হৃদয়হরণী পর্ব ৩৭

হৃদয়হরণী পর্ব ৩৭
তানিশা সুলতানা

ফ্রেশ হয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিয়েছে সাদি। এবার একটু ঘুম দরকার। শরীরটা ম্যাচ ম্যাচ করছে। সকাল থেকেই দৌড়াদৌড়ি করে যাচ্ছে কন্টিনিউসলি। খাওয়াটাও হয় নি ঠিকঠাক। খিধেও পেয়েছে প্রচুর। তবে এই মুহুর্তে খেতে ইচ্ছে করছে না।

নভেম্বরের শুরুর দিক। ঘন কুয়াশার দেখা না মিললেও শীত পড়েছে ভালোই। কম্বল মুড়ি দেওয়ার মতোই শীত। সাদি গলা ওবদি কম্বল টেনে এসির পাওয়ার বাড়িয়ে ঘুমানোর প্রস্তুতি নেয়। বাইরে থেকে আবছা কথার আওয়াত ভেসে আসছে। স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে না ঠিক কি কথা বলা হচ্ছে।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

তবে সাদি আন্দাজ করে নেয় সামিরকে ধুয়ে দিচ্ছে মিহি এবং মায়া।
চোখ দুটো বন্ধ করতেই ফোনটা বেজে ওঠে। বিরক্ত হয়ে বালিশের তলা থেকে ফোনটা বের করে। ইডিয়েট নামটা ফোনের স্কিনে জ্বল জ্বল করছে।
ফোঁস করে শ্বাস টেনে কলটা রিসিভ করে নেয় সাদি।

“হ্যালো আব্দুল কুদ্দুসে পাপা?
আমি না যেতে পারবো না। আম্মু প্রেগন্যান্ট।
এক লাফে উঠে বসে সাদি। চোখ দুটো বড়বড় হয়ে যায়। ছোঁয়ার আম্মু মানে তো সাদির শাশুড়ী। তিনি প্রেগন্যান্ট?
জিভ দ্বার ঠোঁট ভিজিয়ে খানিকক্ষণ চিন্তা করে সাদি। মনে মনে আওড়ায়

“মুখের কথা মুখেই রয়ে গেলো। এরই মধ্যে সুখবর?”
শুকনো ঢোক গিলে সাদি। না মানে অফিসে যদি ব্যাপারটা লিক হয়ে যায় মুখখানা দেখাবে কিভাবে? শশুড়কেও বলি হারি। বুড়ো হয়েও এতো একটিভ?
ওইদিকে ছোঁয়া হ্যালো হ্যালো করেই যাচ্ছে। সাদির সেদিকে হুশ নেই।

“আছেন না কি আপনি? কি হলো? আব্বুর মতো সেন্সলেস হয়ে গেলেন না কি?
সাদি দীর্ঘ শ্বাস ফেলে।
” চাচ্চু সেন্সলেস হয়েছে?
“পরপর দুইবার।

আপি তো কথাই বলছে না। সবাই মুড অফ করে বসে আছে। শুধু পরি খুশিতে লাফাচ্ছে।
সাদির হাসি পায়। খুব কৌশলে হাসি চেপে যায়।
“ভেবেছিলাম আমাদের বেবি হবে৷ কিন্তু কি হলো? আমার না ভালো লাগছে না।
আবার এর মধ্যে মিহি ফিহি। পাগল পাগল লাগছে

” আচ্ছা
” আমি আসছি।
খুশিতে ছোঁয়ার চোখ দুটো চিকচিক করে ওঠে। যাকক তাহলে মিহির সাথে থাকছে না।
“তাড়াতাড়ি আসুন প্লিজ। মিষ্টি নিয়ে আসিয়েন।

” মিষ্টি কেনো?
“আমার নতুন ভাই বোনের জন্য।
” রাখো তুমি।
“শুনেন
” বলো
“রাতে থাকবেন?

” তোমার কাছে রাখবা?
ছোঁয়া লজ্জা পায়।
“হুমমম
” আচ্ছা থাকবো।
“বুইঝো কিন্তু
” বুঝেছি

আনমনে জবাব দেয় ছোঁয়া।
সাদি ফিসফিস করে বলে
“আমি থাকলে তুমি শেষ।
কেঁপে ওঠে ছোঁয়ার সত্তা। দেয় জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে জবাব দেয়
“বাজে হয়ে যাচ্ছেন।

