স্পর্শানুভূতি পর্ব ৪৪

স্পর্শানুভূতি পর্ব ৪৪
writer:Nurzahan akter (allo)

মিষ্টুঃদে দে আরো হাজিবাজি আমার চোখে দে! পারলে পুকুর পাড়ে থেকে কাদা এনে চোখে কাদার প্রলেপও দিয়ে দে!আর এই কাদা কে আমি ফ্যাশান বলে চালিয়ে দিবো।আর এসব দিয়ে বাসর করার আগেই আমাকে কানা করে দে।এমন ভাবে কানা করবি যাতে বাসর ঘরে কানার মত আমার বর কে হাতড়ে হাতড়ে খুঁজে বেড়াতে হয়(দাঁতে দাঁত চেপে)
মিতুঃআরে গাধা এটা না দিলে তো সুন্দর লাগবে না তো চোখদুটো।
মিষ্টুঃ তারাতারি করবি নাকি উঠে দৌড় দিমু।আমার আর সহ্য হচ্ছে না,, এসব হাজিবাজি দিলে তো সব আমার বরের পেটে যাবে আর ইয়ো ইয়ো হবে।তখন কি হবে….বাসর করা হবে না ওয়াশরুমে সারারাত থাকতে হবে… (দাঁতে দাঁত চেপে)
মিতুঃতুই এত কিছু ভেবে বসে আছি ভা গো ভা…

মিতু আর রাত্রি একপ্রকার যুদ্ধ করে মিষ্টুকে সাজানো শেষ করলো।রাসেলরা এসে পৌঁছে গেছে মুহিত বাচ্চাদের নিয়ে যায় আর রাসেল গাড়ি থেকে নেমে নিচে দাড়ায়।তারপর আয়ান রাসেলকে বরের পাগড়ি মাথায় পড়িয়ে দেয়! আর ওরা গিয়ে স্টেজে গিয়ে বসে।মুহিত এসে রাসেলের সামনে দাড়াতেই দুই বন্ধু হেসে দুইজন দুইজনকে জড়িয়ে ধরে।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

তারপর বড়রা মিলে ঠিক করে আগে বিয়ে পড়াতে!তারপর কাজি আগে মিষ্টুর কাছে কাছে যায় আর কবুল বলতে বলে,বাট মিষ্টু কবুল না বলে হাত মোড়ানো শুরু করছে!মুহিত এসে মিষ্টুর পাশে বসে আর মিষ্টুকে কবুল বলতে বলে বাট মিষ্টু চুপ করে বসে থাকে!২০ মিঃ হয়ে গেছে তাও কেউ মিষ্টুকে দিয়ে কেউ বলাতে পারে নি।মুহিত এবার কোন উপায় না পেয়ে রাসেলের কাছে যায় তখন রাসেল বকুলের সাথে কথা বলছিলো।মুহিত গিয়ে রাসেলের হাত ধরে টানতে টানতে নিয়ে যায়…

রাসেলঃআরে মুহিত কি হয়েছে বলবি তো!এভাবে টেনে কোথাও টেনে নিয়ে যাচ্ছিস?
মুহিতঃতোর বউ কবুল বলছে না?তুই গিয়ে ওরে বোঝা..
রাসেরঃকি???? কেন কি সমস্যা বলবি তো?
মুহিতঃ জানি না তুই চল..
রাসেলঃআজিব তো!এই এলিয়েনের আবার কি হলো?

রাসেলে ছিলো বাগানে আর মিষ্টু আছে ওর রুমে।বিয়ে পড়ানোর পর ওদের এক জায়গাতে বসাতে চেয়েছিলো।তারপর মুহিত মিষ্টুর রুমের সামনে গিয়ে সবাই কে সাইড দিতে বলে। মুহিত আর রাসেলকে দেখে মেয়ে রা সাইড দিলো আর ওরা ডুকে গেল!মিষ্টু তো রাসেলকে দেখে ফিউজ হওয়ার উপক্রম কারন রাসেলকে বর বেশে মারাত্মক সুন্দর লাগছে!মুহিত রাসেলকে মিষ্টুর একপাশে বসতে বললো!আর মুহিত বসলো আরেক পাশে….কাজি আবার কবুল বলতে বললো।মুহিত বলছে কবুল বলতে বাট মিষ্টু কাঁদো কাঁদো মুখ করে মুহিতকে বললো…

