সিক্ত সুভানুভব পর্ব ২৩

সিক্ত সুভানুভব পর্ব ২৩
লেখনীতে:- নূরজাহান আক্তার (আলো)

আলোর আর রোদ পিচ্চিটার সাথে কিছুসময় কথা বলে,তার বেশ কিছুক্ষন পরে ফেনীতে গিয়ে একটা রেস্টুরেন্টের সামনে গাড়িটা থামায়।আলো আর রোদ নামে গাড়ি থেকে, রোদ আলোকে নিয়ে রেস্টুরেন্টের ভেতরে ডুকে আর ওয়াশরুমে গিয়ে চোখ মুখে পানি দিতে বলে,,তারপর ওরা দুজন ফ্রেস হয়ে এসে একটা টেবিলে বসে আর খাবার অর্ডার করলো,আলো রোদের দিকে তাকিয়ে আলোর ওড়না এগিয়ে দেয়, কারন মুখ ধুয়ার পর মুখ মুছেনি রোদ। রোদ হেসে ওর ওড়না দিয়ে মুখ মুখে নেয়,ওয়েটা এসে ওদের ফ্রাইড রাইস আর চিকেন ফ্রাই,পিস ফ্রাই, সালাড আর আলোর জন্য আইসক্রিম আর একটা স্প্রাইট দিয়ে যায়। রোদ আলোকে খেতে বলে আর নিজের স্পুন দিয়েই আলোর মুখে খাবার তুলে দেয়, আর নিজেই একবার খাবার মুখে নেয়।বাট রোদ খাবার মুখে নিয়ে চিবানোর আগেই,আলো রোদের দিকে তাকিয়ে বলে,,,

আলোঃরোদ তোমাকে আজ কিছু সত্যি কথা বলবো,যদিও আমরা মেয়েরা কথা গুলো মানতে বা মুখে শিকার করতে চাই না।তারপরেও তোমাকে বলতে চাই,,,,,
রোদঃহুমম বলো,তবে আগে খাওয়া শেষ করে নেয়।
আলোঃনা আমি খেতে খেতেই বলবো,,
রোদঃহুমম বলো,,
আলোঃআমরা মেয়েরা যেমন মায়াবতী হয়,তেমনি ছেলেরাও তেমন মায়াবতা হয়,,,সেটা কি জানো?
রোদঃ মায়াবতা এটা আবার কেমন শব্দ,নতুন আমদানি করা মনে হচ্ছে, আর জানি না তো যে ছেলেরা মায়াবতা হয়?
আলোঃমেয়েরা যদি মায়াবতী হয়,তাহলে ছেলেরা মায়াবতা হবে না কেন?মায়াবতা পুংলিঙ্গ,,,,,না জানলে এবার জেনে নিন।
রোদঃআরে ব্যস তাই তো,,,এভাবে তো ভাবা হয়নি ,তারপর বলো কি দেখে ছেলেদের মায়াবতা উপাধিটা দিলে,,, শুনি(খেতে খেতে)
আলোঃযেমন ধরেন, ইনোসেন্ট ফেস,
শান্ত চোখের তাকিয়ে মন ভুলনো হাসি, ফর্সা পায়ে পানিতে লেপ্টে যাওয়া পশম,মুখে পানির ছিটা দেওয়া পর ভেজা থাকা চোখের পাপাড়ি,সাওয়ারের পর চুল গুলো যখন কপালের সাথে লেপ্টে থাকে তখন,আর খোঁচা খোঁচা দাড়ি,ঘুমন্ত মুখ,নামাজে যাওয়ার আগে সাদা চওড়া টুপি পড়া অবস্থায়,,,,এই সময় গুলোতেও একটা ছেলেকে মায়াবতা লাগে।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

