স্পর্শানুভূতি পর্ব ৪৩

স্পর্শানুভূতি পর্ব ৪৩
writer:Nurzahan akter (allo)

রাসেলঃ আর কয়েক ঘন্টা পরে বর বেশে এসে নিয়ে একেবারের জন্য নিয়ে যাবো!রেডি থেকো…. আচ্ছা তুমি সাবধানে থেকো কেমন।আমি গেলাম…বাই
মিষ্টুঃহুমম!সাবধানে যাবে আর আবার আমার কাছে সাবধানে ফিরে আসবে…
রাসেলঃহুমমম (মুচকি হেসে)

রাসেল রুম থেকে বের হয়ে খুব দ্রুত পায়ে বাসা থেকে বেরিয়ে যায়।তারপর রেস্টুরেন্ট থেকে আয়ানদের জন্য খাবার কিনে তারপর ওর ফ্ল্যাটে যায়!আর রুমে ঢুকতে সবাই তিনজনে রাগী চোখে তাকিয়ে আছে।রাসেল মুচকি হেসে ওদের দিকে তাকিয়ে সরি বলে..

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

জয়ঃআমরা তোকে বলছি তোদের আলাদা থাকতে!তোর জন্য আমার এখানে এসেছি!আর তুই কি না আমাদের কেই আটকে রেখে চলে গেলি…(রেগে গিয়ে)
শ্রভ্রঃতোরে বলছি কি আর তুই করলি কি রে?আজকে রাতে কি করবো ছাড় পাব মনু? মনে করছিলাম তোকে ছাড় দিবো বাট তুই যা করলি তোকে ছাড় দেওয়া কথায় মাথায় আসছে না..
রাসেলঃসরি!ঘুম থেকে উঠতে দেরি হয়ে গেছে বুঝতে পারে নি।তোদের জন্য খাবার আনলাম খেয়ে মাথাটা ঠান্ডা কর ভাই… এত চেচাঁমেচি শরীরের জন্য ভালো না।
আয়ানঃআজকে তোর বিয়ে আর তুই কি না কেবল শশুড়বাড়ি থেকে বাসায় ফিরলি!কি সোনা বাঁধানো কপাল রে তোর ভাই…তোরে তো এক চামচ নোবেল দেওয়া উচিত কারন আজ পযন্ত ইতিহাসের পাতাতেও এমন কাজের তালিকাতে কারো নাম নাই,,,তোকে সত্যি নোবেল দেওয়ার উচিত
রাসেলঃথাক আর বাঁশ দিতে না!এগুলো আমার জন্য যথেষ্ট,,, বেশি দিলে হজম করতে কষ্ট হয়ে যাবো।

তিনজন খাচ্ছে আর রাসেলকে বকছে আর রাসেল বসে বসে মনোযোগ দিয়ে লেপটপে গান দিয়ে শুনছে।তিন জনে এতক্ষণ না খেয়ে ছিলো তো মাথা গরম ছিলো এবার খেয়ে ওদের মাথা ঠান্ডা হয়ে গেছে।রাসেল উঠে বারান্দায় যায় আর ওর বাবাকে ফোন দিয়ে বাবার খোঁজ নেয়! আর বলে ওদের জন্য দোয়া করতে।রাসেলের বাবা মন থেকে দোয়া করে দেয়! রাসেল উনাকে আসতে বলছে বাট উনি ইচ্ছে করে আসে নি!রাসেল কথা বলে রুমে আসতেই কলিংবেল বেজে ওঠে!আয়ান রাসেলকে বসে বলে নিজের গিয়ে দরজা খুলে হা করে তাকিয়ে থাকে…

রাসেল কে এসেছে এটা দেখতে এসে দেখে, যাদের জন্য রাসেল ওয়েট করছিলো তারাই চলে এসেছে।আয়ান বুঝতে পারছে না এরা কারা!রাসেল মুচকি হেসে ওদের ভেতরে আসতে বলে! রাসেল নিচে বসতেই সবাই হামলে পড়ে রাসলের উপর!আসলে অনেক বাচ্চারা এসেছে আর বাচ্চা গুলো এতিম! রাসেল ঢাকাতে দুইটা এতিম খানা বানিয়েছিলো ওর মায়ের নামে!আর এই বাচ্চা গুলো সেখানে থাকে।বাচ্চা গুলো একে একে রাসেলকে হামি দিতে থাকে আবার কেউ জড়িয়ে ধরে আছে…ওরা খুব খুশি রাসেলকে পেয়ে।

রাসেল খেয়াল করলো ওর আদরে পুচকি টাকে দেখতে পাচ্ছে না!কেয়ার টেকার দিকে তাকাতেই উনি ইশারা করে বিপরীত পাশে দেখালো! রাসেল ঘাড় ঘুরিয়ে দেখে ওর পুঁচকিটা দেওয়া হেলান দিয়ে গাল ফুলিয়ে দাড়িয়ে আছে!রাসেল বাচ্চাটার সামনে গিয়ে হাঁটু গেড়ে বসে আর বলে….

