যদি তুমি বলো পর্ব ৫৬

যদি তুমি বলো পর্ব ৫৬
আফনান লারা

তিথি ইশানের শার্টের খোঁজে ওর আলমারিটা খুলতেই একটা ঝুলন্ত প্যাকেটের দেখা পেলো।এই প্যাকেট যে তার জন্যই রাখা তা নিশ্চিত করার জন্য সে প্যাকেটের বাহিরে ভালভাবে দেখে এবার ভেতরটা দেখার জন্য আগ্রহী হয়ে উঠে।ধীরে সুস্থে প্যাকেটটা খুলতেই দেখতে পায় কালো রঙের তুঁতির কাজ করা একটা শাড়ী,চিকচিক করছিল ওর হাতে।এমনিতেও তিথির কালো রঙটা অনেক বেশি প্রিয় তার উপর যদি এরকম ঝকমকে শাড়ী হয় তাহলে তো আর কথাই নেই।

তিথি বুঝতে পারলো ইশান ওর জন্যই শাড়ীটা রেখেছে।
সে আর দেরি না করে দ্রুত শাড়ীটা পরে ফেলে।
ইশান আসলে শাড়ীটা রেখেছিল কাল বৌভাতে পরার জন্য। কিন্তু তিথি তো এত ধৈর্য্য ধরার মেয়ে নয়।সে শাড়ীটা পরে নিয়ে ইশানকে দেখাতে চলে আসে।ইশান নুডুলসের বাটি নিয়ে এদিকেই আসছিল।
আচমকা কালো শাড়ীটাতে তিথি এসে হাজির ওর সামনে।ইশান তো অবাক হয়ে যায় এই দৃশ্য দেখে।তিথি যে এখনইই শাড়ীটা পরবে তা সে ভাবতেও পারেনি।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন হউন

‘কি?কেমন লাগছে?’
‘পোড়া লাল মরিচের মতন’
‘আবার ফান?সিরিয়াসলি বলুন না’
‘হুম, শাড়ীটা যেহেতু আমার পছন্দ করা তার মানে সুন্দর তো হবেই’
‘ আমাকেওও তো আপনি পছন্দ করে বিয়ে করেছিলেন’
‘তাহলে বুঝে নে উত্তর কি হবে?’

তিথি মুচকি হাসি দিয়ে ইশানকে জড়িয়ে ধরে এরপর বলে,’আমার প্রিয় রঙ টাও মনে রেখে দিছেন? ‘
‘বাটিগুলো পড়ে যাবে,রোমান্টিক হবার একটা সময় থাকে।এখন সেই সময় পার হয়ে গেছে’
‘কই পার হয়েছে?সবে তো রাত দেড়টা বাজে’
‘এখন ঘুমানোর সময়’
এই বলে ইশান তিথিকে নুডুলস খেতে বসিয়ে দিলো।

রকিবের মা এসে দরজা ধাক্কাচ্ছেন,সকাল সাড়ে নয়টা বাজে অথচ নতুন বউ কিংবা বর কারোর দেখা মিলে নাই।
‘রকিব দরজা খোল!এত দেরি করে তো তুই নবজাতক কালেও উঠিসনি।আর আজ!’
‘আপা বুঝেন না কেন,কাল বাসর রাত গেছে।’
‘তো গেছে তো কি হইছে?সকালেও কি বাসর সকাল?’

রকিব চশমা ঠিক করতে করতে এসে দরজা খোলে।তানিয়া তখনও ঘুমাচ্ছিল।রকিবের মা ভেতরে ঢুকে দেখলেন তানিয়া লম্বা হয়ে শুয়ে আছে,গায়ের শাড়ীটাও বদলায়নি।তবে যেমনি কাল সেজেছিল এখনও সেরকমই আছে।রকিবের মা কিছু একটা আঁচ করতে পেরে ওর কাছে গিয়ে জোরে জোরে ওর নাম ধরে ডাকতে শুরু করলেন।
‘এই যে নবাবজাদি! উঠেন!’

‘মা প্লিজ!আজ আমার টিউশান নাই,একটু ঘুমাতে দাও’
‘রকিব আমাকে শরবতের গ্লাস টা দে তো’
‘কেন? ‘
‘ সেটা তোর জানার প্রয়োজন নেই,দিতে বলছি দে’

রকিব গ্লাসটা এনে দিতেই আন্টি পুরো গ্লাসের শরবত তানিয়ার মুখে ঢেলে দিলেন।তানিয়া তখনও ঘুমাচ্ছিল,শরবত ঢালার পর সে বললো,’উমমম হেব্বি মজা তো!তবে নোনতা কেন?কোন ছাগলে শরবতে নুন দেয়?ঐ খবিশদের আমার একেবারে ভাল লাগেনা’
‘সেই খবিশ তোমার শাশুড়ি লাগে!’

