যদি তুমি বলো পর্ব ৬০ 

যদি তুমি বলো পর্ব ৬০ 
আফনান লারা

রকিব ফ্ল্যাট কিনে কিছু মোমবাতি,গোলাপফুল দিয়ে সাজিয়ে এরপর বাসা থেকে বেরিয়ে যাচ্ছিল আরও কিছু জিনিস কেনার জন্য,কিন্তু দরজা খুলতেই সে মা,বাবা,খালা,ফুফু সবাইকে দেখে অবাক হয়ে যায়।সবাই তাকে সারপ্রাইজ দিতে এসেছে।মা বাবা মনে করেছেন রকিব ও তাদের সারপ্রাইজই দিতে এসেছিল নতুন বাসায়।
‘কিরে রকিব?তানিয়া কই?ওর বাবা মা কই?’

রকিব চুপ করে তাকিয়ে থাকে বাবা মায়ের দিকে।মা ফোন নিয়ে বললেন তানিয়াকে ডাকতে,কারণ তিনি মনে করছেন তানিয়ার পরিবারের টাকাতেই এই ফ্ল্যাট কেনা।তাই তো তার এত আদর আসছে।
রকিব জানায় তারা পরে আসবে।মা খুশি খুশি পুরো ফ্ল্যাটটা ঘুরে দেখে বললেন সে যেন তানিয়াকে নিয়ে আজকে এখানে থাকে।এই বলে সবাই চলে গেলো।রকিবের খারাপ লাগছে কারণ সে মা বাবার যৌতুক চাওয়ার কথা সবার আগে তানিয়ার থেকে জানলো।এটার মতন কষ্টের আর কিছু হয়না।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন হউন

সবাই চলে যাবার পরে রকিব আরও কিছু সাজানোর জিনিসপাতি এনে ফ্ল্যাটটাকে যতটা পেরেছে রাঙিয়েছে।এরপর মেঝেতে বসে বসে ফোন টিপছিল,আর তানিয়ার অপেক্ষা করছিল।কেন জানি মনে হয় তানিয়া আজ আসবেনা।
রকিবকে এই মেঝের বিছানায় একাই ঘুমাতে হবে।

‘টুকু এবার বল আমার কি করা উচিত?বেডা মানুষ এরকম হয় কেন?সে যৌতুক নিয়ে বিয়ে করেছে এটা ভাবতেই আমার ইচ্ছা করে কাবিন নামা ছিঁড়ে ফেলি,আসলে সব বেডা খারাপ!’
তানিয়ার কথা শুনে ফোনের ওপাশ থেকে তিথি উঠে বসে।যৌতুকের কথা সে মাত্র জানলো।তার সামনেই ইশান বসে বসে ওর নুডুলসের বাটিতে ফু দিচ্ছে,ঠাণ্ডা হলেই খাওয়াবে।
তিথি ইশানের ঐ নিষ্পাপ চোখজোড়ারর দিকে চেয়ে থেকে বলে,’সব বেডা মানুষ খারাপ না রে টুকু।বুঝতে পারলে তারা দারুণ মানুষ। ‘

‘আমি হয়ত রকিবকে বুঝতেই পারি নাই।এখন কি করবো?আমাকে আজ যেতে বলেছে ‘
‘গিয়ে দেখ!ভাল না লাগলে চলে আসবি।কিন্তু এভাবে না যাওয়াটা ঠিক হবেনা’
কলটা রেখে তিথি ইশানের দিকে গম্ভীর চাহনিতে চেয়ে বলে,”আপনি যৌতুকের কথা জানতেন?’
ইশান নিশ্চুপ।

‘কি হলো?বলুন?’
‘জানতাম’
‘আমাকে বলার কি দরকার নাই?’
‘না নাই,তুই জানলে তানিয়াও জেনে যেতো’
‘এখন যে জেনে গেলাম আমরা দুজনেই?’
‘লাভ নেই,কারণ বিয়েটাও হয়ে গেছে আর রকিব ও যৌতুক নেয়নি’
‘সত্যিই?’
‘হান্ড্রেড পার্সেন্ট সত্য’

তানিয়া রকিবের অপছন্দের টপস আর জিন্স পরে,ওর অপছন্দে চুল বেঁধে সেই ফ্ল্যাটে চলে আসে।এরপর কলিংবেলে চাপ দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে।রকিব যেন এটারই অপেক্ষায় ছিল।
‘তুমি এসে,,,,,’
‘সুন্দর লাগছেনা?’
‘একদম না’