রাসেলঃআমার আদুরি সোনাটা কি আমার উপর বেশি রাগ করছে নাকি?আর এমন হবে আদুরি সোনা,,,
আদুরিঃ…..
রাসেলঃএই যে কান ধরছি!এবার মাফ করে দাও.. এবার কিন্তু আমি কষ্ট পাচ্ছি…
আদুরিঃ তুমাল থাতে তখা (কথা) নাই!তুমি পতা (পঁচা)। তুমি আমাতে এত এক কততো (কষ্ট) দিছো।
রাসেলঃ সরি বাবু! আর এমন হবে না..
আদুরিঃ সুত্যি কতা তো (আঙ্গুল দেখি)
রাসেলঃহুমমম!একদম (আদর দিয়ে)

আয়ানরা হা করে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করছে আসলে কি হচ্ছে? আদুরি রাগ ভাঙ্গানোর পর রাসেল ওকে কোলে তুলে নেয় আর সবাইকে বলে একটু রেস্ট নিতে কারন ওরা ঢাকা থেকে এসেছে…একদিকে আদুরি রাসেলের কোল থেকে নামতে রাজি না।রাসেল আয়ানদের দিকে তাকিয়ে বলছে….

রাসেলঃ বিয়ে করতে যাবো বরযাত্রী তো দরকার তাই না!এরাই হচ্ছে আমার বরযাত্রী…. আমার তো কেউ নেই এরাই আমার সব তাই এদের দোয়াতেই শুরু হোক আমাদের পথচলা।
আয়ানরা সবাই হা করে রাসেলের দিকে তাকিয়ে আছে।কি বলবে? আর কি বলা উচিত বুঝতে পারছে না।

রাসেলঃএখন তো সবাই বিয়ে করতে যায় এত এত মানুষ নিয়ে।আর বর যাত্রী গেলে অবশ্যই ভালো ড্রেসে যেতে হবে!আর দামী উপহার দিতেই হবে।তা না হলে মান থাকবে না!আর এখন তো কে কার বিয়েতে কত বড় অনুষ্ঠান করতে পারে এসব নিয়ে প্রতিযোগীতা চলে। আরেকটা সত্যি কথা সেটা হলো!এখন তো অনেকে গোটা গরু কুরবানীর দেয়।বাট কেউ এতিম আর ভিক্ষুকদের কে কথা মনে রাখে না। কারন ফ্রিজ টা তো ভরে রাখতে হবে তাই না।আমি না হয় ওই এতিম দের নিয়ে একটা শুভ কাজ করি।ওদের দোয়াতেই না হয় আমার জীবনটাকে নতুন করে সাজাতে থাকি.. (মুচকি হেসে)
আয়ানঃ আজকে বুললাম মুহিত কেন বলে যে তুই সবার থেকে আলাদা। আর তোর চিন্তা -ভাবনা গুলোও এত ভালো।
জয়ঃ সত্যি ভাই সবার যদি তোর মত করে ভাবতো!তাহলে এরা এত অবহেলিত হতো না।
শুভ্রঃরাসেল সত্যি ভাই তুই খুব ভালো একটা কাজ করছিস।

