স্রোতস্বিনী পর্ব ২০

স্রোতস্বিনী পর্ব ২০
মুগ্ধতা রাহমান মেধা

চট্টগ্রামে মেহরাদের নিজস্ব ফ্ল্যাট আছে।সেখানে সে একাই থাকে।সরকারি কোয়ার্টারে সে থাকে না।প্রথম প্রথম বনলতা বেগমও এখানে এসে থাকতেন। কিন্তু তার এই অপরিচিত শহর ভালো লাগে না।সকল আত্মীয়স্বজন সবাই ঢাকায় থাকায় ওনার এখানে একা একা ভালো লাগে না।বড় কথা হচ্ছে গিয়ে উনি উনার নিজের বাড়ি ছাড়া কোথাও থাকতে পারেন না।

এই বাড়িটায় উনার স্বামীর কত স্মৃতি আছে কিনা।স্রোত জানতো মেহরাদের ফ্ল্যাটের কথা কিন্তু ঠিকানা জানতো না।যেহেতু বনলতা বেগমকে সে বলে আসে নি তাই ওনার থেকেও জানতে পারে নি।মেহরাদ স্রোতকে নিয়ে এখন তার ফ্ল্যাটেই এসেছে। ফ্ল্যাটে প্রবেশ করার সময় মেহরাদ স্রোতকে অভ্যর্থনা করেছে,
“ওয়েলকাম টু ইউর এনাদার হাউস।”

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

স্রোত বিপরীতে শুধু স্মিত হেসেছিলো।
স্রোত অবাক হয়ে যায় এই দেখে যে একটা মানুষ একা থাকে তবুও তার ফ্ল্যাটটা কত গোছানো।কেউ বলবে না যে এখানে শুধু একজন পুরুষ থাকে।বুয়া রাতের বেলায় এসে শুধু রান্না করে দিয়ে যায়।
আজকে মেহরাদ বুয়াকে আসতে নিষেধ করেছে।নিজের বউকে নিজের হাতে রান্না করে খাওয়াবে।স্রোত নিষেধ করলেও কে শোনে কার কথা।

মেহরাদ চলে যায় ফ্রেশ হতে।বেডরুমের একপাশের দেয়াল দেখে স্রোত হা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।পুরো দেয়ালটা জুড়ে তার ছবি,বিয়ের আগের বিয়ের পরের সব মিলিয়েই।দেয়ালটাকে স্রোতস্বিনী দেয়াল নামে অ্যাখ্যায়িত করলে ভুল হবে না।তিনটে ছবি অন্যগুলোর তুলনায় একটু বেশি বড় ফ্রেমে আটকানো।মধ্যের বড় ছবিটা স্রোতের কবুল বলার সময়ের,যখন মেহরাদের হাতে তার হাত বন্দী আর একে অপরের দিকে চেয়ে আছে।এই ছবিটার এক পাশে মেহরাদের ইউনিফর্ম পড়া ছবি অন্য পাশে স্রোতের হাস্যোজ্জ্বল একটা ছবি, যেখানে সে অন্যদিকে তাকিয়ে হাসছে আর কানে কাঠগোলাপ গোঁজা। এই ছবিটা তার বিয়ের আগের ছবি।এখানে আরো অনেক বিয়ের আগের ছবি রয়েছে।স্রোত ভাবছে এগুলো মেহরাদ কিভাবে পেয়েছে!তখনই মেহরাদ ফ্রেশ হয়ে স্রোতের পেছনে এসে দাঁড়ায়। জিজ্ঞাসা করে,

“কি দেখছো এভাবে?”
“আমার আগের ছবিগুলো আপনার কাছে কিভাবে এলো?” দেয়ালে চোখ রেখেই প্রশ্ন করলো স্রোত।
“আমার আধে ঘরওয়ালি আছে না?” হেঁসে বলে মেহরাদ।
“মান্ধবী দিয়েছে!কবে?”
“এসব আপনার না জানলেও চলবে বেগম সাহেবা। আপনি এখন ফ্রেশ হতে যান।আমি আপনার জন্য খাবার তৈরি করি।”

স্রোতের কাঁধে হাত রেখে তাকে বলে মেহরাদ।স্রোত ওয়াশরুমে যেতে নিলে মেহরাদ বলে,
“আলমারির বাম পাশের তিন নাম্বার তাঁকে কিছু প্যাকেট আছে।ঐগুলা দেখে নিও।”
“কি আছে ওতে?”
“নিজেই দেখে নিও।”
বলে মেহরাদ রান্নাঘরে চলে যায়।

স্রোত গিয়ে দেখে ঐখানে কয়েকটা শাড়ী রয়েছে।শাড়ীগুলো বেশ সুন্দর।স্রোত বুঝলো মেহরাদ তাকে পরোক্ষভাবে শাড়ী পড়ার জন্য বলে গিয়েছে।স্রোতের অধর প্রসারিত হলো।শাড়ীগুলোর মধ্যে একটা নীল শাড়ী পছন্দ করে কিছু একটা ভেবে স্রোত ফ্রেশ হতে চলে যায়।ফ্রেশ হয়ে সোজা চলে যায় কিচেনে।মেহরাদ বিরিয়ানি রান্না করছে।স্রোতের পড়নে থ্রি পিস দেখে মেহরাদ একটু বিরক্ত হলেও প্রকাশ করে না।রান্নায় মনোযোগ দিয়ে জিজ্ঞাসা করে,

“প্যাকেটগুলো দেখো নি?”
“নাহ,পরে দেখবো।”
“এখন দেখলে কি সমস্যা?”
“ক্লান্ত লাগছে অনেক।”
“ওহ!”

