বুকে যে শ্রাবণ তার শেষ পর্ব 

বুকে যে শ্রাবণ তার শেষ পর্ব 
নিশাত জাহান নিশি

“আমি কিন্তু আপনাকে চিনে রাখলাম স্যার। আমার ভাইকে বলে আপনাকে কীভাবে চাকরী থেকে বরখাস্ত করা যায় তার ব্যবস্থা আমি করব!”
মারধর থামিয়ে কিছু মুহূর্তের জন্য থমকে দাঁড়ালেন অফিসারটি। সামান্তা এবার হাল ছেড়ে দিলো। ভাবল এই বুঝি অফিসার তাঁর দল পাল্টে নিবেন! টুটুল চৌধুরীর নাম শুনে তিনি জারিফের পক্ষপাতিত্ব করবেন। কিন্তু সামান্তার সেই ধারণাকে ১৬০ ডিগ্রি এঙেলে ঘুরিয়ে দিয়ে অফিসার পূর্বের ন্যায় আরও অধিক কঠিন হয়ে ওঠলেন। তীক্ষ্ণ দৃষ্টি ফেললেন রাগে গজগজ আক্রমনাত্নক জারিফের দিকে। অবিলম্বেই তিনি জারিফের শার্টের কলার চেপে ধরলেন! কোনোরূপ ভাবান্তর না করে চোয়াল উঁচিয়ে বললেন,

“আমি আমার কাজে সৎ থাকলে তোর কোনো বাপেরও সাধ্য নেই আমাকে চাকুরীচ্যুত করার! কোন বাপের ভয় দেখাচ্ছিস তুই আমাকে? ঐ দা’লা’ল, ঘু’ষ’খো’র, মুখোশধারী অ’স’ৎ লোক টুটুলের? তবে শোনে রাখ, তোর ঐ বাপকে ভয় পাইনা আমি। তার অন্যায় ও ক্ষমতার অপব্যবহার দেখতে দেখতে আমি ফ্যাড আপ হয়ে গেছি। এতোদিন ঠিকঠাক কোনো ইস্যু না পাওয়ায় আমি তার বিরুদ্ধে কোনো অ্যাকশন নিতে পারছিলাম না। এখন যেহেতু ভ্যালিড একটি ইস্যু পেয়ে গেছি তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে যদি আমি নিজের চাকরীও হারাই এতে আমার কোনো আফসোস নেই! দেশের ভেতরে ও বাইরে জব সেক্টরের অভাব নেই।”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

পক্ষান্তরে জারিফকে কিছু বলার সুযোগ দেওয়া হলোনা। ধাক্কা মেরে তাকে সোফার ওপর ফেলে দেওয়া হলো। ঘটনার আকস্মিকতায় ঘাবড়ে গেল জারিফ। পরিস্থিতি ক্রমশ তার বিপরীতমুখী হয়ে ওঠবে তা ঘুনাক্ষরেও ভাবতে পারেনি সে। তবে এর শেষ দেখে ছাড়বে জারিফ। তার সাথে পাঙা নেওয়া? সুযোগ বুঝে তার ভাইকে কটাক্ষ করা? ছোটো করার চেষ্টা করা।

কোনোভাবে এই পরিস্থিতি একবার মুক্তি পেলেই সে অফিসারের জীবননাশ করতেও দু’বার ভাববেনা। জারিফের মুখোমুখি একটি চেয়ার টেনে বসলেন অফিসারটি। চোখেমুখে তাঁর বিদ্রোহের ঝড়। শঙ্কিত জারিফের দিকে রোষাগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করলেন তিনি। কণ্ঠে কাঠিন্যতা এনে তিনি চোয়াল উঁচিয়ে প্রশ্ন ছুড়লেন,

“দুই দুটি মানুষকে এভাবে আহত করার কারণ কী? যা প্রশ্ন করেছি তার ঠিকঠাক উত্তর দিবি। যদি প্রসঙ্গ ঘুরানোর চেষ্টা করিস বা ভুলভাল উত্তর দিস তো তোর অবস্থা কতটা খারাপ হবে তা তুই কল্পনা ও করতে পারছিসনা।”
পাশ থেকে স্বস্তির শ্বাস ফেলল সামান্তা। এই বুঝি কোনো একটা কূল হলো। তার লক্ষ্য পূরণে পাশে একজন সৎ মানুষকে পেলো।

