যদি তুমি বলো পর্ব ৫৩

যদি তুমি বলো পর্ব ৫৩
আফনান লারা

বাস থেকে নেমে একা পথে হাঁটছিল দুজন,হাঁটতে হাঁটতে ইশান হঠাৎ থেমে যায়। তিথি ভাবে ঐদিন রাতের মতন বুঝি আবারও সেরকম করে স্পর্শ করবে নির্জন এই রোডে।
কিন্তু নাহ!ইশানের মুখের গড়ন আর কুঁচকানো ব্রু অন্য কিছুর ইঙ্গিত করছিল,মনে হচ্ছিল খুব কঠিন ধাঁচের কথা বলবে সে।

ঠিক তাই হলো।ইশান বললো,’আমার যদি আজ এই সময়ে এসেও এতকিছু না থাকতো,তাহলে কি তুই সেই আগের দিনের মতই ব্যবহার করতি?নাকি বাসর রাতের মতন আকুতি মিনতি করতি?যেমনটা করেছিল সেদিন?’
‘আমি যদি বলি আমি ক্ষমা চাইতাম আগের ব্যবহার নিয়ে তবে কি বিশ্বাস করবেন?’
‘ক্ষমা চাইতি কিন্তু বিয়েটা করতিনা’

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন হউন

‘বিয়ে করতাম না সেটা সঠিক,কারণ আমি যদি জানতাম আপনি এত বড় একজন লোক হয়ে গেছেন তবে কখনওই আপনার বউয়ের জায়গায় নিজেকে বসাতাম না,কারণ আমি তখন আপনার যোগ্য থাকলেও আজকের এই দিনে সেই যোগ্যতা আমার নেই।কুয়িনার মতন মেয়েই সেই যোগ্যতা রাখে।আমি তো আমার মতামত প্রকাশ করবার সুযোগই পাইনি।হুট করে বিয়ে হলো,যার সাথে হবার কথা ছিল তার সাথে হলোনা!বিয়ের আগে যার ছবি দেখেছিলাম,যার সাথে কথা বলেছিলাম,বাসর ঘরে অন্য একটা মানুষকে দেখতে পেলাম’

ইশানের ঠোঁটের কোণায় হাসি ফুটে ওঠে।এই উত্তরটাই সে তিথির মুখ থেকে শুনতে চেয়েছিল।হাসি মুখে কাছে এসে তিথিকে টেনে নিজের গায়ের সাথে লাগিয়ে ধরে আবারও হাঁটতে থাকে দুজনে।

রাত ২টার সময় কলিং বেলের আওয়াজ শুনে রিদম চোখ ডলতে ডলতে আসে দরজা খুলতে।সে ভেবেছিল ইশান আর তিথি এসেছে।কিন্তু নাহ,এসেছেন গিয়াস সাহেব।রিদমের চোখ ভর্তি ঘুম ছিল বলে সে শুরুতে বিশ্বাস করতে পারছিল না যে গিয়াস সাহেব এসেছেন।সে মনে করেছে ভুল দেখছে।কিন্তু গিয়াস সাহেবের ধমকে তার সব হুশ ফিরে আসলো।

‘আঙ্কেল আপনি?এতো রাতে?’
‘আমার মেয়ে কোথায়?’
এটা বলেই গিয়াস সাহেব ভেতরে ঢুকে গেলেন।রিদম তখনও চোখ ডলতেছিলো।গিয়াস সাহেব রুমের আলো জ্বালাতে বললেন ওকে।

রিদম দ্রুত গিয়ে আলো জ্বালায়।গিয়াস সাহেব আঙ্গুল তুলে বলে,’তোমার বড় আপু আর দুলাভাইকে ডাকো,আমার মেয়েকে ফিরিয়ে দিতে বলবো।আর এটাও জানতে চাইবো আমার মেয়েকে দিয়ে তাদের কি কাজ।’
সেইসময় তিথি আর ইশান চলে আসে।গিয়াস সাহেবকে দেখেই তারা টের পেয়েছে উনার এত রাতে এখানে আসার কারণ।

‘আঙ্কেল বসুন,বলছি আমি’
এটা বলেই তিথি ওনাকে সোফায় বসিয়ে রিদমকে ইশারা করে।রিদম যায় মিষ্টি আর শরবত আনতে।
‘কি বলবে তোমরা?পিংকিকে নিয়ে আমার চিন্তা থাকলেও,পান্না কিন্তু কম নয়।পান্নাকে বরং আমি পিংকির চাইতেও বেশি ভালবাসি।সে কোথায়?কেনোই বা তোমরা ওকে ওর দাদুর বাড়ি থেকে নিয়ে এসেছো?’