ছোট্ট করে বলে মেহরাদ।স্রোত বুঝতে পারে মেহরাদের মনঃক্ষুণ্ণ হয়েছে।স্রোত ঠোঁট টিপে হাসলো।
খাবারের পর্যায় শেষে মেহরাদ চলে যায় আবার ফ্রেশ হতে।রান্না করে তার অবস্থা খারাপ।স্রোত সেই সুযোগে নীল শাড়ী নিয়ে চলে যায় পাশের রুমে।

ওয়াশরুম থেকে বেড়িয়ে মেহরাদ স্রোতকে দেখতে পায় না।স্রোতকে অনেক ডাকাডাকির পরেও কোনো সাড়াশব্দ পাওয়া যায় না।মেহরাদ ভাবছে,এতোরাতে কই গেলো!সে রুমের বাহিরে গেলো স্রোতকে খুঁজতে,কিন্তু কিচেন রুম, ড্রয়িং রুমে না দেখে একটু ভয় পেয়ে যায়।পাশের রুমটা অন্ধকার থাকা সত্ত্বেও কি ভেবে যেনো গেলো!দেখতে পেলো বেলকনির দরজা খোলা।এগিয়ে গেলো মেহরাদ।

নীল শাড়ী পরিহিতা এক মায়াবী মানবী চন্দ্রবিলাসে ব্যস্ত।সে যেনো চাঁদের
আলোয় স্নান করছে।মেহরাদের ঠোঁটে হাসি ফুটলো।সে এগিয়ে গিয়ে তার একান্ত ব্যক্তিগত নারীকে পেছন থেকে দু’হাতে বন্দী করে খোলা চুলে মুখ ডোবালো স্রোত শিউরে উঠলেও প্রতিক্রিয়া দেখালো না।মেহরাদ ওভাবেই বললো,

“বাহ!বউ আমার আজকে একের পর এক সারপ্রাইজ দিয়েই যাচ্ছে।ব্যাপার কি!”
স্রোত নিরব রইলো।মেহরাদ আবার বললো,
“তোমার এই ভয়ং কর রূপটা অনেক মিস্ করেছি স্রোত।”
স্রোত এবারও নিরব।মেহরাদ মুখ তুলে কাঁধে মাথা রেখে বাঁকা হেঁসে বললো,
“আজ আমার বউ আমাকে জেলাস ফিল করাতে গিয়ে নিজেই জেলাসিতে ভুগেছে।ব্যাপারটা সুন্দর ছিলো।”
স্রোতের নিরবতা মেহরাদের একটু বিরক্ত লাগলো।সে স্রোতকে ঘুরিয়ে নিজের দিকে ফিরিয়ে জিজ্ঞাসা করলো,

“কি হয়েছে?চুপ করে আছো কেনো?”
“উমমম,ওভাবেই ভালো লাগছিলো।” বলে আবার মেহরাদের বুকে পিঠ ঠেকিয়ে দাঁড়ায় স্রোত।মেহরাদও আগলে নেয়।এভাবে সময় কত পার হয়েছে কে জানে!স্রোত হঠাৎ বলতে শুরু করলো,

I didn’t come to you for love,
But I fell in love instead
Now I can’t stay, nor can I leave.
Why doesn’t it feel like a mistake?
You comfort my heart Like a cup of tea after rain, Like a good movie in lonely hours,
My heart needs your feelings,
Your comfort.
I have found my heaven in you.
I’m lost in your thoughts.

মেহরাদের অধর প্রসারিত হলো,বাঁধন যেনো আরো দৃঢ় হলো।সে প্রশান্তির হাসি হেঁসে বললো,
“তাও ভালোবাসি বলবে না!”
“নাহ”
“বলো!”
“বলবো না।”
“যাও বলতে হবে না।”

মেহরাদ আচমকা স্রোতকে কোলে তুলে নেই।হঠাৎ হওয়ায় স্রোত চোখ-মুখ খিচিয়ে মেহরাদের শার্টের কলার খামচে ধরেছে।মেহরাদ বাচ্চামো করে রুমে যেতে যেতে বললো,
“চলো চলো ঘরে চলো।”
“কেনো?”
“চাঁদের আলো তোমার সর্বাঙ্গ ছুঁয়ে দিচ্ছে।আমার হিং সে হচ্ছে।”
“অ্যা?”

