যদি তুমি বলো পর্ব ৫৯

যদি তুমি বলো পর্ব ৫৯
আফনান লারা

তিথি ইশানের রুমে এসে যে জায়গায় দাঁড়িয়ে মিটমিট করে হাসছিল ঠিক সেখানেই ছিল ইশানের একটা পাঞ্জাবি।
এটা ইশান বের করে রেখেছে বুয়াকে দিয়ে ধোয়ানোর জন্য।
এটা সে কয়েকবার পরেছে,তাই পাঞ্জাবিটা থেকে ওর গায়ের তীব্র মিষ্টি একটা পারফিউমের ঘ্রাণ আসছিল।
তিথি পাঞ্জাবিটা তুলে নিয়ে নাকের কাছে ধরে চোখ বন্ধ করে রাখে।তার মনে হলো ইশান ওর সামনেই আছে।মুখের হাসিটা তার আরও গাঢ় হলো।

ইশান ওকে ধরতে রুমে এসে দেখে সে পাঞ্জাবি জড়িয়ে ধরে চোখ বুজে রেখেছে।তাই সে ওর কাছে এসে দৃশ্যটা প্রাণ ভরে দেখে চলেছে। তিথি যে ওকে ভালবাসলে সবটা দিয়েই বাসবে এই নিয়ে কোনো সংশয় ছিল না ইশানের।তাই এত কিছুর পরেও সে তিথিকেই বউ করে এনেছে,এত বাধা বিপত্তির পরেও।
ইশান তিথির হাতটা ধরে টান দিয়ে ওকে কাছে নিয়ে আসে।তিথি আচমকা ইশানকে দেখে হাত থেকে পাঞ্জাবিটা ছেড়ে দিলো।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন হউন

‘কি??আমার পাঞ্জাবিতে কি আছে?’
‘না তো,কিছুই না’
‘তাহলে ওরকম করে গন্ধ শুকার মানে কি বুঝায় বল,আমিও একটু বুঝি’
‘না দেখছিলাম বাজে গন্ধ আসে কিনা,বুয়ার দিক ও তো ভাবতে হবে।উনি যদি দেখে তার মালিকের পাঞ্জাবি থেকে এরকম দূর্গন্ধ আসে তাহলে কি ভাববে?পুরা কলোনি করবে এই কথা দিয়ে।জানেন?’

‘তাই না??’
ইশান এবার তিথির দুহাত চেপে ধরে বলে,”আবার বল তো,কি কি বলছিলি?আসলেই কি এরকম গন্ধ আসছে?’
‘না না,মজা করলাম,সত্যি।ছেড়ে দেন।আর বলবোনা’

দুই দফা পলাশীর যুদ্ধ শেষ করে বাবা মা ঘুমোতে যাওয়ার পর তানিয়া আর রকিব ও রুমে চলে আসে।
তানিয়া আগের মতই শুয়েছিল, রকিব বসে বসে তার ফোনে ফ্ল্যাটটির সব ছবি দেখছিল আবারও।কাল যেহেতু টাকা জমা দিবে তাই ভাল করে শিউর হয়ে তারপরই টাকা হস্তান্তর করবে।

সকালে খুব ভোরে তানিয়া উঠে যায়।রকিব তখন ঘুমাচ্ছিল,রকিবকে সে এ একটা মাসে প্রচণ্ড রকমের ভালবেসেছিল,কিন্তু ও যে এমন কিছু করবে তা সে ভাবতেও পারেনি।এখন সে নিজেকে ২ রাস্তার মুখে আবিষ্কার করেছে,কোনদিকে গেলে ভাল হবে তাই ভাবছে সে।বাবা তাকে একবার বলেওনি এ কথা।বাবার কথা কি বলবো!ইশান ভাইয়াই তো বলেনি।পুরো ফ্ল্যাটের টাকা ইশান ভাইয়ার দেয়ার কথা ছিল।

আমাকে না জানিয়ে এটা করে তারা অন্যায় করেছে।অনেক বড় অন্যায়।আমি মাফ করবোনা তাদের।আর রকিবকে তো কোনোদিন ও না।
তানিয়া এসব ভাবতে ভাবতেই রুম থেকে বেরিয়ে দেখে মা আর খালা রকিবের জন্য সকাল সকাল খিচুড়ির আয়োজন করছেন।

