যদি তুমি বলো পর্ব ৫৫

যদি তুমি বলো পর্ব ৫৫
আফনান লারা

তানিয়ার সাথে বোন বা নানুদের যাওয়ার নিয়ম।তানিয়ার নানু নেই,এদিকে তিথি যেতে পারবেনা,ইশান দিবেনা ওকে।তাই সিদ্ধান্ত হলো পান্না যাবে।গিয়াস সাহেব নিজেই বলেছেন যাতে পান্নাকে নিয়ে যাওয়া হয়।
পান্না যেতে চাইছিল না,তাও কি আর করার বাবার আদেশ,তানিয়াও চাইছে সে যাতে ওর সঙ্গে আসে।তানিয়া পান্নার মন খারাপ দেখে গাড়ীতে বসে বলে,’বাবা রিদমকে বলো আমার সাথে আসতে,ও মনে হয় বেশি ইমোশনাল হয়ে গেছে।ওকেও নিয়ে যাবো তাহলে ওর মনটা ভাল থাকবে’

রকিবের মা সামনের সিটে বসে ছিলেন তিনি বিড়বিড় করে বললেন,’যত্তসব ঢং!পারছেনা গুষ্টিশুদ্ধ সকলকে নিয়ে শশুর বাড়ি যাবে!যেন আমাদের বাসা ফাইভ স্টার হোটেল পাইছে!
‘আন্টি সত্যিই বলছেন?তাহলে তিথি আপু আর ইশান ভাইয়াকেও নেই?’

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন হউন

রকিবের মা চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে রইলেন,ঐ সময় রিদম কারের জানালা দিয়ে এসে বলে,’আন্টি আপনি পিছনের গাড়ীতে যাবেন?এই গাড়ীতে আমি টুকুর সাথে বসবো ড্রাইভারের পাশের সিটে,আর পান্না তো টুকুর পাশে বসেছে,জায়গা নেই’

‘এহ!আমার ছেলের গাড়ী।আমি কেন আরেক গাড়ীতে যাবো?আমি এই পিচ্চি মেয়েটাকে কোলে নিয়ে ঢের বসতে পারবো’
এটা বলে তিনি উঠে এসে তানিয়ার পাশে বসে পান্নাকে কোলে নিলেন।

ইশান তিথিকে নিয়ে তার বাসায় ফিরছে,বাসা খালি জেনে সে ঠিক করে তিথির সাথে আলাদা সময় কাটাবে।তাই আজ আর তিথিকে সেন্টার থেকে বাবার বাড়িতে যেতে দিলোনা সে।
‘হঠাৎ বাসায় যাওয়ার সিদ্ধান্ত কেন নিলেন?কোনো প্ল্যান আছে?’

‘তা আছে,কিন্তু বলা যাবেনা’
তিথি আড় চোখে তাকায়,ইশানকে সুবিধা ঠেকছেনা,এদিকে কিছু করার ও নাই।তার যা কূল আছে সব ইশানকে ঘিরেই।ওকে ইগনর করে কোথাও ঠাঁই পাবেনা সে।সে কারণে চুপচাপ গাড়ীতে বসে থাকাটাই শ্রেয়।
ইশানের বাসায় ফেরার পর তিথির আবারও মনে পড়ে যায় এ বাসায় তার পরার মতন কিচ্চু নাই।
সে মাথায় হাত দিয়ে সোফায় বসে থাকে আধ ঘন্টা।ইশান ফ্রেশ হয়ে রান্নাঘরে একা একা তার স্পেশাল নতুন লঞ্চ হওয়া নুডুলস বানাচ্ছে দুজনের জন্য।তিথি সোফায় শুয়ে শুয়ে বলে,’আন্টির কোনো শাড়ী পরতে পারি আমি?’

