হৃদয়হরণী পর্ব ৪১

হৃদয়হরণী পর্ব ৪১
তানিশা সুলতানা

বিশাল বড় বিল্ডিং। কয় তালা হবে? কড়া রোদ বিধায় তাকানো যাচ্ছে না। নাহলে ছোঁয়া গুনে নিতো। বড়বড় গাড়ি দাঁড় করানো বিল্ডিং এর সামনে। গেইটে দুজন দারোয়ান পায়চারি করছে। হাতে তাদের লাঠি। ছোঁয়া চিন্তা করে। তাদের হাতে লাঠি কেনো? ডাকাত আসলে তো বন্দুক বোমা ছুড়ি এসব নিয়ে আসবে। তখন এরা এই লাঠি দিয়ে তাদের কিচ্ছু করতে পারবে না। তাহলে লাঠি কেনো হাতে নিয়েছে?

নিজের চিন্তায় নিজেই বিরক্ত ছোঁয়া। ধুরর এসব কি তার ভাবার বিষয় না কি?
মাথার ঘোমটা টা ভালো করে ঠিক ঠাক করে এগোয় ছোঁয়া। মাথায় ঘোমটা দেওয়ার কারণ আছে। এলোমেলো চুল তার। চুল গুলো পরিপাটি করার সময় ছিলো না।
দারোয়ান দুটোকে দুই দিকে যেতে দেখে হুরমুরিয়ে ঢুকতে যায় ভেতরে। দারোয়ান দৌড়ে এসে লাঠি এগিয়ে দিয়ে থামায় ছোঁয়াকে। ছোঁয়া ভ্রু কুচকে তাকায় দারোয়ানের দিকে।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

“এভাবে ঢোকা নিষেধ।
দারোয়ানের শক্ত কন্ঠ।
ছোঁয়া দারোয়ানের পা থেকে মাথা পর্যন্ত একবার পর্যবেক্ষণ করে নেয়।
” তাহলে কিভাবে ঢুকতে হবে? মাথায় শিং লাগিয়ে আসবো? না কি পেছনে লেজ?
দারোয়ান হকচকিয়ে যায় ছোঁয়ার কথা শুনে। দুজন দুজনের মুখ চাওয়া চাওয়ি করে নেয়।
ছোঁয়া আবারও বলে

“দেখুন ভেতরে আমার একমাত্র বর নিয়ে টানাটানি শুরু হয়ে গিয়েছে। আমাকে যেতেই হবে।
ছোঁয়ার কথা তারা বুঝতে পারে না। তাকিয়েই থাকে শুধু।
বিরক্ত ছোঁয়া। কে এরা? কথা কি বুঝতে পারে না?

” সরি ম্যাম
আপনাকে ভেতরে যেতে দেওয়া হবে না।
রেগে যায় ছোঁয়া। রাগ দমানোর চেষ্টা চালায়। সরু চোখে তাকিয়ে দাঁত কটমট করতে থাকে। এদের সাথে কড়া কথা বললে কখনোই ঢুকতে দেবে না। একটু অন্য ভাবে চেষ্টা করতে হবে।।
মুহুর্তেই ছোঁয়ার রাগান্বিত মুখখানা কাঁদো কাঁদো হয়ে যায়। ওড়নার আঁচল টেনে নাক মুছে নেয়।

“আমার একমাত্র স্বামী এই অফিসে চাকরি করে। নাম সাদমান চৌধুরী। ছোট ছোট দুইটা বাচ্চা আছে আমার। আরেকটা হবে। তিন মাস চলছে।
পেট দেখে বোঝা যাচ্ছে না তাই না?
দারোয়ান শুকনো ঢোক গিলে। আকপটে মাথা নারিয়ে জবাব দেয় ” না”
ছোঁয়া দীর্ঘ শ্বাস ফেলে।

“কি করে বোঝা যাবে? স্বামী যত্ন নেয় না। সংসারে টাকা দেয় না। প্রেগন্যান্সির সময় ভালো মন্দ দুটো খাওয়া উচিত কিন্তু আমি তো মন্দ মন্দ খাবারই পাই না। ভালো মন্দ পাবো কই?
খবর পেয়েছি অফিসের একটা মেয়ের সাথে তার সম্পর্ক আছে। আমি সেই কাল নাগিনীকেই ধরতে এসেছি।
আপনারা প্লিজ একটু সাহায্য করুন। এই অসহায় পোয়াতি মেয়েটার একটা উপকার করুন।
ছোঁয়ার আহাজারিতে মন গলে যায় দারোয়ানদের।

” আহারে
এই টুকুনি মেয়ে। তার কতো কষ্ট। যাও মা।
সাদমান চৌধুরী এতো খারাপ? ছিহহ ছিহহ
ছোঁয়া এক গাল হাসে।
দারোয়ানের দুই গাল টেনে দিয়ে বলে
“থ্যাংক ইউ টাক দাদু

বলেই এক দৌড়ে ভেতরে ঢুকে পড়ে। দারোয়ান বড়বড় চোখ করে তাকায়। এখনো বিয়ে করে নি সে। অল্প বয়সেই চুল পড়েছে। চাচা বলতে পারতো তিনি মাইন্ড করতো না। তাই বলে দাদু?
সাদি ডায়াল করে শশুড়ের নাম্বারে। রিং হতে না হতেই কলটা রিসিভ হয়। সাদি নিজের হাসি লুকিয়ে বলে
” ছিহহ শশুড় মশাই ছিহহহ