ছোঁয়া ফোন রেখে দেয়। সাদি একটু হেসে নেয়। বউয়ের কাছে থাকবে আজ? শশুড় মশাই কিভাবে রিয়েক্ট করবে?
শশুড়ের উঁচু নাক এবার থেঁতো করা যাবে। নাকের ডগায় রাগ নিয়ে ঘুরে লোকটা। সাদির থেকে ছোঁয়াকে আলাদা করার পরিকল্পনা আঁটে। এবার সাদি নিজের বউকে শশুড়ের নাকের ডগা দিয়ে নিজের কাছে নিয়ে আসবে৷
দরজা খুলতেই দেখতে পায় সামির ফ্লোরে শুয়ে আছে। মিহি সোফায় বসে ফোন দেখছে। আর মায়া এদিক সেদিক তাকাচ্ছে। দরজা খোলার আওয়াজে সকলের দৃষ্টি পড়ে সাদির দিকে। সামির এক লাফে উঠে বসে।

“ভাই ওরা তোর সাথে কথা না বলে যাবে না।
অসহায় সুর সামিরের। সাদি সামিরের দিকে চাবি ছুঁড়ে মারে। ক্যাচ ধরে ফেলে সামির।
” আমি যাচ্ছি। বউ প্রেগন্যান্ট।
তোরা কথা বল
বলেই হনহনিয়ে চলে যায়। মিহি বড়বড় চোখ করে তাকায়। সামিরও হতদম্ভ। এত দ্রুত প্রেগন্যান্ট? বিয়ের কয়মাস হলো?

“প্রেগন্যান্ট মানে?
মিহি দাঁড়িয়ে গিয়ে বলে। সামির ভেংচি কাটে
” প্রেগন্যান্ট মানে পোয়াতি। বাচ্চা হবে। পেটের মধ্যে আরেকজন বড় হচ্ছে।
এর থেকে ভেঙে বলতে পারবো না। নিজের বউ হলে কিভাবে বাচ্চা এলো এটাও তোকে বলতাম
মিহি বিরক্ত হয়। অতিরিক্ত কথা বলে ছেলেটা। মায়া মুখ টিপে হাসে।
“আপু একটা কথা বলি তোকে। সাদি ভাইয়ার পেছন ছেড়ে দে।
” আমি ওর জীবনটা জাস্ট হেল করে ছাড়বো। ওর জন্য সব হারিয়েছি আমি।

নাজমা বেগম এই পর্যন্ত চার বার বমি করেছে। মাথা ঘুরছে সকাল থেকেই। প্রথমেই তিনি স্বামীকে বলেছিলো। তিনি কথা না বলে বেরিয়ে গিয়েছিলো বাসা থেকে। স্বামীর থেকে এমন অবহেলা পেয়ে নিজের রুমেই ঘাপটি মেরে শুয়ে ছিলো।

তারপর সাবিনা বেগম খোঁজ নিতে এসে দেখে এই অবস্থা।
সকলের সন্দেহ মোতাবেক ডাক্তারের কাছে যেতে ভয় পাচ্ছেন। বাচ্চা দুনিয়াতে আসা খুশির সংবাদ। কিন্তু এই বয়সে এসে কেউ খুশি হতে পারছেন না।
সেলিম বাগানে দাঁড়িয়ে আছে এখনো। তিনি ভীষণ ভয় পাচ্ছে।
নাজমা বেগমের পাশে বসে আছে ছোঁয়া সিমি এবং সাবিনা৷

সাদি গেইট পেরিয়ে বাড়িতে ঢুকতেই নজর পড়ে সেলিমের দিকে। চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। সাদি গিয়ে পাশে দাঁড়ায়।
“বললাম কি না বললাম তাতেই সুখবর? বাহহ এই না হলো আমার শশুড় মশাই।
সেলিম কপালের ঘাম মুছে তাকায় সাদির দিকে। কাঁদো কাঁদো ফেস করে বলে
” বিশ্বাস করো আমি কিচ্ছু করি নি।
সাদির হাসি পায়। তবুও হাসি চেপে বলে

“এটাকে কিছু করা বলে না তো। ভালো কাজ তো। ভয় কেনো পাচ্ছেন?
” মেয়ে বিয়ে দিয়েছি। নাতনি আছে আমার। এই বয়সে ছি ছি ছি
“এসব কি আর আপনার ভাবনায় ছিলো শশুড় মশাই? আপনি তো ভেবেছিলেন সদ্য যৌবনে পা দিয়েছেন।
সেলিম কটমট চোখে তাকায় সাদির দিকে

” হাতি কাঁদায় পড়লে চামচিকায়ও লাথি মারে।
“আপনি হাতি?
দীর্ঘ শ্বাস ফেলে সেলিম। এর সাথে কথা বলার মানেই হয় না।
” যাও তো এখান থেকে।

হৃদয়হরণী পর্ব ৩৬

“হুমম যাচ্ছি শাশুড়ী মাকে চেকআপ করাতে নিয়ে যেতে হবে তো।
সাদি চলে যায়। সেলিম মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়ে।

হৃদয়হরণী পর্ব ৩৮