ইশান ওনার পাশে বসে বলে,’পান্না অভিমান করে ওর দাদুর বাড়ি গেছে।এ কয়েকদিনে সে আমাদের খুব কাছের এবং আদরের হয়ে গেছে।বাসার এত বড় একটা অনুষ্ঠানে সে থাকবেনা তা কি হয়?তাই নিয়ে এলাম।আর আপনার থেকে লুকিয়ে রাখার কারণ সে তার বড় বোনের উপর অভিমান করেছে।কারণটা আমরা কেউ জানিনা,আপনার ও জানার প্রয়োজন নেই।দুই বোনের ব্যাপার তারাই মিটিয়ে নিবে।এখন পান্নার কথা যাতে পিংকি না জানে,কারণ পিংকি জানলে সে পান্নার সাথে আবার বিবাদ করবে’

‘সে কই এখন? আমি তাকে একবার দেখবো’
তিথি ওনাকে নিয়ে তানিয়ার রুমের কাছে আসে,দরজা ঠেলে ভেতরে দেখায় ড্রিম লাইটের আলোয় তানিয়ার পাশেই ঘুমাচ্ছে পান্না,তানিয়ার নাইট ড্রেস পরে কাঁথা টেনে শান্তির ঘুম ঘুমাচ্ছে সে।গিয়াস সাহেবের চোখ জোড়া জুড়িয়ে গেলো আদরের ছোট মেয়েকে এত শান্তিতে ঘুমিয়ে থাকতে দেখে।

তিনি চোখের কোণার পানি মুছে বললেন,’আমি তাহলে যাই?’
‘বিয়ে বাড়ি থেকে খালি মুখে যেতে নেই’
এটা বলে তিথি ওনাকে নাস্তা দিলো।উনি মিষ্টি মুখে দিয়ে বললেন,’ইশান বাবা,কোনো ছেলে দেখেছো?’
‘দেখেছি’

গিয়াস সাহেব অনেক আগ্রহ নিয়ে জানতে চাইলেন ছেলে কি করে।
‘ছেলে জাপানেই থাকে,পড়াশুনা করছে।পড়াশুনা শেষ হলে আমার কোম্পানিতে যাবে এরপর লাইফ সেটেল’
‘সেকি!এত বড় খবর আমায় বললেনা?’
‘তবে একটা আর্জি আছে’
‘কি?’

‘ছেলের আপনার বড় মেয়েকে নয় বরং ছোট মেয়েকে পছন্দ’
‘তা বেশ!একটা মেয়েকে যদি ভাল জায়গায় বিয়ে দিতে পারি তাহলেও মনটাকে বুঝাতে পারবো আমি’
রিদম ইশানের দিকে তাকিয়ে রইলো চুপচাপ।এত বড় কথা কিনা সে এখন জানছে।ভালই!খারাপ না!পান্নার বিয়ে হবে,লাল টুকটুকে বউ সাজবে!টুকুর মতো করে ওর ও বিয়ে হবে।ইশান দুলাভাইয়ের মতন ওর বর হবে।ওকে অনেক আদর করবে!

এটাই তো কামনা।
‘এই ছেলে!’
‘জ্বী আঙ্কেল’
‘আমাকে একটু বাসা অবধি দিয়ে আসো তো।আমি একা যেতে পারবোনা।ভয় করে’
রিদম মাথা নাড়িয়ে ওনার সাথে চললো।পথে যেতে যেতে গিয়াস সাহেব বললেন,’যাক আমার ছোট মেয়েটার একটা ব্যবস্থা তাহলে হয়েই গেলো।এখন পিংকিটাকে নিয়ে যে কি করবো।ওকে এত করে বলি সাধারণভাবে চলাফেরা করতে পান্নার মতন।এখন হলো তো!মানুষ সাধারণটাকেই বেছে নিলো।এত হাবিজাবি করার কোনো মানে আছে?
আজ গিয়ে বলবো সে যেন পান্নার মতন হয়,চুপচাপ ভদ্র,অমায়িক আর মিষ্টি’

‘হুম।খুব মিষ্টি’
‘কিছু বললে?’
‘নাহ!বললাম বাসা এসে গেছে’
‘ঠিক আছে,আমি দাঁড়িয়ে রইলাম।তুমি যাও নাহয় তুমি তো আবার বারান্দা দিয়ে উঁকি দিবা।সব পিংকির সাথে দেখা করার ধান্ধা! ‘
রিদম চলে আসে।মনটা কেমন যেন হয়ে গেলো।পান্নার বিয়ে একটা ভাল ছেলের সাথে হবে এটা জেনে তার এত মন খারাপ করার কি আছে?

