প্রণয়াসক্ত পূর্ণিমা সিজন ২ পর্ব ২৭

প্রণয়াসক্ত পূর্ণিমা সিজন ২ পর্ব ২৭
Writer Mahfuza Akter

“বাঁদর মেয়ে কোথাকার! গ্রামে থাকাটা-ই অসম্ভব করে তুলেছে আমার। এইটুকু মেয়ে কীভাবে নাকানিচুবানি খাইয়ে ছাড়ছে আমাকে! আর আমি কিছুই করতে পারছি না। অসহ্যকর!”
নিজ মনে বিড়বিড় করতে করতে সিড়ি দিয়ে নামছে প্রহর। বাড়ির সামনে বাগানের পাশে গাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে সৌহার্দ্য। প্রহরকে এগিয়ে আসতে দেখে একবার হাতের ঘড়িতে সময় দেখে নিলো,

“কী রে! মেয়ে নাকি তুই? রেডি হয়ে আসতে এতোক্ষণ সময় লাগে?”
প্রহর নাকমুখ কুঁচকে বিরক্ত প্রকাশ করলো। সেটা দেখে সৌহার্দ্য ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বললো,
“কিছু কি হয়েছে? চেহারার এই অবস্থা কেন তোর?”
“কিছু না। তাড়াতাড়ি গাড়ি স্টার্ট দে। আমার আজ বিকেলে ভার্সিটিতেও যেতে হবে।”
সৌহার্দ্য গাড়িতে উঠে বসে বললো,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

“ওকে। তোর বাসায় জানিয়েছিস যে আজ ফিরছিস?”
“না। একবার ফোন দিয়ে জানানো উচিত। ভালো কথা মনে করিয়েছিস।”
প্রহর পকেটে হাত ঢুকালো ফোন বের করার উদ্দেশ্যে। কিন্তু পকেটে ফোন নেই। সে তো ফোন ব্যাগে ঢোকায়নি! তাহলে? তখন রেগে খাটের ওপর ছুঁড়ে ফেলার পর হয়তো আর সেটা পকেটে ঢোকায়নি।

“শিট!”
প্রহর হঠাৎ রেগে গেল, নাকি বিরক্ত হলো বুঝতে পারলো না সৌহার্দ্য। ভ্রু নাচিয়ে বললো,
“আবার কী হলো?”
“ফোনটা ঘরে ফেলে এসেছি। নিয়ে আসছি, ওয়েট!”
প্রহর দ্রুত পায়ে আবার ভেতরে চলে গেল। সৌহার্দ্য কিছু বলতে গিয়েও বললো না। দীর্ঘশ্বাস ফেলে সিটে গা এলিয়ে দিলো। প্রহরের আসতে আবার কতক্ষণ লাগবে কে জানে!

প্রহরকে সিঁড়ি দিয়ে নেমে বাইরে বেরিয়ে যেতে দেখেছিল মধু। প্রহর চলে যাচ্ছে দেখে তার তেমন একটা আনন্দ হচ্ছে, আবার খারাপও লাগছে না। কেমন একটা মিশ্র অনুভূতি! তবে প্রহরকে জ্বালাতে তার ভীষণ ভালো লাগতো। এখন থেকে তো আর জ্বালাতেও পারবে না! হতাশ হয়ে মধু প্রহরের ঘরে ঢুকলো। ঘরটা এখনো সুগন্ধীতে মৌ মৌ করছে। প্রহরের গা থেকে এমনই একটা স্মেল আসে সবসময়। মধুর খুব পছন্দের সেই স্মেলটা! লোকটার পছন্দ আছে বলতে হবে! বেশ ভালো মানের পারফিউম গায়ে মাখে সবসময়। মধু নাক টেনে সুবাস নিলো।

“তুমি এখানে কী করছো?”
প্রশ্নটা কানে পৌঁছাতেই মধু চোখ বড় বড় করে ফেললো। গলাটা তো তার বেশ চেনা! এটা প্রহরের গলা। কিন্তু প্রহর তো চলে গেছে? তাহলে? সে কি ভুল শুনলো?
“কী হলো? ওপাশে ঘুরে খাম্বার মতো দাঁড়িয়ে আছো কেন? এদিকে তাকাও!”
ধমক শুনে মধু খানিকটা লাফিয়ে উঠে পেছন ঘুরে তাকালো। প্রহরকে রাগী চোখে তাকিয়ে থাকতে দেখে হতভম্ব হয়ে কয়েক পা পিছিয়ে গেল। শুকনো ঢোক গিলে বললো,

