এক মুঠো প্রণয় পর্ব ৩৫

এক মুঠো প্রণয় পর্ব ৩৫
লেখনীতে একান্তিকা নাথ

মেহেরাজ মেহুর সাথে কথা বলার জন্যই পা বাড়িয়ে বাইরে গেল। জ্যোতি সেদিক পানে তাকিয়েই ছোট শ্বাস টানল। কফির মগে মেহেরাজের জন্য কফিটুকু ঢেলে নিয়ে মৃদু পায়ে পা বাড়াল। মেহেরাজ রুমে আছে এমনটা ভেবে নিয়েই রুমে গেল। কিন্তু রুমে দেখতে পেল না। ভ্রু জোড়া কুঁচকে আয়নায় নিজেকে শাড়িতে একনজর চাইল।

খুব নজরকাড়া সুন্দরী না লাগলেও স্নিগ্ধ লাগছে তাকে।ঘরোয়া বধূ বধূ অনুভব হচ্ছে নিজের প্রতি। দুয়েকবার নিজের দিকে তাকাতেই পর পরই চোখ গেল টেবিলের উপর পড়ে থাকা লাল গোলাপ গুচ্ছের দিকে। অবাক হয়ে সেদিকে গিয়ে গোলাপ গুলো ছুঁয়ে দেখার জন্য হাত বাড়াতেই মেহেরাজ ছিনিয়ে নিল তা। কপাল কুঁচকে বলল,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন হউন

” কি আশ্চর্য! বাচ্চা নাকি তুই? অন্যের জিনিসে অনুমতি না নিয়ে হাত দিচ্ছিস কেন?”
জ্যোতি বোকাবোকা চোখে তাকাল। অপমানে মুখ থমথমে হয়ে উঠল যেন। থমকানো সুরে বলল,
” চুরি করতাম না তো আমি। দেখছিলামই শুধু।”
মেহেরাজ ত্যাড়া চাহনীতে তাকাল। খোঁচা মেরে বলে উঠল সঙ্গে সঙ্গে,

” অন্যকারোর জিনিস দেখবিই বা কেন? এগুলো কি তোর জন্য এনেছি? ”
জ্যোতি মৃদু আওয়াজে জিজ্ঞেস করল,
” সামান্তা আপুর জন্য এনেছেন ? ”
কথাটা অন্যমনস্ক হয়ে বলে ফেলেই ইতস্থত বোধ করল জ্যোতি। অন্যের ব্যাক্তিগত বিষয়বস্তু নিয়ে আগ্রহ দেখানো বোধ হয় অপর ব্যাক্তিটা পছন্দ নাও করতে পারে। এভাবে প্রশ্ন ছোড়াটাও বোধহয় উচিত হয়নি ভেবে নিয়েই বলে উঠল,

” এভাবে বলতে চাইনি আসলে। দুঃখিত। সামান্তা আপুর জন্য আপনি ফুল আনতেই পারেন।উনার জন্য আনা ফুলগুলো হাত বাড়িয়ে দেখতে যাওয়ার জন্যও দুঃখিত। অন্যের জন্য রাখা জিনিসে হাত দেওয়া উচিত নয়। দাদী শিখিয়েছেন আমায়। ”
মেহেরাজ কপাল কুঁচকে ফেলল।বিরক্তি নিয়ে নিরস সুরে বলল,

” প্রচুর বকবক করিস। এদিকে আয়,কাছে আয়। ”
শেষের বাক্যটা নরম শোনাল। জ্যোতি ভ্রু কুঁচকে নিল। দু পা বাড়িয়ে অল্প এগিয়ে দাঁড়াল মেহেরাজের সামনে। বলল,
” বলুন। ”
মেহেরাজ ঠোঁট গোল করে শ্বাস ফেলল। গম্ভীর স্বরে শুধাল,

” এটাকে কাছে আসা বলে? কাছে আয়।”
জ্যোতি আর এক পাও এগিয়ে গেল না। যেখানে দাঁড়িয়ে ছিল সেখানটাতেই দাঁড়িয়ে রইল৷ ছোট ছোট চোখ করে চেয়ে থাকল মেহেরাজের দিকে। মেহেরাজ সে দৃষ্টিতে দৃষ্টি মিলিয়েই ভ্রু নাচিয়ে জিজ্ঞেস করল,
” আমি কাছে টেনে আনব? ”

