যদি তুমি বলো পর্ব ৫৪

যদি তুমি বলো পর্ব ৫৪
আফনান লারা

‘আচ্ছা আপনি কি আদালতের মুরি পদের চাকরি করেন?’
‘হ্যাঁ,আপনি কি করে জানলেন?’
‘আসলে মুরিরাই দরকারি কথা বাদ দিয়ে বেদরকারি কথা বেশি বলে’
‘আপনি কি আমাকে খোঁচা দিলেন?’
‘না তো,আমি তো গুতা দিলাম’

‘আপনি সত্যি করে বলুন তো,তানিয়ার কি হোন আপনি?’
‘আমরা ঐ যে আপন প্রতিবেশী।আচ্ছা ওসব বাদ,আপনার কোনো ছেলে আছে?’
‘কেন বলুন তো?’
‘শুনতে চান?তবে বলি।আমার না খুব কিউট,সুইট দুটো মেয়ে আছে।একটার বিয়ে ঠিক হইছে,এখন আরেকটা খালি আছে।আমি সেন্টারে গেলে ওকে দেখাবো আপনাকে ‘

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন হউন

বিয়ের অনুষ্ঠানে গাড়ী থেকে নেমে যাবার পর পিংকি পান্না রিদম সব আলাদা আলাদা হয়ে গেছে। কাউকে কোথাও পাওয়া যাচ্ছেনা,একসাথে দেখাও যাচ্ছেনা।পান্না অবশ্য রিদমকে খুঁজার চেষ্টা করেনি,কিন্তু পিংকি খুঁজে বেড়াচ্ছে কারণ সে পান্নাকে দেখিয়ে দিবে রিদম কেবল ওকেই কেয়ার করে,পছন্দ করে।

কিন্তু সে তো পাচ্ছেই না।এদিকে পান্না তিথির খালামনির সাথে খেতে বসেছিল।রিদম কোথা থেকে এসে পান্নাদের টেবিলে খাবার দাবার ঠিক ভাবে ব্যবস্থা করা শুরু করে দিলো।খালামণি খুশি হয়ে ওকে শিখিয়ে দিচ্ছেন কি কি লাগবে।রিদম ওনাদের খাওয়া শেষ হওয়া অবধি টেবিলের পাশেই দাঁড়িয়ে ছিল।
পিংকি তন্নতন্ন করে খুঁজে অবশেষে দেখা পেলো ওর।

‘একি রিদম?তুমি কোথায় হারাই গেছো?তোমাকে কত যে খুঁজলাম।কি করছিলে এতক্ষণ?’
‘টুকুর বিয়ে।অনেক বেশি ব্যস্ত জানোই তো’
পান্না খাবার খেয়ে তানিয়ার কাছে গিয়ে বসে আছে,রকিবরা এখনও আসেনি।এদিকে রিদম ব্যস্ততার কথা বলে আবার গায়েব হয়ে গেছে।
পিংকি ওর পিছু পিছু চলছিল ওমনি গিয়াস সাহেব ওকে ডাকলেন এসে খেতে বসার জন্য।

তিথি আর ইশান এখনও আসছেনা তার মোক্ষম কারণটি হলো তিথি ইশানের কথার অবাধ্য হয়ে তানিয়ার সাথে পার্লারে সেজেছে আর তাই ইশান ওকে পুনরায় গোসল করিয়ে আনতেছে,এই জন্য এত দেরি।
‘আপনি খুব অন্যায় করলেন আমার সাথে।এটা ঠিক হলোনা’
‘ঠিক তো তুই আমার সাথে করিসনি।তোকে বলেছি মেকআপ করা আমার পছন্দ না।তার পরেও এত ভারী মেকআপ করেছিস।’

‘এখানে দশ হাজার টাকার মেকআপ ছিল’
‘আমি তোকে দশ হাজার টাকা দিবো,তাও এত পেনপেন করিস না তো।আমাকে ড্রাইভ করতে দে’
‘আপনার কারণে আমার নিজের বোনের বিয়েতে যেতে দেরি হয়ে গেলো।’
‘তাই?আমার কারণে?’

রকিব তানিয়ার পাশে বসার পর চারিদিক খেয়াল করে বলে,’আচ্ছা তিথি আর ইশান ভাই কোথায়?’
‘তিথি আপু মেকআপ করেছিল তাই ভাইয়া ওনাকে গোসল করিয়ে আনতেছে’
‘এরকমই হওয়া উচিত সব হাসবেন্ডকে’
‘তাই নাকি?আমি কিন্তু তিথি আপুর মতন না,আমাকে আপনি শীতকালে ১০দিন ছাড়া গোসল করাতে পারবেন না’
‘ফরজ গোসল বলে কিছু জানো?’