“আ….. আপনি? আপনি তো চলে গিয়েছিলেন!”
“চলে গিয়েছিলাম তো! কিন্তু তোমার টানে ফিরে আসতে বাধ্য হলাম!”
বলেই প্রহর এগিয়ে আসতে লাগলো। প্রহরের ভাবভঙ্গি দেখে মধুর চেহারা ফ্যাকাসে বর্ণ ধারণ করলো। সে আরেক পা পেছাতেই খাটের সাথে ধাক্কা লেগে বিছানায় বসে পড়লো। প্রহর বিছানার হেডসাইডে হাত রেখে মধুর দিকে ঝুঁকে বললো,

“কী যেন বলছিলে তখন? আমার সোনার বাংলা-এর পরের লাইন কী? এই প্রশ্নটা-ই তো করেছিলে, তাই না?”
মধু ঘামতে শুরু করেছে। কম্পিত কণ্ঠে বললো,
“আ.. আমি তো মজা করছিলাম!”

প্রহর রাগী চোখে তাকিয়ে আছে। মধুর পাশে বিছানায় পড়ে থাকা নিজের ফোনটা হাতে নিয়ে ওর ওপর থেকে সরে দাঁড়ালো। মধু অবুঝের মতো তাকালো। প্রহর ফোনটা হাতে নিয়ে মধুর দিকে কঠিন দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,
“তোমার বয়সটা আমিও পার করে এসেছি। এজন্য এতোদিন তোমার সব বাচ্চামো সহ্য করেছি। কিন্তু আজ তুমি যেটা করলে, সেটা একদমই বাচ্চামো নয়।

আর এটা মজা করার বিষয়ও নয়। এট লিস্ট, আমার সাথে তো এসব মজা করা একেবারেই ঠিক না। আমার আর তোমার মধ্যে আকাশ-পাতাল পার্থক্য। বয়স দেখেছো নিজের? আমার থেকে নয় বছরের ছোট তুমি। আর এইজ ডিফারেন্সের কথা না-হয় বাদই দিলাম! তোমার আর আমার মধ্যকার স্ট্যাটাস ডিফারেন্সটা তোমার চোখে পড়েনি? আমি একদম তিন বছর বয়সে স্কুলে ভর্তি হয়েছি।

সেই সময় থেকে আজ পর্যন্ত স্কুল-কলেজ-ভার্সিটি সব-জায়গায় অল-টাইম টপার ছিলাম। ফার্স্ট বাদে কখনো সেকেন্ড হইনি। সে কারণেই আমি এখন আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। আর তুমি? তোমার মাথাভর্তি গোবর ছাড়া আর কিছু আছে? নিজেকে নিয়ে এলবার ভেবে দেখেছো কোনোদিন? তোমার আর আমার স্ট্যাটাস কোনোদিনও এক হবার নয়। তাই মাথায় যদি কোনো উল্টোপাল্টা চিন্তা থেকে থাকে, তাহলে সেটা এখনই সরিয়ে দাও।”

কথা শেষে প্রহর একটা লম্বা শ্বাস নিয়ে আবারও বললো,
“আর আমার কথাগুলো শুনে ভেবো না যে, আমি অহংকার দেখাচ্ছি। অহংকার করাটা আমায় সাজে না। তোমার ভাই যোগ্যতার দিক থেকে আমার থেকে কয়েক ধাপ বেশি এগিয়ে। কিন্তু সে হিসেবে তুমি বড্ড পিছিয়ে। তোমাকে নিজের স্থান বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য এতোগুলো কথা বলতে হলো আমায়। আর তরীর মতো নিজেকে ভাবার দরকার নেই। তরীর মতো তুমি হতে পারবে না। মেয়েটা সারাক্ষণ পড়াশোনায় ডুবে থাকে। ও জানে, এডমিশনের সময় খুব বেশি নেই। শি ইজ আ ভেরি ডেডিকেটেড গার্ল! ওর ডেডিকেশন-ই ওর ভবিষ্যৎ সুন্দর করে দেবে। আর তুমি? তোমার কথা আর কী বলবো? এইচএসসি-র পর আর বইপত্র ছুঁয়েছো বলে আমার মনে হয় না।”

