এক মুঠো প্রণয় শেষ পর্ব (১ম অংশ) 

এক মুঠো প্রণয় শেষ পর্ব (১ম অংশ) 
লেখনীতে একান্তিকা নাথ

জ্যোতি উঠে দাঁড়াল ঠিক কিন্তু পা বাড়িয়ে বেলকনি পার হতে পারল না। তার আগেই টান পড়ল ডান হাতে।পেঁছন থেকে ফিচেল স্বরে বলে উঠল মেহেরাজ,
” কি হলো? বাচ্চার আম্মু হবি না? ”
তৎক্ষনাৎ কেঁশে উঠল জ্যোতি।বিষম খাওয়া স্বরে কোনরকমে বলল,

” হাত ছাড়ুন মেহেরাজ ভাই। খাবার বাড়ছি, রাত হয়েছে। আসুন।”
মেহেরাজ হাত ছাড়ল না। জ্যোতিকে উল্টো ঘুরিয়ে নিজের সম্মুখে দাঁড় করাল। কোমড় আঁকড়ে ধরে ঠোঁটের কোণে দুষ্টুমি মাখা হাসি নিয়ে বলল,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন হউন

” উহ, তোর তো আমার বউ ছাড়াও অন্য কোন সম্বোধন চাই? বললি না মাত্র? ”
জ্যোতির অস্থির লাগল। এমন একটা কথা আসলেই বলা উচিত হয়নি তার। কথাটার বিনিময়ে এই চরম বাক্য গুলো মেহেরাজ ফিরিয়ে দিবে জানলে সে কখনোই কথাটা বলত না। মাথা দুই পাশে দুলিয়ে বলে উঠল,

” না, আমি তেমনটা বুঝাইনি। ”
ভ্রু নাচিয়ে মেহেরাজ বলল,
” কেমনটা বুঝিয়েছিস তাহলে? ”
জ্যোতি বুঝে উঠল না কি বলবে। করুন চোখে মেহেরাজের দিকে তাকিয়েই ইতস্থত স্বরে বলল,
” মেহেরাজ ভাই… ”

বাকি টুকু বলার আগেই নরম ঠোঁটে তর্জনী আঙ্গুল ছোঁয়াল মেহেরাজ। জড়ানো গলায় বলল,
” হুশশশ!তোর প্রতি এই মুহুর্তে আমার বোন বোন ফিলিংস আসছে না জ্যোতি। ভাই বলে ডাকবি না বলে দিলাম।”
জ্যোতি বিনিময়ে উত্তর দিতে পারল না।থতমত খেয়ে বোকার মতো তাকাল। মেহেরাজ সেই দৃষ্টি দেখেই বাঁকা হাসল। কিছুটা ঝুঁকে গিয়ে জ্যোতির কানের কাছে বলল,

” বউ বউ ফিলিংস আসছে তোর প্রতি। আমার কিন্তু দোষ নেই জ্যোতি। সমস্ত দোষ তোর। কি দরকার ছিল শাড়ি পরে বউ বউ হয়ে সামনে ঘুরপাক খাওয়ার? প্রয়োজন ছিল? এখন তোকে বউ টউ ভেবে বসে কিছু করে ফেললে? দোষ কার?”

জ্যোতি তৎক্ষনাৎ দুই পা পিঁছিয়ে দাঁড়াল। কথাগুলোতেই নাকি কন্ঠের মধ্যে কি জানি ছিল। যা মুহুর্তেই বুকের ভেতর কম্পন উঠাল। অস্বাভাবিক হৃৎস্পন্দন আর শ্বাস প্রশ্বাস টেনে অস্ফুট স্বরে বলল,
” শাড়ি চেঞ্জ করে নিচ্ছি তাহলে।”
মেহেরাজ গম্ভীর স্বরে বলল,

” আসলেই কি তুই অতোটা অবুঝ? কি বুঝাতে চাই কি বুঝে থাকিস।”
জ্যোতি ছোটশ্বাস টানল। নিজেকে স্বাভাবিক করে প্রসঙ্গ পাল্টানোর উদ্দেশ্যে স্বাভাবিক গলায় শুধাল,
” খাবেন না? রাত হয়েছে। আপনার কফিটাও ঠান্ডা হয়ে বোধ হয় বরফ হয়ে গেছে। ”
দৃঢ় স্বরে উত্তর এল,

