হৃদমাঝারে তুমি পর্ব ২০

হৃদমাঝারে তুমি পর্ব ২০
সাইয়ারা মম

আজকে সবাই বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছে।মিহুর এই কয়েকদিনে তেমন কোনো অসুবিধা হয় নি।কিন্তু যাওয়ার সময় বিদিশা ওকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিল।কারণ বিদিশারা মিহুদের সাথে সাথেই বের হয়েছে বাসায় যাওয়ার জন্য।সবাই একসাথেই গাড়িতে উঠেছে কিন্তু বিদিশারা যাবে মিহুদের উল্টো দিকে।পিয়াস ফরমালিটি রক্ষার জন্য বিদিশাকে বলল
-আবার আসবেন কিন্তু।

বিদিশা কিছু না বলে গাড়িতে উঠে বসল।মিহুর ও খারাপ লাগছে।কারণ বিদিশার সাথে ওর অনেক মিল আছে।বিদিশাদের গাড়ি ছেড়ে গিয়েছে।পিয়াস আরফানের গাড়িতে উঠতে নিলে আরফান বলে
-নেহালের গাড়িতে যা,আমার কাজ আছে।
পিয়াস বির বির করে বলল-কাজ তো থাকবেই তোমার।গাড়িতে তো এখন তোমার বৌ আছে তাই না।
পিয়াসকে বির বির করতে দেখে আরফান জিজ্ঞেস করল-কিছু বলেছিস?

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

-আরে না না কিছু বলি নি।তারপর মনে মনে বলল কান না যেন রেকর্ডার।নেহালের গাড়ির কাছে গিয়ে সামনের ছিটে বসতে নিলেই নেহাল বলে
-তুই কি কোনোদিন মানুষ হবি না?
পিয়াস হতভম্ব হয়ে বলে-আমি আবার কি করলাম?
-তোকে কি এখন বুঝাতে হবে?
-ভাই না বললে বুঝব কি করে?

-তুই পেছনে গিয়ে বস আর পিহুকে সামনে পাঠা।আসতে না চাইলেও বলবি তুই পেছনে বসবি।
-ও ও ও তাহলে এই ব্যাপার। আগে বললেই হয়
পিয়াস পেছনে গিয়ে বলল-ভাবি আপনি সামনের সিটে যান আমি আপনার সিটে বসব
পিহু সরে গিয়ে পিয়াসকে জায়গা করে দিল আর বলল-

সামনের সিটে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। আমি সরলেই তো আপনি বসতে পারবেন। গাড়িতে তো আমরা মাত্র চারজন মানুষ।
-আরে ভাবি বুঝেন না কেন? আমার ভাইয়ের পাশে না বসলে ভাই গাড়ি চালাতে পারবে না।ও তাহলে আড়চোখে আপনার দিকে তাকাতে গিয়ে এক্সিডেন্ট করবে।তারপর আমার অকালে প্রাণটা যাবে
-আপনার ভাইকে বলে দিবেন বিয়ের আগে যেভাবে গাড়ি চালাতো এখন ও যেন সেই ভাবে চালায়।

পিয়াসকে নেহাল বলতে বলেছে কি আর ও বলতেছে কি!নেহালের মাথাটা গরম হয়ে গেল। একেতো পিহু সামনে আসলো না আর এক পিয়াস ওর দফা রফা করে দিচ্ছে।তাই ও রাগটা কন্ট্রোল করে দাতে দাত চেপে বলল
-পিয়াস দেখতো গাড়ির পেছনের টায়ারে মনে হয় কি যেন হয়েছে।একটু চেক করে দেখতো।
পিয়াস তার সরল মনে নেহালের গরল কথা বিশ্বাস করে নিল।সে সুন্দর করে নেমে গিয়ে গাড়ির টায়ারের কাছে মুখটা নিচু করে দেখতে লাগল। আর বলল

-নেহাল কিছুই দেখতে পাচ্ছি না।
-দাঁড়া একটু সময় ।এখন ই দেখতে পারবি
বলে নেহাল গাড়ি স্টার্ট দিল। আর গাড়ির ধোঁয়া এসে সব পড়ল পিয়াসের মুখে।পিয়াস হকচকিয়ে গেল।তারপর বলল
-ধোকা বাজ।দেখিস তোর বউয়ের সাথে আরো ঝগড়া বাজবে।কোনো মতেই মিটবে না। আমাকে সরি না বললে।
আরফান গাড়ি চালাতে চালাতে হঠাৎ করেই অন্য রাস্তায় যাওয়া ধরল। অন্য রাস্তা দেখে মিহু ভ্রু কুঁচকালো। জিজ্ঞেস করল
-এটাতো বাড়ি যাওয়ার রাস্তা না।তাহলে এখান থেকে যাচ্ছেন কই