যে মানুষটি কিনা তার মিশালকে ন্যায় দিতে সাহায্য করবে। খুব শীঘ্রই তার মিশালকে মিথ্যে খু’নের অভিযোগ থেকে মুক্তি দিবে। বীরদর্পে কোনো ঘুষ ব্যতীত জেল থেকে তাকে খালাস করবে। যতোটুকু ধারণা করা যাচ্ছে আজই জারিফ এবং টুটুল চৌধুরীর কুকীর্তি ফাঁস হবে। সেই আনন্দে ও উত্তেজনায় সামান্তার ঠোঁটে আলতো হাসির রেখা ফুটে ওঠল। অফিসারটির প্রতি ভক্তি জন্মাতে লাগল।

অফিসারটির সাহসিকতায় সে রীতিমতো মুগ্ধ হলো। সামান্তা সত্যিই ভাবতে পারেনি সব পুলিশ অফিসাররা ঘুষের কাছে বিক্রি হয়না। তাঁদের মধ্যেও ন্যায় আছে, মনুষ্যত্ব আছে, বিচার আছে, সাধারণ মানুষদের কথা তাঁরা ভাবে। সুুবিধা, অসুবিধার কথা ভাবে তাঁরা। একান্তই নিজের স্বার্থের কথা ভেবে তাঁরা সাধারণ মানুষদের ক্ষতি করেনা। তখনও ভয়েস রেকর্ডার অন সামান্তার। বিষয়টি পাশ থেকে লাবিব লক্ষ্য করল। সামান্তার পাশে কিঞ্চিৎ গাঁ ঘেঁষে দাড়ালো। গলা ঝাঁকিয়ে বিড়বিড় করে বলল,

“আপু? আপনার কাছ থেকে অনেককিছু শেখার আছে আমার! আপনি হয়তো ধারণাও করতে পারছেননা আপু আপনি কতটা জিনিয়াস। আমি আপনার প্রতিটা পদক্ষেপে বাকরুদ্ধ হয়ে যাচ্ছি। মিশাল ভাইয়ার পাশাপাশি এখন থেকে আমার ইন্সপিরেশন লিস্টে আপনিও যোগ হলেন! মাঝে মাঝে আমাকে আপনারা পাশে রেখে একটু ট্রেনিং দিয়েন তো! যেনো আপনাদের মতো আমিও একটু প্র্যাক্টিক্যালি জিনিয়াস হতে পারি।”

“এখন এসব কথা বলার সময় নয় লাবিব। উদ্দেশ্য এখনও সফল হয়নি আমাদের। তবে তোমাকে অসংখ্য ধন্যবাদ লাবিব বলা মাত্রই সমস্ত কাজ ফেলে ছুটে এলে তুমি। পাশে এসে দাঁড়ালে আমার। তবে এর শেষ অবধি তোমার হেল্প চাই আমি। আশা করি তুমি সহযোগীতা করে আমার পাশে থাকবে।”

প্রত্যত্তুরে লাবিব কিছু বলবে এর পূর্বেই জারিফ জ্ঞান হারালো! মূলত জ্ঞান হারানোর ভান করল। জারিফের ছলাকলা বুঝতে বেশি বেগ পেতে হয়নি অফিসারের। জারিফকে মারধর করার প্রস্তুতি নিতেই সামান্তা অফিসারকে থামালো। ভিন্ন একটি টেকনিক অবলম্বন করতে চাইল সামান্তা। দৌড়ে সে কিচেনে গেল। পানি গরম করে গ্লাস ভর্তি পানি এনে উত্তপ্ত গরম পানি ছিটাতে লাগল জারিফের চোখেমুখে। সঙ্গে সঙ্গেই জারিফ লাফিয়ে ওঠল! চোখেমুখে গরম পানির ছটা লাগতেই মুখের বিভিন্ন অংশ লাল হয়ে গেল জারিফের। জ্বালা পোঁড়া শুরু হয়ে গেল তার। চিৎকার করে বলতে লাগল,