তানিয়া ব্রু কুঁচকে তাকায়।রকিব হাসি দিয়ে বলে,’নামাজ পড়তে হলে গোসল তোমাকে করতেই হবে।এবার ভাবো তুমি দশ দিনের রেকর্ড ধরে রাখবা নাকি নামাজ পরার জন্য ফরজ গোসল করবা’
‘দূরে থাকবেন আমার থেকে।’
রকিব হাসছে মিটমিট করে।ঐ সময়ে ইশান তিথিকে নিয়ে হলে প্রবেশ করে।তিথির আম্মু ওকে খুব বকাঝকা দিলেন এত দেরি করে আসার জন্য। এদিকে তিথি মুখ ফুটে বলতেও পারছেনা ঠিক কি কারণে এত দেরি হলো।

‘বড়টাই সুন্দর ছিল গো আপা,সবই কপাল!আমরা গেছিলাম ওরে দেখতে তখন সে ছিল না,আমার ছেলে ছোটটাকে দেখেই পছন্দ করে ফেলে।দুজনের চেহারায় অনেক মিল কিনা!আমরা শুরুতে বুঝতে পারিনি যে আমরা ভুল পাত্রীকে দেখছি। মনে হয় যেন জমজ বোন।অবশ্য জামাই একটাও সুন্দর পাইছে।দুজনকে বেশ মানাইছে!’

‘এটাও তো সুন্দর বইন,বড়টার চেয়ে একটু লম্বা বেশি।এটা তো ভালই!’
‘লম্বা ধুই পানি খাব আমি?’
রিদম এসে রকিবের মায়ের পাতে রোস্ট এক্সট্রা একটা দিয়ে বলে,’সুন্দর ধুই পানি খাবেন আন্টি?আনি দিবো?’
তানিয়ার শাশুড়ি চটে গেলেন এ কথায়।
চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে রইলেন শুধু।

পান্না একা একা স্টেজের দিকে তাকিয়ে এক কোণায় দাঁড়িয়ে ছিল,পিংকি ওর পাশে দাঁড়িয়ে বলে,’আবার কবে দাদুর বাড়ি ফিরছিস?’
‘এই তো তিথি আপুরা জাপান চলে গেলেই’
‘ওনারা জাপান যাওয়ার সাথে তোর দাদুর বাড়িতে যাওয়ার কি সম্পর্ক?’
‘আপুরাই বলেছে ততদিন থাকতে’
‘শুন!এসব করে না কোনো লাভ নাই।রিদম তোর না,আমার ফ্রেন্ড’
‘আমি জানি কোনো লাভ নাই, তাই আমি কিছুই করছিনা’

তিথি তানিয়ার শাড়ীর সেফটিপিন ঠিক করছিল।ইশান রকিবের সাথে ছবি তোলা শেষে রকিব বলে,’ভাই ভাগ্য কি জিনিস দেখলেন?কার বউ কে পেয়ে গেছে’
ইশান হাসি দিয়ে বলে,’কে জিতছে?’
‘আমরা দুজনেই মনে হয় জিতছি।আপনি যেমন চাইলেন,তেমনই পাইলেন।আর আমিও পেলাম ‘

‘নাহ!আমি চাইছি একটু বুদ্ধিশুদ্ধি ধাঁচের,কিন্তু আমার জনের মাথায় একটুও বুদ্ধি নাই।
‘আমার জনের আবার মহা বুদ্ধি কিন্তু কি লাভ হইলো বলেন!আমাকে এক হাটে বেচে আবার এক হাটে কিনে’
‘নিজের মতন বউ জীবনেও হাসবেন্ডরা পায়না,বিপরীতে পায়।থাক ভাই কাঁদিস না,আমাদের কপালই এমন’
‘আমাদের মতন বউ পেয়ে কপাল এরকম খারাপই যদি হয় তা হলে চুম্মাইতে আসেন কেন?’

তিথির কথা শুনে রকিব লজ্জায় লাল হয়ে তানিয়ার কাছে চলে গেছে এদিকে ইশান তিথির কান টেনে ধরে বলে,’কপাল খারাপ যে সেটা বুঝতে শিখেছি বলি আদর করি।কারণ হাতে আর অপশান নাই’
‘অপশান নাই মানে?’