রকিব তানিয়ার পিঠে হাত দিয়ে ওকে উঠিয়ে বসিয়ে দিলো।তানিয়া এবার চোখ মেলে রকিবের মাকে দেখে বলে,’আন্টি আপনি এখানে?ওহ সকাল হই গেছে?সরি সরি!আমি তো এলার্ম দিছিলাম বাজলোনা কেন?ওমা ঘড়িতে তো মাত্র সাড়ে নয়টা বাজে। আমি দশটার এলার্ম দিছিলাম। কিছু কি হইছে নাকি?’

‘কিহ!নতুন বউ দশটায় উঠে?’
‘তো কয়টায় উঠে?’
‘রকিব তোর বউকে ঠিক কর নাহয় আজ রফাদফা হই যাবে’
রকিব তানিয়াকে টেনে নামিয়ে বললো,’ও সারা রাত ঘুমায়নি,ওর মাথা ব্যাথা ছিল মা।এই তো এখনই রেডি হয়ে আসবে’

আন্টি কিছু না বলেই হনহনিয়ে চলে গেলেন।
‘তানিয়া?কি হয়েছে তোমার?এরকম কেন করছো?’
‘আমার ক্লান্তি থাকলে এরকম হয়।এই রোগের নাম ক্লান্তিমিয়া রোগ’
‘ফাজলামি বন্ধ করে রেডি হয়ে আসো যাও’

‘এরকম দেমাগ দেখাচ্ছেন কেন?ও আচ্ছা বাসর রাতে আদর সোহাগ করিনি বলি?দাদু ঠিকই বলেছে’
‘কি বলেছে?’
‘বেডা মানুষকে রাতে আদর করতে না দিলে পরেরদিন সকালে তারা হুদাই মেজাজ দেখায়।দোষ না থাকলেও ক্যাচ ক্যাচ করে’

পান্না এক কোণায় বসে পিঠা খাচ্ছে।আজকে সকালের নাস্তা পিঠা ছিল।রিদম তখনও ঘুমে।পিঠা খেয়ে সে রিদমকে দেখতে যেতে চাইলেও পিংকির কথা মনে পড়ায় আর গেলোনা।চুপ করে যেখানে একটু জায়গা দেখছে ওখানেই বসে থাকছে।

তার মন টিকছেনা,কেউ তার বয়সী নাই যে তার সাথে একটু কথা বলবে।রিদম বললে তাও তার সময় টা কাটতো।
রিদম তখনই ঘুম থেকে উঠে এদিকটায় এসে পান্নাকে দেখে বলে,’টুকু কই?’
‘জানিনা,এখনওও দেখলাম না’
‘তুমি খেয়েছো?’
‘হ্যাঁ’

রিদম মাথা নাড়িয়ে তানিয়াকে খুঁজতে চলে যায়।তানিয়া টিয়া রঙের শাড়ী পরে গয়না গাটি পরছিল সেসময় রিদম এসে বলে,’টুকু তোমার ব্যাগটা খুলো তো’
‘কেন রে?’
‘আমি তোমার গয়নার বাক্সে আমার একটা জিনিস রেখেছিলাম,সেটা এখন লাগবে ‘

তানিয়া ব্যাগটা দেখিয়ে দেয় ওকে।রিদম নিচে বসে ব্যাগ খুলে তানিয়ার গয়নার বাক্স থেকে পান্নার জন্য আনা ব্রেসলেট টা নিয়ে নেয় তারপর চলে যাওয়া ধরতেই তানিয়া ওকে ধরে ফেলে বলে,’এত যে বন্ধুত্ব গাঢ় করছিস,জাপানে গেলে মনে পড়বেনা?’
‘যাব বলেই গাঢ় করছি,যেন শেষ অবধি ফ্রেন্ডশিপ বজায় থাকে’

‘আপা সব মেন্যু তো বললাম,তাও কেন জানি মনে হয় কিছু একটা বাদ গেছে গা!সেটা কি!’
রকিবের মা আর খালা বৌভাতের মেন্যু নিয়ে আলোচনা করছিলেন।তারা সেন্টারে খাওয়াবেন না,বাসার ছাদে খাওয়াবেন।

