স্পর্শানুভূতি পর্ব ৩৭

স্পর্শানুভূতি পর্ব ৩৭
writer:Nurzahan akter (allo)

ওদিকে মুহিত আর রাসেল এরা হন্য হয়ে রাবেয়া খালাতে খুঁজে যাচ্ছে! কিন্তু ওরা কেউ খুঁজে পাই না…ওদের কল্পনাতে আসে নি মিষ্টু এমন কিছু করবে বা করতে পারে।

রাসেল ওর কাজ সেরে মিষ্টুকে ফোন দিলো যাতে একবারে টুকটাক বাজার সেরে একেবারে বাসায় ফিরতে পারে তাই।মিষ্টু আর রাসেলকে কলেজের সামনে আসতে বললো!রাসেলের ফোন পেয়ে মিতু আর মিষ্টু ওখানে থেকে বেরিয়ে পড়লো আর কলেজের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো যাতে রাসেল কোন ডাউট করতে না পারে।তারপর ২০ মিঃ পর রাসেল আসলো!মিষ্টু রাসেলের সাথে মিতুর পরিচয় করে দিলো তারপর মিষ্টু আর রাসেল একটা রিকশা নিয়ে মিতুকে বাই বলে চলে গেল।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

দুজনে পাশাপাশি বসে আছে শরীর ঘেষে!তাও দুজনের মাঝে এখন আর আগের মত আর জড়তা কাজ করে না!রাসেল মিষ্টুর দিকে তাকিয়ে বলে..
রাসেলঃকি হয়েছে আমার বউটার?মুখটা এমন লাল হয়ে আছে কেন শুনি?কোন সমস্যা হয়েছে নাকি কলেজে..
মিষ্টুঃনা আমি ঠিক আছি!আচ্ছা আমরা কোথায় যাচ্ছি?
রাসেলঃআমাদের তো রান্না করে খেতে হবে তাই না!এজন্য কাঁচা সবজি, মাছ-মাংস তো কিনতে…
মিষ্টুঃজীবনে কোনদিন বাজার করছেন?
রাসেলঃ না তবে এখন থেকে করবো!কারন আমি বাইরের খাবার খেতে পারি না!আর এখন আমার সাথে আমার বউয়ের খেয়ালও তো রাখতে হবে তাই না। আর এখন যদি ভাল মত আমার বউটাকে খাবার না খাওয়ায় তাহলে আমার জুনিয়র গুলোও আসতে দেরি করবে..(দুষ্টুমি করে)
মিষ্টুঃফাজিল একটা!মুখে কিছু আটকায় না তাই না(রাসেলকে মারতে মারতে)
রাসেলঃ হা হা হা! আটকে রাখার দিন শেষ…

তারপর দুজন বাজারে গেলো! কাঁচা সবজি কেনার জন্য!এরা একজন দোকানদারের কাছে গেল।
মিষ্টুঃমামা কাঁচা মরিচ কত?সঠিক দাম বলবে..
দোকানদার মামাঃ ৭০ টাকা কেজি!
মিষ্টুঃসাড়ে সর্বনাশ এত দাম!নিজের বউয়ের সাথে ঝগড়া করে আমাদের উপর রাগ তুলে এত টাকা দাম নাও তাই না।
দোকানদারঃ এইডা কেমন কথা! সঠিক দামই তো কইলাম।
রাসেলঃমামা আপনি ওর কথায় কান দিবেন না!টমেটো, কাঁচামরিচ,শসা, আর যা যা আছে সব ২ কিলো করে দিয়ে দেন।
মিষ্টুঃএই না না! এত জিনিস একসাথে নিতে হবে না।এই টাকলার থেকে আমি কিছু নিতে দিবো না।এই টাকলা দাম চাই বেশি..
দোকানদারঃনা নিলে না নিবেন!আর আমাকে একদম টাকলা কইবেন না!
মিষ্টুঃআমি টাকলা বলবো!আর দেখি আপনি কি করেন?এমন ভাব করছেন মনে হচ্ছে আমি টাকলা বলা বন্ধ করলে আপনার এই টাকে নতুন করে চুল গজাবে..
রাসেলঃ ওকে ওকে চলো আমরা অন্য কোথায় দেখি কেমন।(মিষ্টুর হাত ধরে টেনে নিয়ে জোর করে নিয়ে যায়)

তারপর মিষ্টু দোকানদারদের সাথে ঝগড়াঝাটি করে ব্যাগ ভর্তি করে মাছ মাংস সাথে কাঁচা সবজিও কিনলো!সাথে আরো কিছু ফলমূল সহ টুকটাক জিনিস কিনলো।মিষ্টু রাসেলকে সাথে নিয়ে আখের রসও খেলো। বাজার থেকে বের হয়ে একটা রিকশা নিয়ে দুজনের রিকশাতে উঠে বসলো!মিষ্টু তখন হুট করে আকাশের দিকে তাকিয়ে দুইহাত মোনাজাতের মত করে তুলে বললো..

