স্পর্শানুভূতি পর্ব ৪৫

স্পর্শানুভূতি পর্ব ৪৫
writer:Nurzahan akter (allo)

রাসেল এবার একটা কথা বললো মিষ্টুকে! আর রাসেলের কথা শুনে সবাই আবার হো হো হাসতে শুরু করলো…

রাসেলঃ আচ্ছা মিষ্টু!মেয়েরা তো বাবার বাসায় থেকে বিদায় নেওয়ার সময় অনেক কান্না করে!তুমি কাঁদছো না কেন???
মিষ্টুঃ কাঁদবো কেন? আমি তো রাত্রি আপুর বিয়েতে অগ্রিম কেঁদে দিসি…. (রাসেলের দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে)

আবার আরেক দফা হাসির রোল পড়ে গেল!রাসেলের ফ্ল্যাটে যেতে ২০ মিঃ লাগবে!মুহিত রাসেল আর মিষ্টু বাসায় নিয়ে যায় তারপর আরেক দফা আড্ডা দেয় আর হাসিতে লুটিয়ে পড়ে একেকজন!রাত্রি আর মিতুর মিষ্টুকে ডেকে অন্য রুমে যায় আর উপদেশ দেয়।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

রাত্রিঃ মিষ্টু বোন আমার জানিস তো আজকের রাতটা সবার জীবনে আসে!প্রতিটা মেয়ের কাছে এটা সপ্নের রাত তাই…যদি রাসেল ভা,,ই
মিষ্টুঃহুমম আসল কথায় এসো আপু!তুমি যে আমাকে কেন ডেকে এনোছো? আমি জানিনা মনে করছো??
মিতুঃহা হা হা হা! কি জানিস তুই??
রাত্রিঃবল তো কি জন্য ডেকে এনেছি??
মিষ্টুঃএখন বলবে যে রাসেল যদি কাছে আসতে চাই বাঁধা যেন না দেয়!ওকে মানিয়ে নেয় আরো ব্লা ব্লা হাজিবাজি।তুই না বড় আপু তুই এখন এসব বলবি এখন.. (দাঁতে দাঁতে চেপে)
রাত্রিঃবড়রাই তো শিখায় দেয় তাই না (মিষ্টুর দিকে তাকিয়ে)
মিষ্টুঃ আপু আমরা ডিজিটাল যুগের ছেলেমেয়ে এটা কি তুই ভুলে গেছিস??তুই বলবি তারপর আমরা এসব জানবো এটা তুই এখনো বিলিভ করিস???তুই হয়তো মনে করছিস আমাকে এসব বললে! আমি লজ্জা পাবো তাই মনে করছিস তাই না! তোদেরও বলি হারি যাই এসব লজ্জাবতী লতা তো আমি না…
রাত্রিঃএখন তো বিয়ে হয়ে গেছে এবার তো তোর মুখে লাগাম দে বইন আমার।
মিষ্টুঃকেন লাগাম দিবো তাই বল??সেই ক্লাস সিক্সে থাকতে শারীরিক শিক্ষা বই পড়ে সব জেনে গেছি! আর এখন তুই এসেছিস আমাকে এসব বোঝাতে,,,তোকে এখন দাদি -নানি সাজতে কে বলছে???
মিতুঃহা হা হা।
রাত্রিঃমাফ কর বইন আমার! আমার বলাই ভুল হয়েছে…

ওদিকে….
জয় রাসেলের হাতে ছোট একটা বক্স তুলে দেয়!রাসেল ভ্রু কুচকে জিজ্ঞাসা করে এটা কি?জয়,আয়ান, শুভ্র সবার মুখে দুষ্টু হাসি!রাসেলের ওদের হাসি দেখেই বুঝে গেছে এটাকে কি আছে?এবার রাসেলের খুব লজ্জা লাগছে মুহিতের সামনে!যতই হোক মিষ্টুর বড় ভাই বলে কথা।আর মুহিতও কি বলবে বুঝতে পারছে না?মুহিত প্রথমে ব্যাপার টা ধরতে পারে নি বাট ফাজিল গুলো হাসি দেখে তখন বুঝতে পেরেছে।মুহিত রাসেলের মুখের দিকে তাকিয়ে দেখছে রাসেল আনইজি ফিল করছে।মুহিত ওর ফোন এসেছে এমন বাহানা করে আর কথা বলতে বলতে ওখান থেকে কেটে পড়ে…আর রাসেল রাগী চোখে ওদের দিকে তাকিয়ে আছে।