মিষ্টুঃআমি রাসেলকে ছাড়া আর কাউকে বিয়ে করবো না ভাইয়া (কেঁদে কেঁদে)
উপস্থিতি সবাই এলিয়েন দেখার মত করে তাকিয়ে আছে আর ওর কথা শুনছে।রুমের মধ্যে সবাই চুপ মিষ্টুর কথা শুনে।মুহিত আর রাসেল তো অবাক হয়ে মিষ্টুর দিকে তাকিয়ে আছে।
মুহিতঃহুমম বোন তোর তো রাসেলের সাথেই বিয়ে হচ্ছে। (অবাক হয়ে)
আম্মুঃ মিষ্টু তুই কি পাগল হয়ে গেলি নাকি???
মিষ্টুঃআমি তো বলছি আমি রাসেল ছাড়া কাউকে বিয়ে করবো না।তারপরেও তোমরা কেন বার বার কবুল বলতে বলছো,,,
মুহিতঃ হুমম তোর তো রাসেলের সাথেই বিয়ে হচ্ছে!
মিষ্টুঃতাহলে ওই বুইড়া ব্যাডা কেন আগে কবুল বলছে!উনি কবুল বলছে তারপর আমি বললে তো উনার সাথেই আমার বিয়ের কানেকশন হয়ে যাচ্ছে।তাহলে বিয়ে তো কাজিই করে ফেলছি!আমি এই বুইড়া ব্যাডাকে বিয়ে করবো না (কেঁদে দিয়ে)

মিষ্টুর কথা শুনে সবাই হো হো করে হাসতে শুরু করে।মুহিত আর রাসেল তো মিষ্টুর কথা শুনে কি বলবে বুঝতে পারছে না।মিষ্টু তো এবার সবার হাসি দেখে ভ্য ভ্য করে কাঁদছে আর বলছে এই বিয়ে করবে না
রাসেলও আর উপায় না পেয়ে উঠে মিষ্টুর সামনে বসে আর বলে…

আমি রাসেল তহসীফ!বাবা আসরাফ তহসীফ!মা রিদিকা তহসীফ। আর মমিনুল হক এবং মা বুশরা তাহিয়াত এবং মমিনুলের হকের বড় পুএ মুহিত হকের একমাএ আদরে বোন মিষ্টু তাহিয়াতকে নগদ দুই লক্ষ টাকা দেনমোহর ধার্য করিয়া তুমি রাসেল তহসীফ অথাৎ আমাকে বর হিসেবে কবুল করো,,বলো আলহামদুলিল্লাহ কবুল…
মিষ্টঃ ইনশাআল্লাহ আজকে থেকে মৃত্যুর আগ- পযন্ত তোমাকে ভালো রাখার দায়িত্ব আমি নিলাম।তুমি পাশে থেকে তোমার দুখ-দুঃখের সাথী হলাম!যে কোন বিপদের আমি তোমার পাশে ছিলাম আর সারাজীবন পাশে থাকবোও! আজকে আল্লাহর পবিএ কলেমা দিয়ে তোমাকে আমি আমার বর হিসাবে কবুল করলাম! (মনে মনে)
আলহামদুলিল্লাহ কবুল,কবুল,কবুল

তারপর ওরা দুজনেই কবুল বলে! সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে!কারন এমন বিয়ে এর আগে কেউ দেখে নি!কাজি তো চোখ বড় বড় ওদের দিকে তাকিয়ে আছে!কাজি হুট করে বলেই ফেললো।
কাজিঃআমি কেন আমার বাবা মনে হয় এমন বিয়ে দেখি নি!তোমাদের জন্য দোয়া রইলো তোমরা সারাজীবন একে অপরের পরিপূরক হয়ে থাকো।তোমরা য আল্লাহর কলেমা পড়ে দুজন দুজনকে মেনে নিয়েছো এটাই তো আমাদের মুসলিম ধর্মের রীতি!আমরা কাজিরা তো মাএ উছিলা তোমাদের জুটি তো বেঁধেছে আল্লাহ। ভাল থাকো সুখে থাকো এটাই কামনা করি।