“হ্যাঁ।চাঁদের আলো কেনো তোমাকে ছুঁবে? আমি ছুয়ে দিবো, তোমাকে অন্য কেউ কেনো স্পর্শ করবে?আমি করবো।”
বলতে বলতে স্রোতকে বিছানায় শুয়ে দেয় মেহরাদ।তারপর নিজেও পাশে শুয়ে পড়ে।
স্রোত হতভম্ব হয়ে চেয়ে আছে। চাঁদের আলোকেও কেউ হিং সে করতে পারে?
ঘরে পিনপতন নীরবতা,অন্ধকারাচ্ছন্ন।উভয়ের দৃষ্টিই সিলিং ফ্যানটার দিকে।তারা চুপ,সময় চুপ,প্রকৃতি চুপ।
মেহরাদ নিরবতা ভেঙ্গে ক্ষীণস্বরে ডাকলো,

“স্রোতস্বিনী?”
উপরের দিকে চোখ রেখেই স্রোত বললো,
“হুম?”
“বুকটা খালি খালি লাগছে।”
স্রোত না বুঝার ভান করে জিজ্ঞাসা করলো,
“কেনো?”

“এখানে এখন একজনের থাকার কথা ছিলো।কিন্তু সে দূরে সরে আছে।ভাবছি এখানটায় ক্যাপ্টেন সামিরা সুলতানাকে জায়গা দিবো।”
স্রোত তড়িৎ গতিতে মেহরাদের বুকে মাথা রেখে শক্ত গলায় বললো,
“দু’জনকেই খু ‘ ন করবো।”
মেহরাদ শব্দ করে হেঁসে ফেললো।শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো নিজের স্রোতস্বিনীকে।অনেকক্ষণ পরে মেহরাদ স্রোতকে ডাকলো,

“স্রোত?”
“হুম।”
“স্রোতে গা ভাসাবো!”
স্রোত শিউরে উঠলো।তবুও না বুঝার ভান করে বললো,
“বুঝি নি।”
“আদর করবো!”
স্রোতের হৃদপিণ্ড সর্বোচ্চ গতিতে স্পন্দিত হচ্ছে।সে এক ঝটকায় নিজের জায়গায় চলে আসলো। থেমে থেমে বললো,

“এখন না।”
“কেনো?”
“এমনিতেই।”
“আচ্ছা।”
আর একটা কথাও বললো না মেহরাদ।পাশ ফিরে চুপ করে রইলো।স্রোত যেনো মেহরাদের নিরবতা মানতে পারলো না।সে মেহরাদকে ডাকলো,

“শুনোন না!”
“হুম?” পাশ না ফিরেই জবাব দেয় মেহরাদ।
“এদিকে তাকান না।”
“শুনছি তো বলো।” পাশ ফিরে না তাকিয়েই বলে মেহরাদ।
এবার স্রোত মেহরাদের হাত টেনে তাকে নিজের দিকে ফেরাতে ফেরাতে বলে,
“ডাকছি না আমি?তাকান এদিকে।”

“বলো।”
স্রোত মেহরাদের দিকে ঝুঁকে ওর হাত দিয়ে নিজের ঠোঁট ছুঁয়ে বলে,
“এখানে একটা চুমু দিন তো।”
বিস্ময়ের জোয়ারে ভেসে গেলো মেহরাদ।তবুও চাপা রাগ দেখিয়ে বলে,
“কেনো?”
“আমার চুমু খেতে ইচ্ছে করছে,তাই।দিবেন কিনা বলেন?না দিলে বলুন,আমাকে অনেকে পছন্দ টছন্দ করে,তাদের কাছে চাইবো।বায়।”

বলে স্রোত সরতে নিলেই মেহরাদ তাকে শক্ত করে ধরে বালিশে শুইয়ে দিলো।স্রোতের দিকে ঝুঁকে দাঁত কিড়মিড়িয়ে বললো,
“বড্ড বার বেড়েছো।”
স্রোত মুচকি হাসলো,কাজ হয়েছে। সে আবার কপালে,গালে,চোখে,নাকে,ঠোঁটে ইশারা করে বললো,
“তাহলে দিন এখানে,এখানে,এখানে…….”

স্রোতস্বিনী পর্ব ১৯

বাক্য শেষ করতে হলো না স্রোতের।মেহরাদ পুরো মুখ চুমুতে ভরিয়ে দিলো।স্রোত আবেশে চোখ বন্ধ করে রইলো।সবচেয়ে গভীর চুমুটা খেলো ঠোঁটে।তারপর গলায়,ঘাড়ে, বুকে,,,।স্রোত বাঁধা দিলো না।ধীরে ধীরে প্রগাঢ় হলো স্পর্শ, নিষিদ্ধ মাদকতায় চুরমার হলো লজ্জা,অপেক্ষা।অবাধ্য ইচ্ছা পূরণে মেতে উঠলো দু’জন মানব-মানবী।শরীর স্পর্শ তখনই সুখ ও আনন্দের হয় যখন তা ভালোবাসা আর সম্মানে ভরপুর হয়।সেই সাথে স্রোতে গা ভাসানোর অবাধ্য ইচ্ছে পূরণ হলো মেহরাদের।

স্রোতস্বিনী পর্ব ২১

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here