হৃদয়হরণী পর্ব ৩৫

হৃদয়হরণী পর্ব ৩৫
তানিশা সুলতানা

পুলিশ স্টেশন এ ডাকা হয়েছে সাদি এবং ছোঁয়াকে। মিহি নামের একটা মেয়ের মাথা ফাঁটানোর অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ করেছেন অসুস্থ ব্যক্তি নিজেই।
সাদি ভ্রু কুচকে খানিকক্ষণ তাকিয়ে ছিলো ছোঁয়ার মুখপানে। মেয়েটা মিহির মাথা ফাঁটিয়েছে? এতোটা ডেঞ্জারাস?
ব্যাপারটা সাদির বিশ্বাসই হচ্ছে না। ছোঁয়া এমন একটা কাজ করতে পারে? মেয়েটাকে মাঝেমধ্যে চিনতে অসুবিধা হয়।

তবে এটা নিয়ে ছোঁয়ার চোখে মুখে কোনো অনুসূচনা প্রকাশ পাচ্ছে না। সে দিব্যি সাদির হাত জড়িয়ে গুটি গুটি পায়ে হাঁটছে।
সাদি বেশ কয়েকবার জিজ্ঞেস করতে চেয়েও করে নি। এমনকি ছোঁয়াকে জানানোও হয় নি তারা থানায় যাচ্ছে। জানলে কি মেয়েটা ভয় পাবে?

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

পুলিশের সামনে বসে আছে ছোঁয়া এবং সাদি। ওদের থেকে একটু দূরে মিহিও বসে আছে৷ তার কপালে ব্যান্ডেজ করা। গুটি কয়েক পুলিশ এদিক সেদিক ঘোরাঘুরি করছে। জেল খানা দেখতে পাচ্ছে না ছোঁয়া। সে আপাতত উঁকি ঝুঁকি মেরে জেল খানা দেখতে চাচ্ছে। পুলিশদের মাথার ক্যাপটা একবার পড়ে দেখতে চায় ছোঁয়া। বা রিভেলবারটা একটু ছুঁয়ে দেখতে চায়। সাদি পাশে না থাকলে অবশ্যই নিজের ইচ্ছে কথা পুলিশকে জানিয়ে দিতো। কিন্তু ধমক খাওয়ার ভয়ে জানাচ্ছে না। এতোগুলো পুলিশের সামনে ধমক খেলে মানসম্মান নিয়ে টানাটানি লেগে যাবে।

পুলিশ অফিসার আসিফ সাদি এবং মিহির ক্লাসমেট। এই সামান্য কারণে থানা ওবদি আসার মোটেও কোনো কারণ হয় না।মিহি শুধুমাত্র ছোঁয়াকে একটু অপমানিত করতে চায়। অপমানিত হলে নিশ্চয় মেয়েটার এই হাসিহাসি মুখটা চুপসে যাবে। তাই সে আসিফকে বলে সাদিকে কল করায়।

তাছাড়া বাচ্চা মেয়ে আজকে মাথা ফাঁটানোর সাহস পেয়েছে কাল বড় কোনো অপরাধ করার সাহস পাবে। আগে থেকেই একটু বকে দিকে নেক্সট টাইম এমন করবে না।
আসিফ চায়ের কাপে শেষ চুমুকটা দিয়ে তাকায় সাদির দিকে। সাদির চোখে মুখে প্রশ্ন। তাদের কেনো এখানে ডাকা হয়েছে? নিজে থেকে জিজ্ঞেস করছে না। যেহেতু ডেকেছে সেহেতু তারাই বলবে। শুধু শুধু আগে আগে জিজ্ঞেস করার মানে হয় না।

“আপনার বউ মাথা ফাঁটিয়েছে। দিনে দুপুরে মানুষ খু*ন করার চেষ্টা। জানেন আপনি?
সাদি বড়বড় চোখ করে তাকায় ছোঁয়ার দিকে। ছোঁয়া মিষ্টি করে হাসে। পা গুটিয়ে বসে তাকায় মিহির দিকে। মিহির দৃষ্টি সাদির দিকে। মাথাটা আবারও গরম হয়ে যায় ছোঁয়ার।

” দেখছো বুড়ি তুমি এখানে আছো তবুও আমার বর তোমার দিকে তাকাচ্ছে না। তাহলে ভাবো তুমি ঠিক কতোটা বিশ্রী দেখতে। তোমার থেকেও তো এই পুলিশ কাকু সুন্দর বেশি। তার দিকেও চার বার তাকিয়েছে।
মিহি থমথমে খেয়ে যায়। সে সাদির থেকে দৃষ্টি সরিয়ে ফেলে। পুলিশও সরু চোখে তাকায়।

“অপরাধ করেছো তুমি। এখনো এভাবে হাসছো কি করে?
আসিফ গম্ভীর গলায় বলে। পুলিশলর পেশায় এমন। নরম গলায় কথা বললে অবশ্যই আসামি ভয় পাবে না। উল্টো আশকারা পেয়ে যাবে।
ছোঁয়া পা নামিয়ে টেবিলে দুই হাতে দিয়ে একটু ঝুঁকে পুলিশকে উল্টো প্রশ্ন করে

” আপনার মনে হলো আমি অপরাধ করেছি?
“অবিয়েসলি
” আপনার বউয়ের কাঁধে কেউ কপাল ঠেকিয়ে তাকে দুর্বল করার চেষ্টা করলো। আপনার বউকে পটিয়ে আপনার সংসার ভাঙার চেষ্টা করলো। এমনকি আপনাকে হুমকি দিলো আপনার বউকে ছেড়ে দেওয়ার। তখন আপনি কি করবেন?

