দিয়ে পাশ কেটে কত গাড়ি যাচ্ছে, আলো খুব মনোযোগ দিয়ে সেগুলো দেখে আর দেখতে দেখতে জানালার সাথে হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে,রোদ আলোকে নিজের দিকে টেনে ওকে আলোর মাথে ওর কাঁধে রাখে আর এক হাত দিয়ে আলোকে জড়িয়ে ধরে রাখে,,,আলো রোদের বুকে মাথা রেখে ঘুমাচ্ছে। রোদ সযত্নে আলোকে আগলে রেখেছে তার বাহুডোরে,,,রোদও সিটে হেলান দিয়ে নিজেও চোখ বন্ধ করে নেয়।

রোদ আর আলোর এমন ভালবাসার মত বেঁচে থাকুক, প্রতিটা ভালবাসার মানুষ গুলোর ভালবাসা, আগলে রাখুক তাদের ভালবাসা গুলো, প্রতিটা ছেলে মেয়ের মাঝে জন্ম নিক এমন হাজারো অনুভূতি, একটা মেয়ে জার্নি পথে নিশ্চিতে ঘুমাতে পারে কারন, তার পাশে যে কেউ থাকে তাকে সব কিছুর থেকে নিরাপদ রাখে এজন্য ,একটা ছেলে কাঁধে মাথে রেখে যতক্ষণই তার প্রিয় মানুষ টা ঘুমাক না কেন?কাধ ব্যাথা হলে গেলেও তাদের মুখে কোন অভিযোগ নেই,বরং তাদের মুখে আসে সেই প্রশান্তির হাসি।তারা অভিযোগ করে না এত ঘুমালে কেন?বরং তারা বলে ঘুম কেমন হলো?কোন ছেলে বলে না, উফ আমার কাঁধ ব্যাথা হয়ে গেলো এত সময় ঘুমালে কেন?বরং তারাই উল্টে বলে আর একটু সময় ঘুমিয়ে নিতে পারতে।এগুলো যদিও সবার ভাগ্যতে জোটে না তবে যাদের ভাগ্যতে জুটে তারা সৌভাগ্যবান বা সৌভাগ্যবতী।ছোট ছোট আবদার আর এই কেয়ার গুলো থেকে জন্ম নেয় ভালবাসা।আর প্রতিটা মেয়ের সপ্ন যে জার্নি পথে কারো কাঁধে মাথা রাখতে পারে,আর
বোরিং সময়টাকে তার সাথে থেকে মূল্যবান কিছু মূহুর্তে পরিনত করতে,,,

রোদ ১ ঘন্টার মত ঘুমায়, আর বাসের ঝাকুনিতে ঘুম ভেঙে যায়। রোদ আলোর দিকে তাকিয়ে দেখে আলো এখনও ঘুমাচ্ছে, রোদ একগাল হেসে আলোকে ডাকতে থাকে,আলো চোখ না খুলে রোদকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়ে,রোদ আশেপাশে তাকিয়ে দেখে সবাই যে যার মত বিজি হয়ে আছে,হঠাৎ করে পাশের একটা সিটে রোদের চোখ যায় আর দেখে একটা বাচ্চা মেয়ে ওদের দিকে তাকিয়ে আছে,রোদ দুষ্টুমি করে ভ্রু নাচিয়ে বাচ্চাটাকে ইশারাতে জিজ্ঞাসা করে কি দেখছে?বাচ্চাটা একটা হাসি দেয়,,,।বাচ্চাটা ওর বাবার কোলে বসে আছে ওর বাবা সিটে হেলান দিয়ে ঘুমাচ্ছে পাশে ওর মা ওর বাবার কাঁধে মাথা রেখে ঘুমাচ্ছে। তবে বাচ্চাটা কাঁদছে না শুধু রোদের দিকে তাকিয়ে আছে।,,,,

সিক্ত সুভানুভব পর্ব ২১

রোদঃএই পিচ্চি কি দেখছো,?তোমার নাম কি?
পিচ্চিঃআমি তোমাতে দেকতি,,,আল আমার নাম ওহী
তোমাল নাম তি(কি)?আল তোমাল পাশে ওটা তে?(কে)
রোদঃবাহ্ খুব সুন্দর নাম তোমার।আর আমার নাম রোদ,,,,
পিচ্চিঃওই তা তি তোমাল বুউ(বউ),
রোদঃহুমম ওটা আমার বুউ।
পিচ্চিঃতোমাল বুউ তো কুব সুন্দল,একদম আমাল মতো সুন্দল,,
রোদঃতাই নাকি,,তুমি আমার বউয়ের থেকে অনেক সুন্দর মামনি,,,,
পিচ্চিঃধুন্যবাদ আনতেল,,,

আলো ওদের কথা শুনে চোখ মেলে তাকায়, পিচ্চি টা আলোকে একটা মিষ্টি হাসি দেয়।

সিক্ত সুভানুভব পর্ব ২৩