হৃদয়হরণী পর্ব ৩৩

হৃদয়হরণী পর্ব ৩৩
তানিশা সুলতানা

বিরহ মনের মধ্যে বাসা বেঁধেছে। অভিমানে বুক ভেসেছে সরল কন্যার। অশ্রুকণা আটকাতে ব্যর্থ সে। নিজেকে দুর্বল প্রমাণ করতে চায় না তবুও মনকে মানাতে পারছে না।
প্রেম তাকে সুখ এনে দিতে পারে নি। প্রেম তাকে ভালোবাসা দেয় নি৷ বরং প্রেম তাকে পাহাড় সমান দুঃখের সাগরে ভাসিয়ে দিয়েছে।

নিজের সত্তাকে পাগল ভাবতে বাধ্য করেছে।
কান্না করার একটা বাজে দিক হলো নাক দিয়ে পানি পড়বে, মাথা ব্যাথা করবে এবং আঁখি পল্লব ফুলে উঠবে। অতিরিক্ত ফর্সা মেয়েদের চোখ মুখ লাল হয়ে যাবে।
সরল কন্যার ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। এখন আঁখি পল্লবে বৃষ্টি কমেছে তবে নাক পিটপিট কমছে না। সমানে নাক টেনে যাচ্ছে।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

সাদি বরাবরই ধৈর্যশীল। সে ধৈর্য সহকারে প্রেমিকা রূপি বউয়ের নাক টানার শব্দ শুনছে। মনে মনে এঁকে ফেলে এই মুহুর্তে ইডিয়েটটাকে কেমন দেখতে লাগছে?
সিঁচকাদুনি মেয়ে।

তবে সাদি মুখের ওপর বলতে পারলো না কথাটা। মনে মনে আওড়ালো বেশ কয়েকবার।
সে অপেক্ষায় আছে ইডিয়েটের থেকে কিছু শোনার। তবে ছোঁয়া কথাই বলছে না।
দীর্ঘ সময় পার হয়। সাদি শ্বাস টেনে শুধায়
“কেমন আছো?

প্রেমিক পুরুষের মধুর সুরের কথা মন গলিয়ে দেয় ছোঁয়ার। তবে অভিমান কমে না। আবারও ঠোঁট উল্টে কেঁদে ফেলে। এতোদিন পরে মনে পড়েছে তার? জানতে ইচ্ছে হয়েছে ” কেমন আছে?”
এই বদ লোকটার সাথে কথা বলাই উচিত না।
আবারও ছোঁয়ার কান্নার শব্দে সাদি বিরক্ত হয়। নাক মুখ কুঁচকে বলে
“ওকে রাখছি আমি।

” হ্যাঁ রাখুন। কথা বলবো না আপনার সাথে। সারাক্ষণ কথা বলবো না, ছেড়ে দিবো এমন ভয় কেনো দেখান? আপনার প্রতি একটু বেশিই দুর্বল বলে? আমার দুর্বলতা জেনে গেছেন বলে? ভেবে নিয়েছেন আপনি যাই করবেন পাগল ছোঁয়া সারাজীবন আপনার লেজ ধরে দাঁড়িয়ে থাকবে।

বলতে বলতে শব্দ করে কেঁদে ওঠে ছোঁয়া। সাদির ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে ওঠে। ইদানীং এক অদ্ভুত রোগ বাসা বেঁধেছে বুকের ভেতর। সারাক্ষণ মুচকি হাসি চলে আসে। গম্ভীর হয়ে থাকতেই পারছে না।
এই তো মিটিং এর মধ্যে হুট করে সাদি হেসে ওঠে। একটু শব্দ করেই হেসেছিলো। বস সহ সকলেই হা করে তাকিয়ে ছিলো সাদির। দিকে। ভীষণ লজ্জায় পড়ে গিয়েছিলো সাদি। পাগল ছোঁয়া সাদমান চৌধুরীকেও পাগল বানিয়ে দিয়েছে৷

ছোঁয়ার নাক টানার শব্দে ভাবনার জগত থেকে বের হয়ে ছোঁয়াতে মনোযোগ দেয় সাদি। বুকে বালিশ জড়িয়ে আধশোয়া হয়।
“কাঁদে না জান।
কথা শুনো।
ছোঁয়া কান্না থামায়। প্রেমিক পুরুষের মুখের জান ডাকটাতে যে নেশা মেশানো আছে। ছোঁয়ার ছোট্ট সত্তাকে নারিয়ে দিতে সক্ষম সেই নেশা।

বিছানায় টিস্যুর ছড়াছড়ি। কেঁদেছে আর নাক পরিষ্কার করেছে যে।
টিস্যু বাক্সে শেষ দুটো টিস্যু আছে। একটা নিয়ে নেয় ছোঁয়া। ভালো করে নাক এবং চোখের পানি মুছে নেয়।
” এতো কাজের চাপ ছিলো। বিরক্ত হয়ে গিয়েছিলাম। তাই কল করি নি৷
ছোঁয়া ঢোক গিলে বলে

“বড় মায়ের সাথে কথা বলেছেন?
” হুমম
মায়ের সাথে কথা বলেই তোমাকে কল করলাম৷
“আমাকে এতো জ্বালান কেনো আপনি?