রোদঃ ওরে বাবা এই প্রথম শুনলাম যে ছেলেরা মায়াবতী ওহ সরি মায়াবতা হয়।তুমি যেগুলো বললে এগুলোকে মোহনীয় লাগে মে বি ,বাট মোহনীয় বলতে পাচ্ছেন না এজন্য মায়াবতা বলে চালিয়ে দিচ্ছো।
আলোঃওই একই কথা যা লাউ তাই কদু,আর এভাবে হাসবেন না তো।আমি ভুল কি বলছি?
রোদঃতুমি তো বললে তো সত্যি বলবে এখন দেখছি মোহনীয় বলতে লজ্জা পাচ্ছো এজন্য মায়াবতা বলে চালিয়ে দিচ্ছো।
দাড়াও আগে হেসে নেয়।
আলোঃআর কিছু বলবো না অামি,,সব সময় মজা নেন।
রোদঃওকে ওকে আর হাসবো না, পাগলি রে তুমি আমাকে ভালবাসো, এই সময় গুলো তুমি আমাকে খুব মনোযোগ দিয়ে পযবেক্ষণ করছো তাই তোমার ভালো লাগছে,,,,জানো তো সবার কাছে এসব ধরা পড়ে না,সবাই যেমন মায়াবতী কি বুঝে না, তেমনি সবাই তোমার ভাষায় মায়াবতার দের ও খুজে পায় না,এসব আমাদের দৃষ্টিভঙ্গির সব নির্ভর করে। তবে আমিও আজ নতুন কিছু শিখলাম।তাহলে আমিও মায়াবতাদের মধ্যে পড়লাম।
আলোঃ এজন্য তোমাদের কিছু বলতে নেয়, সব সময় মজা করো,,ভালো কথা বললোও দোষ আবার না বললে বলো মেয়েরা প্রশংসা করতে জানে না।
রোদঃওকে ওকে রাগ দেখাতে হবে না,তুমি যা বলছো সেটাই মেনে নিলাম অামি,এভাবেই বা কতজন ভাবতে পারে।আচ্ছা হাসবো না তো কি করবো বলো, তোমাদের মেয়েদের মত লজ্জা পাবো?আলোমনি তোমার প্রতিটা কথা শুনে ভাল লাগলো কেন জানে?কারন তুমি আমাকে এভাবে মন থেকে ফিল করছো, তারপর এসব বলছো?বাট সবাই এসব বুঝে না,,,, আমি সত্যি লাকি।
আলোঃহুমমম! বলেই বাঁশ খেলাম।

৩০ মিনিটের জন্য বাস থেমেছিলো, এখন আবার যে যার মত করে আবার গিয়ে সিটে বসে পড়ে।রোদ পানি সহ আরো বেশ কয়েক রকমের খাবার প্যাক করে নিলো,তারপর আবার গাড়িতে বসে।আবার বাস চলতে শুরু করে,রোদ কানে ইয়ারফোন গুজে দেয়,আর সিটে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে থাকে,আলো সেটা দেখে একটান দিয়ে রোদের কান থেকে ইয়ারফোন খুলে নেয়।রোদ চোখ খুলে আলোর দিকে তাকায়, আলো হেসে রোদের দিকে তাকিয়ে বলে,,-,,,

আলোঃ আমাকে আপনি এখন রাঙামাটি সম্পর্কে কিছু বলেন। যেখানে যাচ্ছি সেই জায়গা নিয়ে কিছু জেনে রাখা ভাল, তাই এখন আপনি বলবেন।
রোদঃতোমরা মেয়েরা এত হিংসুটে কেন?
আলোঃকেন?আমরা মেয়েরা তোমার কোন কাঁচা ধানে মই দিয়েছি শুনি?
রোদঃনিজে নাক ডেকে ঘুমালে যেই আমি একটু ঘুমানোর জন্য সিটে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করছি,ওমনি তোমার এখন এত এত আবদার তাই না।আমাদের মত নিষ্পাপ ছেলেদের ঘুমাতে না দিলে কি সুখ পাও তোমরা?
আলোঃ আচ্ছা থাক বলতে হবে না,,শুনবো না।আপনি বেশি বেশি করে ঘুমান।
রোদঃ আচ্ছা থাক আর রাগ দেখাতে হবে না,,বলছি তার আগে আমার দিকে আরো চেপে এসে বসো,যাতে মাঝখানে বিন্দু পরিমান জায়গা না থাকে,,কারন এখন আমাদের মাঝে এক বিন্দু পরিমান জায়গা ফাকা থাকে তাহলে শয়তান এসে আমাদের মাঝে ঝগড়ার সৃষ্টি করবে,,বাট আমি সেই সুযোগ দিবো না।

