যদি তুমি বলো পর্ব ৫৭

যদি তুমি বলো পর্ব ৫৭
আফনান লারা

ইশানের ইচ্ছা ছিল না রিদমকে এত তাড়াতাড়ি জাপান নিয়ে যাওয়ার।কারণ সে চেয়েছিল রিদমের এসএসসিটা অন্তত শেষ করে তারপর যাবে।কিন্তু তার একটা বিশেষ কারণে সে রিদমকে নিয়ে যাবার সিদ্ধান্ত নেয়,এর মানেটা শুধু তিথি জানে।আর কেউ না।

তিথি ইশানের দেয়া কালো শাড়ীটা পরেই তানিয়ার বৌভাতের অনুষ্ঠানে আসে।আজ ইশান আর তিথিকে এতটাই ভাল লাগছিল যে বর বউকে ছেড়ে বেশিরভাগ মানুষই তাদের খেয়াল করছিল।কারণ তিথির সাথে মিলিয়ে ইশান কালো রঙের পাঞ্জাবি পরে এসেছে।তিথি বসে বসে একটা খালি রোস্ট খাচ্ছিল,কারণ রোস্ট তার খুব প্রিয়,খাবার সে আগেই খেয়ে নিয়েছে এখন সাগরানা দেখে ওখান থেকে একটা রোস্ট নিয়ে এক পাশে বসে বসে খাচ্ছে সে।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন হউন

ওর পাশেই রকিবের চাচাতো বোন টুম্পা বসে খাচ্ছিল,টুম্পা সেই কখন থেকে ইশানের দিকে তাকিয়ে আছে।সে তখনও জানেনা ছেলেটা আসলে কে হয় রকিবের।এত ভাল লাগছিল তার,একেবারে ক্রাশ খেয়ে গেছে সে ইশানের উপর।ইশান রকিবের সাথে একটা কথা নিয়ে আলাপ করছিল তার এদিকে খেয়াল ছিল না।
টুম্পা তার পাশে বসা মেয়েটিকে বলে,’এই দেখ না,ছেলেটা কি সুন্দর তাই না?’

এ কথা শুনে হাঁড় চিবোতে চিবোতে তিথিও তাকায় সেদিকে।
দেখে ওমা এ তো তার বিয়ে করা বর।টুম্পা বলে,’চল না একটু কথা বলি,দেখ তো আমার লিপস্টিক ঠিক আছে কিনা?’

তিথি এবার মেয়েটাকে দেখে,মোটামুটি দেখতে ভাল!তিথি হা করে কিছুক্ষণ চেয়ে থাকে।মেয়েটার টানা টানা চোখ তার উপরে সুন্দর করে আই লাইনার লাগানোই বিয়ে বাড়ির সুন্দরী লাগছিল তাকে।তিথির একবারের জন্য মনে হলো ইশান একে দেখলে ক্রাশ খাবে।

তাও ইশানকে একবার বাজিয়ে দেখার ইচ্ছা হলো তিথির।
সে হাত থেকে মুরগীর হাঁড় রেখে দিয়ে বলে,’আপু!আপু?’
‘কি?’
‘এই ছেলেটাকে তো আমি চিনি’
‘সত্যি?আপনার কে হয়?’

‘আমার ছোট ভাইয়ের ছোট বোনের জামাইর শালার বেয়াইন তামিয়ার বড় ভাইয়া হয়’
‘ওহ তাই!আচ্ছা প্লিজ প্লিজ আমার সাথে পরিচয় করিয়ে দিবেন?’
‘কেন নয়!গিয়ে শুধু বলবে যে উনাকে তুমি পছন্দ করো,ডেইটে যেতে চাও।সিম্পল,উনি তো মেয়ে খুঁজতেছে বিয়ে করার জন্য।মেয়ে পেলে জাপান নিয়ে যাবে’

মেয়েটা চোখ বড় বড় করে বলে ‘তাই?ঠিক আছে দাঁড়াও’
এই বলে মেয়েটা ইতিউতি আর না ভেবে রকিবের কাছে গিয়ে দাঁড়ায়।ইশান আচমকা মেয়েটিকে দেখে রকিবের সাথে কথা বন্ধ করে দেয়।

‘কিরে টুম্পা?কিছু বলবি?খাবার খেয়েছিস’
‘খেয়েছি রকিব ভাইয়া,আসলে উনার সাথে একটু কথা বলতাম’
‘ইশানের সাথে?তুই ওকে চিনিস?’
‘না ঐ যে আমার পাশে একটা আপু বসা ছিল,উনি চিনে।উনার নাকি ছোট ভাইয়ের ছোট বোনের জামাইর শালার বেয়াইনের বড় ভাইয়া হয়’

‘কিহ!!ওয়েট ওয়েট!ছোট ভাইয়ের ছোট বোনের হাসবেন্ডের বেয়াইনের বড় ভাই!তার মানে তিথির হাসবেন্ড!ওহ হো টুম্পা,সামান্য লজিক বুঝলিনা।ইশান হলো তিথির হাসবেন্ড,মানে তোর ভাবীর বড় বোনের জামাই।বুঝেছিস?’
‘কিহ?উনি ম্যারিড?’
‘হ্যাঁ রে পাগলি!’