তিথি আর ইশান চলে গেছে তাদের রুমে।পান্নার খুব পানির পিপাসা পেয়েছিল তাই সে রুম থেকে বেরিয়ে ডাইনিং টেবিলের উপর থেকে পানি নিয়ে খাচ্ছিল,ঐ সময়ে রিদম বাসায় ঢোকে।
পান্না ওকে দেখে অবাক হয়ে জানতে চায় এত রাতে সে কোথায় গেছে।
রিদম কিছু না বলেই রুমের আলো নিভিয়ে শুয়ে পড়ে।
‘কি হলো?’

পান্না ওভাবেই দাঁড়িয়ে আছে,রিদম কিছুই বলছেনা দেখে সে চলে যায়।বুঝতে পারলোনা তার দোষটা কোথায়।
পরেরদিন সকাল সকাল কাজের ব্যস্ততা শতগুণে বেড়ে গেছে।পান্না হলুদে তিথির শাড়ী পরলেও আজ কি পরবে?দাদুর বাসা থেকে যেগুলো এনেছে সেগুলোর মাঝে তো ভাল নাই।
আজ তো তিথির জামা পরতে পারবেনা।তাই ওকে একবার হলেও বাসায় যেতে হবে।বুকে সাহস নিয়ে সে বাসায় আসে।ভয়ে ভয়ে কলিংবেলে চাপ দেয়।

দরজা খোলে পিংকি।সে পান্নাকে দেখে একটুও আশ্চর্য হয়নি,যেন সে জানে পান্না আসবে।
সে দরজা খুলেই রুমে চলে গেছে।পান্না মায়ের সাথে দেখা করে সেও রুমে আসে,এরপর ওয়ার ড্রোবের ড্রয়ার খুলে নিজের পছন্দের একটা জামা হাতে নেয়।
‘এত কথা শুনালাম তাও আসলি?’
পান্না কিছু বলেনা।চুপ করে জামার ওড়না ভাঁজ করতে থাকে।

‘কি হলো কথা বলছিস না কেন?তোর কি গায়ে চামড়া নাই?আবার এসে পড়েছিস?বাবাকে কি জ্ঞান দিছিস?বাবা সকাল থেকে আমার মাথা খারাপ করে রেখেছে এক কথা বলতে বলতে”পান্নার মতন হতে হবে””
আমি হবো তোর মতন?আমার ঠ্যাকা পড়ে নাই।তোর মত ন্যাকা করে ভাল সাজতে পারিনা আমি। ”

রিদম লাল পাঞ্জাবি পরে তানিয়ার জন্য গাড়ীতে বসে আছে।বিয়েটা কমিউনিটি সেন্টারে হবে।সেখানেই যাবে ওরা।
তানিয়া এসে বসতেই পান্না আর পিংকি চলে আসে।পান্নাকে দেখে রিদমের মন আবার খারাপ হয়ে যায়।তানিয়া পান্না আর পিংকি বলে ওর সাথে বসতে।পিংকি আগেভাগে উঠে তানিয়ার পাশের খালি সিটে বসে যায়।
এদিকে অন্যান্য মেহমান এসে পিছনের সিট দখল করে ফেলে।

তখন পিংকি বলে,’তুই তিথি আপুদের সাথে আসিস।এখানে তো আর জায়গা নেই’
কিন্তু সেইসময় তানিয়া পান্নাকে দাঁড়াতে বলে।
‘পান্না,তুমি ছোট মানুষ,আসো আমার কোলে বসবে।আমি তোমায় কোলে নিতে পারবো’

পান্না খুশি হয়ে এসে তানিয়ার কোলে বসে।এবার সে রিদমের খুব কাছাকাছি হয়ে গেলো।পিংকি তো জ্বলে আগুন,এদিকে রিদম এক দৃষ্টিতে পান্নার কোঁকড়ানো চুলগুলো দেখছিল।বাজারে যে পুতুল বিক্রি হয়,কিছু পুতুলের চুল এরকমই কোঁকড়ানো থাকে।পান্নাকে সেই পুতুল গুলোর মতন লাগছে আজকে।রিদমকে ওভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে তানিয়া একটা খোঁচা দিয়ে বললো সামনে তাকাতে।

পেছনের গাড়ীতে গিয়াস সাহেব আর তার স্ত্রী বসেছেন।আজকে গিয়াস সাহেবের ডান পাশে বসেছেন তানিয়ার খালু।
গিয়াস সাহেব দাঁত কেলিয়ে বললেন,’আসসালামু আলাইকুম ভাই’

যদি তুমি বলো পর্ব ৫২

‘ওয়ালাইকুম আসসালাম।কে আপনি?আপনাকে তো আমাদের বংশের কারোর চেহারার মতন লাগছেনা!বিনা দাওয়াতে খেতে আসছেন মিয়া!’
‘আহা সালাম নিয়েই কেউ এত চটে যায়?শান্ত হোন😘।’

যদি তুমি বলো পর্ব ৫৪