“এই কে রে? কার এতো বড়ো সাহস আমার গাঁয়ে গরম পানি ছিটায়?”
কথাটি বলে দম নেওয়ার সুযোগ পেলোনা জারিফ। ইতোমধ্যেই অফিসার ক্ষিপ্ত হয়ে জারিফের থুতনী চেপে ধরলেন! হিংস্র গলায় প্রশ্ন ছুড়লেন,

“গলা উঁচু করলি কেন তুই? এতো বার বলার পরেও গলা কেন এতো উঁচু করলি তুই? এখনও সময় আছে আমার প্রশ্নের ঠিকঠাক উত্তর দে। কেন তুই ঐ দুজনকে আহত করলি?”
অফিসারের কথার মাঝেই সামান্তা ফোড়ন কাটল। তীক্ষ্ণ দৃষ্টি ফেলল জারিফের দিকে। গরম পানির গ্লাসটিকে ইঙ্গিত করে ঘাড়ের রগ টান টান করে জারিফকে একপ্রকার শাসিয়ে বলল,

“পানি কিন্তু এখনও গরম আছে। একেবারে পুরোটা ঢেলে দিব গাঁয়ে। চামড়া ছিলে চলে আসবে! স্যার যা যা প্রশ্ন করছে তার ঠিকঠাক উত্তর দে।”
কদাচিৎ হাসল জারিফ! পৈশাচিক ভাব তার চোখেমুখে। সামান্তাকে কড়া গলায় শাসিয়ে বলল,
“তোকে আমি দেখে নিব! তোর এই দুঃসাহস ও তেজ আমি ভেঙে গুড়িয়ে দিব।”

ইতোমধ্যেই জারিফের নাক বরাবর সজোরে এক ঘু’ষি মারলেন অফিসার! নাক বেয়ে রক্ত গড়াতে লাগল জারিফের। হাত দুটো পেছনের দিকে চেপে ধরে অফিসার তার সর্বোচ্চ কঠোরতা দেখিয়ে বললেন,
“এখনি আমার হাতে প্রাণ হারাতে না চাইলে সত্যিটা স্বীকার কর। লাস্ট টাইম তোকে ওয়ার্ণ করছি।”

অফিসারের এই ক্ষিপ্ততা দেখে জারিফ সত্যিই এবার ভয় পেয়ে গেল। শুকনো ঢোঁক গিলল সে। পাশ থেকে সামান্তাও রাগে ফোঁসফোঁস করছিল। জারিফকে হিট করার জন্য দৃঢ় প্রতিজ্ঞ সে। থরথরে গলায় জারিফ বলতে শুরু করল,
“রুমকিকে আমি ভালোবাসতাম। যা তার সৎ ভাই রাফিন অবশ্য জানত। যদিও সে আমাদের পক্ষে ছিল তবে আমাদের মাঝে পথের কাঁটা হয়ে দাড়িয়েছিল রুমকির আরেক ভাই মিশাল!

তাই মিশালকে ফাঁসানোর জন্য আমি টুটুল ভাইয়ার হেল্প নিই। যদিও আগে থেকেই কোনোভাবে টুটুল ভাইয়ার সাথে মিশালের প্রতিদ্বন্ধীতা ছিল। টুটুল ভাইয়ার কথা অনুযায়ী আমি ও রাফিন ভাইয়া কাজ করি। মিশালকে মিথ্যে খু’নের মামলায় ফাঁসিয়ে দিই! যদিও এর কিছু প্রসেস ছিল! রুমকিকে মিথ্যে প্রতিশ্রুতি দিয়ে তাকে আমি ফ্ল্যাটে ডাকি। যা তার ভাই রাফিন পছন্দ করেনি।

তর্কাতর্কির এক পর্যায়ে আমি তাকে হিট করে ফেলি। ভাবতে পারিনি সে এভাবে আ’হ’ত হয়ে যাবে। রুমকির সাথেও আমি জোরজবরদস্তি করার চেষ্টা করি! কাজ হচ্ছিলনা বলে তাকেও আঘাত করে ফেলি। এরমধ্যেই সামান্তা চলে আসে। তাকেও আমি স্প্রে করে অজ্ঞান করে ফেলি! এরপর তো সব আপনার চোখের দেখাই।”