কথাটুকু মুখ দিয়ে জিজ্ঞেস করে অনুমতি চাইলেও অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজন বোধ করল না মেহেরাজ। জ্যোতির নরম হাতটায় এক টান দিয়ে নিজের সম্মুখে একদম কাছে দাঁড় করাল। গোলাপ গুচ্ছ থেকে একটা লাল টকটকে গোলাপ হাতে নিয়ে অন্য হাতে জ্যোতির খোঁপা বাঁধা চুল মুহুর্তেই ছাড়িয়ে দিল। খোলা চুলগুলো এলোমেলো করে পিঠে পড়তেই চমৎকার হাসল মেহেরাজ। দুয়েক নজর মোহনীয় নজরে তাকিয়ে সাবধানে একটা গোলাপ গুঁজে দিল জ্যোতির কানের পেছনে।শুধাল,

” পার্ফেক্ট এবার। ”
জ্যোতি চোখ তুলে তাকিয়ে থাকল শুধু। মেহেরাজ হেসে বাকি গোলাপগুলো জ্যোতির কোমল হাতে চেপে দিয়ে জ্যোতির কপালে পুরু পুরুষালি ঠোঁট ছোঁয়াল।উষ্ণ স্পর্ষে দৃঢ় চুম্বন এঁটে ফিসফিসিয়ে বলল,
” ফুলগুলো মেহেরাজের অর্ধাঙ্গিনী, এক এবং একমাত্র স্ত্রী আর সম্মুখে দাঁড়িয়ে থাকা শাড়ি পরিহিত স্নিগ্ধময়ী রমণীকেই প্রদান করলাম। গ্রহণ করুন মিসেস জ্যোতি। আপাতত শুদ্ধতম সূচনার প্রথম সাক্ষী হোক এই লাল গোলাপই।”

কথাগুলো বলেই ঠোঁট টিপে দুষ্টুমি মাখা হাসি হাসল মেহেরাজ।আরো একবার গভীর চুম্বন আঁকল জ্যোতির কপালে।পরমুহুর্তেই মুখ সরিয়ে জ্যোতির দিকে একটু ঝুঁকে ঠোঁট গোল করে ফু দিল তার মুখে। মুহুর্তেই জ্যোতির কপালে পড়া ছোট ছোট চুলগুলো নড়ে উঠল। জ্যোতি জিহ্বা দিয়ে ঠোঁট ভেজাল। আকস্মিক জিজ্ঞেস করল,

” ফুলগুলো সামান্তা আপুর জন্যই যদি আনেন তাহলে আমায় দেওয়ার মানে কি মেহেরাজ ভাই?হাত বাড়িয়ে দেখছিলামই জাস্ট। নিয়ে নেওয়ার ইচ্ছা ছিল না আমার। ”
মেহেরাজ দাঁতে দাঁত চাপল।তীক্ষ্ণ চাহনী ফেলে বলল,
” সুন্দর মন চটিয়ে দিবি না এই মুহুর্তে।তুই আস্ত একটা বোকা জ্যোতি।তোকে আমি এতোটাও বুদ্ধিহীন ভাবতাম না। ”
জ্যোতি সহসা প্রশ্ন ছুড়ল,
” কেন?”

মেহেরাজ হতাশ হলো। ইচ্ছে হলে সম্মুখে থাকা মেয়েটাকে এক চড় দিয়ে সব দাঁত ফেলে দিতে। এ বাসায় সে ব্যাতীত অন্য কোন মেয়ে আছে? তাহলে এই বাসায় আর কার জন্য আনবে ফুল? এইটুকু বোঝারও ক্ষমতা নেই? গর্দভ একটা! সামান্তা থাকে দূর শহরে। দূর শহরের সামান্তার জন্য এই সতেজ ফুল কিনে সে কি বাসি ফুল নিযে যাবে? দাঁতে দাঁত চেপে পুনরায় শুধাল,

” এই বাসায় আমি আর তুই ব্যাতীত কেউ আছে? সামান্তা আছে এখানে? সামান্তাকে অন্য শহরে গিয়ে ফুল না কিনে দিয়ে এখান থেকে বাসি,পঁচা ফুল নিয়ে যাব আমি? কি পরিমাণ গর্দভ তুই! ”
জ্যোতি শুকনো ঢোক গিলল।ফুলগুলো তার জন্য? সত্যিই তার জন্য? মন মস্তিষ্কে ঝংকার উঠল। এক পলকে মেহেরাজের দিকে তাকিয়েই থাকতে মেহেরাজ তার হাতে হাত রাখল।দৃঢ়ভাবে কোমল হাতজোড়া আঁকড়ে ধরে শান্ত, শীতল গলায় শুধাল,

