স্বামী পর্ব ১২

স্বামী পর্ব ১২
লেখকঃপারভেজ ইসলাম

আদৃতঃরায়য়হানন।
আমিঃকি!!আদৃত আমার মেয়ে।রায়হান নিয়ে গিয়েছে আমার জাহানকে।
আদৃতঃজান্নাত তুমি শান্ত হও আমি দেখছি।
আমিঃদেখছি মানে আদৃত আপুর এই অবস্থা আমার মেয়েটা।আদৃত আমার মেয়েকে রায়হান কিছু করে ফেললে।

আপুর পাশে বসে অনরবত কানছি আর কথাগুলো বলছি।আপু গায়ের রক্ত আমার জামায়,হাতে,আর চোঁখ মোছার কারণবশত মুখেও লেগে গিয়েছে।আদৃতের অবস্থা বেসামাল।সে নিজেই বুঝছে না সে এখন কি করবে?একদিকে বাবুকে পাওয়া যাচ্ছে না,অন্যদিকে আপু আর একদিকে আমি।আমি তোহ পাগল প্রায়।কেদেই যাচ্ছি।বাবুকে নিয়ে গেলে এমন কিছুই হতো না।আমার জন্যই এতো কিছু হচ্ছে।আমি যদি এতো কিছু না করতাম।একবারেই আদৃতকে বুঝতাম।সবার কথা একবার শুনতাম তাহলে কি কিছু হতো।আমার বাচ্চাটাকে না কিছু করে ফেলে রায়হান।এরই মধ্যে পৌঁছে যাই এ্যাম্বুলেন্স।আপুকে নিয়ে যায় হসপিটালের বয়রা এ্যাম্বুল্যান্স উঠাতে লাগে।আমাকে আদৃত হাত ধরে উঠায়। তার অবস্থাও যে ভালো তা কিন্তু নই।তার মনের অবস্থা করুণ কিন্তু বাইরে থেকে সে নিজেকে শক্ত রেখেছে।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

আমি হাসপাতালে বসে কেদে যাচ্ছি।আদৃত, তার দারা যতটুকু সম্ভব তিনি তাই করছেন।পুলিশকেও জানিয়ে দিয়েছেন।তারা রায়হানকে খুঁজছেন।তিনিও তার লোকজন লাগিয়ে দিয়েছেন।কি দিয়ে কি করছেন তার খবর আমার নেই।আমি শুধু আমার মেয়েকে চাই।আর কিছু চাই না।আমার মেয়ের কিছু হয়ে গেলে আমার আর এই দুনিয়াতে থেকে কি হবে।আদৃত বসে বসে আমায় শান্তনা দিচ্ছেন।আপুর অপারেশন চলছে।ডাক্তার জানিয়েছেন ক্ষতটা বেশখানিক গভীর।আর রক্তও বেশ ঝড়ে গিয়েছে।

আমি আর আদৃত ওটির সামনেই বসে আছি।আমার মাথায় শুধু বাবুর চিন্তা ঘুরছে। আমি ভুলভাল আওড়াচ্ছি আর আদৃতকে বারেবার বলছি জাহানকে এনে দিতে।আদৃত বার বার,প্রতিবার উত্তরে বলেই যাচ্ছে জাহানের কিছু হবে না।রায়হান তার কিছু করতে পারবে না।কিন্তু মায়ের মন মানে এতো সহজে।জাহানকে আমার কোলে না এনে দেওয়া পর্যন্ত আমি তো শান্ত হতে পারব না।ভয়টা তোহ যত সময় অতিবাহিত হচ্ছে ততোই বেড়ে চলেছে।এরই মধ্যে শুনি হসপিটাল জুড়ে চিল্লাচিল্লি।আমার সেইদিকে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই।আদৃতেরও নেই।কিন্তু আমরা যেখানে বসে আছি তার পাশে এসে দুইজন বলাবলি করছিলেন,

একজনঃমেয়েটার বয়স বেশি নই ২৭-২৮ হবে।এই অকালেই প্রাণ হারালো।
আরেকজনঃহে।শুনলাম মার্ডার নাকি।ইচ্ছা করে নাকি গাড়ি মেয়েটার উপর দিয়ে চালিয়ে দিয়েছে।মেয়েটার মা কানছিল বলছিলো আজকে রাতেই নাকি মেয়েটার বাইরে চলে যাওয়ার কথা ছিলো।কিন্তু তার আগেই।
একজনঃমার্ডার নাকি এক্সিডেন্ট ওতো জানিনা বাপু কিন্তু শুনলাম মেয়ে নাকি মেলা বড় অফিসে কাজ করত মেলা বড় লোক মানুষ।ওইযে কি সিআই কম্পানি সেইখানের।