বৃত্তান্ত শোনার পর অফিসার একজন কনস্টেবল দ্বারা জারিফকে অ্যারেস্ট করে ফেললেন। চোখে আনন্দ অশ্রু টলমল করতে লাগল সামান্তার। এই তো মিশালের মুক্তি মিলল বলে। সমস্ত প্রমাণ এখন তার হাতে। খুশিতে উচ্ছ্বসিত হয়ে সামান্তা অফিসারের মুখোমুখি দাঁড়ালো। কৃতজ্ঞতার স্বরে বলল,

“থ্যাংক ইউ স্যার। আপনি ভাবতেও পারছেননা আপনি আমার কতো বড়ো উপকার করলেন। আপনার সততা, সাহসীকতা, ন্যায়পরায়নতা দেখে আমি মুগ্ধ। আর্দশ পুলিশ অফিসার হওয়ার যোগ্যতা রাখেন আপনি। অন্তত আমার চোখে তো আপনি মহান। এই কেইসটি জেতার জন্য আমি আপনাকে সর্বাত্নক সাহায্য করব স্যার। মিশাল ভাইয়ার কেইসটি আপনি হাতে নিন প্লিজ।”

গম্ভীর ভাব নিলেন অফিসার। প্রসঙ্গ পাল্টে বললেন,
“জারিফের সমস্ত কথা ফোনে রেকর্ড করেছেন তো? এই রেকর্ডটি কিন্তু পরবর্তীতে আমাদের কাজে লাগবে।”
“হ্যা স্যার। রেকর্ড করা আছে। আপনি চাইলে শুনতে পারেন। ওয়েট আমার ফোনটি আপাতত আপনার কাছেই রাখুন।”

সামান্তা তার ফোনটি অফিসারের হাতে তুলে দিলো। ফোনটি চেক করে অফিসার বললেন,
“আমার সাথে থানায় আসুন। মিশালকে হয়তো আজ বা কালকের মধ্যেই কোর্টে তোলা হবে। এই রেকর্ডটি তখন আমাদের কাজে লাগবে। তবে এর আগে কেইস হস্তান্তরের বিষয়টি আমাদের দেখতে হবে। যদিও ততো ইজি হবেনা টুটুলের কাছ থেকে আমার কাছে কেইসটি হস্তান্তর করার। তবে চেষ্টা করে দেখা যেতে পারে।”

“আপনি যা বলবেন তাই হবে স্যার। তবে আমার মনে হয়না জারিফকে খুব বেশিদিন আমরা আটকে রাখতে পারব বলে। এই দুইদিনে টুটুল চৌধুরী অনেককিছু ঘুরিয়ে দিতে পারেন। রেকর্ডটি যত্নে রাখবেন স্যার। জেলের ভেতর যাওয়ার পর জারিফ সত্যিটা আবার স্বীকার না ও করতে পারে।”
“আচ্ছা চলুন আমরা থানায় যাই।”

জারিফকে নিয়ে অফিসার, কনস্টেবল, সামান্তা ও লাবিব মিলে বাড়ির বাইরে বের হয়ে এলো। জারিফের ঠোঁটে তখনও পৈশাচিক হাসি! এর মানে খুঁজে পেলনা সামান্তা। তার খটকা লাগল। থেমে গেল সে। বেশ ভাবুক হয়ে লাবিবকে বলল,

“আমরা পরের গাড়িতে যাব। জারিফকে নিয়ে অফিসাররা থানায় যাক।”
“কেন আপু? একসাথে গেলে কোনো প্রবলেম?”
“মনে হচ্ছে প্রবলেম! মনটা খচখচ করছে।”