তারপর প্রায় রাত ৮ঃ৩০টার দিকে ওরা খেয়ে নিলো!রাসেল খেতে চাচ্ছিলো না বাট মুহিতের আম্মু না খাইয়ে ছাড়ে নি।তারপর ওরা হাসি মুখে ওরা সবার থেকে বিদায় নিলো।আজকে কারো চোখে পানি নেই মুহিতেরও কোন আপসোস নেই! কারন রাসেল যে মিষ্টুকে কোন কষ্ট দিবে না এবং মুহিতের মতই আদরেই রাখবে।আর বড় কথা এখানে মিষ্টুর খুশি আর মিষ্টুর হাসি মুখ দেখেই সবাই খুশি।

আপনাদের অদ্ভুত লাগছে এখন গল্পটা পড়ে তাই না!মিষ্টু যে কাঁদে নি এজন্য কেমন উল্টো লাগছে তাই না!কারন মেয়ে বিদায় নেওয়ার সময় কাঁদতেই হবে এটাও একটা রুলস্ করে ফেলছে আমাদের সমাজ!বেশি কাঁদলে বলে নিশ্চয়ই রিলেশন ছিলো তাই এভাবে কাঁদছে, আর না কাঁদলেও বলবে দেখ একটু কাঁদলেও না কেমন ড্যাং ড্যাং করতে করতে চলে গেলো!কে কাঁদবে আর কে কাঁদবে সেটা তাঁদের ব্যাপার আমাদের নিন্দুক সাজার কোন প্রয়োজন আছে বলে তো আমি মনে করি নি!তাই আমাদের এমন মানসিকতা গুলো মন থেকে বিতারিত করাই শ্রেয়।

রাসেল মিষ্টুর দিকে তাকিয়ে আছে আর মিষ্টু বাইরে রাস্তাতে গাড়ি দেখতে বিজি!রাসেল একদৃষ্টিতে মিষ্টুর দিকে তাকিয়ে আছে! বউসাজে মিষ্টুকে দারুন লাগছে! তারপর ২০মিঃ পর ওরা ফ্ল্যাটের সামনে চলে আর দুজনেই গাড়ি থেকে নামে!মিষ্টু গাড়ি থেকে নেমে দাড়াতেই রাসেল ওকে কোলে তুলে নেয়….মিষ্টু রাসেলের গলা জড়িয়ে ধরে…

রাসেল আর মিষ্টু রুমে ঢুতে দেখে ওদের ফ্ল্যাট টা বেলুন,ক্যান্ডেল,গোলাপের পাপড়ি, দিয়ে অসম্ভব সুন্দর করে সাজানো।মিষ্টু তো অবাক হয়ে সব দেখছে!রাসেল দরজা দরজা আটকে দেয় আর মাথায় থেকে পাগড়ি খুলে রাখে….আর রাসেল দেখে মিষ্টু ঘুরে ঘুরে সাজানো দেখছে।

রাসেল মিষ্টুকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে বলে!
রাসেলঃআজকে আমার আম্মু থাকলে হয়তো আমাদের অনুষ্ঠান টা আরো বড় করে করতো!বাসায় কত লোকজন থাকতো!কত হইচই হতো বাট দেখো নতুন বউ নিয়ে আসলাম বাসাটা কেমন ফাকা…তাই না।
মিষ্টুঃলোক ভর্তি মানুষের মাঝে থাকতে চাইলে তো আমাদের বাসাতেই থাকতে পারতাম।এখানে আসার তো দরকার ছিলো না তাই না…।তোমাকে আমার পাশে চাই রাসেল এত লোকজন দিয়ে কি হবে বলো?
রাসেলঃহুমম!আচ্ছা তুমি এইসব ভারী ড্রেস বদলে নাও আর ফ্রেস হয়ে নাও।