‘এই যে ভাইয়া,এইদিকে তাকান,এত লজ্জা পাবার নাটক করতে হবেনা।আপনি যখন একজন বিবাহিত পুরুষ তখন এত সেজেগুজে ফিট ফাট হয়ে আসার কি দরকার ছিল?কাকে ইম্প্রেস করার জন্য এত গরজিয়াস সেজে এসেছেন?আমার মতো মেয়েদের ইমোশান নিয়ে খেলতে ভাল লাগে আপনার?’

তিথি যখন দেখলো ঐ মেয়েটা ইশানকে বকেই যাচ্ছে তখন সে এসে সামনে দাঁড়ায় এরপর বলে,’বাসায় তো আমাকে ধরে উত্তমমধ্যম দেন,এখানে কিছু করতে পারেন না?পারবেন কিভাবে!প্রতিশোধ তো শুধু তিথির সাথেই নেয়া যায়।আর এই মেয়ে!তুমি দেখো!ভাল করে দেখো, আমার হাসবেন্ডের হাতে মোটা করে এঙ্গেজমেন্টের রিং।ছেলেরা সচরাচর রিং পরেনা।

এই কমন সেন্স তোমার নাই?আর সুন্দর ছেলেরা সাজার দরকার নাই।একশোটাকার গামছা পরলেও তাদের রনভীর কাপুর লাগবে।বুঝছো!আমি শুধু দেখতে চেয়েছিলাম আমার গুণধর স্বামী রুপসী রমনী দেখে কেমন রিয়েকশান দেয়।কিন্তু আমি ভুলে গেছিলাম আস্ত গাধা একটাকে বিয়ে করেছি।সে শুধু কাহিনী দেখে যাচ্ছে!’

ইশান এবার রেগে গেলো তিথির উপর।সে ওদের সামনে থেকে তিথিকে বাহিরে নিয়ে আসে।
‘কি হলো?এমন করলেন কেন?’
‘তোর কি কমন সেন্স নাই?এরকম করে মানুষ?মেয়েটা তোকে কি ভাবলো?ছেঁসড়া ছাড়া কিছুই না।এরকম ফান মানুষ হাই স্কুলে থাকতে করে।মাস্টার্স কিংবা অনার্স লেভেলের মেয়েরা এসব করেনা।সব চাইতে বড় কথা হলো তুই আরাফাত বাড়ির বউ,একমাত্র বউ।রকিব তোকে কি ভাবলো সেটা বুঝতে পেরেছিস?’

‘আশ্চর্য, আমি কি এমন অপরাধ করে ফেললাম যে আপনি আমায় এরকম বকছেন!’
‘শুরু থেকে দেখছি,ম্যাচিউরিটি বলতে তোর কাছে কিছু নাই,কিচ্ছু না।আমার সাথে মজা কর প্রবলেম নাই,কিন্তু অন্য মানুষকে নিয়ে মজা করবি কেন?তানিয়ার হাসবেন্ড হয় রাকিব,তোর এই সব পাগলামিতে সে হয়ত কিছু বলেনি কিন্তু মনে মনে কতটা নিচ ভাবছে জানিস?বড় বোন হয়ে এসব করা কি শোভা পায়?’

তিথি মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকলো।
ঐদিকে রকিব লক্ষ করেছে তানিয়া ওর সাথে ভালভাবে কথাই বলছেনা।রকিব স্টেজে এসে ওর পাশে বসে বলে,”তানিয়া?কি হলো তোমার?’
‘কি হবে?’