সবাই ওদের জন্য দোয়া করে!তারপর দুজনকে খেতে নিয়ে যায়।রাসেল আর মিষ্টু খেতে বসে! মিষ্টুর খুব খুধা লাগছে তাই মিষ্টু রাসেলের প্লেটে চারটা বড় বড় চিংড়ি দিয়ে বলে..
মিষ্টঃতারাতারি এগুলো খোসা ছাড়িয়ে দাও তো!আমার খুব খুধা লাগছে আগে খায়…তারপর তোমাকে দেখবো কেমন! আমার বর আর আমিই এখনো ভালো মত তোমাকে দেখি নি…দাড়াও আগে খেয়ে নেয়।
রাসেলঃহুমমম! আগে খাও.. (রাসেল মুচকি হেসে, তাই করলো)
মিষ্টুঃবাহ্!নিজের বিয়ের খাবার যে এত টেস্টি হয় আগে জানতাম না তো।ওহহহ্ ভাইয়া (মুহিতকে দেখে)
মুহিতঃকি রে বোন তোর কিছু লাগবে!ডাকলি কেন?
মিষ্টুঃতু,,মি
রাসেলঃমুহিত খেতে বস তো তুই!আগে খেয়ে তারপর কাজ করবি।চুপ কোন কথা না(মুহিতকে টেনে জোর করে বসিয়ে)
মিষ্টুঃআমিও তাই বলছিলাম!আচ্ছা আম্মু কি খেয়েছে?
মুহিতঃহুমমম!আমি খাইয়ে দিয়েছি।আচ্ছা আয়ান রা কই বল তো…ওরা খাবে না।
রাসেলঃপাশের টেবিলে তাকা ভাই!ওরা দেখ কেমন হালুম হালুম করে খাচ্ছে। হা হা হা
মুহিতঃতোরা এখানে খেতে থাক আমি ওখানে যায়।ওদের দেখি কিছু লাগবে কি না??
রাসেলঃবেশি কথা বলিস না তো!চুপ করে খাওয়া শুরু কর।মুহিত ওই বাচ্চা গুলো কি খেয়েছে??
মুহিতঃহুমম আমি অনেক আগেই খাইয়ে দিসি।
মিষ্টুঃকোন বাচ্চার কথা বলছো?
রাসেলঃসব খুলে বললো মিষ্টুকে…
মিষ্টুঃওরা কোথায়?? আমি ওদের সাথে দেখা করবো?
রাসেলঃহুমমম!তোমার সাথে সবাই দেখা করেই চলে যাবে ঢাকাতে।
মুহিতঃকেন রে?থাকুক না কিছু দিন..
রাসেলঃনা রে ভাই!ওদের এভাবে সামলাতে পারবে না।আর ওদের সেইভ রাখতে ওদের দেখাশোনার দরকার বাট এখানে কেউ কথা শুনবে না। তাই ওরা এখন মিষ্টুর সাথে দেখা করেই চলে যাবে…আর পরে আমরা গিয়ে ওদের সাথে দেখা করে আসবো।

তারপর ওরা খাওয়া শেষ করে নিলো!আর সব বাচ্চা গুলোর সাথে মিষ্টু দেখা করলো।ওরা তো মিষ্টুকে ছাড়তে চাচ্ছে না সবাই ওদের ছোট ছোট হাত দিয়ে মিষ্টুকে জড়িয়ে ধরছে, হামি দিচ্ছে, মিষ্টুও ওদের সাথে অল্পতে মিশে গেছে।তারপর বাচ্চা গুলো মিষ্টুদের থেকে বিদায় নিলো আর ওরা চলে গেল।রাসেল বার বার করে বলে দিলো যাতে সাবধানে নিয়ে যায় ওদের!মুহিত, রাসেল অনেক গুলো খাবার দিয়ে দিলো যাতে ওরা রাস্তায় খেতে পারে। বাচ্চাদের বিদায় দেওয়ার পর এবার মিষ্টু আর রাসেলের যাওয়ার পালা…