মিষ্টু বেডরুমে যেতে চাইলে রাসেল যেতে দেয় না!মিষ্টু অন্য রুমে চলে যায়। একটু পরে মিষ্টু রাসেলকে ডাকে আর চুলের ক্লিপ গুলো খুলে দিতে বলে!রাসেল গিয়ে গিয়ে মিষ্টু ওর চুলের জট পাকিয়ে বারোটা বাজিয়ে দিয়েছি!রাসেল মিষ্টুকে ড্রেসিং টেবিলের সামনের টুলে বসায় আর চুলে জট ছুটাতে থাকে সযত্নে। পাক্কা ১ঃ২৩ মিঃ লাগছে চুলে জট ছুটাতে…।
রাসেলঃচুল গুলো এই কি অবস্থা করছো তুমি?আর এত ক্লিপ কেউ লাগায় চুলে?আর এত পেচিয়ে পেচিয়ে চুল বেঁধে ছিলে কেন শুনি?দেখো তো চুলের জান আর রাখো নি!!আর যেন না যেন দেখি এভাবে চুল না বাধতে।
মিষ্টুঃআপু আর মিতু কুওি এমন করছে!এত করে বললাম এমন না করতে তাও শোনে নি…
রাসেলঃচুলে কত বছর শ্যামপু করো নি তুমি?চুল গুলো এমন লাগছে কেন??
মিষ্টুঃশ্যামপু তো আজকেও করছি!চুল বাধার সময় হেয়ার স্প্রে করছে তাই এমন মনে হচ্ছে! আর হেয়ার স্প্রে দিলে এমনই লাগে,,
রাসেলঃএসব দেওয়ার কি দরকার শুনি?যওসব হাজিবাজি দেওয়া জন্যই তো তোমাদের চুল নষ্ট হয়…
মিষ্টুঃহেয়ার স্প্রে করে যেমন ভাবে চুল বাঁধি না কেন চুল নষ্ট হয় না ওভাবে থাকে।আর তোমাকে এসব বুঝতে হবে না..
রাসেরঃআমি বুঝতেও চাই না!এসব আর দিবে না আমি চাই না আমার বউটা এসব দিয়ে তার রিয়েল সৌন্দর্য টাকে লুকিয়ে রাখুক।এখন যাও ফ্রেস হয়ে এসো কেমন,,,
মিষ্টুঃহুমমম! আমার ড্রেস কোথায় আছে??
রাসেলঃআজকে শাড়ি পড়ো প্লিজ!
মিষ্টুঃআমি তো শাড়ি পড়তেও পারি না আর শাড়ি পড়ে হাটতেও পারি না।
রাসেলঃআমি পড়িয়ে দিবো কেমন!প্লিজ আর না করে না..
মিষ্টুঃহুমম

স্পর্শানুভূতি পর্ব ৪৪

রাসেলও ওর ড্রেস বদলে রান্না ঘরে চলে যায় তারপর কফি বানাই দুজনের জন্য! মিষ্টু সাওয়ার নিলো কারন মেকাব,হেয়ার স্প্রে, এত ভারী শাড়ি খুব বিরক্ত লাগছিলো!এখন সাওয়ার নিয়ে শরীরটাও হালকা লাগছে।রাসেল এসে মিষ্টুকে খুব যত্ন করে শাড়িটা পড়িয়ে দেয় কোলে তুলে নেয়। দুজনেই বারান্দায় বসে কফি খাচ্ছে আর অনেক গল্প করে..রাসেল মিষ্টুকে কোলে তুলে নেয় আর ওদের বেড রুমে নিয়ে বেডে বসায়!আর রাসেল রান্না ঘরে মগ রেখে এসে দেখে মিষ্টু এক জায়গাতেই দাড়িয়ে আছে আর ঘুরে ঘুরে ফুল দিয়ে সাজানো বেড রুমটা দেখছে।

মিষ্টু গিয়ে বেডে বসতেই রাসেল মিষ্টুর কাছে গিয়ে চোখ লাল করে তাকায়!রাসেল এমন ভাবে তাকিয়ে আছে দেখে মনে হচ্ছে চোখ দিয়ে গিলে ফেলবে।রাসেল মিষ্টুকে ওর দিকে ঘুরায় আর ঠাস্ করে থাপ্পড় মেরে দেয়….মিষ্টু অবাক চোখে রাসেলের দিকে তাকিয়ে থাকে….

স্পর্শানুভূতি পর্ব ৪৬