রাসেল ওদের নিয়েই বিয়ে করতে যাচ্ছে!আমাদের সমাজে রাসেলের মত মানুষের বড্ড অভাব। এজন্য ওরা অবহেলিত জেনেই আমরা এড়িয়ে যায়।আবার কেউ কেউ তো মুখের উপর বলেও ফেলে এরা এতিম!হা হা হা। যারা বলে তারা আবার উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত। তবে আমি এখন এটা বাজি ধরে বলতে পারি যে, আমার এই গল্পের এই পার্টটা যে পড়ছো! সেও কখনো কল্পনা করি নি এমনও হতে পারে।আমিও নিজেও ভাবতেই পারি নি আর তোমাদের কি বলবো বলো?কেমন করে ভাববো বলো আমাদের সমাজে তো এমন করতে দেখি নি কাউকে! আর করেও নি এমন নিয়ম কেউ !এতিম রা এতিমখানায় ডাল-ভাত খেলেই তো এনাফ তাই না।ওদের এসবের কি দরকার???আরো বোকা আমি তো ভালো আছি অন্যরা কি করলো সেটা দেখে আমার কি লাভ ?তবে আমাদের সমাজে একটা কথাটা প্রচলিত,, নিজে বাঁচলে বাবার নাম।আর আমরা এই কথায় অনুসরণ করে থাকি তাই না! অন্যের ঘাড়ের উপর পা তুলে যে যত উপরে উড়তে পারে… কেউ কারো দিকে তাকানোর সময় নাই।আর কেউ যদি মুখ থুবকে পড়লেও টেনে তোলার মত সময় কারো কাছে নেই,,,…..কারন একটাই এটা আমাদের মত উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত মানুষের তৈরীকৃত নিয়ম,,,,

রাসেল মুহিতকে বলছে যে এই বাচ্চা গুলো আসবে! মুহিত খুশি হয়ে রাসেলকে জড়িয়ে ধরছে কারন কোন ভাল মনের মানুষ ছাড়া এটা কেউ করবে না।রাসেল সাওয়ার নিলো তারপর রেডি হতে শুরু করলো কারন অলরেডি দুপুর ১ঃ১৫ বাজে! রাসেল সবার বাচ্চার জন্য নতুন ড্রেস কিনে আনছে!তারা তো ড্রেস পেয়ে খুব খুশি! এদিকে আদুরি জয়ের কোলে উঠেছে আর নামতে চাচ্ছে না!জয় বার বার আয়ান বলছে আদুরি নিতে বাট আদুরি কিছুতেই যাচ্ছে না।

জয়ঃআয়ান প্লিজ একে ধর না ইয়ার! আমি হিসু পাইছে। আর চেপে রাখতে পারছি না তো,,
আয়ানঃআমার কোলে আসছে না তো।আমি তো নিতেই চাচ্ছি।
শুভ্রঃ আদুরি এসো আমরা বেড়াতে যাবো!আমার কাছে এসো তো বাবু তোমাকে চকলেট দিবো।এসো হিসু করে দিও না কেমন… হা হা হা
আয়ানঃহা হা হা
জয়ঃ আদুরি তুমি ওদের কাছে যাও আম্মু! আমি হিসু
করে এসেই আবার তোমাকে কোলে নিবো কেমন..
আদুরিঃতুমি শিশি দিবা!আততা চনো (চলো) আমিও দাবো(যাবো)
জয়ঃতুমি এখানে দাড়াও কেমন!আমি এক দৌড়ে যাবো আর দুই দৌড়ে আসবো ।আর চাপিয়ে রাখতে পারছি না..
আদুরিঃআমিও…দাবো তোমান থাতে।আমালে নিয়ে দাও..আমি তোমাল থাতে দাবো।

জয় দৌড় দিসে এবার সাথে আদুরিও! রাসেল রুম থেকে বের হতেই জয়ের সাথে ধাক্কা খায় বাট জয় তাড়াহুড়ো করে ওয়াশরুমে ঢুকে যায়। আর আদুরি রাসেলের পায়ের কাছে এসে দুম করে পড়ে যায়!রাসেল আদুরি কোলে তুলে নেয়।আদুরি রাসেল দেখে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো তারপর রাসেল ওর দিকে চকলেট বাড়িয়ে দিতেই চুপ হয়ে গেল।

রাসেল বুঝতে পারছে জয় কেন ওরে কোল থেকে নামিয়েছে!কারন আদুরিটাও এমনি যার কোলে যায় আর নামতে চাই না। আবার যার কাছে যাবে না তো যাবেই না।আদুরি চকলেট পেয়ে তো খুব খুশি হয়ে রাসেল গলা জড়িয়ে ধরে এত এত আদর দিয়ে দিলো!আদুরি রাসেলের মুখটা ওর ছোট ছোট দুই হাত দিয়ে ধরে আর রাসেলের দিকে তাকিয়ে বলে..