জটিল প্রশ্ন। সাদির হাসি পাচ্ছে। এতখনে সে বুঝতে পারলো কেনো পা ভেঙেছিলো ছোঁয়ার। কেনো কথা বলে নি। এবং কেনো আজকে এমনটা করলো। মেয়েটাকে আর আধ পাগল বলা চলে না। ফুল পাগল সে।
আসিফ খানিকক্ষণ ভাবে। সত্যিই তো। এমনটা করলে কখনোই মাথা ঠান্ডা রাখে যাবে না।

“আমি তাকে জেলে পুরবো।
” আপনার জেল আছে আপনি জেলে পুরবেন। আর আমার হাত আছে আমি ঢিল ছুঁড়েছি। হিসাব ক্লিয়ার?
এখানে আমি কোনো অপরাধ করি নি। আপনি বরং ওই মিহি ফিহি বুড়িকে জেলে পুরে রাখেন। আস্ত একটা শয়তান সে।
জানেন কি করেছে?
আসিফ মাথা নারায়। মানে সে জানে না।

“আমাকে বলে কি না আমার বরকে নিয়ে নিবে। আমি কষ্ট করে বিয়ে করি নি? আমি কান্নাকাটি করে বিয়ে করেছি। বিয়ের দিন আমাকে পাঁচশো কিলোমিটার হাঁটিয়েছিলো। এতো কষ্টের বিয়ে। আর আমি তাকে জামাই দিয়ে দিবো?
আসিফ শুকনো ঢোক গিলে। তাকায় মিহির দিকে। সে রাগে ফুঁসছে। সাদি একবার ভুল করেও তাকায় নি মিহির দিকে। এটাই রাগের কারণ। একটা সময় তাদের রিলেশন ছিলো। সাদি তাকে ভালোবাসতো। এতো তাড়াতাড়ি ভালোবাসা শেষ হয়ে গেলো? মিহিকে ভুলে গেলো?

আসিফ জবাব দিতে পারছে না।
সাদি গম্ভীর গলায় বলে
“মিহিকে সরি বলো জলদি। বাসায় যেতে হবে।
ছোঁয়া ভেংচি কাটে। মিহিকে সরি বলবে? ওই মিহিকে? কখনোই না। পারলে পুলিশের রিভলভার নিয়ে শু*ট করবে তবুও সরি বলবে না।

” সরি তো বলবে পুলিশ কাকু। যুক্তি না বুঝে একটা বুড়ির কথায় নাচতে নাচতে আমাকে মানে ছোঁয়া চৌধুরীকে ডেকে আনলো? মানসম্মান হার্ট হলো না আমার?
আসিফ মাথা নারায় সত্যিই তো মানসম্মান হার্ট হলো।
“আচ্ছা সবই বুঝলাম। কিন্তু মিহিকে বুড়ি কেনো বলছো?

” ও মা বলবো না? বয়স কতো ওনার? আমার জামাইয়ের যদি বত্রিশ হয় তাহলে ওনারও বত্রিশ। আঠারোর নিচে সবাই শিশু। আর ত্রিশের ওপরে সবাই বুড়ো।
আসিফের মাথা ঘুরছে এই মেয়ের কথা শুনে। সে সাদির দিকে তাকিয়ে বলে
“এটা মেয়ে না এলিয়েন?
সাদি একটু হেসে বলে

” আমার আধ পাগল বউ।
আসিফের চোখ দুটো বড়বড় হয়ে যায়। সাদি হাসলো? বেচারা হাসতেও শিখে গেছে। মেয়েটা জাদু জানে।
আসিফ এবার মিহিকে বলে
“ওর কোনো দোষ নেই। তুই ই উস্কে দিয়েছিলি ওকে। যেটা অন্যায় করেছিস। নেক্সট টাইম এরকম ছোট খাটো বিষয়ে থানায় আসবি না।
মিহি দাঁড়িয়ে যায়। তাকায় সাদির মুখপানে। সাদি এখনো তাকালো না মিহির দিকে। মিহি গটগট পায়ে চলে যায়।

ছোঁয়াকে বাড়ির সামনে নামিয়ে দিতে বলেছে ছোঁয়া। সাদি বেশ অবাক হয়েছে। এই মেয়ে তো পেছন ছাড়ে না। আজকে হঠাৎ কি হলো এর? নিজে থেকেই বাড়ি যেতে চাইছে?
তবে প্রশ্ন করে না। চুপচাপ আছে থাকুক। একবার কথা বলা শুরু করলে থামানো যাবে না।
সিএনজি নিয়েছিলো সাদি।

একটা সেকেন্ডও সে রেস্ট নিতে পারে নি আধপাগল বউটার জন্য। তবে তার ক্লান্তি দূর হয়ে গিয়েছে। আধ পাগল সাথে থাকলে তার কখনোই ক্লান্ত লাগে না।
বাড়ির সামনে গাড়ি থামতেই ছোঁয়া নেমে পড়ে। সাদিও নামে ছোঁয়ার সাথে।

” দেখুন আব্দুল কুদ্দুসের বাপ। আপনি প্লিজ আমার পেছনে আসবেন না। আমার সাথে ঘুরঘুর করবেন না। আমি আব্বুকে কথা দিয়েছি। এইচএসসি শেষ না করে আপনার বাড়িতে যাবো না। আমি সরল মানুষ। আপনি ঘুরঘুর করেন মুখ ফুটে না করতে পারি না।

হৃদয়হরণী পর্ব ৩৪

প্লিজ আর এমন করবেন না। আমি আব্বুকে তো আর বোঝাতে পারবো না আপনি কিভাবে পেছনে লেগে থাকেন।
ছোঁয়ার কথা শুনে সাদি হতদম্ভ। ডাইভার মিটমিট করে হাসছে।

হৃদয়হরণী পর্ব ৩৬