হৃদয়হরণী পর্ব ৪৪

হৃদয়হরণী পর্ব ৪৪
তানিশা সুলতানা

সাদির মেজাজ বেশ খিটখিটে হয়ে আছে। এমনিতেই গোমড়ামুখো আজকে যেনো আরও বেশি গোমড়ামুখো হয়ে গিয়েছে। কথার সাথে তিক্ততা বেরিয়ে আসছে। কারো সাথে ঠিকঠাক কথা বলছে না। ছোঁয়ার দিকে তাকাচ্ছে না পর্যন্ত। ছোঁয়া বেশ বুঝতে পারছে তখনকার সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করে সাহেবের এই মেজাজ। কিন্তু এতে তো ছোঁয়ার দোষ নেই তাই না?

ছোঁয়া কি জানতো তখনই তার বাবা আসবে? জানলে কখনোই ড্রেসটা পড়তো না। বা সাদিকে উঁসকাতো না। বাবা তো হুট করেই চলে এসেছে। কিন্তু এই সামান্য বিষয়টা সাদিকে কে৷ বোঝাবে?
ছোঁয়া বোঝাবে?
সাদি শুনবে?

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

কখনোই না। উল্টো ছোঁয়াকে কথা শুনিয়ে দিবে। বকে দিবে। চর থা*প্প*ড়ও দিতে পারে। যে মেজাজ।
সেলিম বসে আছে সোফায়। ছোঁয়া তার পাশেই বসে আছে। সাদি খেতে বসেছে। তাকে খাবার বেরে দিচ্ছে সিমি। পরি দুই দাদিমার সাথে সাদির ফুপি বাড়িতেই রয়ে গিয়েছে।
সিমি সাদির প্লেটে আস্ত একটা করলা তুলে দিবে বলে

“থেকে যাবে আজকে?
সাদি মুখের খাবার শেষ করে জবাব দেয়
” থেকে গেলে তোমাদের প্রবলেম না কি?
সিমি যেনো কথাটা বলেও বিপদে পড়েছে। সে ঠিক এভাবে বলে নি কথাটা। সাদি তো চলে যায় হুটহাট করে। তাই জিজ্ঞেস করেছে।

ছোঁয়ার ছোট্ট মনখানা আবারও চুপসে যায়। আখিঁ পল্লবে ভীর জমায় অশ্রু কণারা।
মনটা বিষিয়ে উঠেছে। কি করে প্রেমিক পুরুষের রাগ ভাঙাবে?
কাছে ঘেসলেই বকে দিবে যে?
সেলিম বিরক্ত। মনে মনে কয়েকটা গালি দেয় সাদিকে। মুখে বলার তো সাহস নেই। ধরিবাজ ছেলে কি না? কিসের মধ্যে কি বলে ফেলবে।

তবুও চুপ থাকা যাবে না।
কাশি দিয়ে গলা পরিষ্কার করে নেয় সেলিম। তারপর বলে ওঠে
“রাগ নাকের ডগায় নিয়ে ঘুরবে না ছেলে।
সাদি সরু চোখে তাকায় সেলিমের দিকে।

” তো বুড়ো বয়সে গার্লফ্রেন্ড জুটিয়ে হাত ধরে লান্স করবো? ধরাধরি করে রিকশায় ঘুরবো?
থমথমে খেয়ে যায় সেলিম। লজ্জাও পায় বটে। দুই মেয়ের সামনে ছিহহ ছিহহ।
মেয়েরা ধরতে পারলো কি কিছু? জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে তাকায় মেয়েদের মুখপানে। দুই মেয়েরই নজর সাদমান চৌধুরীতে বন্দী। তার মানে ওরা ধরতে পারে নি।

স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে সেলিম। একটু হাসার চেষ্টা করে বলে ওঠে
“এ যুগের ছেলে মেয়ের কি আর লজ্জা শরম আছে? রাস্তায় বেরুলেই দেখা মেলে কতশ
বাকিটা শেষ করতে পারে না সেলিম। সাদি বলে ওঠে

” এই যুগের বুড়োদেরও লজ্জা শরম কম। বউ বাচ্চা থাকতেও তাদের গার্লফ্রেন্ড লাগে। চরিত্র তাদেরও খারাপ।
শুকনো ঢোক গিলে সেলিম। মুখ কেনো খুলতে গিয়েছিলো সে? নিজের গালে নিজেরই চর মারতে ইচ্ছে করছে। এটা কি সাধারণ ছেলে? এ হচ্ছে বজ্জাত। মস্ত বড় বজ্জাত। সম্পর্কের মানে বোঝে না। বুঝলে কি আর শশুড়ের পেছনে লাগতে আসতো?