মিষ্টুঃহে আল্লাহ! আমার পাশে বসে থাকা এই ছেলেটার মুখে এত এত ব্রণ দাও। আর একটু কম কিউট করে দাও…
রাসেলঃকেন? (অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে)
মিষ্টুঃকেন মানে বুঝো না?কেউ যাতে তোমার দিকে নজর না দেয় এজন্য। (বিশ্বজয় করা হাসি দিয়ে)
রাসেলঃতাই বলে আমার মুখে যাতে ব্রণ হয় এই দোয়া করবে!আমার চুল আর স্ক্রিন নিয়ে আমি খুব সিরিয়াস!আর খুব যত্নবানও সো এসব হওয়ার সম্ভাবনা নাই…(মুচকি হেসে)
মিষ্টুঃসে দেখা যাবে হবে কি না?আর বাজারে আসলে এত সুন্দর করে সেজে আসবে না।কারন দোকানদারা মানুষের পোশাক দেখেও দাম বলে..
রাসেলঃহয়েছে বকবক করা!আর উপদেশ থাকলে দিন ম্যম।
মিষ্টুঃআমার মুখ আমি বকবক করি তাতে তোমার কি?আর আপাতত উপদেশ নাই বাট পরে যদি মনে পড়ে তখন দিবো আবার..
রাসেলঃহুমম!

দুজন বাসায় গিয়ে রান্নার কাজে লেগে পড়ে!রাসেল টুকটাক রান্না জানে।রাসেল রান্না করছে আর মিষ্টু আপেল খাচ্ছে আর রান্না করা দেখছে!রাসেল মিষ্টুর থেকে আপেলটা নিয়ে খাওয়া শুরু করলো!মিষ্টু মুখ ভেংচি দিলো আর বাকি সব সব্জী সহ জিনিস গুলো ফ্রিজে তুলে রাখলো।তারপর পাশের বাসার বুয়াকে ডেকে বললো একজন বুয়া ঠিক করে দিতে।মিষ্টু রুমে এসে চুল বেধে ওড়না ফেলে দিলো আর ঘর ঝাড়ু দেওয়া শুরু করলো।

রাসেল চুলার পাওয়ার কমিয়ে দিয়ে চুপিচুপি গিয়ে মিষ্টুর পেছনে গিয়ে মিষ্টুকে জড়িয়ে ধরে আর মিষ্টুর কাঁধে মুখ রাখে…
মিষ্টুঃকি হচ্ছে কি?
রাসেলঃকই কি হচ্ছে? তুমি তোমার কাজ করো আমি আমার কাজ করছি?
মিষ্টুঃজোকের মত জড়িয়ে ধরলে কাজ করবো কি করে শুনি?(ঝাড়ু হাত থেকে ফেলে দিয়ে)
রাসেলঃএই কাজটা একটু পরে করলে খুব একটা সমস্যা হবে না!ওহ হ্যা তোমাকে একটা কথা বলা হয়নি..(মিষ্টুর কাঁধে মুখ রেখে)
মিষ্টুঃকি কথা শুনি?কোথাও আকাম করে আসো নি তো?? (রাসেলের গলা জড়িয়ে ধরে)
রাসেলঃ হা হা হা! আমার এত সুন্দর একটা বউ থাকতে আমি বাইরে আকাম করতে যাবো কেন শুনি?এতটা খারাপ চরিত্র নিয়ে চলি না..(মুখ ভেংচি দিয়ে)
মিষ্টুঃওলে বাবা লে তাই নাকি!তা বলো কি যেন বলতে চাইলে?
রাসেলঃআমাদের ঢাকাতে যে অফিসটা আছে! সেখানকার একটা শাখা রাজশাহীতে করার কাজ শুরু করেছিলাম।আজকে সেখানেই গিয়েছিলাম অফিস অলরেডি চালু হয়েছে গেছে।..আর হ্যা এটা কিন্তু তোমার বরের নিজের উপার্জনের টাকা থেকে এই অফিসটা বানানো বুঝলে! আমি এটা নিজের উপার্জিত টাকা দিয়ে বানিয়েছি।
মিষ্টুঃএতদিন বলো নি কেন?
রাসেলঃবলি নি কারন তোমাকে সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছিলাম।
মিষ্টুঃহুমম ইনশাআল্লাহ এবার থেকে যা হবে সব ভালো হবে।
রাসেলঃহুমম! শুধু তুমি পাশে থেকো
মিষ্টুঃহুমম

তারপর দুজন সাওয়ার নিলো তারপর দুজনেই দুপুরে খেয়ে নিলো!মিষ্টু রাসেলের হাতেই খেয়েছে ও কিছুতেই এটা মিস করে না।তারপর মিষ্টু বেডে এসে বসতেই রাসেলের মিষ্টুর কোলে মাথা রাখে! মিষ্টু রাসেলের চুল গুলো আস্তে আস্তে টেনে দেয়!রাসেল উপুর হয়ে শুয়ে মিষ্টু কোমর জড়িয়ে ধরে আর চোখ বন্ধ করে নেয় আর মিষ্টুর পেটে মুখ গুজে দেয়!মিষ্টু রাসেলের মুখ সরাতে চাচ্ছে তাও সরাতে পারে নি!মিষ্টুও আর জোর করলো না!বরং রাসেলের চুল টেনে দিতে থাকলো!আর একটা সময় রাসেল ঘুমিয়ে পড়ে…মিষ্টুও বেডের সাথে হেলান দিয়ে রাসেলের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে ঘুমিয়ে পড়ে।