” হয়ে যাক। ”
জ্যোতি ফের কথা ঘুরানোর জন্য বলল,
” মেহু আপুর সাথে কথা হ… ”
মেহেরাজ বুঝে ফেলল জ্যোতির উদ্দেশ্য।হাত দিয়ে জ্যোতির কোমড় দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরে বলল,
” তুই যতটুকু পরিপক্ব ভাবতাম এখন দেখছি ততটুকুই চতুর! প্রসঙ্গ পাল্টানোর চেষ্টা করছিস? কিন্তু আজ তো প্রসঙ্গ পাল্টাবে না। একেবারেই পাল্টাবে না। তোর সব চতুরতা ধরে ফেলেছি জ্যোতি। ”

কথাটুকু বলেই তৎক্ষনাৎ কোলে তুলল শাড়ি পরিহিতা জ্যোতিকে। এক হাত গিয়ে ঠেকল উম্মুক্ত কোমড়ে।জ্যোতির মাথা গিয়ে ঠেকল মেহেরাজের বুকে।মুহুর্তেই কুঁকড়ে গেল জ্যোতি। মুখে ফুঁটে উঠল ভীত, সঙ্কীত, লজ্জ্বায় লালাভ আভা। মেহেরাজ হাসল। রুমে পা বাড়াতে বাড়াতেই বলে উঠল,
” স্বাভাবিক বিষয়ে ভয় পাচ্ছিস?”

জ্যোতি চোখ বুঝল। এটা স্বাভাবিক বিষয়? শুধুই স্বাভাবিক বিষয়? জ্যোতির মস্তিষ্ক স্বাভাবিক বুঝালেও মন মানতে চাইল না তা। মন জানাল স্বাভাবিকতার মধ্যেই অস্বাভাবিকতার আভাস। লজ্জ্বায় নুঁইয়ে মারার ইঙ্গিত।উম্মাদনার উম্মাদময় অস্থিরতা। মেহেরাজ এবারেও হাসল। রুমে এসে জ্যোতিকে বিছানায় বসিয়েই রুমের বাতি নিভিয়ে দিল। সহসা জ্যোতি কেঁপে উঠল। কাঁপা স্বরে শুধাল,

” রা রাতের খাবার খাবেন না? এখনই আলো নিভিয়ে দিয়েছেন কেন?”
মেহেরাজ নিঃশব্দে বসল জ্যোতির পাশে। দুইহাতে জ্যোতির কোমড় চেপে নিজের দিকে ঘুরাল তৎক্ষনাৎ। ঘোর লাগা গলায় বলে উঠল,
” আলো নিভিয়েছি কেন শুনবি? ”
তৎক্ষনাৎ উত্তর এল,
” না।”

মেহেরাজ হাসল।নিজেদের মধ্যকার দূরত্ব ক্রমশ কমিয়ে আনল। পুরুষালি হাতজোড়ার বন্ধনে সম্মুখ নারীটিকে জড়িয়ে নিয়েই নিজের পুরু ঠোঁট জোড়া ডুবিয়ে দিল জ্যোতির পাতলা মিহি ঠোঁটে। উষ্ণ আবেশে, উষ্ণ নিঃশ্বাসে স্তব্ধ হলো জ্যোতি। হাতজোড়া খামচে ধরল শাড়ির একাংশ। হৃদস্পন্দন যেন থেমে রইল কিয়ৎক্ষন। অবশেষে পুরুষালি ঠোঁটের উম্মাদনা থেকে ছাড় পেতেই জোরে জোরে শ্বাস টানল। লজ্জ্বায় আরক্ত হয়ে সরে যেতে চাইলে ও মেহেরাজ ফের জড়িয়ে নিল। মুখ ডোবাল জ্যোতির গলায়। বার কয়েক উষ্ণ চুম্বন এঁকে শুধাল,

” অন্য কিছুর সম্বোধন পেতে চাইলে এই সম্পর্কের পূর্ণতা দিতে হবে। পূর্ণতা দিয়ে দিই? ”
জ্যোতি উত্তর দিল না৷ সহসা কেঁপে উঠল।সর্বাঙ্গ কাঁপছে কেমন অদ্ভুত ভাবে। সে কম্পন অনুভব করল নিবিড়ে জড়িয়ে রাখা মেহেরাজও। নিরবতাকে সম্মতি হিসেবে ধরে নিয়েই কৌতুক স্বরে ফিচেল গলায় বলে উঠল,

