যদি তুমি বলো পর্ব ৫৮

যদি তুমি বলো পর্ব ৫৮
আফনান লারা

তানিয়া চেঞ্জ করে একটা বাসার জামা পরে বিছানার এক পাশে শুয়ে পড়েছে।রকিব তখনও খাটের অন্যপাশে আগের মতই বসা ছিল।তানিয়া তখন শেষবার একটা কথা বলে।সে বলে পরশু রকিব যেন একাই চলে যায়,সে রকিবের সাথে যাবেনা।

রকিব চুপ করে কথাটা শুনে রুম থেকে বের হয়ে গেলো।
ঐদিকে তিথি ইশানের সাথেই তার বাসায় উঠেছে।ইশান তাকে যেভাবে বকেছিল সেই সময় থেকে এখন পর্যন্ত সে ইশানের সাথে কোনো কথা বলেনি,ইশানও বলেনি।দুইজনেই চুপ করে পুরোটা সময় ছিল।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন হউন

বাসায় আসার পর ইশান ফ্রেশ হয়ে বের হয়ে দেখে তিথি রুমে নেই, তিথির যে মাথার তার ছিঁড়া এটা ইশান জানে তাই সে আগে থেকেই সদর দরজা লক করে রেখেছে।তাহলে গেলো কোথায়? দোষ নিজেই করবে আবার রাগটাও নিজেই দেখাবে।

তিথি তামিয়ার রুমে বসে আছে,তামিয়াও নেই।সেও তার মায়ের সাথে গ্রামে গেছে। তামিয়ার রুমে ওদের কাপল পিক দেখছিল তিথি।কত খুশি মনে হচ্ছে দুজনকে।ওদের এরকম খুশি দেখে তার চোখে পানি এসে যায়।আচ্ছা হাসান ভাই ও কি তামিয়া আপুকে এরকম বকা ঝকা করে?যদি তাই করে তবে আপু কিরকম রিয়েক্ট করে?

এই ভেবে তিথি কাঁদতে থাকলো।কাঁদতে কাঁদতে চোখ মুখ ভিজে গেছে তার।হাতের উলটো পিঠ দিয়ে চোখ মুছতে মুছতে সে ইশানের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করছিল ঐ সময়ে নিজের কোলে কারোর মাথার স্পর্শ পেয়ে সে কান্না থামিয়ে তাকিয়ে দেখে ইশান ওর কোলে মাথা রেখে শুয়ে আছে।

তিথি রাগের কারণে কিছু বললোনা,ধীরে ধীরে নিজেই সরে যাওয়ার চেষ্টা করলো।কিন্তু ইশান তাকে সরতে দিলোনা,সে আরও চেপে ধরে তিথিকে।
‘কি বুঝাতে চাইছেন আপনি?’
‘এটাই যে এই কোলটা আমার মাথা রাখার ব্যাক্তিগত জায়গা’

‘নাহ,তা নয়।যদি তাই হতো তবে এই কোলের মানুষটিকে অনেক যত্নে রাখতেন।অপমান অবহেলা করতেন না’
ইশান উঠে বসে বলে,’তোর দোষ ছিল বলেই ঝাড়ি খেয়েছিস। আমি এমনি এমনি কাউকে কিছু বলিনা’
তিথি এবার আরও রেগে গিয়ে বিছানা থেকে নেমে চলে যায় হনহনিয়ে।

তানিয়া একা বিছানায় শুয়ে থাকার সময় রুমের দরজা খোলা খেয়াল করে উঠে বসে।হাই তুলতে তুলতে ঘড়ির দিকে চেয়ে দেখে সাড়ে বারোটা বাজে।রকিব এত ভাব কেন দেখাচ্ছে!
তাই সে বিছানা থেকে নেমে রুম থেকে বের হতেই দেখে ড্রয়িংয়ে রকিব বসে বসে টিভিতে খেলা দেখছে।
তানিয়া রেগে গিয়ে বলে,’এরকম নাটক দেখিয়ে সবাইকে বুঝাতে চান আমি আপনাকে কাছে আসতে দেইনা?’
রকিব সাউন্ড কমিয়ে বলে,’পুরুষ মানুষ রাত জেগে খেলা দেখবে,এটাই কি স্বাভাবিক না?’