আপনি প্রেম করছেন?
সেলিম সবেই মুখে কফি নিয়েছিলো। সাদির কথা শুনে ফুসস করে বের করে দেয় মুখে থাকা কফি। এমনিতেই গতরাতে গেস্ট রুমে কাটাতে হয়েছে তার। এখন এই কথা নাজমার কানে গেছে বাড়ি ছাড়া করবে তাকে।
“ততোমার প্রবলেম কি? এমনিতেই গতকাল রুমে ঢুকতে দেয় নি। আজগবি কথা পাও কোথায়?
হাসে সাদি।

” নিজের কষ্টটা দেখলেন। আমার কষ্ট দেখলেন না? একদিন বউ ছাড়া থাকতে পারছেন না। আমি কি করে থাকছি চিন্তা করুন।
“অসভ্য ছেলে। আমি তোমার শশুড় হই।
” কিছু পিকচার আমার হাতে আছে। আপনি দেখলাম একটা মেয়ের সাথে রিকশায় ঘুরছেন। রোমান্টিক দৃশ্য
কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে যায় সেলিমের। কলিগের সাথে রিকশায় বসেছিলো। সেই কলিগ আবার সেলিমের বাল্য কালের বান্ধবী।

“ভাবছি ছোট মায়ের হোয়াটসঅ্যাপ এ পাঠাবো।
” তুই আমার মেয়েকে নিয়ে যা বাপ। আমি আজকেই বাড়িতে গিয়ে সবাইকে বলবো। সামনে শুক্রবারে তোদের আবার বিয়ে দিবো। তবুও আমাকে মাপ কর। তোদের হানিমুনে যাওয়ার খরচ আমার।
সাদি এবার শব্দ করে হেসে ওঠে।

“আই লাভ ইউ শশুড় মশাই
সেলিম কল কেটে দেয়। বিরবির করে বকা দেয় সাদিকে
” শয়তাম ছেলে। গোটা দুনিয়াকে দেখায় সে ভাজা মাছ উল্টে খেতে পারে না। অথচ আমার জানটা জ্বালিয়ে খাচ্ছে। এই অসভ্য ছেলের বাচ্চা কাচ্চা কতোটা অসভ্য হতে পারে?

মিটিং শেষে নিজের জন্য বরাদ্দকৃত কেবিনে বসে আছে সাদি। ঠোঁটের কোণে তার মিটিমিটি হাসি। শশুড় মশাইকে জ্বালানোর আরও একটা ফয়দা পেয়ে গেছে সে। এতোদিন শশুড় জ্বালিয়েছে এবার সাদি জ্বালাবে। শশুড়ের ভীতু মুখখানা বড্ড ভালো লাগে সাদির। শশুড়কে দেখতে সুইটও লাগে।

ছোঁয়া দেখতে পায় রিমিকে। পানির বোতল হাতে নিয়ে এদিকেই আসছে। ছোঁয়া এক দৌড়ে চলে যেতে নেয় রিমির কাছে। তখনই দেখে ফেলে এক অবিশ্বাস্য জিনিস। মেয়েদের ড্রেসআপ। হাঁটু ওবদি ড্রেস। কি সুন্দর হাঁটু বেরিয়ে আছে। উঁচু জুতো পড়েছে৷ দেখতে জোশশ লাগছে। মনে মনে ছোঁয়া ভেবে ফেলে এরকম একটা ড্রেস ছোঁয়া পড়লে তাকে কেমন লাগবে? সাদি নিশ্চয় তাকে দেখে ফিদা হয়ে যাবে।
লজ্জা পায় ছোঁয়া। মুহুর্তেই মনটা খারাপ হয়ে যায়।

এতো এতো হাঁটু বের করা রমণীর মধ্যে তার বরটা থাকে। কতোটা রিক্স? নেহাত বেডা নিরামিষ।
“তুমি এখানে?
হঠাৎ সাদির গলা শুনে ভাবনা থেকে বেরিয়ে আসে ছোঁয়া। তাকায় সাদির দিকে। সাদি ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে। সে বেরিয়েছিলো বসের কেবিনে যাবে বলে তখনই নজর পড়ে ছোঁয়ার দিকে। এক মুহুর্তের জন্য ঘাবড়ে গিয়েছিলো সাদি। যে পাগল বউ তার।

” আপনার ফোন যে মেয়ে ধরেছিলো তার হাত কাটতে এসেছি। কোন কাল নাগিনী? দেখান আমায়?
সাদির চোখ দুটো বড় বড় হয়ে যায়। সে শুকনো ঢোক গিলে ছোঁয়ার হাত ধরে টেনে নিয়ে যায় তার কেবিনে।
“আমারই ভুল। আমি ফোন রেখে গিয়েছিলাম মিটিং এ।
” আমি ঠিক ভুল জানি না। মেয়েটার হাত কাটবোই কাটবো আমি। জীবনে আমাকে দিয়েছেন কখনো ফোনটা ধরতে? ওই মেয়ে কেনো ধরবে?

সাদি দুই হাতে ছোঁয়াকে জড়িয়ে ধরে। বুকের মাঝখানে ছোঁয়ার ছোট্ট মাথাখানা চেপে ধরে। চুমু খায় মাথায়।
আদূরে গলায় বলে
“জান পাগলামি করে না। আমি তো তোমারই।
ছোঁয়া গলে যায়। নারীর পাহাড় সমান রাগ গলিয়ে দিতে শখের পুরুষের দুটো আদূরে কথাই যথেষ্ট।
ছোঁয়া সাদির বুকে চুমু খায়।

হৃদয়হরণী পর্ব ৪০

” ঠিক আছে পাগলামি করবো না। আমাকে একটা হাঁটু বের করা জামা কিনে দিবেন?
“ঠিক আছে দিবো।
” আই লাভ ইউ
আরও একটু শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলে ছোঁয়া। সাদি জবাব দেয় না।

হৃদয়হরণী পর্ব ৪২