” এইটুকুতে এমন করছিস কেন? কিছু করেছি আমি?”
জ্যোতি উত্তর দিল না। মেহেরাজ আবার গম্ভীর স্বরে বলল,
” পূর্ণতাপ্রাপ্তি ঘটুক তবে? ”
জ্যোতি ফের লজ্জ্বায় লালাভ হলো। অন্ধকারে সেই লজ্জ্বারাঙ্গা রং চোখে না পড়লেও মেহেরাজ তা উপলব্ধি করল বেশ করে। উত্তরটুকু মুখে বলা না হলেও বেশ করে বুঝতে পারল উত্তরটা।মুহুর্তেই ঠোঁটের কোণে ফুটল বাঁকা হাসি।

অন্ধকার ঘরে দুইজন যুবক যুবতীর শ্বাসপ্রশ্বাসের আওয়াজ দৃঢ় হলো ক্রমশ।সেই সাথে উষ্ণ শ্বাস ছুঁয়েও গেল একে অপরকে। বন্ধন গভীর হলো। গভীর হলো দুইজনার স্পর্শ। নিরব, স্তব্ধ, আঁধারে ঘেরা বদ্ধ ঘরে একে অপরের দেহ-মন একত্রিত হয়ে জানান দিল এক সমুদ্র ভালোবাসার৷

সকাল সকালই মেহেরাজের ঘুম ভাঙ্গল। পাশে থাকা ঘুমে আচ্ছন্ন মেয়েটার দিকে তাকিয়েই ঠোঁটে ফুটল হাসির রেখা। সতর্ক ভাবে শোঁয়া ছেড়ে উঠে বসল সে।হেসে জামাকাপড়, তোয়ালে নিয়ে ওয়াশরুমের দিকে পা বাড়াল। কিয়ৎক্ষন পর গোসল সেরে এসে জ্যোতিকে একই ভাবে ঘুমিয়ে থাকতে দেখে বিছানার এসে কোণে বসল। ঝুঁকে গিয়ে ভেজা চুলগুলো জ্যোতির মুখের সাথে স্পর্ষ করিয়েই ফিসফিসিয়ে বলল,

” আরো ঘুমাবি জ্যোতি? ”
জ্যোতি প্রথম দফায় সাঁই দিল না। মেহেরাজ এবারে নিজের ঠোঁটজোড়ার উষ্ণ চুম্বন আঁকল জ্যোতির কপালে। পরপরই জ্যোতি চোখ ছোট ছোট করে চাইল। কপাল কুঁচকে তাকাল মেহেরাজের দিকে। শরীর ব্যাথায় টনটন করছে। সদ্য ঘুম ছেড়ে উঠায় প্রথম দফায় কিছু বুঝে উঠতে না পারলেও পরমুহুর্তেই মেহেরাজের ঠোঁটের কোণে সূক্ষ্ম হাসি মনে করিয়ে দিল সমস্ত কিছু।সঙ্গে সঙ্গে লজ্জ্বায়, অস্বস্তিতে মরে যেতে মন চাইল তার।আর শুয়ে থাকতে পারল না। ব্যাথাময় শরীর নিয়েই দ্রুত উঠে পড়ল।বিছানা ছেড়ে উঠে যেতেই মেহেরাজ গম্ভীর স্বরে শুধাল,
” গোসল সেরে আয়।আমি খাবার গরম করছি।কাল রাতে খাওয়া হয়নি তো। ”

জ্যোতি লজ্জ্বায় মেহেরাজের সম্মুখীন হতে পারল না।অন্যপাশ ফিরে মাথা নাড়াল কেবল। মেহেরাজ আলতো হেসে বেরিয়ে গেল। মুহুর্তেই জ্যোতি জামাকাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে পা বাড়াল। গোসল সেরে এসে আয়নায় মুখ দেখতে গিয়েই চোখে পড়ল গলার কাছে দুটো লালচে ছোট দাগ।দাগগুলোর জন্য সম্পূর্ণ মেহেরাজ দায়ী তা স্মরণ হলো সঙ্গে সঙ্গেই৷ মুহুর্তেই অস্বস্তিতে হাসফাঁস করল সে। ঠোঁটে ঠোঁট চেপে ক্ষীন চাহনিতে তাকিয়ে থাকল সে লালচে দাগের দিকে। ঠিক তখনই রুমে এল মেহেরাজ। তার পাশে এসেই বলে বসল,