তারপর সন্ধ্যায় রাসেলের ঘুম ভাঙ্গে আর দেখে ও এখনো মিষ্টুর কোলেই আছে!ওকে ডাকে নি তাই মিষ্টুকে একটু বকাও দিসে। তারপর মিষ্টু আর রাসেল সন্ধ্যার দিকে একটা বাইকে কিনে আনে!কারন আপাতত চলাচলের জন্য এখন একটা বাইকের খুব দরকার। রাসেল চাচ্ছিলো একটা গাড়ি কিনে ফেললে বাট মিষ্টুর জোরাজুরি তে বাইক কিনে।কারন মিষ্টুর এখন গাড়ি কেনার কথাটা পছন্দ হয়নি!মিষ্টু মনে হয়েছে দুজনের চলাফেরা জন্য একটা বাইকই যথেষ্ট আর এখন এত গুলো টাকা দিয়ে গাড়ি কেনাটা অপচয় ছাড়া কিছু না।

পরেরদিন সকালে…
দুজন ঘুম থেকে উঠে তারপর নামাজ পড়ে নেয়!দুজনের একসাথে দুষ্টমি, খুনশুটি করতে করতে ব্রেকফাস্ট বানায় তারপর দুজনেই খেয়ে নেয়।রাসেল অফিসের জন্য রেডি হয় আর মিষ্টু কলেজের জন্য। তারপর রাসেল মিষ্টুর কপালে আদর দিয়ে দেয় তখন মিষ্টুও রাসেলের পায়ের উপর উঠে রাসেলের কপালেও আদর দেয়।

মিষ্টুঃনজর টিকা দিয়ে দিলাম!যাতে কারো নজর না লাগে..
রাসেলঃলাগবে না রে পাগলী!জানো ১৫ বছর পর কেউ আমার কপালে এভাবে আদর দিলো জানো।
মিষ্টুঃএই যে একদম মেয়েদের দিকে তাকাবে না!কোন মেয়ের পাশে শরীর ঘেষে দাড়াবে না।মনে থাকবে তো।
(এখন আমি আছি তো তোমার পাশে বোকা! আমি এখন থেকে তোমার সব না পাওয়া কষ্ট গুলোকে আমি আমার ভালবাসা দিয়ে তোমাকে পুষিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করবো।কারন আমি বুঝে গেছি তোমার মত ছেলেকে জীবন সঙ্গী হিসেবে পাওয়াটাও ভাগ্যের ব্যাপার।আল্লাহর কাছে লাখ লাখ শুকরিয়া আমি তোমাকে পেয়েছি! এজন্য কথাটা ঘুরিয়ে নিলাম।মনে মনে)
রাসেলঃহা হা হা! ওকে

(অনেক ঝড় ঝাপটার পর ওরা এক হয়েছে!নজর না লাগুক ওদের ভালবাসায়।আপনারাও নজর দিয়েন না কেমন..?)

স্পর্শানুভূতি পর্ব ৩৬

তারপর রাসেল মিষ্টুকে কলেজে নামিয়ে দিয়ে রাসেল ওর অফিসে চলে যায়!মিষ্টু আর মিতু রাবেয়ার কাছে যায় তারপর আবার থেরাপি শুরু করে!আজকেও মিষ্টু ওদের অনেক মেরেছে আর আজকে ওরা বার বার মিষ্টুর থেকে মাফ চেয়েছে বাট মিষ্টু ওদের কথা শোনে নি…আজকে মিষ্টু মারের চোটে সব সত্যি ওরা বলতে থাকে আর মিষ্টুর ইশারায় মিতু সযত্নে ভিডিও সহ রেকর্ড করে নেয়।রাবেয়া আর আবিদ ব্যাথাতে কাতরাতে থাকে!মার খেয়ে ওরাও বুঝে গেছে মিষ্টুও ছেড়ে দেওয়ার পাএী না।তাই মারের চোটে সব বলে দিসে!আর মিষ্টুর মুখে বিশ্বজয়ের হাসি ফুটে….
মিষ্টু মিতুর দিকে ইশারায় কিছু বলে..মিষ্টু ওদের দিকে তাকিয়ে বলে..

মিষ্টুঃকালকে ওদের ভেমরুল থেরাপি দিবো!কালকে আমাকে একজন ভেমরুল দিয়ে যাবে বলছে।কালকে রেডি থাকিস… কালকে আর মিস হবে না বলে দিলাম।(শয়তানি হাসি দিয়ে)

স্পর্শানুভূতি পর্ব ৩৮