‘নাহ’
‘কেন?’
‘আমার মায়ের একটা রোগ আছে,ওনার জিনিস অন্য কেউ পরলে সেটা আর তিনি ইউজ করেন না।তোকে যে ওনার একটা শাড়ী দিয়েও দিবো তার ও উপায় নাই।মা নতুন আনা শাড়ী পরতে পারেন না,তার রাতে ঘুম হয়না।নরম কোমল কামড় যেগুলা সেগুলাই উনি পরেন।’

‘তোহ?কি করবো আমি?আপনি নাহয় ওনাকে কোমল কাপড় একটা এনে দিয়েন’
‘তা হবেনা কারণ মায়ের জন্য সেই কোমল কাপড়গুলা যে তাঁতি তৈরি করে তিনি গত হয়েছেন।তার বংশে এখন তার মেজো ছেলে ঐ কাপড় বুনে।কিন্তু তার একটা শাড়ী বানাতে ১মাসের বেশি সময় লাগে।সে কারণে তাকে দু মাস আগে জানিয়ে দিতে হয় যে মায়ের জন্য শাড়ী লাগবে’

‘এখন কি করবো আমি?’
‘আমার শার্টের অভাব?’
‘আপনার শার্ট পরবো?রিয়েলি?ওদিনের মতন বকবেন না তো?’
ইশান হাসি দিয়ে কাজ করতে থাকে চুপচাপ।

‘মা আমার খুব ঘুম আসছে,আর কত মিষ্টি খাওয়াইবা?’
রকিবের কথা শুনে খালা বললেন,’দেখ রে বনু!তোর ছেলে বউকে একা পাওয়ার জন্য ঘুমের ভান ধরছে কেমন!”
‘হ্যাঁ তাই তো দেখছি,বউকে দিলে তখন আর তার কোনো ঘুম পাবেনা’

রকিব চশমা ঠিক করে বসে থাকলো। তানিয়া ওর চোখে এক রাশ ঘুমের ক্লান্তি দেখে বললো,’আন্টি উনি যাক ঘুমাইতে,আমি নাহয় আপনার এই কাজগুলা করছি বসে বসে।উনি না থাকলে তো সমস্যা নাই,আমাকেই তো থাকতে হবে’

রকিব দাঁতে দাঁত চেপে তাকিয়ে আছে,সে ঘুমের নাটক করছিল যাতে সবাই ওদের ছাড়ে আর তারা বাসর ঘরটা উপভোগ করে।
‘এখনই এত দরদ লাগবেনা,বিয়ে দুইজনকে দিয়ে হয়,অনুষ্ঠান ও দুইজনকে দিয়েই হয়।দুুজনে বসে থাকো, রকিব তেঁতুলের জুস খাবি?’

‘না নাহ,এই তো আমার ঘুম পাচ্ছেনা,আমি বেশ আছি’
পান্নাকে রকিবের খালাতো বোনদের সাথে এক রুমে শুতে দেয়া হলো,আর রিদম রকিবের খালুর সাথে ঘুমাতে গেছেন।অবশেষে রকিব আর তানিয়াকে রুমে যাবার পারমিশনটা দেয়া হয়।
রকিব খুব এক্সাইটেড ছিল,খুশি তার আর ধরছিল না।সে আস্তে করে দরজা লাগিয়ে পেছনে তাকাতেই দেখে তানিয়া এক এক করে গয়না গাটি খুলছে আর একটা একদিকে ছুঁড়ছে।

‘আরে আরে করছো কি!আমি খুলবো তো”
এটা শুনে তানিয়া চোখ বড় করে পেছনে তাকিয়ে বলে,’কিরকম অসভ্যর মতন কথা বললেন!আপনি খুলবেন মানে?’
‘না মানে গয়না গুলো আমি খুলে দিবো,তোমার তো একা একা করতে কষ্ট লাগার কথা’
‘ওহ! না থাক।আমিই পারবো।গয়না খুলতে একটা সেটিসফেকশান কাজ করে!আপনি খুলে দিলে সেই সেটিসফেকশানটা আসবেনা’

রকিব শরবতের গ্লাস নিয়ে পুরো গ্লাসটা খালি করে চেয়ারে বসে।তানিয়া সব গয়না খুলে বলে,’মাগো মা!আমাকে মুখেশ আম্বানির বেয়াইন বানাই রাখছিল!যেন হিন্দি সিরিয়ালের বউ গুলার মতন!
এবার এই শাড়ীটা কেমনে খুলবো!যে সেফটিপিন লাগাইছে ঐ পার্লারের মেয়েটা।থাক! যা হবার তা কাল সকালে দেখা যাবে।আমি বরং ঘুমাই’

এটা বলে তানিয়া ধপাস করে ফুলে সাজানো বিছানায় শুয়ে পড়ে।
‘একি!এটা কি হলো।তানিয়া?শুনছো?ঘুমালে?হোয়াট দ্যা হেল!বিয়ে করেছি বাসর রাতের এই অবস্থা দেখার জন্য?তানিয়া?উঠো!’