” সাথে আয়। ”
জ্যোতি পা বাড়িয়ে মেহেরাজের সাথে বেলকনিতে গেল। এককোণে বসতেই মেহেরাজ আলতো স্বরে বলল,
” আমায় কতটুকু ভালোবাসিস জ্যোতি? ”
জ্যোতি অবাক হলো। এই প্রশ্নে বিনিময়ে কি উত্তর দেবে?কতটুকু ভালোবাসে সে? জ্যোতি উত্তর দিল না। চুপ হয়ে বসে থাকতেই মেহেরাজ হাত নাড়াল। পুনরায় শান্ত গলায় শুধাল,

” সংকোচ হচ্ছে? নাকি সংশয়? সংশয়, সংকোচ পাশে রেখেই বলে ফেল। ”
জ্যোতি এবারেও কোন উত্তর দিল না। মেহেরাজ শ্বাস টানল এবারে।কোমল হাতজোড়া আরেকটু দৃঢ়ভাবে নিজের হাতে মুঠোয় নিয়ে বলল,
” ওকে, ফাইন। বলতে হবে না। আমি জানি সবটুকু। এবার তোর জানার সময় সবটুকু। ”
জ্যোতি এতক্ষনে ঠোঁট নাড়াল। শুধাল,
” মানে? ”
মেহেরাজ ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসল কেবল। ভ্রু নাচিয়ে বলে উঠল,

” প্রথমে সামান্তার বিষয়টা বলি? সামান্তার বর্তমানে একজন প্রেমিক আছে জ্যোতি। আমার জীবনে প্রথম নারী সে। এমনটা নয় যে আমার মন থেকে তার সবকিছুই মুঁছে গেছে।আমি আজও তাকে আমার জীবনের প্রথম নারী বলেই সম্বোধন করি। তবে এমনটাও নয় যে আমি তার মাঝেই আটকে আছি। তাকে ভালোবেসেছিলাম বলেই হয়তো পুরোপুরি মুঁছে ফেলিনি আমি। আমি তাকে সম্পর্ক থাকাকালীন যতটুকু সম্মান দিয়েছি এখনও ততটুকুই সম্মান দিই।

সামান্তা সবসময়ই ছিল অনেকটা ইমম্যাচিউরড। অনেকটা তোর বিপরীত চরিত্র ওর। এই কারণেই মানিয়ে নিতে কষ্ট হয়েছে। ওকে ওর মামার বাসায় পাঠানোর পরও পাগলামো কমল না। বাসায় ফিরে ফের একই পাগলামীই করছিল ও। এদিক আমার দ্বারাও সম্ভব ছিল না তার সাথে দ্বিতীয়বার জড়ানো। বলা যায়, পরকিয়ায় জড়ানো। ঘরে স্ত্রী রেখে অন্য একজনের সাথে সম্পর্ক চালিয়ে যাব কাপুরুষের মতো তেমন সাহস কিংবা রুচি কোনটাই আমার ছিল না।

তুই বাসা ছেড়ে চট্টগ্রাম আসার পূর্বে ছাদে আমাকে আর সামান্তাকে যখন হাত ছুঁয়ে কথা বলতে দেখেছিস সেটাতে সত্যিই কোন প্রেমের ইঙ্গিত ছিল না।ততদিনে তার প্রতি আমার প্রেমের ইতি ঘটেছে। মনের কোণে অজান্তেই নতুন এক অদৃশ্য অনুভূতি জম্ম নিচ্ছিল।সেদিন আমি শুধু ওকে বাস্তবটা বুঝাতে চেয়েছিলাম, বুঝাতে চেয়েছিলাম ও যেভাবে আবার ফিরে আসতে চাইছে তা সম্ভব নয়। কোনভাবেই সম্ভব নয়।

এটা শুধু সেদিনই নয়, আমি বহুবার ওকে তোদের আড়ালে বুঝিয়েছি। তাই বলে ভেবে নিবি না আমি তার সাথে প্রেম বিনিময় করেছি তোদের আড়ালে।”
জ্যোতি ফিরে চাইল।মনে পড়ল সেই দৃশ্য। আজও সেই দৃশ্য তার মনে আছে। খুব ভালো করেই মনে আছে। শুধাল,
” আপ্ আপনি জানলেন কি করে মেহেরাজ ভাই? আমি তো সেদিন নিশব্দেই ছাদ ছেড়ে নেমে এসেছিলাম। ”
মেহেরাজ বাঁকা হাসল। পা বাড়িয়ে রুমে গিয়ে ফের ফিরে এল একটা ডায়েরী নিয়ে। জ্যোতির দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে উঠল গম্ভীর স্বরে,