মুহিতের আম্মু রাসেলের হাতের উপর মিষ্টুর হাত রেখে বললো।
আম্মুঃআজকে থেকে মিষ্টুর সব দায়িত্ব তোর বাবা! ওর ভাল মন্দ সবকিছু এখন তোর উপরে ছেড়ে দিলাম!আমার মেয়েটা বড্ড জেদি ওকে সামলে নিস বাবা। (চোখ ছলছল করে).
রাসেলঃ আম্মু আমার শেষ নিঃশ্বাস অবধি ওকে আগলে রাখার চেষ্টা করবো।তুমি একদম চিন্তা করো না।
মিষ্টুঃ আম্মু তুমি একটা কথা ভুল বলে ফেললে।এটা কিন্ত ঠিক না।
আম্মুঃআমি আবার কি ভুল বললাম??
মুহিতঃ কি ভুল রে বোন?? (মিষ্টুর পাশে এসে দাড়িয়ে)
মিষ্টুঃরাসেলকে কেন বললো, আমার সব দায়িত্ব ওর।এটা তো ভুল বললো!!! (মুহিতের দিকে তাকিয়ে)
আম্মুঃএখানে ভুল কি করে হলো??এখন থেকে তো তোর সব দায়িত্ব ওরই(অবাক হয়ে তাকিয়ে)
মিষ্টুঃআমি রান্না করলে রাসেল খেতে পারবে,আমি কাপড়ে ধুয়ে দিলে পরতে পারবে,আমি বিছানা করে দিলে শুতে পারবে,,আমি বাসার দরজা খুলে দিলে বাসায় ডুকতে পারবে, আমি লকারে চাবি দিলে ও টাকা নিতে পারবে,তাহলে এখানে তোমার বলার উচিত ছিলো মিষ্টু তোকে রাসেলের সব দায়িত্ব দিলাম!রাসেলকে মারিস না বুঝে শুনে মানিয়ে নিস! আর দুজনে মিলে মিশে এক সাথে চলিস,,তা না করে তুমি উল্টো কথা বলছো….

স্পর্শানুভূতি পর্ব ৪৩

বেচারা রাসেল আর হাসি আটকে রাখতে পারছে না! সেই কবুল বলা থেকে এখন পযন্ত অনেক কষ্টে নিজের হাসি আটকে রাখছিলো!বাট আর সম্ভব হচ্ছে না!মুহিত সহ ওখানে উপস্থিত সবাই হো হো করে হাসছে!আর মিষ্টু ভ্রু কুচকে সবার দিকে তাকিয়ে আছে।মুহিতও মিষ্টুর কথা শুনে না হেসে আর পারলো না।আয়ান রা তো অলরেডি হাসতে হাসতে লুটিয়ে পড়ছে!রাসেল মাথা নিচু করে হাসছে কারন এখন জোরে হাসা যাবে না নতুন বর বলে কথা!মিষ্টুর আম্মু এখন কি বলবে বুঝতে পারছে না।তারপর ওদের বিদায় দেওয়ার পালা বাট মিষ্টু তো সেই খুশি!রাসেল এবার একটা কথা বললো মিষ্টুকে! আর রাসেলের কথা শুনে সবাই আবার হো হো হাসতে শুরু করলো…

রাসেলঃ আচ্ছা মিষ্টু!মেয়েরা তো বাবার বাসায় থেকে বিদায় নেওয়ার সময় অনেক কান্না করে!তুমি কাঁদছো না কেন??? তোমার কান্না দেখার জন্য আমরা ওয়েট করছি সেই কখন থেকে….
মিষ্টুঃ আমি কাঁদবো কেন? আমি তো রাত্রি আপুর বিয়েতে অগ্রিম কেঁদে দিসি….তাহলে কাঁদবো কেন??

স্পর্শানুভূতি পর্ব ৪৫