ইতোমধ্যেই অফিসার ডেকে নিলেন সামান্তাকে। বললেন সবাইকে গাড়িতে ওঠতে। রাত তখন গভীর। রাস্তাঘাট নির্জন ও নিরিবিলি। মাঝে মাঝে কয়েকটি বড়ো গাড়ি শো শো বেগে রাস্তায় বিচরণ করছিল। ভাবুক হয়ে সামান্তা ও লাবিব গাড়িতে ওঠল। চোখের পলকেই পুলিশ অফিসার রাস্তার অপর প্রান্তে চলে গেলেন! সামান্তার ফোন এবং তাঁর নিজের ব্যবহৃত ফোন তিনি গাড়িতেই রেখে গেলেন।

দোকানে দাড়িয়ে একটি সিগারেট ধরালেন তিনি। মন খুব ফুরফুরা তাঁর! প্রমোশন বুঝি সন্নিকটে তাঁর। টুটুল চৌধুরীকে নিচে নামিয়ে এবার উপরে ওঠবার পালা তাঁর। সূক্ষ্ম দৃষ্টিতে অফিসারটিকে পর্যবেক্ষণ করতে লাগল সামান্তা। মনটা কেমন যেনো কুহ্ গাইছে সামান্তার। পাশে থাকা লাবিবের দিকে তাকালো সে। উৎকণ্ঠিত হয়ে বলল,

“লাবিব? চলো আমরা গাড়ি থেকে নেমে যাই। অফিসার থেকে আমার ফোনটি নিয়ে নিই। জারিফকে নিয়ে তাঁরা না হয় থানায় যাক। আমরা তাঁদের পরে যাচ্ছি।”
পাশের সিট থেকে হ্যান্ডক্যাপ লাগানো জারিফ সামান্তার দিকে তাকিয়ে রহস্যময় হাসি হাসল। হেয়ালি স্বরে বলল,
“কেন? ভয় পাচ্ছিস? ভাবছিস এই বুঝি বড়ো কোনো গাড়ি এসে আমাদের চাপা দিয়ে দিলো? মরে গেলাম আমরা, সব প্রমাণ লোপাট হয়ে গেল, মিশালও জেলে পঁচে মরল?”

জারিফের এই আশঙ্কাময় কথাগুলো বাস্তবে রূপ নিবে কে জানত? সত্যিই একটি বড়ো ট্রাক এসে জীপটিকে এক ধাক্কা মেরে উড়িয়ে দিলো! জীপে থাকা পাঁচ থেকে ছয়জন লোক এদিক থেকে ওদিক ছিটকে পরল! রক্তের বন্যা বয়ে গেল। সামান্তা মুখ থুবড়ে পিচ ঢালা রাস্তায় লুটিয়ে পরল। মুখের ডান পাশের অংশটি তার থেতলে গেল! চোখেও তার এফেক্ট পরল! মনে হলো দুনিয়া অন্ধকার হয়ে এলো। মৃত্যুর যন্ত্রণা তাকে গ্রাস করতে লাগল।

পরিবারের কথা মাথায় এলো তার। মিশালকে নিয়ে বেশ দুঃশ্চিতায় পরে গেল। সে না হয় এক ধাক্কায় মরে গেল। কিন্তু মিশাল? মিশালকে তো প্রতিদিন নতুন নতুনভাবে ধুকে ধুকে মরতে হবে! প্রতিদিন মরার চেয়ে তো একদিনে মরা সহজ। তার মতো এই সহজ মৃত্যুটি কেন বিধাতা মিশালের ভাগ্যে রাখলনা? সৃষ্টিকর্তা সবসময় মিশালের সাথে কেন এমন অবিচার করে?

সামান্তার থেকে লাবিব আরও এক গজ দূরে ছিটকে পরল। হাত-পা ভেঙে গুড়িয়ে গেল তার! সেও মৃত্যু যন্ত্রনায় ছটফট করছিল। রাস্তাঘাটে থাকা মানুষজন নির্বাক হয়ে গেল। অফিসারের হাত থেকে সিগারেটটি তখন আপনাআপনি পরে গেল। বাকরুদ্ধ হয়ে গেলেন তিনি।

থানায় মিশালকে উল্টো করে বেঁধে একের পর এক লাঠির আঘাত করছেন টুটুল চৌধুরী। হাঁপিয়ে ওঠছেন তিনি। তবুও লাঠিকাঘাত থামাচ্ছেন না। বরং আক্রোশিত গলায় বলছেন,
“খুব সাহস তোর ঐ সামান্তার তাইনা? প্রেমিককে বাঁচাতে সে ওঠে পড়ে লেগেছে? আমার বিরুদ্ধে প্রমাণ জোগাড় করছে? পিচ ঢালা রাস্তায় যদি তাকে আমি পিষে না দিই তবে আমিও এস. আই টুটুল নই!”