‘নতুন বউকে অসুন্দর বলতে রুহু কাঁপে নাই আপনার মিঃ রকিব?’
‘নতুন বরের অপছন্দের পোশাক পরতে শরীর কাঁপে নাই তোমার মিসেস তানিয়া?’
‘না কাঁপে নাই,আমি ইচ্ছা করেই পরেছি।কোনো প্রবলেম?’
‘নাহ! প্রবলেম ছিল তবে তুমি এসেছো যখন তখন আর কোনো প্রবলেম হতেই পারেনা।এসো এসো’
রকিব ভেতরে আসার পথ দেখিয়ে দিলো।তানিয়া ভেতরে ঢুকে বলে,’ফার্নিচার নাই,কিছু নাই।এখানে পুরো রাত থাকবো কি ভাবে?’

‘আমার রুমকে থাকার মতন বানিয়ে নিয়েছি। চলো দেখাই’
রকিব তানিয়ার হাত ধরতে যেতেই তানিয়া হাতটা সরিয়ে বলে,’থাক,আমি নিজে নিজে হাঁটতে পারি’
রকিবের রুমে এসে সে তো অবাক।বাহিরে সদরঘাট আর ভিতরে ফিটফাট!
হা করে শুধু দেখেই যাচ্ছিল সে।
রকিব দেয়ালে হেলান দিয়ে দেখছিল সব।তানিয়া একটা গোলাপ হাতে নিয়ে বলে,’ডেকোরেশন সুন্দর হলো’
‘থ্যাংক ইউ’

তানিয়া এবার কোমড়ে হাত রেখে বলে,’তবে আমি যাই?আমার খিধে পেয়েছে।বাসায় গিয়ে বিরিয়ানি খাবো’
‘আমি বিরিয়ানি আনছি ‘
তানিয়া ব্রু কুঁচকে ধপাস করে মেঝেতে বিছানো বিছানায় বসে পড়ে।ওকে বসতে দেখে রকিব ফোন নিয়ে খাবার অর্ডার করে।

দুজনেইই বসে থাকে চুপচাপ।রকিব নিজের ল্যাপটপে গান ছাড়ে।
‘জারা জারা বেহেকতা হে’
তানিয়া নড়েচড়ে একটু সরে বসে।রকিব গানটা দেখছে মনযোগ দিয়ে,তানিয়া আড় চোখে দেখছিল। গানটা শেষ হয়ে অন্য গান শুরু হয়।

রকিব হাতটা নিয়ে তানিয়ার হাতের উপর রাখতেই তানিয়া রেগে গিয়ে বলে,’ওল্ড ফ্যাশন ছেলেদের মতন আগে হাত পরে ঠোঁট এসব শুরু করছেন কেন?’
রকিব তানিয়ার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে এরপর বলে,”কোনো ছেলে আগে হাত ধরেছিল ঠোঁট ধরার আশায়?’
‘হ্যাঁ,তারপর থাপ্পড় খেয়েছিল’

রকিব আস্তে করে গালে হাত দিয়ে বসে থাকে। খাবার এসে যায়।দুজনে খাবারটা খেয়েও নেয় চুপচাপ।তানিয়া এবার বললো,’তবে আমি যাই?ঘুম আসছে’
রকিব মাথা নাড়ায়।তানিয়া এবার রেগে গিয়ে বলে,’আজব!আমাকে থাকতে বলবেন না?’
‘এই বিছানায় ঘুমাতে হয়ত তোমার কষ্ট হবে’

‘না হবেনা’
এটা শুনে রকিব ওকে বিছানা খালি করে দেয়।তানিয়া ও চুপচাপ শুয়ে পড়ে।
রকিব লাইট বন্ধ করে সেও এক পাশে শোয়।
‘ভাল আছো?’
‘আলহামদুলিল্লাহ ‘
‘আর কিছু বলবেনা?’
‘গুড নাইট’

‘আর কিছু না?’
‘আর কি?আসেন আবার বিয়ে করি’
‘না সেটা না,বলতে চাইছি গল্প টাইপের কিছু’
‘আপনার আম্মু আপনাকে রাজা রাণীর কাহিনী বলে ঘুম পাড়াইতো?’
‘আগে’

‘তাহলে আমি ও শুনাই।এক ছিল রাজা এক ছিল রাণী।তারপর তারা ঘুরতে যায় বনে।এরপর সিংহ ওদের দুটোকে চিবিয়ে খেয়ে নেয়।কাহিনী শেষ’
‘তুমি খুব রুড’
‘রুড হবো না তো কি হবো?একটু বলবেন?আমার কেমন রিয়েক্ট করা উচিত যৌতুকের কথা শুনে’