আদুরিঃওই যে উনিক (অনিক)আথে না দুটু (দুষ্টু)ছেনে আমার তুলতুলির (পুতুলের)একটা হাত বেংগে দিসে।তুমি ওলে বকা দিবা। (মুখ ফুলিয়ে)
রাসেলঃকি?? অনিকের এত বড় সাহস যে আমার আদুরির পুতুলের হাত ভেঙে দেয়!আমি ওরে খুব খুব বকা দিবো।
আদুরিঃআল একদিন মেগের (মেঘের)থাতে আমাল দেকা হয়েছিলো। মেগ আমাল তককেট নিয়ে দোল (দৌড়) দিসে।আল বনছে যে পরে তিনে (কিনে) দিবে কিন্তু আমালে তিনে দেয় নি।ওলেও বকা দিবা.. (ঠোঁট ফুলিয়ে)
রাসেলঃ মেঘ আবার তোমার চকলেট নিয়ে দৌড় দিসে!ওরে এবার অনেক অনেক পিটুনি দিবো আমি আর তুমি মিলে কেমন।
আদুরিঃআততা!আনতেল আলেকটা কতা আছে…
রাসেলঃহুমম বলো!আমি তোমার সব কথা শুনবো।
আদুরিঃ তুমাল নাকি বিয়ে!আর বিয়ে করলে নাকি আমাদের আর ভালুপাশবে না। তাহলে আমি কাল (কার) কোলে উঠবো ( ঠোঁট উল্টিয়ে ছলছল চোখে তাকিয়ে)
রাসেলঃকে বলছে এসব পঁচা কথা?আমি তোমাদের সবাইকে ভালবাসো সোনা।এগুলো পঁচা কথা…
আদুরিঃবিয়ে করলে নাকি তুমি শুধু তোমাল বুউকে ভালুপাশবে।
রাসেলঃশুধু বউ না তোমাদের সবাইকেই আমি ভালবাসবো। আমার বউও তোমাদের সবাই ভালবাসবে, চকলেট দিবে,খেলা করবে তোমাদের সাথে।
আদুরিঃআততা!আল ওই দুটু (দুষ্টু) ছেলেতাকে নিয়ে দাবে না আমাল বাসায় (জয়কে দেখিয়ে)
রাসেলঃওটাও তো আংকেল হয়!তোমাকে কোলে নিলো তো তখন তোমাকে তাই না..
জয়ঃ আমি না তুমি দুষ্টু মেয়ে! (আদুরি চুলের ঝুঁটি টেনে)
আদুরিঃভ্য ভ্য ভ্য আনতেল আমার চুল খুলে দিলো এই পতা ছেনে।

স্পর্শানুভূতি পর্ব ৪২

জয় আদুরি চুলের ঝুটি খুলে দিয়ে দৌড় দিসে!রাসেল আদুরিকে কোল থেকে নামিয়ে আবার সুন্দর করে চুল বেধে দিলো।এবার আদুরি বিশ্বজয় করা হাসি দিয়ে রাসেলকে বললো..
আদুরিঃআনতেল আমালে ফিস ফিস দাও… (লজ্জা মাখা মুখে)
রাসেলঃহা হা হা হা! তুমি ফিস ফিসও দিবে…ওকে বাবু দিচ্ছি
আয়ানঃফিস ফিস আবার কি? (রুমে ঢুকতে ঢুকতে)
রাসেলঃ ওটা তোরা বুঝবি না! হা হা হা।

তারপর রাসেল ফিস ফিস মানে পারফিউম দিয়ে দিলো আদুরি আর কোলে তুলে নিলো। সবাই রেডি হয়ে গাড়িতে উঠে পড়লো!রাসেলই সব ঠিক করেই রাখছিলো।বাচ্চারা হইচই করতে করতে মিষ্টুদের বাসায় পৌঁছে গেল।ওদিকে মিষ্টু মিতু কিছুতেই চোখে আইলাইনার লাগাতে দিচ্ছে না…মিষ্টু রেগে মিতুকে বলেই দিলো।
মিষ্টুঃদে দে আরো হাজিবাজি আমার চোখে দে! পারলে পুকুর পাড়ে থেকে কাদা এনে চোখে কাদার প্রলেপও দিয়ে দে!আর এই কাদা কে আমি ফ্যাশান বলেই চালিয়ে দিবো।আর এসব দিয়ে বাসর করার আগেই আমাকে কানা করে দে।এমন ভাবে কানা করবি যাতে বাসর ঘরে কানার মত আমার বর কে হাতড়ে হাতড়ে খুঁজে বেড়াতে হয়(দাঁতে দাঁত চেপে)

স্পর্শানুভূতি পর্ব ৪৪