প্রহর তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল। মধু পাথুরে চোখে তাকিয়ে আছে। চোখ দুটো পানিতে টলমল করছে। প্রহরের বলা প্রতিটা কথা ওর গায়ে কাঁটার মতো বিঁধেছে। এতোটা অযোগ্য সে! সে তো জানতো না! প্রহর আজ ওকে ওর যোগ্যতা আঙুল তুলে দেখিয়ে দিয়ে গেল। মধু বেশ অপমানিত বোধ করছে। কান্না পাচ্ছে তার। ভারী ঢোক গিলে মধু নিজের ঘরে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দিলো।

সৌহার্দ্য ডিউটি শেষ করে হসপিটাল থেকে বের হবে এখন। ঘড়িতে এখন দশটা বেজে তেরো মিনিট। দুপুরে প্রহরকে রেলস্টেশনে পৌঁছে দিতে যাওয়ায় দেরী হয়ে গেছে আজকে। হসপিটাল থেকে বেরিয়ে গাড়িতে উঠে বসতেই পকেটে থাকা ফোনটা কেঁপে উঠল।
সৌহার্দ্য ফোন বের করলো। ভাইব্রেশন অফ করে জেনারেল মোড অন করে দিলো। তার মায়ের নাম্বার থেকে মেসেজ এসেছে,

“ভাইয়া, আমার জন্য এডমিশনের গাইড-বই-নোটস যা যা লাগে নিয়ে এসো। আমি ভর্তি পরীক্ষার জন্য পড়াশোনা শুরু করবো।”
সৌহার্দ্য ভ্রু কুঁচকে ফেললো এই মেসেজ দেখে। তার মায়ের ফোন বেশিরভাগ সময় মধুর কাছেই থাকে। কিন্তু মধু এই মেসেজ পাঠিয়েছে, ব্যাপারটা হজম হচ্ছে না সৌহার্দ্যের। যেই মেয়ে পড়াশোনাকে নিজের সবচেয়ে বড় শত্রু মনে করে, সে কি না এডমিশনের প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য বই আনতে বলছে! দারুন তো ব্যাপারটা! সৌহার্দ্যের মুখে হাসি ফুটে উঠলো। এতো দিনে সুমতি হয়েছে মেয়েটার!

তরী বই থেকে মুখ তুলে ঘড়ির দিকে তাকালো। রাত এগারোটা বেজে গেছে। সৌহার্দ্য এখনো ফেরেনি। সাধারণত এতো দেরী করে ফেরে না সৌহার্দ্য! হয়তো কোনো ইমার্জেন্সি পড়ে গেছে! তরীর ঘুম পাচ্ছে প্রচুর। আজ বাড়িটাও কেমন যেন থমথমে লাগছে! কারো কোনো সাড়াশব্দ পাওয়া যাচ্ছে না। তরী বেশি না ভেবে আবারও পড়ায় মনযোগ দিলো।

রান্নাঘরে প্রবেশ করতেই সুজাতা দেখলো, মালিহা খাবার টেবিল সাজাচ্ছে। চুলায় চা চড়িয়েছে। সুজাতা অবাক হয়ে বললো,
“এতো রাতে চা কেন?”
মালিহা একটা প্লেটে খাবার গোছাতে গোছাতে বললো,
“আমার নিজের জন্য। মাথাটা ধরেছে।”
“ওহ!”