কথাগুলো আমি বা আদৃত কেউই এতোক্ষণ তেমন মনোযোগ দিয়ে কথাগুলো শুনছিলাম না।কিন্তু এবার আদৃতের টনক নড়ল কম্পানির নাম শুনে।কারণ এই কম্পানিতে তো হৃদিতা কাজ করে।২৭-২৮ বছর,কম্পানির বস,রাতে ফ্লাইট তথ্য গুলো কোথাও না কোথাও হৃদিতার সাথেই মিল খায়।তাহলে কি হৃদিতা?না না কি করে সম্ভব।আদৃত সেই মেয়ের লাশ দেখার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়ে।কিন্তু কিভাবে যাবে আমাকে এই অবস্থায় একা ফেলে।তিনি তাদের মধ্যের একজন মহিলাকে আমার সাথে থাকতে বলে ওপাশটাই গেলেন।আমি আদৃতের উঠে যাওয়া দেখে বেশ অবাক হয়েছি।তাই আর সাত-পাঁচ না ভেবে উঠে আদৃতের পিছন পিছন যেতে লাগলাম।
আদৃত সেইখানে গিয়ে দেখল লাশটার উপর সাদা চাদর বিছানো।সেই চাদর জুড়ে ছাপ ছাপ রক্ত।মুখ যে স্থানে সেই স্থানে রক্তের পরিমাণ তুলনামূলক বেশি।আদৃত পাশে তাকিয়ে দেখে হৃদিতার আম্মু বসে কেঁদেই যাচ্ছে।আদৃতের আর বুঝতে বাকি রইল না যে মেয়েটা হৃদিতা।আদৃত জলদি গিয়ে হৃদিতার আম্মুকে সান্ত্বনা দিতে থাকে।কিন্তু একটা জিনিস ভাবাই তাকে কে করল হৃদিতার খুন?
আমি গিয়ে আদৃতের সামনে দাঁড়িয়ে বলি,

আমিঃআদৃত…..
আদৃত মুখতুলে আমার দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
আদৃতঃজান্নাত আপনাকে না ওইখানে বসতে বললাম।
আমিঃইনি কে আদৃত?আর ইনার হয়েছেই বা কি?
আদৃতঃজান্নাত তুমি শান্ত হও।তুমি গিয়ে বসো।
আমিঃনা আদৃত আমায় বলেন কোনো খারাপ কিছু হয়নি তো?আর আদৃত বাবুর ব্যাপারেও কি কিছু জানেননি।
আদৃতঃজান্নাত এমন কিছুই না।আপনি এখন ঠিক নেই আপনাকে আমি সব পড়ে বলছি।(উঠে দাঁড়িয়ে)
আমিঃনা আদৃত।যা বলার এখন বলেন।নইলে দম বন্ধ হয়েই মরে যাব। প্লিজ বলেন হয়েছে টা কি?
আদৃতঃজান্নাত হৃদিতা মারা গিয়েছে।কেউ আজকে সকালে ওর উপর দিয়ে প্রাইভেট কার চালিয়ে দিয়েছে।কিন্তু তুমি এসব নিয়ে ভেবো না।

আমি হৃদিতার মার্ডার হয়েছে এইটুকু শোনার পর আর কিছুই শুনতে পাচ্ছিনা।দুইহাত দিয়ে মুখচেপে জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিচ্ছি আর পিচাচ্ছি।মাথায় শুধু একটাই খেয়াল ঘুরছে রায়হান এমনটা করেননি তো?রায়হান যদি হৃদিতাকে খুন করে থাকে আমার মেয়ে ওকেও কি মেরে ফেলেছে।কিন্তু রায়হান এসব করছেই বা কেনো?আদৃত এসে আমার বাহু ধরে ঝাকিয়ে বলে,
আদৃতঃজান্নাত!জান্নাত!
আমিঃআদৃত রায়হান হৃদিতাকে মেরেছে,ওর জন্য লায়লাপু ওর জন্য মৃত্যুর সাথে লড়ছে ও আমার মেয়েকে কিছু করে ফেললে আদৃত তখন কিহ হবে আদৃত।

আদৃত আমার কথা শুনে বেশ বিস্মিত হন।এ কাজ যে রায়হান করতে পারি এই জিনিসটা তার মাথায় একটাবারের জন্যও আসেনি।রায়হান তাহলে প্রতিশোধের জন্য সবার জানের পিছনে ছুটছে।সে সবার খুন করে তার প্রতিশোধ পূরণ করতে চাই।তার মানে সে জান্নাত আজকে ওই বাড়িতে উপস্থিত থাকলে জান্নাতকেও মেরে ফেলত।জান্নাত যদি আজকে আদৃতের সাথে সকালে না দেখা করতে যেত তাহলে তোহ হৃদিতা বা লায়লা কারো স্থানে আজকে জান্নাত থাকত।ভাবতেই আদৃতের বুক কেপে উঠে।