-তোমাকে গুম করে দেব।তাই
আরফানের কথায় মিহু একটু ভয় পেলো।তাহলে কি আরফান এর জন্য ওর সাথে ভালো ব্যবহার করেছে।যাতে ওকে বিশ্বাস করে মিহু।তারমানে ও মিহুকে স্ত্রী হিসেবে মানে নি।মিহু কান্না ভেজা কন্ঠ বলল
-আপনি আমার সাথে মজা করছেন তাই না?
মিহুকে ভয় পেতে দেখে আরফান ভাবলো আরেকটু ঘাবড়ে দেওয়া যাক। ও নিজের গলাটা গম্ভীর করে বলল
-তোমার সাথে কি আমার মজা করার সম্পর্ক?
-দ্ দে খুন

মিহু কিছু বলতে চাইছিল কিন্তু গাড়ি থেমে যাওয়ার ফলে ওর কথাও থেমে গেল। আরফান গাড়ি থেকে নেমে মিহুর পাশের দরজা খুলে দিল।তারপর ওকে বলল
-নামো
মিহু নেমে দেখলো একটা শপিং মলের সামনে দাঁড়িয়ে আছে।আরফান কি সত্যিই ওকে গুম করে দেওয়ার জন্য এনেছে। না না মিহু এগুলো বিশ্বাস করে না।মিহুর বিবেক একথা বললেও মিহুর মন বলছে অন্য কথা।

মিহুকে এমন থমকে থাকতে দেখে আরফান মনে মনে বলল-মিসেস আরফান কালকে আমাকে রেখে অন্যের দেওয়া নীল শাড়ি দেখা তাই না!আজকে আমিও দেখবো কত শাড়ি তুমি পড়তে পারো। আর কালকে আমাকে পাত্তা না দেওয়ার শাস্তি
তারপর মিহুকে আস্তে করে বলল- এখানে কিন্তু অনেক লোক আছে যাদের কাছে তোমাকে গুম করে দেওয়ার কথা ভাবছি।তাই সাবধানে থাকবে আর আমার পেছনে পেছনে এসো।

শপিংমলের বাইরে একজন ঝালমুড়ি ওয়ালাকে ওদের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে আরফান মিহুকে বলল
-ঐ যে ওনাকে দেখছো না ঝালমুড়ি বিক্রি করে।আসলে উনি কিন্তু একজন নারী পাচার কারী।দেখেছো কীভাবে তাকিয়ে আছে তোমার দিকে।একা পেলেই নিয়ে যাবে। আরো অনেক লোক আছে কিন্তু।
মিহু এতক্ষণ দ্বিধান্বিত থাকলেও এবার অনেক ভয় পেয়ে গেল।ঝালমুড়ি ওয়ালা বাদে এক বাদাম বিক্রেতাকেও তাকিয়ে থাকতে দেখলো।তার চেহারা দেখলেই ভয় পাওয়া লাগে।মিহু ভয়ে আরফানের হাত ঝাপটে ধরল। এমন শক্ত করে ধরেছে যে মনে হয় সুপার গ্লু দিয়ে আটকিয়ে দিয়েছে।

মিহু যখন আরফানের হাত ধরল আরফানের হৃদয় জুড়ে এক প্রকারের প্রশান্তি অনুভব হলো।মনে হতে লাগল এই হাত সারা জীবন ওকে ধরে রাখুক। তারপর মনে মনে নিজের প্রশংসা ও করলো।এত নাটক না করলে মিহু ওর হাত ধরত না।আরফান মলের ভেতরে প্রবেশ করল।মিহু ও ওর হাত ধরেই এগোতে লাগল।

প্রথমেই একটা শাড়ির শপে গেল।মিহুকে ফিসফিসিয়ে বলল- এখানেও কিন্তু অনেক লোক থাকতে পারে
মিহু তাকিয়ে দেখলো একজন কাস্টমার ওদের দিকে তাকিয়ে আবার শাড়ি দেখায় মনোযোগ দিল।মিহু আরফানের হাত আরো শক্ত করে ধরল ।আরফান মৃদু হেসে সেলসম্যানকে বলল

-আপনাদের স্টকে যতগুলো সাদা শাড়ি আছে সব বের করেন।
-স্যার শুধু সাদা নাকি ভেতরে অন্য রঙের কাজ থাকলেও হবে
-তাতেও হবে কিন্তু সবগুলোতে সাদা রং টা মেইন চাই।
-ওকে স্যার।কিন্তু শাড়ির কাপড় কি ধরনের লাগবে? আই মিন জামদানী,কাতান,সুতি,জর্জেট নাকি অন্য কিছু?
-যত গুলো আছে সব
সেলসম্যান একটু অবাক হয়ে বলল-সব গুলো