” ডায়েরীটা ভুলবশতই বোধ হয় ফেলে এসেছিস। পেয়েছিলাম তোর ঘরের টেবিলের নিচে। এটা তোর, তোকেই ফেরত দিচ্ছি। অন্যের জিনিস বোশিদিন বয়ে বেড়াতে দমবন্ধ লাগে আমার।”
” অন্যের জিনিসে অনুমতি ছাড়াই হাত দিয়েছেন, পড়েও নিয়েছেন। আর বয়ে বেড়াতেই দমবন্ধ লাগল?”
মেহেরাজ তীক্ষ্ণ চাহনীতে চাইল। দাঁতে দাঁত চেপে বিরক্তির সহিত বলে উঠল,

” পুরো ডায়েরী জুড়ে তো আমার দায়িত্ব নিয়েই লিখে গিয়েছিস। জীবনে প্রেম-ভালোবাসা সম্বন্ধে কিছু জেনেছিস? নাকি বুঝেছিস? গর্দভ!আবার প্রথম ডায়েরীতে কিশোরী বয়সের সকল আবেগ অনুভূতি ঢেলে দিয়েছিল। কিছু না বুঝে, না জেনেই কিশোরী বয়সেই ভালোবেসে ফেলল নাকি আমায়! ”
জ্যোতি উত্তর দিল না। থম মেরে বসে থাকল। মেহেরাজ ফের গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠল,

” বলেছিলাম না ভালোবাসা মানে জ্বলন্ত অগ্নিতে দগ্ধ হওয়া। আমাদের কাছে আলোর ফুলকিটা যতটুকু ভালো লাগা, আগুনের শিখায় পুড়ে দগ্ধ হওয়াটাও ঠিক ততটুকুই যাতনার, কষ্টের। আর সে কষ্টটুকুকেই বলা হয় ভালোবাসা জ্যোতি। ভালোবাসলে অপরজনের সুখ ভাগ করার আগে আমরা কষ্ট ভাগ করে নিতে চাই। কষ্ট লোপের সমগ্র চেষ্টা চালিয়ে যাই।

সদা সর্বদা আমরা তাকে উজ্জ্বল আলোর ফুলকির ন্যায় দেখতে চাই হাস্যোজ্জ্বল!তোর কিশোরী বয়সের সে ডায়েরী পড়ে আমি সমগ্রটুকুই তখন ধরে নিয়েছিলাম তোর আবেগ। তোর কিশোরী বয়সের নড়বড়ে অনুভূতি ভেবেছিলাম। তাই পরীক্ষা করছিলাম, আসলেই ভালোবাসা কিনা। কারণ মস্তিষ্ক এগুলোকে আবেগ বলে ধরে নিলেও তোর এই সুন্দর সুমধুর অনুভূতি গুলোতে আমার মন কোনভাবেই আবেগ হিসেবে ধরে নিতে পারছিল না।

আর মন মস্তিষ্কের যুদ্ধে আমি এক অদ্ভুত কাজ করলাম। তোর লেখাগুলোকে আমি আগুনে দগ্ধ হওয়া আর আগুনের ফুলকির উজ্জ্বলতার সাথে তুলনা করেই পুকুর পাড়ে একটা কাঁচের টুকরোতে হাঁটার শাস্তি দিলাম ভালোবাসা প্রমাণের স্বার্থে। আশ্চর্যজনক ভাবে তুই আগুনে দগ্ধ হওয়াটা বেঁছে নিলি। বেঁছে নিলি রক্তাক্ত, ক্ষতবিক্ষত হওয়া পরিস্থিতি। ভেবেছিলাম শেষ মুহুর্তে হলেও তুই মত বদলাবি।

ক্ষতবিক্ষত তীক্ষ্ণ ব্যাথা ছেড়ে ফুঁফিয়ে কেঁদে বলে উঠবি, আমাকে নিয়ে লেখা সবকিছুই তোর মাথার ঝোঁক।অথচ তুই তেমন কিছুই করলি না। তোর এই ডায়েরীতে এর জন্য আমার উপর তীব্র ঘৃণাও পোষণ করেছিস। আমি তাতে অসন্তুষ্ট নই। ঘৃণা করাই যায়। তবে এটুকু শুধুমাত্র তোর নিজের স্বার্থেই করেছিলাম আমি। বুঝাতে চেয়েছিলাম ভালোবাসা কি। ভেবেছিলাম ভালোবাসা কি তা বুঝতে পেরেই তুই ঝরে পরবি এই ভালোবাসা থেকে। কিন্তু ঐটুকু বয়সেও তুই দৃঢ় থাকলি জ্যোতি।”