” এখনো তো শুরুই করি নি জ্বালানো। এইচএসসিটা শেষ করো তারপর তোমাকে জ্বালানোর পিএইচডি দেখাবো।
লজ্জা পায় ছোঁয়া। চোখ দুটো বন্ধ করে ফেলে। কিন্তু এখানে লজ্জার কি হলো এটা নিজেও বুঝে না। ইদানীং লজ্জা নামক শব্দটা একটু বেশিই ঘায়েল করছে ছোঁয়াকে।
লজ্জা কমাতে ছোঁয়া রিনরিনিয়ে জিজ্ঞেস করে

“ফিরবেন কবে?
” কালকে।
“আমি কিন্তু আপনার সাথে থাকবো। এখানে থাকবো না আমি। আমাকে না রাখতে চাইলে থানা পুলিশ করবো। কাঠ কাঠ বলে দিলাম।
আবারও হাসে সাদি।

” আচ্ছা থাকবে।
“আপনাকে আমি ভালোবাসি।
” জানি আমি।
“আপনি বাসেন না?
” জানি না।
“জানতে হবে। আমি একা একা অনেকদিন ভালোবেসেছি এবার আপনিও একটু বাসুন না। কতোকাল একা একা পাগলামি করবো? একটু সঙ্গ চাই আমার।

” আচ্ছা
গুড নাইট। কাল দেখা হবে।
সাদি কল কেটে দেয়। ছোঁয়া হতাশার নিঃশ্বাস ফেলে। লোকটা এমন কেনো? একটু ভালোবাসলে কি হবে?
“ভালোবাসা লাগবে না আমার। শুধু আমার হয়ে থাকুক। আমার কাছে থাকুক। আমি তাকে দু চোখ ভরে সারাজীবন দেখতে পারলেই হলো। ভালোবাসা লাগবে না।

মনটা ভীষণ খুশি ছোঁয়ার। আজকে যে সাদি ফিরবে। নাজমা বেগমের গাল ধরে ঝুলে আছে ছোঁয়া। নাজমা বেগমের দুই হাতো ময়দা লেগে আছে তাই ছোঁয়াকে ছোটাতে পারছে না নিজের থেকে।
” ছোঁয়া ছাড় আমায়। বাঁদরের মতো কেনো ঝুলছিস?
ছোঁয়া টুপ করে মায়ের গালে দুটো চুমু খেয়ে নেয়।

“আমাকে ভালোবাসি বলো। নাহলে ছাড়বোই না তোমায়।
” ভালোবাসি ছাড় এবার।
“রেগে নেই তো আমার ওপর? অবশ্য রেগে থাকলেও চলবে। যখন আমার বেবি হবে বেবির মুখ দেখে আর রাগ করতে পারবে না।
নাজমা কটমট চোখে তাকায় মেয়ের দিকে।

“সর আমার সামনে থেকে। কাজ করতে দে।
ছোঁয়া নাজমা বেগমের নাকে চুমু খেয়ে ছেড়ে দিয়ে এক দৌড়ে চলে যায়। নাজমা বেগম মুচকি হাসে।
ছোঁয়া এবার বাবার রুমে ঢুকে। সেলিম অফিসের জন্য তৈরি হচ্ছিলো। ছোঁয়া এগিয়ে দিয়ে বাবার ট্রাই হাতে নিয়ে বেঁধে দিতে থাকে। সেলিম সরু চোখে মেয়ের দিকে তাকিয়ে থাকে।

” আব্বু আমি রিয়েলাইজ করলাম। তোমার কথা না শুনে সাদুকে বিয়ে করে ভুল করেছি। আমি তো ছোট বলো। কিউট একটা বেবি না? ভুল তো করেই ফেলেছি। এবার আমার ওপর রাগ করে থাকলে তো আর ভুলটা সঠিক হয়ে যাবে না তাই না?
শেষবারের মতো আমাকে ক্ষমা করো। এই যে তোমার চুল ছুঁয়ে বললাম আর জীবনেও ভুল করবো না। পাক্কা প্রমিজ।

মেয়ের কথা বলার ভঙিমা দেখে হেসে ফেলে সেলিম। আলতো হাতে জড়িয়ে ধরে ছোঁয়াকে। মাথায় চুমু খায়।
“রেগে নেই আমি। তবে আমি চাই তুমি এইচএসসি শেষ করো তারপর এসব নিয়ে ভাবো। দুটো বছর পুরোপুরি নেই। এই দিনগুলো পড়ালেখার পেছনে ব্যয় করো।
” তুমি যেমনটা বলবে। তেমনটাই হবে।

সাদা কলেজ ড্রেস পড়ে মাথায় সাদা হিজাব জড়িয়ে দুই কাঁধে ব্যাগ ঝুলিয়ে কলেজের দিকে যাচ্ছে ছোঁয়া। রিকশা পায় নি আজকে। তাই পায়ে হেঁটেই যেতে হচ্ছে। কলেজ শেষে সাদির বাড়িতে যাবে। ইসস কতোদিন পরে লোকটাকে দেখবে। খুশিতে মনটা লাফাচ্ছে ছোঁয়ার।

হৃদয়হরণী পর্ব ৩২

“তুমি ছোঁয়া?
হঠাৎ পেছনে থেকে কারো ডাক শুনে থেমে যায় ছোঁয়া। ঘাড় বাঁকিয়ে তাকায় পেছনে।

হৃদয়হরণী পর্ব ৩৪