‘বুঝছো মতি,আমার এই মেয়ের জামাইটাও একেবারে ইশানের মতই ভাল,কম কথা বলে।’
‘ভাল আর কিসের,যৌতুক চেয়ে বসছে’
‘সেটা তো বুঝলাম,এত বড়লোক ছেলে,এগুলা তো চাইবেই’

‘আপা ইশান ও কিন্তু বড়লোক,রকিবের চেয়ে অনেক বেশি টাকা পয়সা ওয়ালা।কই সে তো এক টাকাও চায় নাই,আরও গহনা শাড়ী দিয়ে তিথিকে মুড়িয়ে নিছিলো।রকিবরা এসব কি দিছে একবার নজর দিছেন?’
‘তাও ঠিক,তানিয়াকে যে নেকলেস টা দিছে ওটা একেবারে পাতলা।যাক ওসব আমরা চাইনা,তানিয়াও চায়না কিন্তু তারা যে এত দামী একটা কিছু চেয়ে বসলো এ কথা কি তানিয়ার জানার প্রয়োজন নেই?’

‘এখন জানালে,আপনার যে মেয়ে আপা!যুদ্ধ বাঁধিয়ে দিবে’
‘কি যুদ্ধ বাঁধাবো খালা?’
এ কথা শুনে সবাই চুপ।মা হেসে কথাটাকে উড়িয়ে দিয়ে বললেন,’তুই এই পোশাকে থাকবি? কেমন বুড়া বেডির মতন লাগছে।যা এইসব বদলে গোসল করে সুন্দর একটা শাড়ী পরে রকিবের পাশে বসে থাক।
‘থাক! এত যত্নের কোনো কারণ আমি দেখছিনা তো’

‘ওমা আপা,আপনার মাইয়া কয় কি!নতুন জামাইকে নাকি যত্নের প্রয়োজন নাই।’
তানিয়ার আম্মু কাছে এসে ওর কান টেনে ধরে বললেন,’যা!যেটা বলছি ওটা কর।মানুষের কাছে হাসিরপাত্র বানাইস না আমাকে’

রকিব চোখ মেলে চশমা খুঁজতে থাকে।ঝাপসা ঝাপসা চোখে দেখে তার প্রিয়তমা ড্রেসিং টেবিলের কাছে গুন গুন করে গান গাইছে।গানটা তার পরিচিত,নতুন রিলিজ হয়েছে তবে ওর প্রিয়তমা যে লিরিক্সে গাইছে তা আসল গান নয়।সে গাইছিল,’যদি বিয়ে তোমায় কাঁদায়,তবে সংসারই কোথায় আর স্বামীই বা কোথায়’

রকিব উঠে বসে তাকায়।ঝাপসা চোখে গোলাপি রঙটাই বুঝতে পারলো আর তানিয়ার কালো চুল,এই দুইটা রঙ বুঝতে পারলেও ডিজাইন বোঝা মুশকিল হলো তার জন্য।তাই সে হাতিয়ে হাতিয়ে চশমা খুঁজতে ব্যস্ত এবার,
অনেক খোঁজার পর অবশেষে সে চশমা পেয়ে চোখে পরে দেখে এক নতুন তানিয়াকে।বিয়ের সাজেও তাকে এত সুন্দর লাগেনি,যতটা এখন লাগছে।তার ভেজা চুল দেখে রকিবের কাল রাতের কথা মনে পড়লো।সেও জানে কিছু হয় নাই,তানিয়াও জানে কিছু হয় নাই।কিন্তু সবাই জানে কিছু হইছে তাই হয়ত জোরপূর্বকই সে গোসল করে নিয়েছে।

তানিয়া গান গাইতে গাইতে পেছনে ফিরে দেখে রকিব বসে বসে ওকে দেখছে।তানিয়া এবার গান বন্ধ করে ওর কাছে এসে বলে,’আজকে সকালে জামাই বাজার করে দিয়ে সোজা আপনার বাসায় চলে যাবেন,আর হ্যাঁ!আমি কিন্তু যাচ্ছিনা’

‘তিথি?’
‘হু’
‘উঠ,তোদের বাসায় যেতে হবে তো আমাদের।’
‘আমার শরীরটা ভাল নেই,আপনি যান বরং’
‘কেন ভাল নেই?দেখি,জ্বর?কই জ্বর তো নেই।তবে কিসের শরীর খারাপ?’
‘এমনি ভাল লাগছেনা,আপনি যান,গিয়ে ঘুরে আসুন।আমি ঘুমাই’