আলো সরে এসে সিটের মাঝখানে হাতল তুলে দেয়,আর রোদের শরীর ঘেষে বসলো আর রোদ বলতে শুরু করলো,কারন এখন আলোকে গল্পের মাঝে রাখলে ও বোরিং ফিল কম করবে এমনিতে লং জার্নি এখনো বেশ কয়েক ঘন্টার পথ বাকি, এজন্য রোদও আলো দিকে ফিরো বসে আর গল্প বলতে থাকে,,,

রোদঃআজকে কামিজ পড়ে বের হয়েছো এটাই বেটার হয়েছে কারন লং জার্নিতে শাড়ি পড়লে শাড়ির তো জান থাকেই না,শাড়ি ওয়ালীরও বারো টা বেজে যায় শাড়ি সামলে রাখতে।
আলোঃ আমি তো তাড়াহুড়ো করে বের হয়েছি এজন্য লেডিস জিন্স আর লং কামিজ পড়েই বেরিয়ে গেছে,মন খারাপ ছিলো এজন্য কোন ভাবে একটু সাজতেও পারি নি,সব আপনার জন্য,,, এখন আমাকে কত পচা দেখাচ্ছে।
রোদঃ আরে বোকা মেয়ে সাজলেই সুন্দর দেখায় এটা কোন গাধা বলছে,,মায়াবতীদের সাজতে নেই।এখনকার এই লুকটাই ঠিক আছে,, তবে বিয়ের পর মেয়েরা সুন্দর হয় এটা আমি বিশ্বাস করতাম না,আমি ভাবতাম বিয়ের আগে মেয়েরা পার্লারে যেভাবে দৌড়াদৌড়ি করে, এজন্য মে বি বিয়ের পর সুন্দর দেখায়।বাট তোমাকে দেখে বুঝলাম কথাটা আসলেই সত্যি যদিও কেডিডটা পুরোপুরি আমাকে দেওয়া উচিত,,,কারন।

আলোঃ আপনি যে কি পরিমানের অসভ্য সেটা আমি ছাড়া কেউ জানে না।একটু তো লজ্জা থাকা উচিত বাট আপনার লজ্জার,,,, ল,,, ও নাই।এত লাগাম ছাড়া কথা বলেন কি করে?
রোদঃআজ একটা সত্যি কথা জেনে নাও, লজ্জা হচ্ছে নারীর ভূষণ,লজ্জা টা মেয়েদেরকেই মানায় ছেলেদের কে না।তুমি কি জানো ছেলেদের কেন লজ্জা পেতে নেই?
আলোঃনা জানি না,কেন ছেলেদের লজ্জা পেতে নেয়?আপনার মুখেই শুনি।
রোদঃ কারন টা হচ্ছে?আমরা ছেলেরা যদি লজ্জা পায় তাহলে বাবা ডাক আর শুনতে পাবো না এজন্য,(আলোর কানের কাছে এসে ফিসফিস করে বলে)
আলোঃ মাফ করে দেন, আর কিছু জিজ্ঞাসা করবো না,তাও এই টপিকটা বাদ দেন।আপনি যে কি পরিমানের দুষ্ট আমার বোঝা হয়ে গেছে।আমার কিছু জানার ইচ্ছা নাই।
রোদঃ আচ্ছা এই টপিক বাদ,তবে তোমার শাশুড়ির কিন্ত আমাকে বলছে তার খেলার সাথি এনে দিতে।আচ্ছা এই টপিক বাদ,এবার খুশি তো,,,