” খাবার গরম করেছি। ক্ষিধে পেয়েছে, আয় খেয়ে নিই।”
জ্যোতি সরাসরি তাকাল না। শুধু মাথা নাড়িয়ে বুঝাল আসছে সে। মুহুর্তেই কোন কিছু লুকানোর প্রবণতা দেখিয়ে দ্রুত গলায় ওড়না জড়িয়ে নিল।অস্বস্তিতে উঁশখুশ করল কিয়ৎক্ষন। এমন ভাবে ওড়না দিয়ে গলা ডেকে নিয়ে হাত দিয়ে চেপে রাখল যে স্পষ্টই বুঝা গেল সে কোনকিছু আড়াল করছে। মেহেরাজ ভ্রু কুঁচকাল। কিয়ৎক্ষন তাকিয়ে বলল,

” এমন উশখুঁশ করছিস কেন অসুস্থ রোগীদের মতো?”
পরমুহুর্তেই কি যেন ভেবে গলার স্বর নরম হলো।কাল রাতের মুহুর্ত মনে করেই শীতল স্বরে বলল,
” অসুস্থ ফিল করছিস? খাবার খেয়ে ঔষুধ খেয়ে নিবি।আমি প্লেটে খাবার বেড়ে নিচ্ছি।খেয়ে ঘুম দিবি।তাড়াতাড়ি আয়।”

জ্যোতি এতক্ষনে মুখ খুলল। আড়ষ্ট স্বরে বলল,
” তেমন নয়।শরীরে হালকা ব্যাথা। আর কিছু নয়। ”
মেহেরাজ আগের থেকেও শীতল গলায় বলল,
” আ’ম স্যরি। কাল রাতের জন্যই ব্যাথা..”
জ্যোতি ফের বলল,
” ব্যাথার জন্য উঁশখুশ করছিনা৷ ”
মেহেরাজ ভ্রু জোড়া কুঁচকে নিল।বলল,
” তাহলে ? ”
” কিছু নয়। আসুন, খাবার বেড়ে দিচ্ছি৷ ”

মেহেরাজ ভ্রু জোড়া কুঁচকে নিল। জ্যোতি আর এক সেকেন্ড ও দাঁড়াল না। দ্রুত পায়ে রুম ছেড়ে গিয়ে খাবার বাড়তে লাগল প্লেটে৷ মেহেরাজ সেসব শুধু চেয়ে থেকে খেয়াল করল সূক্ষ্ম চাহনীতে। জ্যোতি যে একবার ও তার দিকে চোখ তুলে তাকাচ্ছে না সেটাও খেয়াল করল ভীষণ করে। খেয়াল করল প্লেটে খাবার রাখার সময় অল্প করে ওড়না সরে যাওয়া গলায় লালচে দাগ।এতক্ষনে বুঝে উঠল জ্যোতি কি লুকোতে চেয়েছিল। ঠোঁট বাকিয়ে হেসেই বলে উঠল,
” গলার দাগটার জন্য আমিই দায়ী। দাগটা আমার থেকে লুকানোর মতো কিছু দেখছি না কিন্তু। ”

জ্যোতি এইবারে চোখ তুলে চাইল। মুহুর্তেই হাত দিয়ে গলার ওড়নাটা চেপে ধরল। দেখেই নিল অবশেষে? মুহুর্তেই গাল রক্তিম হয়ে উঠল লজ্জ্বারাঙ্গা রংয়ে।অস্বস্তিতে হাতের তালু ঘষে নজর সরাল আবারও। মেহেরাজ পুনরায় হাসল।রুম থেকে মোবাইলের রিংটোনের আওয়াজটা শুনতে পেয়েই উল্টো ঘুরল। যেতে যেতেই শুধাল,
” এভাবে লজ্জ্বা পেয়ে লালরাঙ্গা টমেটো হয়ে থাকতে হবে না।খেয়ে নে জলদি। আমি একটু পর আসছি। ”
জ্যোতি মাথা নাড়াল।এই মুহুর্তে মেহেরাজ না গেলে বোধহয় আরও লজ্জ্বাকর পরিস্থিতিরই সম্মুখীন হতে হতো তাকে। মনে মনে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল।