সকাল সকাল রিদম নিজের ব্যাগ গুছাচ্ছিল,এতদিন দুলাভাই বলছিলেন তাকে নেয়ার সঠিক সময় এটা না।কিন্তু এখন বলছেন যেতেই হবে।
রিদমের ভীষণ কষ্ট হচ্ছে পান্নাকে নিয়ে।ওর কথা সব চাইতে বেশি মনে পড়বে।
কি আর করার,সয়ং দুলাভাইর আদেশ,তাছাড়া জাপানে গিয়ে পড়াশুনা স্টার্ট করা,ক্যারিয়ারে ফোকাস করা তার জন্য একটা টার্নিং পয়েন্ট হিসেবে দাঁড়াবে।তাই সময়টাকে কাজে লাগাতেই হবে যে করে হোক।
ইশান তিথিকে জানায় যেহেতু তানিয়া আর রকিবের বিয়েটা শেষ হলো তাহলে তাদের আর এখানে থাকতে হবেনা,অনেক কাজ পড়ে আছে।

তিথি জানতে চাইলো কি কাজ কিন্তু ইশান তার জবাব দেয়নি।কল আসায় চলে গেছে।
তিথি সেইসময় বাসায় কল দিয়ে রিদমকে বলাতেই রিদম তড়িগড়ি করে তৈরি হয়ে নিচ্ছে সেইসময়ে পান্না আসে ওদের বাসায়।
পান্নাকে দেখে রিদমের আম্মু মিষ্টি দিলেন খাওয়ার জন্য।পান্না চামচ দিয়ে মিষ্টি কাটছিল আর দেখছিল রিদম এমন ভাবে মিষ্টিটার দিকে চেয়ে আছে যেন সে ওভাবেই পান্নাকে নয়ত অন্য কাউকে কাটবে।

‘কি হলো ভাইয়া?’
‘তোমার হবু জামাই ভাল আছে?’
এ কথা শুনে পান্না ফিক করে হেসে মিষ্টি খেতে থাকে।রিদমের খুব রাগ হলো।সে আর একটু সময়ও অপেক্ষা না করে পান্নার সামনে থেকে চলে গেলো।
পান্না এর মানে মতলব কিছুই বুঝলোনা।সে আসলে বুঝতেই পারলোনা এখানে হচ্ছিল টা কি!
রিদম বাবার রুমে এসে তার ফোন হাতে নেয়,এরপর ইশানের নাম্বার বের করে কল দেয়

‘হ্যালো বাবা বলুন,কেমন আছেন?’
‘আমি রিদম বলছি ইশান ভাইয়া’
‘তুমি?কি হলো?সব ঠিক আছে তো?’
‘ভাইয়া আমরা কবে যাব?’
‘এই তো পরশুদিন’
‘ঠিক আছে’

লাইনটা কাটা গেলো।এতদিন রিদমের গাল ফুলা ছিল সে যাবে বলে আর এখন সে নিজ থেকেই তারিখটা জানতে চাইছে,যেন তার জাপান যাবার ইচ্ছে সবার চাইতে বেশি।
ফোন রেখে রিদম আবারও ড্রয়িং রুমে এসে দেখে পান্না নেই।রিদম কিছুই আর করলোনা।গাল ফুলিয়ে তার বেডে বসে থাকলো।

তখন ভেতরের রুম থেকে মা এসে রিদমের হাতে একটা বক্স দিয়ে বললেন,’পান্না দিয়ে গেলো,তোকে দেয়ার জন্য’
‘সে দিতে পারে না?’
‘তার বাবা বাসার নিচে এসেছিলেন ওকে নিতে’
রিদম বক্সটা খুলে দেখে ভেতরে একটা ঘড়ি। সম্ভবত এলার্ম ঘড়ি।আর একটা চিরকুট।তাতে লেখা সময়ের মূল্য অপরিসীম।

যদি তুমি বলো পর্ব ৫৯

রিদম ঘড়িটাও ব্যাগে ঢুকিয়ে রাখে।সময়ের গুরুত্ব সে অবশ্যই দিবে।তার জন্যই তো বিদেশ পাড়ি দিচ্ছে।কিন্তু যে কাজের জন্য এত কিছু করবে সেটা থাকবে তো!

যদি তুমি বলো পর্ব ৬১