‘নাহ,বিয়ের পরেরদিন কেউ রাত জেগে খেলা দেখেনা’
‘তবে আর কি করবো বলো?বউ তো প্রেম প্রেম খেলা খেলতে দিচ্ছেনা তাই অন্যের খেলা দেখছি।আমি অবলা পুরুষ জাতি কিনা!অজীবন স্ত্রী শাসন চলবে।আমার তো সবে দুইদিন হলো।’

তানিয়া এগিয়ে এসে টিভিটা অফ করে দিয়ে বলে,’এসব করে লাভ নেই।আমার মন থেকে আপনার সেই বাজে রুপটা কোনোদিনই সরাতে পারবেন না,আজীবনের জন্য কালার হয়ে গেছেন।এসব করে আমাকে আপনি আপনার বাসাতেও নিতে পারবেন না’

‘আমি জানি কি করলে তুমি বাসায় ফিরবে।সেটাই করবো,তোমায় এত ভাবতে হবেনা’
এটা বলে রকিব রুমে চলে যায়।তানিয়ার মনে ভয় জাগলো,রকিব আবার তার সাথে জোরজবরদস্তি কিছু করবে না তো?

ভয়ে ভয়ে সে টেবিলের উপর থেকে কাঁটাচামচ তুলে চুপিচুপি রুমে প্রবেশ করে।রকিব ওয়াশরুমে ছিল।তানিয়া কাঁটাচামচ টা নিয়ে বালিশের তলায় লুকাবে নাকি কোথায় লুকাবে তাই পরিকল্পনা করছিল সেই সময়ে রকিবের হাত তার কোমড়ে স্পর্শ পেতেই তানিয়া পেছনে মুড়ে কাঁটাচামাচ দিয়ে রকিবের হাতে আঘাত করে।

‘আআআআহহহহ!!এটা কি করছো!’
‘আপনাকে না বলছি আমাকে এসব আদর দেখাবেন না!লজ্জা করেনা আপনার?’
‘হাত মুছার জন্য গামছা নিতাম আমি,তুমি তো গামছা কোমড়ে বেঁধে রেখে ঘুরছো।উফ! দিলে তো হাতটা কেটে!’

পান্না তাদের বাসার ছাদে বসে রিদমের দেয়া সেই মালাটিকে অত্যন্ত যত্নের সাথে গেঁথে চলেছে।রুমে করলে পিংকি দেখে নিতো তাই তো তার এইখানে আসা।
মালাটা পুরো গেঁথে সেটাকে ওড়নার সাথে লুকিয়ে নিচে চলে আসে সে।রিদম চলে যাবে বলে ওর জন্য বাদামের বিসকিট যেগুলা মা বানায় সেগুলা এক বক্স আলাদা করে রেখেছে।ও চলে যাবার সময় দিয়ে দিবে বলে।
ইশান পুনরায় তিথির কাছে এসে ওর হাতটা ধরে নিজের দিকে ফিরিয়ে নেয় এরপর বলে,’যদি তুমি বলো তবে ভুলে যাব তোমার সব দোষ,আমি জানি যত দোষ সবে নন্দঘোষ😜’

তিথি অন্যদিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে থাকে।ইশান ওকে কাছে টেনে বুকে জড়িয়ে রেখে বলে,’তুই জানিস না তোকে আমি কতটা চাই,কতটা ভালবাসি।যদি জানতি তবে আমার বকা শুনে নিজের দোষটাকে বুঝতি,তা না করে উল্টে রাগ দেখাচ্ছিস।আমি কি তোর খারাপ চাই?’

তিথি চুপ করে ইশানের বুকে মাথা রেখে দাঁড়িয়ে আছে।ওর গায়ের গন্ধটা তার দারুণ লাগছে।
তিথিকে চোখ বুজে থাকতে দেখে ইশান ওর কপালে ঠোঁট ছুঁয়ে দেয়।এরপর বলে,’আচ্ছা আর কখনও বকবোনা,কারণ আমি জানি তুই আর এই ভুল করবিনা’
তিথি ওমনি মাথাটা উঠিয়ে বলে,’করবো! একশতবার আমি সেই আগের ভুল করবো’
এটা বলে সে এক ছুট লাগালো ইশানকে ছেড়ে অন্য রুমে।

রকিব একা একা বসে হাতে মলম লাগাচ্ছে,মলমটা অবশ্য তানিয়াই এনে দিয়েছিল,কিন্তু সে লাগিয়ে দিবেনা কারণ সে রকিবকে ঘৃনা করে।
‘আমার জমানো টাকা গুলোই কাল সেই ফ্ল্যাটের মালিকের কাছে জমা দিতে যাবো,কাল বৃহস্পতিবার।ঐ লোক কাল সন্ধ্যায় দেশের বাড়ি চলে যাবে।তুমি যাবে আমার সঙ্গে?’