সুজাতা তেমন আগ্রহ না দেখিয়ে মধুকে খাবারের জন্য ডাকতে গেল। মধুর ঘরের দরজায় দু’বার ধাক্কা দিতেই মধু ভেতর থেকে ঝাড়ি দিয়ে বললো,
“খাবো না আমি আজকে। আমাকে একদমবিরক্ত করবে না। যাও এখান থেকে। ”
সুজাতা অবাক হয়ে বললো,
“হয়েছেটা কী তোর? দুপুর থেকে দোর দিয়ে বসে আছিস!”
“কিচ্ছু হয়নি! তুমি যাও।”

সুজাতা বিরক্তি নিয়ে রান্নাঘরের দিকে চলে এলো। মালিহা নেই এখন। হয়তো আফনা বেগমকে খাবার দিতে গেছে! এটাই সুযোগ। সুজাতা মালিহার চায়ের মগটার দিকে এগিয়ে গেল। ঢেকে রেখে গেছে। সুজাতা ঢাকনা খুললো। গরম ধোঁয়া ছড়াচ্ছে চা থেকে। অসাধারণ সুবাস! মালিহা রান্নার হাত বরাবরই দারুণ। সুজাতা নিজের শাড়ির আঁচলের শেষাংশ হাতে নিয়ে সেখানের শক্ত গিঁট খুললো। দু’টো ট্যাবলেট নিয়ে মালিহার চায়ে মিশিয়ে দিলো। রহস্যময় হাসি দিয়ে খাবার টেবিলে বসলো।

মালিহা এসে চায়ের মগ হাতে নিয়ে টেবিলের সামনে আসতেই সুজাতা বললো,
“শুধু চা-ই খাবে? খাবার খাবে না?”
“খাবো। মাথা ব্যথাটা একটু কমুক। এখন চা খেয়ে একটু ঘুমাবো। মাঝরাতে খাবার খাবো।”
মালিহা নিজের ঘরের দিকে যেতেই সুজাতা বললো,

“তরী খাবে না? আজকে কি শুধু আমি একাই খাবো নাকি?”
“তরীকে ডাকতে গিয়েছিলাম। ও পড়ছে এখন। সৌহার্দ্য এলে পরে খাবে বললো। আর মায়ের খাবার ওনার ঘরে দিয়ে এসেছিলাম। উনি খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েছেন।”

সুজাতা আর কিছু বললো না। নিজের খাওয়ায় মনযোগ দিলো। মালিহা নিজের চা নিয়ে নিজের ঘরে চলে গেল।
সুজাতা খাওয়া শেষে আফনা বেগমের ঘরে গেল। তিনি ঘুমাচ্ছেন দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো। আফনা বেগম প্রতি রাতেই ব্যথার ওষুধ খেয়ে ঘুমান। তাই তাঁর ঘুম এতো তাড়াতাড়ি ভাঙবে না। সুজাতা মালিহার ঘরে একবার উঁকি দিয়ে দেখলো মালিহা অবচেতন হয়ে ঘুমাচ্ছে। সে এগিয়ে গিয়ে মালিহাকে কয়েকবার ডাকলো, হাত দিয়ে ধাক্কালো। কিন্তু মালিহার কোনো সাড়াশব্দ নেই। বেডসাইড টেবিলে চায়ের কাপটা খালি পড়ে আছে। যাক! ঘুমের ওষুধ কাজ করেছে।

সৌহার্দ্য মধুর জন্য বই কিনে তরীর জন্য বেশ কয়েকটা শাড়ি কিনলো। মেয়েটা সবসময় সাদামাটা পোশাকে থাকে। সৌহার্দ্যের খুব শখ ছিল, তাদের বিয়ের পর তরীকে সবসময় শাড়ি পরিয়ে বউ-রূপে নিজের চোখের সামনে দেখবে। তরীকে সে কল্পনায় অনেকবার শাড়ি পরিহিত অবস্থায় দেখেছে। বেশ বউ-বউ লাগে ওকে। কিন্তু বাস্তবে হয়তো তার চেয়েও হাজার গুণ সুন্দর লাগবে তরীকে। তবে শুধু তরীর জন্য শাড়ি কিনতে পারলো না সৌহার্দ্য। আফনা বেগম, সুজাতা আর মালিহার জন্যও কিনলো। মধুর জন্য একটা সুন্দর থ্রি-পিস কিনলো।