মেহেরাজ রুমে এসে কল তুলল। মেহুর কল। মোবাইলটা কানের সমনে নিতেই মেহু শুধাল,
” ভাইয়া, আমি আজই ফিরে আসছি। আর আজই বিয়ে করব। তুমি ছেলেপক্ষকে বলো বিয়ে হলে আজই হবে। নয়তো হবে না বিয়ে। ”
মেহেরাজ কপাল কুঁচকাল। ছোট শ্বাস ফেলে বলল,

” আমি তোকে জোর করিনি মেহু। তোর বিয়ে নিয়ে এতোটা তাড়াহুড়ো আমি কখনোই চাইনি। আগে ছেলেটার সাথে পরিচিত হবি,চিনবি, জানবি, তারপর বিয়ে হবে। ”
মেহু জেদ করে বলল,
” না, আমি এক্ষুনিই বিয়েটা করতে চাইছি। তুমি কি বলবে তাদের? ”
মেহেরাজ গম্ভীর স্বরে শুধাল,
” এটা কি পাগলামো মেহু? ছেলেটার সাথে পরিচিত হওয়ার প্রয়োজন নেই তোর? ”
মেহু ফের বলল,

” না নেই।তুমি নিশ্চয় আমার জন্য খারাপ ছেলে পছন্দ করবে না। তাই না? ”
“তুই কি রাগ করে আছিস মেহু? যদি তুই না চাস আমি এক পা বাড়াব না৷ এ মুহুর্তেই কল করে না করে দিব। ”
মেহু শান্তস্বরে বলল,
” না ভাইয়া, আমি সত্যিই বিয়েটা করতে চাইছি। আজই।সকালের বাসে উঠেছি।সন্ধ্যার মধ্যে পৌঁছে যাব। রাতে ঘরোয়া ভাবে বিয়েটা হয়ে যাক৷ তারপর চেনা, জানা, আনুষ্ঠানিক বিয়ে সবটা হবে। ”
মেহেরাজ লম্বাশ্বাস ফেলল,

” এমন সিদ্ধান্তি কেন? ”
মৃদু আওয়াজে মেহু উত্তর দিল,
” আমি চাইছিনা এমন কারো প্রতি অনুভূতি জম্মাক যার সাথে আমার বিয়ে হবে না। তাই বিয়ে করে তারপরই তার প্রতি আমার অনুভূতি সৃষ্টি হোক এমনটা চাইছি। ”
” এটা পাগলামো, বড়দের কাউকেই জানাইনি। চাচা চাচীদের পছন্দ হবে কিনা সেই বিষয় ও তো ভেবে দেখতে হবে। ”

” আমার কাছে সবার আগে তুমি ভাইয়া। চাচা চাচীদের থেকেও তুমিই কিন্তু আমার বেশি ভালো চাইবে।”
মেহেরাজ চাপা স্বরে বলল,
” কিন্তু এটা তো জোঁকের বশে কাজ হয়ে যাচ্ছে মেহু। ”
মেহু ফের জেদ নিয়ে শুধাল,

” অতোকিছু জানি না, আমি আজই বিয়েটা করতে চাইছি।নয়তো বিয়ে করব না। বলা যায় এটা সে ছেলের পরীক্ষাও। ছেলে যদি আমায় ভালোবাসে তাহলে নিশ্চয় সেই মুহুর্তেই বিয়ে করতে হাজির হবে তাই না?”
মেহেরাজ ঠোঁট গোল করে শ্বাস ফেলল।আরো কিয়ৎক্ষন বুঝাল মেহুকে। মেহু বুঝল না। অবুঝ বাচ্চার ন্যায় জেদ ধরে বসে আছে বিয়েটা সে করবেই করবে।তাও আজ। আজ মানে আজই।