‘কথা বলছোনা ঠিক মতন।কিছু কি হয়েছে?’
তানিয়া কিছু বলেনা,নিজের শাড়ীর কুচি হাত দিয়ে গুনতে থাকে বসে বসে।
অনুষ্ঠান শেষ হবার পর রকিব আর তানিয়া বাসায় ফিরে আসে।রিদম আর ওর কিছু কাজিনরা মিলে তানিয়ার রুমটাকে সাজিয়ে রেখেছিল। রকিব আজ মহাখুশি।তানিয়াকে বোঝার চেষ্টা করবে,তার সাথে ভাল একটা সময় কাটবে আজকের রাতটাতে।

সে রুমে ঢুকেই দেখে ফুলে ভরিয়ে রাখা রুমটা,যেন আজ তাদের আবারও বাসর।
সে হেসে হেসে ভেতরে ঢুকে দরজাটা লাগিয়ে তানিয়ার দিকে তাকায়।তানিয়া গাল ফুলিয়ে রেখে হাতের চুড়ি খুলছিল।

রকিব ওর কাছে এসে কাঁধে তার ঠোঁটজোড়া ছোঁয়ায়।এরপর তানিয়ার কাঁধের উপর থেকে ওর শাড়ীর আঁচলের সেফটিপিন টা খুলতে শুরু করতেই তানিয়া ওর দিকে ফিরে তাকায়।রকিব কিছুটা অস্বস্তি বোধ করে বলে,’সরি আসলে শুরুতেই এমনটা!!”
‘ইটস ওকে!”

তানিয়া আবারও ঘুরে হাতের চুড়ি খুলতে থাকে।রকিব বিছানায় বসে ওর অপেক্ষা করতে থাকলো এবার।দশ মিনিট পার হয়ে যাবার পরেও যখন তানিয়া আসছিল না তখন রকিব বললো,’তোমার হাতের চুড়ি খোলা কি শেষ হবেনা?’
‘হবে,কেন বলুন তো?’

রকিব চট করে উঠে দাঁড়ায়।তানিয়া তখনও হাতের চুড়ি খুলছিল।রকিব ওর খুব কাছে ঘেঁষে ওর পিঠে নাক ডুবাতেই তানিয়া ছিটকে দূরে সরে দাঁড়ায়।যেন তাকে জন্তু ধরেছে।
রকিব ঐ জায়গায় দাঁড়িয়ে থেকে কিছুটা গম্ভীর গলায় বলে,’আমি জানতে চাই তোমার এরকম ব্যবহারের কারণ কি?আমরা দুজনেই বিবাহিত। তবে আমাকে তোমার কাছে আসতে দিচ্ছো না কেন?কি অপরাধ আমার?’

‘কি অপরাধ?নিজেকে প্রশ্ন করুন।প্রশ্ন করুন আপনার ঢাকায় একটা ফ্ল্যাট কেন লাগবে?ইউ নো হোয়াট?আমি আপনাকে চিনতেই পারি নাই!আমি বেকুবের মতন আপনার সাথে সেই ফ্ল্যাট দেখতে গিয়েছি যার টাকা আমার বাবা দিবে,সরি সরি।বাবা দিবেনা,বাবাকে দিয়ে দেওয়ানো হবে।

আমার কি দোষ বলতে পারবেন?আমি টুকুর চেয়ে কম ফর্সা বলে?টুকুর চেয়ে কম মোটা বলে?শুকনা বলে?আমার তো মনে হয় টুকু আপনার বউ হলেও আপনারা একই যৌতুক চাইতেন।আপনাকে আমি আপনার পরিবার থেকে আলাদা মনে করতাম।আমি মনে করতাম অন্তত আপনি তাদের মতন না,আপনি আমাকে বুঝবেন।কিন্তু নাহ!সব এক ঘাটের মাঝি।এখন আমার আপনার সাথে একই রুমে বাসর ঘরের নামের এইসব অনুষ্ঠান পালন করতে ঘৃনা লাগে।আপনি একটা কাপুরুষ!যদি এটা আগে জানতাম তবে কখনওই আমি কবুল বলতাম না,সই করতাম না জীবনের সেই সবচাইতে দামী কাগজে!’

রকিব চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকলো।তানিয়া এবার খোঁপার সেফটিপিন খুলতে থাকে বসে বসে।আর কোনো কথা বলেনা।

যদি তুমি বলো পর্ব ৫৬

ফ্ল্যাট টা রকিব নিজের টাকায় কিনবে বলে ঠিক করেছিল,টাকাও ব্যাংকে জমা আছে,কিন্তু তখনই মা বেঁকে বসলেন।তিনি বললেন টাকা গুলো ফিউচারের জন্য সেভিংসে রাখতে আর এই ফ্ল্যাট তানিয়ার বাবা গিফট করবেন।রকিব কিছুতেই মানতে চায়নি,কিন্তু মা বললেন ওনারা নাকি জোর করেছেন।কিন্তু এই সত্যটা রকিব আসলেই জানতোনা।’

যদি তুমি বলো পর্ব ৫৮