‘এখন এসব করে লাভ আছে?’
তানিয়া বিছানায় হেলান দিয়ে বসা ছিল।তানিয়ার এমন কথায় রকিব হাতটাকে নাড়াতে নাড়াতে বলে,’লাভ আছে,নিজের টাকার বাসস্থল ‘
‘আমাকে বলছেন কেন? ‘
‘কারণ তুমিও আমার সাথে সেই ফ্ল্যাটে উঠবে’

‘বিয়ের পর ছেলেরা বউ ভক্ত হয়ে যায় তা ঠিক তবে এতটা ভক্ত ভাল না।ক্ষতিকর!আপনার ইমোশনাল মা এইসব জানলে উল্টো সিধে কিছু একটা করে বসবেন।পরে দোষটা আমার ঘাড়ে এসেই পড়বে’
‘তা হবেনা,মাকে আমি মানিয়ে নিবো। তুমি শুধু আমার সাথে যাবে কিনা তা বলো’
‘না যাব না।আর কিছু?’

রকিব মলমটার ছিপি আটকে উঠে দাঁড়ায়,এরপর বলে,’তোমাদের রান্নাঘরে চা পাতা,চিনি কোথায় আছে তা দেখিয়ে দিবে?’
তানিয়া চট করে কাঁথা টেনে শুয়ে ঘুমানোর ভান ধরে থাকে।
রকিব মুচকি হাসি দিয়ে চলে যায়।

তানিয়া অনেকক্ষণ শুয়ে থাকার পরেও তার ঘুম আসছিল না বলে সে উঠে বসে।কাঁথা সরিয়ে বিছানা থেকে নেমে সে দেখতে যায় রকিব করছে টা কি।
বাহিরে বের হতেই রকিবের বুকের সাথে ধাক্কা লাগে ওর।রকিব হাতে চায়ের কাপটা নিয়ে বলে ‘আস্তে আস্তে,সাবধানে।আর একটু হলে চা পড়তো’

‘এর মাঝে বানিয়েও ফেললেন?’
‘না আসলে আমার শাশুড়ি বানিয়ে দিলো’
‘কিহ!আপনি এত রাতে মাকে এসব জানিয়েছেন?’
‘না, আসলে উনি পানি খেতে উঠে আমাকে চা বানাতে দেখে উনিই বানিয়ে দিয়েছেন’

রকিব কথা শেষ করার আগেই তানিয়ার আম্মু পেছন থেকে এসে বললেন,’এটা কেমন কথা তানিয়া?তুই রকিবকে দিয়ে চা বানাইছিস?মাথা কি পুরাই নষ্ট হয়ে গেছে তোর?নতুর জামাইকে দিয়ে মানুষ এত রাতে কাজ করায়?তোর এইসব স্বভাব আর কোনোদিন ভাল হবেনা বুঝি?’
তানিয়া চোখ বড় বড় করে রকিবকে দেখছিল,তখন রকিব বলে,’না মা ও তো মাত্র জাগছে।আমি তো ওরে একবারও বলিনি চা বানাই দিতে।একা একাই গেছিলাম ‘

‘তাও ওর দোষ। জামাইর ঘুম নাই,সে কিভাবে ঘুমায়?আমার জামাই,আমাদের বিবাহিত জীবনের সাতাশটা বছর ধরে এখন অবধি না ঘুমালে আমি ঘুমাইনা,আর তুই বিয়ের প্রথমেই এসব শুরু করছিস!’
সেইসময় তানিয়ার আব্বু হাই তুলতে তুলতে এসে বললেন,’কোথায় যেন মিথ্যা কথার ভাষণ শুনলাম?’
‘তোমার কাছে আমার কথা মিথ্যা মনে হলো?’

‘আজকেও তো আমি এসে দেখি খাটে তুমি চিটপটাং হয়ে ঘুমাচ্ছো।তারপর তোমাকে সরিয়ে আমায় ঘুমাতে হয়েছে আর এখানে এসে বলো আমার আগে তুমি ঘুমাও না।আসলে কি জানো?তুমি যেরকম তোমার মেয়েও হয়েছে সেরকম।জামাইর কোনো কদর নাই,নিজের কদরই বোঝে’
রকিব মাথা নাড়িয়ে বলে,’আব্বু ঠিক বলেছেন’

যদি তুমি বলো পর্ব ৫৭

‘চুপ শা…..’
তানিয়া মুখে হাত দিয়ে ফেললো।ওর আম্মু তখন দাঁত কেলিয়ে বলে,’আমি বলতে চাইছিলাম চুপ করো শান্ত ছেলে!! বড়রা কথা বলছে তো।তোমার কথা বলতে হবেনা”

যদি তুমি বলো পর্ব ৫৯