‘আচ্ছা তবে আমিও যাব না,তোকে একা রেখে যাওয়ার এতটাও দরকার পড়েনি।তুই ঘুমা আমি বাগান থেকে ঘুরে আসি,সকালে কি খাবি বল,বুয়াকে বলে যাই’
‘বেগুন ভাজি আর ইলিশ মাছ ভাজা’
‘ইলিশ মাছ আর তুই?’
‘হ্যাঁ,লাইফে ফার্স্ট টাইম ট্রাই করার ইচ্ছা জাগলো’
‘তবে তাই হবে মহারাণী’

এটা বলে ইশান ফোন নিয়ে বাগানে চলে আসে।তার আসলে তানিয়ার বাবার সাথে কথা আছে।রকিবদের ফ্ল্যাটের টাকা ট্রান্সফার করার আগে ওনার থেকে সিউর হয়ে নিতে হবে।তিথি এখনও জানেনা এসবের কথা।জানবেও না,সেও তার বোনের মতই।যৌতুকের কথা শুনলে হুলস্থুল করবে।
‘ইশান টাকা পাঠিওনা’

‘কেন?’
‘রকিব আমার কাছে এসে মাফ চাইলো,ও নাকি এসব জানতো না।এখন সে ফ্ল্যাট কিনলে নিজের টাকাতেই কিনবে,এবং সেটা আজকেই’
‘এটা তো খুব ভাল একটা নিউজ’
‘হ্যাঁ বাবা,ঠিক বললে।আমার এখন দুটো মেয়ে জামাইকে নিয়েই গর্ব হচ্ছে ভীষণ ‘

রকিব নাস্তা খেতে বসে দেখে সবাই আসলেও তানিয়া আসেনি।মা তানিয়াকে টিভির সামনে থেকে টানতে টানতে এনে ওর পাশে বসালেন,ধমকালেন ওর এরকম ব্যবহারের জন্য।কিন্তু তানিয়াকে কেউ বোঝাতে পারেনা।সে পারেনা রকিবকে বাসা থেকে বের করে দেয়।

রকিব সব বুঝতে পারছে,তাই সে এসবে রাগ না করে আরও অনুতপ্ত। কারণ চঞ্চল সেই মেয়েটি যে তাকে খুব ভালবাসতো সে কিনা এখন এরকম আলগা আলগা থাকছে!
তানিয়া গাল ফুলিয়ে রেখে রকিবের পাশে বসে।তার ইচ্ছা করছে সবাইকে চিৎকার করে বলে দিতে এত আদর যত্নের কিছু নাই।এই লোকটা খারাপ!এর মতলব খারাপ!

ইশান বাসায় ফিরে এসে দেখে তিথি তখনও ঘুমায়।বুয়া বললো তার রান্না করা শেষ।ইশান সে কারণে বুয়াকে চলে যেতে বলে নিজে তিথির কাছে আসে।তিথির পাশে বসে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে আগেকার দিনগুলোর কথা ভাবতে থাকে।তিথিকে নিয়ে সবসময় ইশান এইসবই ভাবতো।তার বাড়ি হবে,গাড়ী হবে।তিথি তার বউ হবে।তাদের অনেকগুলো বাচ্চা হবে।সুন্দর একটা সংসার হবে।

তিথির মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে ইশানের কেমন যেন খটকা লাগলো।তিথির মুখটা চেয়ে দেখে সে ভাল করে।যেটার আন্দাজ করছে যদি সেটা হয় তবে খুব তাড়াতাড়ি তাদের জাপানে পাড়ি জমাতে হবে।

যদি তুমি বলো পর্ব ৫৮

রকিব বাজার করে দিয়ে চলে যাবার সময় তানিয়ার সাথে দেখা করতে আসে,তানিয়া নিজের রুমে বসে বসে ফোন টিপছিল। রকিব ওর কাছে এসে বালিশের তলা থেকে নিজের ফোন নিয়ে বলে,’আমি যাচ্ছি,বাসাটা আজকেই উদ্ভোধন করবো,তবে একা একা।যদি তোমার ইচ্ছা হয় তবে এসো। আমার অনেক ইচ্ছা তোমাকে নিয়ে নতুন বাসায় আলাদা সময় কাটাবো,একা একা।আমাকে মাফ না করো!অন্তত এক সাথে নতুন কিছুর শুরু তো করতে পারো!
বিশ্বাস করো!তোমার পারমিশন ছাড়া তোমায় আমি ছুঁবো না”

যদি তুমি বলো পর্ব ৬০