রক্তাক্ত দেহ মিশালের। শরীরের সমস্ত শক্তি সে ছেড়ে দিয়েছে। প্রাণবায়ু বের হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়ে গেছে। তবুও সে পিটপিট দৃষ্টিতে অফিসারের দিকে তাকিয়ে রয়েছে। শুধু একটি কথাই প্রতিবার আওড়াতে লাগল,
“আমার সামান্তার কোনো ক্ষতি করবেননা প্লিজ স্যার। তাকে আমি সতর্ক করে দিব নেক্সট টাইম যেনো আপনার পেছনে না লাগে। তার প্রতি থাকা সমস্ত ক্ষোভ আপনি আমার ওপর ঝাড়ুন। প্রতিদিন আমাকে মৃত্যুর সাথে পরিচয় করিয়ে দিন। তবুও তার কোনো ক্ষতি করবেননা প্লিজ। সে সইতে পারবেনা। আমি তার প্রাণ ভিক্ষা চাইছি আপনার কাছে।”

ইতোমধ্যেই টুটুল চৌধুরীর কাছে একটি ফোন এলো। ফোনটি পেয়ে তিনি আরও পাশবিক হয়ে ওঠলেন। অট্ট হাসিতে ফেটে পরলেন। বললেন,

“দ্যা গেইম ইজ ওভার নাও! মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে তোর প্রেমিকা! চোখ বড়ো বড়ো করে যমদূতকে সামনে থেকে দেখছে। আহ শান্তি। তার মৃত্যুটা সামনে থেকে দেখতে পারলে আরও শান্তি লাগত। ইশ, আফসোস!”
চোখ বুজে নিলো মিশাল। চিরতরে চোখ বুজে ফেলার সমান। ভেতর থেকে চূড়ান্তভাবে একটি আক্ষেপভরা দীর্ঘশ্বাস বের হয়ে এলো। মৃত্যুকাতর সামান্তার মুখখানি তার চোখের সামনে ভেসে ওঠল। নিথর গলায় বলল,
“চিন্তা করিসনা সামান্তা। আমি তোকে একা মরতে দিবনা। এইতো আমি তোর পিছু নিচ্ছি!”

বুকে যে শ্রাবণ তার পর্ব ৪৪

[নোটঃ প্রথম খণ্ডের সমাপ্তি ঘটল! কেউ নিরাশ হবেননা প্লিজ। দ্বিতীয় খণ্ডে ভালো কিছু আসবে। মোটেও গল্পটিকে স্যাড ইন্ডিং ধরবেননা। দ্বিতীয় খণ্ড আসতে পারে পনেরো দিন কিংবা একমাস পর। আপাতত আমি চাকরী বাকরী নিয়ে খুব ব্যস্ত হয়ে পরেছি। অনিয়মিত গল্প দিতে ভালো লাগেনা। যখন চাকরীতে একটু স্যাটেল্ডড হয়ে ওঠব তখন ইনশাআল্লাহ্ নিয়মিত হয়ে যাব। তাই কিছুটা অনাকাঙ্ক্ষিতভাবেই গল্পটি দ্বিতীয় খণ্ডে নিয়ে যেতে হলো। আশা করি পাঠকবৃন্দ দ্বিতীয় খণ্ডের অপেক্ষা করবেন। যে খণ্ডে আপনারা গল্প নিয়ে পুরোপুরি স্যাটিসফাইড হবেন। এই গল্প নিয়ে আপনাদের নিরাশ করার ইচ্ছে নেই আমার। ভালো থাকবেন সবাই। আসসালামু আলাইকুম।]