শোনো আর কিছু সময়ের মধ্যে আমরা চট্টগ্রামের ঢুকবো,,,
আলোঃ কেন আমরা তো রাঙামাটি যাবো,তাহলে চট্টগ্রামের দিকে বাস যাচ্ছে কেন?আপনি আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে সত্যি করে বলেন।
রোদঃওরে গাধী আমরা রাঙামাটিতেই যাচ্ছি,,, পাহাড়ি বাঙালিদের মিলিত জনপদ হচেছ,পার্বত্য চট্টগ্রাম। এই পার্বত্য চট্টগ্রামের একটি জেলা হচ্ছে রাঙামাটি।আর রাঙামাটি জায়গাটি হচ্ছে পাহাড় আর পাহাড়,,,,চারদিকে সবুজের সমারোহ,,মাথার উপরে নীল আকাশ,,,চোখ জুড়ানোর লেকের মনোরম দৃশ্য,,,, এগুলো চোখে না দেখলে বুঝবে না।
আলোঃ আমি না কখনো সামনে দাড়িয়ে পাহাড় দেখি নি,,এবার আমি খুব খুব মজা করবো,দেখবো,ঘুরবো,,কোন বাঁধা দিতে পারবেন না। আমি এবার প্রকৃতি প্রেমী হতে চায়,আমি প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করতে চাই।
রোদঃওকে ওকে তোমাকে সব জায়গা ঘুরে নিয়ে যাবো,সব দেখাবো আলোমনি,তোমাকে একদম সেটা নিয়ে ভাবতে হবে না।এবার বাইরের তাকিয়ে দেখো আমরা চট্টগ্রামের ঢুকে পড়ছি,,,

সিক্ত সুভানুভব পর্ব ২২

আলো জানালার সামনে গিয়ে দেখে অনেক বড় বড় পাহাড়,আলো অবাক হয়ে সেগুলো দেখে আর রোদ আলোকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে মুছকি মুছকি হাসছে,আলো পাহাড় গুলো উচ্চতা দেখার জন্য বাসের সিটে একবার ঘাড় উঁচু করে দেখছে আবার নিচু হচ্ছে, উপরে নীল আকাশ আর বড় বড় পাহাড়,পাহাড় গুলোতে বিভিন্ন ধরনের গাছ,,, হঠাৎ করে বাস উচু রাস্তাতে উঠতে শুরু করে আলো পাহাড় দেখাতে এত মনোযোগী ছিলো যে নিজের balance হারিয়ে রোদের গায়ে পড়ে,আলো ভয় পেয়ে রোদকে জড়িয়ে ধরে।রোদ আলোকে জড়িয়ে ধরে হেসে দেয় আর আলোও ভয় পেয়ে জড়িয়ে ধরে,, আবার বাস নিচু রাস্তাতে নামতে থাকে আর আলো রোদের শার্ট খামছে ধরে,চোখ বনধ করে আছে।আর আলো রোদকে ফিসফিস করে বলে।

আলোঃড্রাইভারটা এভাবে এমন করে গাড়ি চালাচ্ছে কেন?এভাবে কেউ গাড়ি চালায়,,আমার তো জান বের হয়ে যাবার উপক্রম।গাড়িটা উপরে উঠাচেছ কেন,আর এভাবে নিচে নামাচ্ছে কেন?ও মা গো এবার আর জান নিয়ে ফিরতে পারবো না মনে হয়।
রোদঃনা রে পাগলি ড্রাইভারের কেন দোষ নাই,পাহাড়ি রাস্তা গুলো এমনই উচু নিচু।আমি আছি তো ভয় কিসের, আর জার্নি তে এত সহজে ভয় পেলে ঘুরতে আসার তো মজাই থাকে না তাই না।আর তুমি ভয় পাচ্ছো।
আলোঃদাত ক্যালাবে না তো,আমার ভয় গলা শুকিয়ে গেছে আর তুমি বসে বসে দাঁত ক্যালাচেছা।

সিক্ত সুভানুভব পর্ব ২৪