সাদির খাওয়া শেষ। সে হাত ধুয়ে উঠে পড়েছে। ছোঁয়া তাকিয়েই আছে সাদির মুখপানে। কিন্তু সাদি একবারের জন্যও তাকালো না। টিস্যু দ্বারা হাত মুছতে মুছতে ছুটে নিজ কামড়ার পানে।
সেলিম স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে। সিমি খাবার গুছিয়ে রাখছে।
ছোঁয়ার ইচ্ছে করছে সাদির কাছে যেতে। কিন্তু বাবার সামনে দিয়ে কি করে যাবে? চোখে মুখে তার অন্ধকার ভর করেছে।

এরই মধ্যে ছোঁয়াকে সুযোগ করে দিতে সিমি বলে ওঠে
“ঘুমবি না?
ছোঁয়া এক লাফে দাঁড়িয়ে যায়।
” যাচ্ছি যাচ্ছি
আব্বু গুড নাইট
সেলিম মাথা নারে। ছোঁয়া এক দৌড়ে নিজের রুমে চলে আসে।

দরজা বন্ধ করে বেলকনিতে যায়। সাদি এবং তার রুম পাশাপাশি হওয়াতে বেলকনি দিয়ে আসাযাওয়া করা যায়।
কিন্তু সাদির কক্ষের সামনে এসে ছোঁয়ার শেষ আশা টুকু মিলিয়ে যায়। দরজা বন্ধ। ঢুকবে কি করে?
দুই ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়ে আঁখিপল্লব হতে। হাতের উল্টো পিঠে চোখের পানি মুছে দরজায় টোকা দেয়
“দরজা খুলুন না আব্দুল কুদ্দুসের আব্বু। আপনার আধপাগল বউ কাঁদছে। তার বুকের বা পাশটায় ব্যাথা করছে। আপনার হাতের থা*প্প*ড় খাওয়ার জন্য পেট গুরগুর করছে। চোখ রাঙানো দেখার জন্য মনটা ছটফট করছে। ধমক খাওয়ার জন্য হৃদয় কাঁদছে।

সাদি সবেই বিছানা ঝেড়েছে। একটু ঘুমবে। আধপাগল বউয়ের আধপাগল কথাবার্তা কানে পৌঁছাতেই ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে ওঠে। এগিয়ে গিয়ে দরজায় পিঠ ঠেকিয়ে দাঁড়ায়। আরও একটু উতলা করে চায় সে তার বউকে। যাতে পরবর্তী সময় পাগল করতে আসলে প্রিপারেশন নিয়ে আসে।

বয়স পেরিয়েছে একত্রিশ। চাহিদা তারও আছে। সেও চায় বউকে উজার করে ভালোবাসতে। ছোট্ট দেহখানা বুকের মধ্যে জড়িয়ে রাত পার করতে। নিজের উম্মাদনায় ছোঁয়াকে পিষে দিতে।
বয়স কম, পড়ালেখা এসব নিয়ে আপাতত তার মাথায় কিছু আসছে না। সারাক্ষণ পাগল ছোঁয়া সনিধ্য গুলোই তার মাথায় আসছে। এবং মস্তিষ্ক অসুস্থ করে দিচ্ছে।

কাছে পাওয়ার তাগিদ বাড়িয়ে দিচ্ছে।
অসয্য এক পিঁড়া হচ্ছে অবুঝ প্রেয়সীর জন্য।
সাদির থেকে রেসপন্স না পেয়ে ছোঁয়া আবারও বলতে থাকে
” জামাই খুলুন না দরজাটা। পাক্কা প্রমিজ জ্বালাবো না আপনায়। চুপটি করে পাশে শুয়ে থাকবো। একটাও কথা বলবো না। একটুও জ্বালাবো না।

তখনই সাদি গম্ভীর গলা ভেসে আসে
“না জ্বালালে এখানে কি? নিজের রুমে গিয়ে চুপটি করে শুয়ে থাকো ইডিয়েট।
সাদির ধমকে ছোঁয়া হতদম্ভ। সে কি জ্বালাতে বলছে?
” জ্বালাবো।প্রচুর জ্বালাবো।

প্লিজ দরজা খুলো।
হাসি পায় সাদির। হাসি চেপে মুখটা গম্ভীর করে বলে
“ট্রায়ার্ড আমি। তোমার জ্বালা সয্য হবে না।
ছোঁয়া এবার বুঝতে পারছে না কি বলবে?
একবার জ্বালাতে বলছে আবার জ্বালাতে বলছে না। কোন পরিস্থিতি এটা? লোকটা চাইছেটা কি?
” আপনি যেটা বলবেন সেটাই হবে।

মাথা টিপে দিবোনি। পা টিপে দিবে।
কারেন্ট গেলে বাতাস করবো।
মশা তাড়িয়ে দিবো। তবুও আমায় নিন না একটু। প্লিজজজ আব্দুল কুদ্দুসের পাপা।

হৃদয়হরণী পর্ব ৪৩

বুকের বা পাশে হাত চেপে ধরে সাদি। ইসস এভাবে বললে রাগ করে থাকা যায়? ঢং করে রাগ গলাতে উস্তাদ সে।
“ভালোবাসতে পারলে এসো।
নাহলে দুইশত হাত দূরে যাও ইডিয়েট

হৃদয়হরণী পর্ব ৪৫