হৃদয়হরণী পর্ব ৪৩

হৃদয়হরণী পর্ব ৪৩
তানিশা সুলতানা

ইতিহাসের কোথাও লেখা আছে বউকে দেখে বর নার্ভাস হয়ে যায়? হয়ত লেখা নেই। তবে সাদমান চৌধুরী নামটা গোটা গোটা অক্ষরে লিখে রাখা উচিত। এই যে বেচারা বউকে দেখে নার্ভাস হয়ে যাচ্ছে। তার গলা শুকিয়ে যাচ্ছে। এই মুহুর্তে সে ভীষণ পানি পিপাসায় ভুগছে।

অথচ সারাদিন ছোট ছোট ড্রেস পড়া মেয়েদের সাথে তার ওঠাবসা। কখনো তাদের দিকে ভালো করে তাকানোও হয় নি।
কিন্তু বউকে দেখে অবস্থা খারাপ।
সাদির আধপাগল বউটা বুকের সাথে লেপ্টে আছে। শার্টের কয়েকটা বোতাম খুলে ছোঁয়া নাক ডুবিয়ে দেয় লোমশযুক্ত বুকে। ছোট ছোট কিছু চুমুও খেয়ে নেয়।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

মানুষ কতো কিছুতে আসক্ত হয়। আর ছোঁয়া আসক্ত এই বুকটাতে। এতো ভালো লাগে। যেনো জাদু মিশে আছে। সারাদিন এখানে লেপ্টে থাকতে পারলো মন জুড়াতো। কিন্তু কিপ্টা বর তো থাকতেই দেয় না।
সাদি এখনো ছোঁয়াকে ধরে নি। বিরক্ত ছোঁয়া। একা একা ব্যালেন্স রাখতে হিমশিম খাচ্ছে।
“আমাকে জড়িয়ে ধরছেন না কেনো?
কেরোসিন মেখেছি কি?

ছোঁয়া সাদির হাতটা তার পিঠে রাখে। আবারও শুকনো ঢোক গিলে সাদি। মনে মনে বলেও ওঠে
” কেরোসিন কি মাখো নি? জ্বালিয়ে পুরিয়ে দিচ্ছে আমায়।
ছোঁয়া চোখ দুটো বন্ধ করে অনুভব করছে মুহুর্তটা। প্রিয় মানুষটিকে আলিঙ্গন করতে এতোটা সুখ সুখ লাগে কেনো?
পৃথিবীর সব থেকে সুখী ব্যক্তি কেনো মনে হয় নিজেকে?
“আই লাভ ইউ সাদু বেবি।

আপনাকে ছাড়া আমি দুটো সেকেন্ডও কেনো চিন্তা করতে পারি না? আপনার একটু ইগনোরও আমি সয্য করতে পারি না। আমার না টাকা পয়সা বাড়ি গাড়ি কিছুই লাগবে না। আপনি শুধু আমার হয়ে থাকুন।
ভালোবাসতে হবে না।শুধু আমার ভালোবাসা টুকু গ্রহণ করিয়েন।

প্রায়প্রিয় স্ত্রীকে আরও একটু গভীর ভাবে আলিঙ্গন করে সাদি। মাথায় অধর ছোঁয়ায়। বড্ড বেশি বলতে ইচ্ছে করছে
” তুমি আমার শখের নারী ছোঁয়া। তোমাকে পাওয়ার জন্য হাজারবার তোমার বাবার কাছে হাত পেতেছি। তিনি ফিরিয়ে দিয়েছিলো আমায়। তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম তোমায় ভুলে যাওয়ার। কিন্তু পারি নি।
তোমায় আমি বড্ড বেশি ভালোবাসি।

মনের কথা মনেই রেখে দেয় সাদি। বলা হয় ছোঁয়াকে। বরাবরই অনুভূতি প্রকাশ কাঁচা সাদি। মন খুলে সবাই বলতে পারে না দুঃখ কষ্ট বা ভালোলাগা খারাপ লাগা। সবটা নিজের মধ্যে পুষে রাখে।

ছোঁয়াকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে নেয় সাদি। দুই হাতে ছোঁয়ার মুখখানা তুলে ধরে। বন্ধ চোখের পাতায় ফু দেয়। পিচ্চিটা কেঁপে ওঠে। হাসে সাদি। অন্য রকম সুন্দর লাগছে ছোঁয়াকে। চোখেমুখে ভর করেছে অন্য রকম মুগ্ধতা। আবেদময়ী লাগছে। হঠাৎ বড় হয়ে গেলো না কি? চোখে মুখের সেই বাচ্চামি ভাবটা কোথায় চলে গেলো?
না কি সাদিই ঘোরের মধ্যে চলে গিয়েছে। এবং ছোট্ট ছোঁয়াকে পরিপূর্ণ নারী ভাবতে শুরু করেছে।
জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে নেয় সাদি। দৃষ্টি তার ছোঁয়া অধরপানে।