‘কারণ এরকম বলদের ভেতরে ভাল মানের প্রোডাক্ট আর নেইই তাই’
‘আপনি আমাকে বলদ বললেন?’
‘না সরি,ভুল হলো।বলদি হবে’

বিয়েটা হয়ে যাবার পর যখন বিদায়ের সময় আসলো তখন সবাই কাঁদছিল কিন্তু তানিয়া বাদে।সে ওদের কান্না দেখছিল।সে কাঁদছেনা কারণ তার মেকআপ নষ্ট হই যাবে। মা বাবা, রিদম সবাই কেঁদেছে তাও তানিয়ার চোখ দিয়ে এক ফোটা পানিও বের হয়নি।

রিদম চোখ মুছতে মুছতে সেন্টারের বাহিরে চলে গেছিলো,তার এত বেশি কান্না আসছিল,তিথির বেলায় ও এতো কাঁদেনি সে।তানিয়াকে সে একটু বেশি ভালবাসে,কারণ তানিয়া ওর মতই দুষ্টুমি করতো,দুজনে একসাথে সব জায়গায় ঘুরতো।

হঠাৎ সামনে টিস্যু দেখতে পেরে রিদম টিস্যুটা নিয়ে বললো,’থ্যাংকস পান্তুয়া ‘
‘আমি পিংকি’
রিদম চোখ মুছে পেছনে তাকায়।পিংকি রাগান্বিত চোখে ওর দিকে তাকিয়ে ছিল।এরপর রিদম অন্যদিকে ফিরে বলে,”সরি আমি ভাবলাম পান্না’
‘পান্নাকে পান্তুয়া ডাকো,আমাকে কি ডাকবে শুনি?’

‘তোমার নাম পিংকিই সুন্দর’
‘দাও না একটা নাম,যেটা তুমি ডাকবে’
রিদম বিরক্ত হচ্ছিল,তাও মুখে হাসি ফুটিয়ে সে বলে,’পিংকিই সুন্দর,এর বেশি বাড়ানো কমানো ঠিক না।অতিরিক্ত হয়ে যাবে’
এটা বলে সে সেন্টারের ভেতরে চলে যায়।আসলে পান্না টিস্যু নিয়ে আসছিল রিদমের কাছে কিন্তু পিংকি ওর হাত থেকে টিস্যু নিয়ে নিজেই আগে চলে আসে এখানে।

সবশেষে তিথি তানিয়াকে ধরে কাঁদার সময় ওর কানের কাছে বলে,’কাঁদ একটু বলদি!মানুষ কি বলবে!’
‘তুমি কাঁদো আমি ঠোঁট নাড়াচ্ছি’
‘একটা চড় দিবো।ফাজলামি করিস কেন!খালারা কটু কথা বলবে’
‘খালাগো!!হুহুহু হেহে হেহে😂!!’
তানিয়া কান্নার অভিনয় করতে গিয়ে হেসে দিলো।

গিয়াস সাহেব দূরেই দাঁড়িয়ে ছিলেন। তানিয়ার খালুকে জোর করে ধরিয়ে বললেন,’দেখেন!কি সংস্কার আপনাদের মেয়ের!বিদায়বেলা হে হে করে হাসছে।আর ঐ দেখেন পিংক কালারের জামা পরা আমার মেয়ে পিংকি।কত আদবকায়দা আমি ওকে শিখিয়েছি।আপনার ছেলের ঘরের বউ বানালেই বুঝতে পারবেন।’

‘ওটা আপনার মেয়ে?আরে ঐ তো কিছুক্ষণ আগে আমার পাঞ্জাবিতে মাংসের ঝোল ফেলে একবার সরি তো বলেইনি উল্টে বলে গেলো আমি নাকি চোখে দেখি হাঁটিনা,চোখ আকাশে রেখে হাঁটি’
‘আরেহ না,আমার মেয়ে এমন করতেই পারেনা’

যদি তুমি বলো পর্ব ৫৩

‘তার মানে আপনিও বুঝাতে চাইছেন আমি চোখে কম দেখি?’
‘না না,তা কখন বললাম?’
‘তবে শুনুন,আমার কোনো ছেলে নেই।পাঁচটা মেয়ে আমার।বুঝেছেন?’

যদি তুমি বলো পর্ব ৫৫