আমি একনজরে হৃদিতার সাদা চাদরে ঢাকা লাশটার দিকে তাকিয়ে রয়েছি।আজ সকালেও মেয়েটার সাথে কথা হলো আমার।একদম সুস্থ।আমি আমার ২১ দিনের মেয়েকে রায়হান নিয়ে গিয়েছে এই কষ্টেই মরে যাচ্ছি আর হৃদিতার মা তার ২৭ বছর বয়সী মেয়েকে হারিয়েছেন।তার মনের অবস্থা কতোই না করুণ।এরই মধ্যে শুনি ডাক্তার এসে আদৃতকে ডাকদিলেন।আদৃত আমার সামনে থেকে সড়ে গিয়ে ডাক্তারের সামনে গিয়ে দাঁড়ালেন।আমিও ঘুরে ডাক্তারের দিকে তাকালাম।হয়তবা আপু এখন সুস্থ কিন্তু ডাক্তার যা বললেন সেটা আমি স্বপ্নেও কল্পনা করিনি।লায়লা আপুও নাকি আমাদের ছেড়ে পরকালে পাড়ি জমিয়েছেন।অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ এর জন্য তিনি মারা গিয়েছেন।ভাবতে পারছি না আর কিছু।রায়হান এতো নিষ্ঠুর হলো কিভাবে?কিভাবে করল এমন কাজ।আমার শরীরটা হঠাৎ করে কেমন লাগছে।আমি আদৃতের দিকে তাকাতেই আসতে আসতে তার চেহারাটা ঝাপসা হিয়ে আসলো আর আমি সেইখানেই লুটিয়ে পরলাম।মাথায় একটা জিনিসই ঘুরছিলো আমার মেয়ের সাথে কি করেছে রায়হান?

আজকে দুইদিন পার হয়ে গিয়েছে না রায়হানের না জাহানের কারো কোনো খোঁজ পাচ্ছিনা।আদৃতের লোক আর পুলিশ পাগলের মতো খুঁজে চলেছে ওদের কিন্তু ওরা জেনো কোথাও নেই।রায়হান যেন হাওয়ায় মিলিয়ে গিয়েছে নইলে বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে।যেসব জায়গায় থাকতে পারে সেই সব জায়গাতেই খোজা হয়েছে কিন্তু কোথাও পাইনি।নিরব ভাইয়াও কিছু জানেন না।আমি জীবিত লাশে পরিণত হয়েছি।দুইদিন নিজেকে রুমে বন্ধ করে রেখেছি।কারো কোনো কথা শুনছি না।

স্বামী পর্ব ১১

দাদিও ফিরে এসেছেন।আদৃত গার্ডের ব্যবস্থাও করেছেন।আমার শুধু আমার মেয়ের চিন্তা।আমার খাওয়া ঘুম কিছু নেই।তাই বেশ দুর্বলও হয়ে উঠেছি।কিন্তু সেইদিকে আমার কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই।আমি নিজের রুমে বিছানার উপর বসে বসে কাদছি।কান্না ছাড়া আর আল্লাহর কাছে দুআ করা ছাড়া আমার কিছু করার নেই।এরই মধ্যে দেখি আদৃত আসলেন।তার হাতে খাবারের প্লেট।আমি তাকে দেখে আমি মুখ নামিয়ে অন্যদিকে ঘুরে তাকায়।

আদৃতঃপুলিশ তো চেষ্টা করছে জান্নাত।আর তুমি না খেয়ে থাকলে কি বাবুকে পেয়ে যাবে না?
আমিঃচেষ্টা করে পুরো দুইদিনেও খুঁজে পেল না জাহানকে।কি এমন চেষ্টা করছে তারা?তুমি দেখেছো তাদের কোনো কাজ করতে কিচ্ছু করছে না তারা।তুমি আমাকেও খুঁজতে যেতে দিচ্ছ না।

আদৃতঃযেসব জায়গায় রায়হানের থাকার সম্ভাবনা আছে সব জায়গায় খুঁজেছে রায়হানকে।তোমাদের বাড়ি,হৃদিতার বাড়ি সব জায়গায় খুঁজেছে কিন্তু পাইনি।আর তোমায় যেতে দিতে বলছ রায়হান তোমায় সবার আগে মারতে চাই।আর তুমি অনেক অসুস্থ।
আমি আদৃতের কথাগুলো শুনতে শুনতেই আমার মাথায় একটা কিছু আসলো।আমি রায়হানের দিকে তাকিয়ে বললাম,
আমিঃএকটা জায়গা আছে যেইখানে আপনি বা পুলিশ কেউ খোঁজ নেননি।সেইখানে থাকার সম্ভাবনা আছে।
আদৃতঃকোথাই?

এরই মধ্যে একজন সার্ভেন্ট এসে গেট নক করেন।আদৃত তাকে ভিতরে আসতে বলেন।তার হাতে অনেক বড় একটা বক্স লাল পেপারে মোড়ানো।দেখেই কেমন ছ্যাত করে ওঠে মনটা।আদৃত সেটা বাইরে নিয়ে রাখতে বললেও আমার জোড়াজুড়িতে আমার সামনেই বাক্সটা খুলতে শুরু করন।বাক্সটা খোলার সাথে সাথে বাক্সের মধ্যে তাকাতেই আদৃত উঠে দাঁড়িয়ে দুইকদম পিছিয়ে যান।আর আমি জাহান বলে চিল্লিয়ে উঠি।

স্বামী পর্ব ১৩