জ্যোতি হাসল। বলল,
” আমি অতো সহজে কোনকিছু থেকে ঝরে পরতে পারি না মেহেরাজ ভাই৷ ঝরে গেলে তো আম্মা চলে যাওয়ার পরপরই আব্বার তীব্র অবহেলায় ঝরে যেতাম পৃথিবী থেকে মিথির মতোই। সেসময় যখন অতো কঠিন মুহুর্তেও ঝরে যাইনি, এখনও যে কোন বিষয়ে অতো সহজে ঝরে যাব না।”
মেহেরাজ ত্যাড়া সুরে বলল,

“ঝড়ে যেতে চাইলে পারবি নাকি?অতো সহজ ? ”
জ্যোতি তাকিয়ে বলল,
” কঠিন? ”
” না, তবে অসম্ভব! ”
” কেন? ”
মেহেরাজের দৃঢ় স্বর,

” কারণ আমি মেহেরাজ। আর তুই আমার বিয়ে করা বউ। ”
জ্যোতি ছোট শ্বাস ফেলল।মৃদু আওয়াজ তুলে বলে উঠল,
” বিয়ে করা বউই তো! এর বেশি তো কোন পরিচয় নেই। ”
মেহেরাজ বাঁকা হাসল। ঝুঁকে গিয়ে জ্যোতির দিকে তাকিয়ে ভ্রু নাচাল। কানের কাছ মুখ নিয়েই জ্যোতিকে ভয়ানক লজ্জ্বায় ফেলতে শুধাল,

” এর বেশি কি পরিচয় চাস? আমার বাচ্চাকাচ্চার মা হতে চাস? সুন্দর তো! বিয়ে করা বউ উইথ বাচ্চাকাচ্চার আম্মু।পরিচয়টা সুন্দর না? ”
জ্যোতির কান হঠাৎ উষ্ণ হয়ে উঠল।গাল আরক্ত হলো । সে মোটেই সেভাবে কিছু বোঝায়নি। জানতে চেয়েছিল, বিয়ে করা বউয়ের পাশাপাশি সে কি ভালোবাসার মানুষও হয়ে উঠতে পেরেছে? মেহেরাজ তা শুধাল না। সবটুকু বুঝেও সে জানাল না তার কতখানি ভালোবাসার মনুষ হয়ে উঠেছে জ্যোতি।

কারণ সে মুখে বলা কথিত ভালোবাসায় বিশ্বাসী না। সে বিশ্বাসী ভালোবাসার উপস্থিতি জানান দেওয়াতে। যত্ন,আগলে নেওয়া ইত্যাদির মাঝে বুঝিয়ে তুলতে যে সে কতখানি ভালোবাসে। তাই এড়িয়ে গিয়ে সে কথাটা বলল না।বরং ভয়ানক, সাংঘাতিক কিছু কথা শুনিয়ে মনে মনে আনন্দ লুটল ৷ সম্মুখে জ্যোতির জড়োসড়ো অবস্থা দেখে মুখ চেপে হাসল। ঠোঁট বাঁকিয়ে, চোখ টিপ দিয়ে বলে উঠল,

” মুখে বললেই তো পারতি যে তুই আমার বাচ্চাকাচ্চার আম্মু হতে চাস। আমি কি নিষেধ করতাম? নিঃস্বার্থে, স্বেচ্ছায় তোকে হেল্প করতাম আম্মু হতে। দরকার পড়লে বছর বছরই বাচ্চা… ”

এক মুঠো প্রণয় পর্ব ৩৪

বাকিটুকু বলার আগেই জ্যোতি উঠে দাঁড়াল। কান দিয়ে উষ্ণ ধোঁয়া বের হচ্ছে তার। লজ্জ্বায় অস্বস্তিতে বুকের ভেতর কেমন কেমন যেন করে উঠছে। কথাগুলো ব্যাপক সাংঘাতিক লজ্জ্বার বোধ হলো তার কাছে৷ সত্যিই বোধহয় কথাগুলো সাংঘাতিক লজ্জ্বার!

এক মুঠো প্রণয় শেষ পর্ব (১ম অংশ)