পান্না ওনাদের কথা শুনছিল,তখন সে এগিয়ে এসে বলে,’চিংড়ি মাছ বাদ গেছে’
‘আরে হ্যাঁ তাই তো!পিচ্চি মেয়েটা ঠিক ধরেছে।আপা চিংড়িও তো লাগবে’
পান্না মুচকি হাসছিল ঐ সময়ে রিদম ওকে ফিসফিস করে ডাকে।নিজের নাম শুনে পান্না পেছনে তাকাতেই দেখে সদর দরজার কাছে দাঁড়িয়ে রিদম ওকে ডাকছে।

‘কি হয়েছে ভাইয়া?’
রিদম পান্নার হাত ধরে বাসার বাহিরে নিয়ে আসে।এরপর দম ফেলে বলে,’আন্টি দেখলে কত কথা বলবে তাই এখানে আসলাম।এই নাও ধরো’
‘এটা কার?’
‘আমি তোমার জন্য এনেছিলাম পিকনিক থেকে আসার সময়’

পান্না ব্রেসলেট টার দিকে চেয়ে থেকে তার মনে পড়ে পিংকি ওকে অনেক কথা শুনিয়েছিল রিদমের উপহার নিয়ে তাই সে বলে এটা নিবেনা।
‘কেন?এটা নিলে কি হবে?’
‘আপনি এটা অন্য কাউকে দিয়ে দিন।আমার লাগবেনা’
‘তোমার লাগবেনা?’
‘না’

রিদমের খুব রাগ হলো।সে পান্নার সামনেই ব্রেসলেটটা ছিঁড়ে ফেলে চলে গেলো বাসার ভেতর।
এ প্রথম পান্না রিদমের এই রুপটা দেখেছে।
রিদম চলে যেতেই পান্না মুক্তা গুলা কুড়িয়ে নিজের কাছে রেখে দেয়।পিংকির ভয়েই সে এটা নিতে চাইছিল না,এটা যদি রিদম জানতো তাহলে এরকম রাগ দেখাতোনা।

রকিব তানিয়াকে নিয়ে বের হয়ে বলে,’সবাইকে সালাম দিবা,কাউকে বাদ দিবানা।এখানে সবাই মুরব্বি ‘
‘ওকে!’
তানিয়া সোফার রুমে এসে লাজুক সুরে বলে,’আসসালামু আলাইকুম সবাইকে’
রকিব মাথায় হাত দিয়ে ফেলে। রকিবের মা তো রেগে আগুন,যেন লাভা উপচে পড়লো রুমে।তিনি রাগে কটমট করছিলেন ঐ সময়ে।রকিব তানিয়াকে ধীরে ধীরে বলতে থাকে সবাইকে আলাদা করে সালাম দিতে।
‘ওকে’

‘আসসালামু আলাইকুম আপনাকে খালা,আসসালামু আলাইকুম আপনাকে খালু,আসসালামু আলাইকুম আপনাকে চাচা,আসসালামু আলাইকুম আপনাকে চাচি,আসসালামু আলাইকুম আপনাকে জেঠা,আসসালামু আলাইকুম আপনাকে জেঠি😎’
‘থামো তানিয়া ‘

‘যাক বাবা,আপনি তো বললেন সবাইকে আলাদা করে দিতে’
‘রকিব তোর বউকে ঠিক কর নাহয় আজ খুব খারাপ হই যাবে।’
‘তানিয়া তুমি যদি আর একবার দুষ্টামি করছো তো!’
‘তো?আপনি যদি আর একবার আমাকে বকছেন তো আজ রাতেও ঘুমাই যাবো জলদি’

রকিবের মুখটা শুকনা পাতার মতন হয়ে গেলো।সে আর কিছু বলছেনা।তানিয়ার খুব জোর হাসি আসছিল তাও সে হাসিটাকে আটকে রাখে।সে এরকম টা করছে কারণ কাল বিয়ের পরে সে শুনতে পেয়েছে রকিবের মা যৌতুক চেয়েছেন ইনিয়েবিনিয়ে।

যদি তুমি বলো পর্ব ৫৫

তাই তানিয়া এরকম করছে কালকের পর থেকে।বিষয়টা তার হজম হয়নি,সে মানতে পারছেনা এরকম বংশের মানুষ হয়ে কি করে এই যুগে এসে যৌতুক চাইতে পারে।এতদিন আলাপ চারিতা করেও সে মানুষগুলোকে ভালভাবে চিনতেই পারেনি।

যদি তুমি বলো পর্ব ৫৭