“ইই..ডিয়েট ক্যান আই
চোখ খুলে তাকায় ছোঁয়ার। সাদির ইশারা বুঝতে পেরে লজ্জায় নুয়িয়ে পড়ে। অধর কামড়ে দুই দিকে মাথা নেরে না করে। চোখে তার ভয়।
মনে পড়েছে একবার সাদির কথা পাগলামির কথা। দম বন্ধ হয়েই যাচ্ছিলো প্রায়।
আজকেও এমন করবে কি?
সাদির থেকে নিজেকক ছাড়াতে চেষ্টা করে ছোঁয়া। সাদি ছাড়ে না। বরং আরও একটু চেপে দাঁড়ায়।

” জান প্লিজজ
একটু
বলতে বলতে ছোঁয়া অধর জোড়া নিজের অধরের আয়ত্তে নিয়ে নেয়।
তখনই ছোঁয়া মুখটা পিছিয়ে নেয়। সাদি ভ্রু কুচকে তাকায়। বিরক্ত সে। নিজেই উসকাবে। তার পিছিয়ে যাবে।
ছোঁয়া মাথা নিচু করে ফেলে

“আগে ভালোবাসি বলেন।
মুখ বাঁকায় সাদি। হাতের মুঠোয় পুরে নেয় ছোঁয়া ঝুঁটি বাঁধা চুল গুলো।
দাঁতে দাঁত চেপে বলে
” ভালোবাসি বললে কিন্তু তুই আজকে শেষ।

শুকনো ঢোক গিলে ছোঁয়া। আজকে থেকে সাদির থেকে ভালোবাসি শুনেই ছাড়বে। ঢেড় জানো লোকটা তাকে অনেক ভালোবাসে। তবুও কেনো এতো লুকোচুরি? সে কি বোঝে না তার থেকে ভালোবাসি শুনতে ছোঁয়া কতোটা পাগল হয়ে আছে?

“প্লিজজ
একবার বলুন।
একদম নরাচরা করবো না। স্টং হয়ে দাঁড়িয়ে থাকবো।
হাসে সাদি।

কপালে পড়ে থাকা ছোঁয়ার ছোট চুল গুলো কানের পেছনে গুঁজে দেয়। মাথা নুয়িয়ে ছোঁয়ার কানের কাছে ঠোঁট নেয়।
“ভালোবাসি তোমায় ছোঁয়া। বড্ড বেশি ভালোবাসি। তুমি আমার শখের নারী।
চোখ বন্ধ করে শুনতে থাকে ছোঁয়া। এই প্রথমবার সাদি তার নাম ধরে ডাকলো। লোকটার মুখে ছোঁয়া নামটা একটু বেশিই সুন্দর শোনালো।আর কি বললো? “শখের নারী”

এটাও লিখা ছিলো কপালে?
ছোঁয়ার চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করছো “সবাই শুনো
আমার সাদমান চৌধুরী আমাকে ভালোবাসি বলেছে। আমি তার শখের নারী। যে পুরুষটাকে আমি পাগলের মতো ভালোবাসি। সেই পুরুষটাও আমাকে ভালোবাসে।
তোমরা শুনো সবাই।।

আমাদের জন্য দোয়া করো। আমি যেনো এই পুরুটার বুকেই মাথা রেখে দূনিয়া ছাড়তে পারি।”
ছোঁয়া চোখ খুলে। সাদির চুল গুলো মুঠো করে ধরে অধরে অধর ছোঁয়ায়। প্রেয়সীর সাড়া পেয়ে উম্মাদ হয়ে ওঠে গোমড়ামুখো সাদি। ভালোবাসায় ভরিয়ে দিতে থাকে পাগলীটাকে।

হাতের লাগামহীন ছোঁয়া এবং প্রেমিক রূপি স্বামীর চুম্বনে পাগল প্রায় অবস্থা ছোঁয়ার। নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে। তল পেটে মোচর দিচ্ছে। সুখ কষ্ট ভালো লাগা খারাপ লাগার এক অদ্ভুত অনুভুতিতে ভাসতে থাকে। মুঠো করে চুল ধরে রাখা হাতটা আরও শক্ত হয়ে আসে। দুই চোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়ে দু ফোঁটা নোনাজল।
সাদি ছোঁয়ার চোখের পানির মূল্যায়ন না করে কোলে তুকে নেয়। বউটাকে।
আর তখনই ভেসে আসে সেলিমের কন্ঠ

হৃদয়হরণী পর্ব ৪২

“মামনি দরজা খুলো। আব্বু চলে এসেছে।
ছোঁয়া হাঁসফাঁস করতে থাকে। সাদি বিরক্ত। ঠাসস করে কোল থেকে নামিয়ে দেয় ছোঁয়াকে।
” আজকে শশুড়ের মুখোশ উন্মোচন না করলে আমার নামও সাদি না।
রোমাঞ্চটাও করতে দিচ্ছে না।

হৃদয়হরণী পর্ব ৪৪