সন্ধ্যায় মেহু বাসায় ফিরল।অবশেষো তার জেদের কাছে হার মেনে রাজি হতে হলো সবাইকে৷ রাজি হতে হলো ছেলেপক্ষকেও।লাল টকটকে শাড়িতে সাঁজানো হলো মেহুকে। খোঁপাতে বেলিফুলের মালা সহ, হাতে চুড়ি, কানে দুল সহ সুন্দর করেই সাঁজাল জ্যোতি। একবার মৃদু স্বরে বলে বসল মেহুকে,
” এভাবে বিয়ে করাটা কি উচিত মেহু আপু? তুমি তো একজনকে ভালোবাসতে। বাসতে না? তুমি অস্বীকার করলেও আমি তা জানি মেহু আপু। ”

মেহু তাচ্ছিল্য নিয়ে হাসল। জ্যোতিকে শুরু থেকে সবটাই খুলে বলল। টলমলে চোখে ঠোঁট কাঁমড়ে বসে থাকল কেবল। শেষ মুহুর্তে বলল,
” ভাইয়া যেহেতু বলেছ ছেলেটা আমায় ভালোবাসে, ভালো রাখবে।তার মানে ছেলেটা সত্যিই আমায় ভালোবাসে। আর জীবনসঙ্গী তাকেই করা উচিত যে আমাদের ভালোবাসে। যে আমাদের ভালো চায়। ”
জ্যোতি দীর্ঘশ্বাস ফেলল।বলল,

” আমি চাই তুমি সুখী হও। খুব খুব সুখী হও মেহু আপু। ”
মেহু হাসল। চুপচাপ বসে আয়নায় দেখতে লাগল নিজেকে। এই সাঁজটাতো সাঈদের জন্যও হতে পারত? পারত না? খুব বেশি কি ক্ষতি হতো সাঈদের সাথে বিয়েটা হলে? মস্তিষ্ক তৎক্ষনাৎ উত্তর দিল, “হ্যাঁ। ক্ষতি হতো। খুব ক্ষতি হতো।”

কিয়ৎক্ষন পরই জ্যোতি এসে নিয়ে গেল মেহুকে। বসার ঘরে বসে থাকা ছেলেপক্ষের পাঁচজন ব্যাক্তি মেহুর দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল। মেহু অবশ্য তা খেয়াল করল না।টলমলে চোখে নিচের দিকেই তাকিয়ে থাকল সে। জ্যোতি আলতো পায়ে গিয়ে মেহুকে সোফায় বসাল। সম্মুখে বৃদ্ধ মতো কাজী শুরু করলেন নিজে কাজ। মেহু কোনদিক না তাকিয়েই মাথা নত করে বসে থাকল পুরোটা মুহুর্তে।

কান সজাগ হলো শুধু কাজীর কন্ঠে আবিদ হাসান মেঘ নামটা শুনেই। চোখজোড়া মুহুর্তেই বিস্ময়ে বড়বড় হয়ে এল। তার মানে মেঘই সেই ব্যাক্তি? মেঘই সেই ছেলে? মেহু বিশ্বাস করে উঠতে পারল না। আড়ষ্ট স্বরে তিনবার কবুল বলেই চুপ থাকল সে।কিয়ৎক্ষন পরই বিয়ে সম্পন্ন হলো। মেহুকে আবারও নিয়ে যাওয়া হলো নিজের ঘরে। তখনই ছোট বাচ্চা ছেলেটা মেহুর সামনে এল। ঠোঁট উল্টে বলল,

” তুমি তবে মেঘের বউ? ”
মেহু তাকাল। এটা সানশাইন। সে চেনে। মৃদুস্বরে বলল,
” তোমরা তো ঠকালে আমায়। তোমার বাপ যে বলল সে বিয়ে করে নিয়েছে ? অথচ আজ আমায় বিয়ে করে বসল?”
বাচ্চা ছেলেটা উত্তর দিল না। ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকল কিয়ৎক্ষন। তারপর দৌড়ে চল গেল ফের। মেহু ছোটশ্বাস ফেলল কেবল।জানালার ধারে দাঁড়িয়ে রইল উদাস চাহনীতে ঘন্টার পর ঘন্টা।