-হ্যাঁ
-স্যার একটু সময় লাগবে।
মিহু জিজ্ঞেস করল- এতগুলো কার জন্য কিনছেন?
– আমি শাড়ি কিনছি না দোকান দারকে ক্লু দিচ্ছি তোমাকে কিভাবে গুম করতে হবে।তারপর আরফান বাইরে বেরিয়ে একদিকে গেল।মিহুও পেছনে পেছনে গেল। আরফান একটা দরজা খুলে ভেতরে যেতে গিয়ে থেমে গেল। আরফানকে থামতে দেখে মিহু জিজ্ঞেস করল

-কি হলো থামলেন কেন?
আরফান একটা লেখার দিকে ইশারা করে মিহুকে পড়তে বলল।মিহু দেখলো এটা একটা পুরুষ ওয়াসরুম।
-হাতটা কি ছাড়বে না আমার সাথে ভেতরে যাবে?
মিহু হাতটা ছেড়ে দিল আর বলল- একটু তাড়াতাড়ি আসবেন প্লিজ

আরফান যে ঢুকেছে আর বেরোনোর নাম নেই।অনেকক্ষণ ওয়াসরুমের পাশে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে অনেকেই ওর দিকে আড়চোখে তাকাচ্ছে।মিহুর মনে হতে থাকে এই বুঝি কেউ এসে ওকে নিয়ে গেল।হঠাৎ এমন সময় শাড়ির দোকানের সেলসম্যান কে ওর দিকে এগিয়ে আসতে দেখে মিহু ভয় পেয়ে গেল। ও পেছন ফিরে জোরে হাটা লাগালো। আরফানকে বেরোতে দেখে দৌড়ে গিয়ে ওর বুকে ঝাপিয়ে পড়ল। আর বলল

-প্লিজ প্লিজ আমাকে গুম করে দিবেন না
-দেবো না তবে একটা শর্তে
-আপনার সব শর্তে রাজি
-মনে থাকবে তো
-হ্যাঁ থাকবে

আরফান মোট ত্রিশটা শাড়ি নিল পছন্দ করে।তারপর মিহুকে নিয়ে বাড়িতে আসলো।মিহুর জন্য যে শাড়িগুলো নিয়েছে সেগুলো ওদের রুমে রেখে এসে বাকিগুলো নিয়ে এসেছে সবার জন্য।পিহু,নীলু রেবেকা সবার জন্যই শাড়ি এনেছে।নীলু জিজ্ঞেস করল

-ভাইয়া শাড়িগুলো কি উপলক্ষে আনলে
-রমজানের শুরু তাই এই উপলক্ষে দিলাম।
-খুব সুন্দর হয়েছে শাড়ি টা
-তোর জন্য আরো একটা আছে।
বলে আরফান একটা ব্যাগ দিল নীলুকে।নীলু ব্যাগটা খুলে দেখলো একটা নীল শাড়ি।খুব খুশি হয়ে বলল
-ভাইয়া এইটা আরো সুন্দর।থ্যাংকস

-এটা তোর ভাবি এনেছে তোর জন্য
-ভাবি থ্যাংক ইউ
কিন্তু নীল শাড়িটা দেখে মিহুর চক্ষু চড়কগাছ। এই শাড়িটাই তো মাহিন ওকে দিয়েছিল।আরফান কখন শাড়িটা নিল? আর নিলো ও বা কীভাবে?মিহু আরফানের দিকে তাকাতেই আরফান সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে মিহুকে চোখ মারল।মিহু তব্দা খেয়ে আছে। এটা কি আসলেই আরফান।
পিয়াস ঘরে ঢুকতেই ওর মা চেহারার দিকে তাকালো।তাকিয়ে দেখল কেমন কালো কালো হয়ে আছে।জিজ্ঞেস করল

-মুখে কি হয়েছে?
-কই কিছুই না
-তুই আবার মিথ্যা বলছিস
-মা বুঝলে আজকে একটা একটা
কি বলবে ভেবে পায় না।ওর মা বুঝে যায় এখানে নিশ্চয়ই নীলুদের কারো সাথে সম্পর্ক আছে।তিনি এ বিষয়ে কিছু না বলে ওকে বললেন

-তোকে আমার সেই বোন কালকে যেতে বলেছে আজকে আমাদের বাসায় এসেছিল।কালকে আমি কোন না শুনতে চাই না। আর যেন না শুনি কারো জন্য যেতে পারিসনি
-আচ্ছা
-আর
আরো কিছু বলবেন তার আগেই পিয়াসের ফোনে এস এম এস আসলো।ও এস এম এস টা খুলে দেখলো একটা আননোন নম্বর থেকে লেখা

হৃদমাঝারে তুমি পর্ব ১৯

‘মানুষ যা কাছে পায় সেটার মূল্য দেয় না।কিন্তু যখন ধরা ছোঁয়ার বাইরে থাকে তখনই সেটাকে পেতে চায়।কিন্তু কেন এমনটা হয়? আপনার সাথে কি এমন টা হচ্ছে? কারণ টা জেনে থাকলে জানাবেন’

হৃদমাঝারে তুমি পর্ব ২১