সুজাতা তরীর ঘরের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। সে এতোক্ষণে সবাইকে একবার পরখ করে ফেলেছে। এই মুহুর্তে কেউ তার কাজে ব্যাঘাত ঘটাতে পারবে না। তরী বারবার ঘড়ি দেখছে। তার বেশ ক্ষুধা লেগেছে। সৌহার্দ্য এখনো আসছে না কেন? তরী বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে জানালার সামনে দাঁড়ালো। এখান থেকে মেইন গেইট দেখা যায়। কিন্তু মেইন গেইট একদম ফাঁকা। কারো কোনো আনাগোনা নেই। দারোয়ানও হয়তো ঘুমিয়ে পড়েছে।

হঠাৎ দরজা খোলার শব্দে চমকে উঠলো তরী। ভাবলো হয়তো সৌহার্দ্য এসেছে। কিন্তু পেছন ফিরে তাকিয়ে দেখলো, সুজাতা এসেছে। প্রথমে যতটা খুশি হয়েছিল, এখন ততটাই ভয় লাগছে। এসময় সুজাতা তার ঘরে কী করছে?
সুজাতা এগিয়ে এসে তরীর হাত চেপে ধরে বললো,

“চল আমার সাথে।”
তরী কিছু বুঝে ওঠার আগেই সুজাতা ওকে টেনে নিয়ে যেতে লাগলো। তরীর হাত এতো জোরে চেপে ধরেছে যে, তরীর মনে হচ্ছে তার হাত ভেঙে যাবে। সে ব্যথায় কুঁকড়ে উঠছে, হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু সুজাতার সাথে পারছে না। মনে হচ্ছে, সুজাতার ওপর পৃথিবীর সব শক্তি এসে ভর করেছে। তরী হতভম্ব হয়ে বললো,
“বড় মা, আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছো? হাত ছাড়ো আমার! ব্যথা লাগছে।”

সুজাতার কানে কোনো কথা গেল না। তরী যখন দেখলো সুজাতা তাকে সিঁড়ি দিয়ে টেনে সদর দরজার দিকে নিয়ে যাচ্ছে, তখন তরীর টনক নড়লো,
“তুমি আমাকে বাইরে নিয়ে যাচ্ছো কেন, বড় মা? হাত ছাড়ো আমার! আমি কিন্তু চেঁচাবো!”
“তোর চিৎকার আজ কেউ শুনবে না। আজ তোকে আমার ছেলের জীবন থেকে এতো দূরে পাঠাবো যে, ফিরে আসার রাস্তা পাবি না। ন*ষ্টা, অযোগ্য মেয়ে একটা! কী ভেবেছিলি? তোকে আমার ছেলের জীবন এতো সহজেই নষ্ট করতে দেবো আমি!”

তরী আতঙ্কিত চোখে তাকালো। সে ভয়ে চিৎকার করে মালিহাকে ডাকতে লাগলো। কিন্তু ততক্ষণে সুজাতা তাকে বাড়ি থেকে বের করে এনেছে। এখন মেইন গেইটের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। ঠিক সেই মুহুর্তেই মেইন গেইট দিয়ে একটা গাড়ি প্রবেশ করলো। সুজাতা উদ্ভ্রান্তের মতো গাড়িটার দিকে তাকিয়ে রইলো। গাড়িটা দেখে তরীর চোখ দুটো ঝাপসা হয়ে আসছে। সে ভাবতেও পারেনি সৌহার্দ্য এই সময়েই আসবে!

প্রণয়াসক্ত পূর্ণিমা সিজন ২ পর্ব ২৬ শেষ অংশ 

সৌহার্দ্য গাড়িটা বাগানের সাইডে পার্ক করে সদর দরজার দিকে এগিয়ে আসছে। তার দু’হাত ভর্তি শপিং ব্যাগ। সদর দরজার কাছাকাছি আসতেই সুজাতা আর তরীকে দেখে দাঁড়িয়ে গেল সে। সুজাতা তরীর হাত ধরে টানছে আর তরীর চোখে জল। গেইটে আজ দারোয়ান নেই। বিষয়টা বুঝতে সৌহার্দ্যের এক মিনিটও সময় লাগলো না। তার হাত থেকে শপিং ব্যাগগুলো মাটিতে পড়ে গেল।

প্রণয়াসক্ত পূর্ণিমা সিজন ২ পর্ব ২৭ শেষ অংশ