এখন রাত হলো বেশ। সন্ধ্যার দিকে হসপিটালের সবকাজ ফেলে এসেই বিয়েটা করতে হলো মেঘকে। পরিবারে বাবা-মা , ভাইয়া- ভাবীকে বিষয়টা বুঝিয়ে অতি কষ্টেই রাজি করাতে হয়েছিলো তাকে।তারপর রাজি করিয়েই পরিবার সমেত মেহুদের বাসায় উপস্থিত হয়ে ঘরোয়া ভাবে বিয়েটা সেরে নিল। অবশেষে বিয়েটা হয়ে গেলে ভাবতেই ঠোঁটে হাসি ফুটল। যেভাবেই হোক, আজ থেকে মেহু নামক মেয়েটা যে কেবলই তার সে বিষয়ে সন্দেহ নেই ভেবেই তৃপ্তির শ্বাস ফেলল। জানালাটা মেলতেই চোখে পড়ল ওপাশের জানালায় থাকা মেহুর মুখ।মেঘ হাসল। বলল,

” এত রাত! ঘুমাওনি? ”
মেহু তাকাল। এতক্ষনকার উদাস চাহনী বদলে গেল। চকচকে চাহনীতে তাকিয়ে শুধাল,
” আপনি আমায় মিথ্যে বলেছেন কেন?এটা আপনি জানলে আমি কখনোই বিয়ে করতাম না।”
মেঘ হাসল। বলল,

” কাকে বিয়ে করতে? ”
মেহু ঠোঁট চেপে উত্তর দিল,
” যাকেই হোক, আপনাকে নয়। ”
” কাকে?”
মেহু উত্তর দিল। ত্যাড়া স্বরে বলল,
” আপনি আমার সম্বন্ধে কিছুই জানেন না৷ নেচে নেচে বিয়ে করতে চলে এলেন কেন হুহ?”
মেঘ ভ্রু বাঁকিয়ে বলল,

” যদি বলি সবটুকুই জানি? ”
মেহুর গলাটা হঠাৎ নিভে এল। ভরাট স্বরে শুধাল,
” কিচ্ছু জানেন না। আমি আপনাকে ঠকিয়েছি। আমি অন্য কাউকে ভালোবাসি মেঘ। ”
মেঘ ঠোঁট চওড়া করে হাসল। বলল,

” সমস্যা নেই, প্রথম ভালোবাসা না হলে ও আমি তোমার শেষ ভালোবাসা অবশ্যই হবো মেহু। ভালোবাসা দিয়ে ঠিক সব ভালোবাসা আদায় করে নিব একদিন। ঐ যে বলে না?ভালোবাসা দ্বারা সব সম্ভব? একদিন ঠিক জায়গা হয়ে যাবে তোমার মনে। ”
মেহু অবাক হলো। তাকিয়ে থাকল কেবল ছেলেটার দিকে।এতোটা আত্মবিশ্বাস? এতোটা দৃঢ়তা?সত্যিই জায়গা করে নিতে পারবে? সত্যিই সবটুকু ভালোবাসা আদায় করে নিতে পারবে? এতোটাই সহজ?

এক মুঠো প্রণয় পর্ব ৩৫

[ সত্যি বলতে, আমি বরাবরই ছেলেমানুষী ধরণের, দায়িত্বজ্ঞানহীন ব্যাক্তি। এটা আমার পরিবার হতে বন্ধুবান্ধব সবাই জানে। যেদিন যে পড়া পড়ব বলি সেদিন সে পড়াটা পড়ি না, যে কাজ করব বলি সে কাজ সেদিন করা হয় না। বলতে গেলে কোনকিছুই নিয়ন্ত্রিত ভাবে, নিয়ম করে ঘটে না আমার। আমি এমনই। গল্পটা নিয়মিত দেওয়ার কথা বলেও আমি নিয়মিত হতে পারিনি মূলত এই অভ্যাসের জন্যই।এটাকে নাটক ভাবলে নাটকই ভেবে নিন। নিষেধ নেই। আমিও এই বদ অভ্যাসে আর দীর্ঘসময় আপনাদের জড়িয়ে রাখব না।কোনকিছু শুরু করলে শেষ করতে হয় তাই শেষ করছি ভেবে নিন।আগামী পর্বটা পরশুই পাবেন। রেসপন্স করবেন আশা করি। আর হ্যাঁ,এই পর্যন্ত যত অপেক্ষা, যত ভুল করেছি, সকল ভুলত্রুটি ক্ষমা করে দিবেন ছোটবোন মনে করে। ]

এক মুঠো প্রণয় শেষ পর্ব (শেষ অংশ)