‘আরে উঠবোনা এখন, বললাম না সেফটিপিন কাল সকালে খুলবো?এখন আর আমার শক্তি নেই।ঘুমিয়ে নিই,সকালে এনার্জি পাবো সেফটিপিন খোলার’
‘খুলিওনা থাক,উঠে তো বসবা একটু।আজকে আমাদের বাসর রাত,কত প্রতিক্ষিত রাত এটা সেটা জানো?’
‘জানবোনা কেন! আজ কয়েকদিন ধরে দাদি,মামি রা আমার মাথা খেয়েছে বাসর ঘরের সিনেমার কাহিনী বলতে বলতে’

‘তোহ!তুমি এখন সেই সিনেমা রি-ক্রিয়েট করবানা?’
‘নাহ!আমি যে করবোনা সেটা কি ওনারা দেখবে?না জানবে?আপনার উপর আমার বিশ্বাস আছে।আপনি সিওর এগুলা বলবেন না কাউকে। ‘

পিংকি বাসার ফেরার পর থেকে শুয়ে শুয়ে কান্না করছে।পান্না আর রিদম যে এক সাথে তানিয়ার শশুর বাড়ি গেছে এটা নিয়ে সে ভীষণ কষ্ট পেয়েছে।
গিয়াস সাহেব ওকে কাঁদতে দেখে ভাবলেন পিংকি হয়ত পান্নার বিয়ে ঠিক হবার কথা জেনেছে তাই কাঁদছে,ওনার বেশ খারাপ লাগলো।আসলেই বড় মেয়ের আগে ছোট মেয়ের বিয়ে ঠিক হলে ব্যাপারটা একেবারে বেমানান লাগে।

উনি নিঃশব্দে রুমে প্রবেশ করে বললেন,’মা রে!এভাবে কাঁদিস না।তোকে যে আমি কত ভালবেসে বড় করেছি,কখনও তোকে কাঁদতে দিই নাই।সেই তুই এভাবে অঝরে কেঁদে চলেছিস।আমার না ভীষণ খারাপ লাগছে।চিন্তা করিস না মা,পান্নার জন্য যেমন ছেলের প্রস্তাব এসেছে,তোর এর চেয়ে ভাল একটা আসবে ‘
এ কথা শুনে পিংকি কান্না বন্ধ করে চোখ মুছে পেছনে তাকায়,এরপর বলে,’বিয়ের প্রস্তাব?পান্নার জন্য?’

‘হ্যাঁ রে,ওর খুব ভাল একটা ছেলের সাথে বিয়ের পাকা কথা বলেছি আমি ইশানের সাথে।ছেলেটা জাপানে পড়াশুনা করে’
‘ওমা তাই নাকি! ‘
পিংকি খুব খুশি হলো।কারণ তার মনে হলো রিদমকে নিয়ে আর কোনো চিন্তা তার নাই

রকিব বসে বসে ঘড়ির কাঁটা দেখছে।বারোটা বাজছে সেই কবেই তাও বারোটা দশ এখনও বাজছেনা,সময় এত ধীরে কেন চলছে!
প্রকৃতি তাকে বোনাস সময় দিছে বাসর রাত উপলক্ষে কিন্তু তার বউ সব কিছুতে পানি ঢেলে দিলো।
তানিয়া উপুড় হয়ে শাড়ী পেঁচিয়ে এলোমেলো হয়ে ঘুমিয়ে যাচ্ছে,তার কোনো খবর নাই কিছুর।
‘তানিয়া একটু উঠোই না!একটু গল্প করো তাও তো দিনটা স্মরণীয় করে রাখতে পারবো’

যদি তুমি বলো পর্ব ৫৪

‘যা বেডা বেদ্দপ!কইছিনা দশ টাকার বেশি একটা টাকাও দিতাম না! আমার টাকা মারি কি তুমি বিল্ডিং বানাইবা!’
‘মানে?কাকে কি বলছো?’
তানিয়া ঘুমে থেকে রিকশওয়ালা মামাকে ধুয়ে দিলো ভাল করে,এদিকে তার নতুন বরের এই রাতটা স্মরণীয় হয়ে গেলো নতুন বউয়ের গালি খেয়ে

যদি তুমি বলো পর্ব ৫৬