মেঘের আড়ালে রোদ পর্ব ২১

মেঘের আড়ালে রোদ পর্ব ২১
লেখিকা Sabihatul Sabha

দিন গিয়ে রাত নামছে,রাতের পর সকাল। দেখতে দেখতে এক মাস চলে গেছে।
একটা মেয়ের ও সন্ধান পাওয়া যায়নি। আস্তে আস্তে চাপা পড়ে গেল সেই ঘটনা আর মেয়ে গুলো।
মহুয়া খেয়াল করল হুট করে মেয়েগুলোর মা বাবা আত্মীয় স্বজনরা স্কুলে এসে ভাংচুর, চিৎকার চেচামেচি করা বন্ধ করে দিলো। স্কুলের আশেপাশেও দেখা যায় না তাদের।

পলাশের সাথে মহুয়ার বন্ধুত্ব হয়ে গেছে। মহুয়া, মাইশা আর পলাশ এক সাথে ফুচকা খাওয়া,ক্লাস ফাঁকি দিয়ে ঘুরতে যাওয়া শুরু করলো।
দিন দিন মহুয়া ভীষণ ভাবে দূর্বল হয়ে পরল পলাশের প্রতি।
একদিন মহুয়া কে মাইশা ফোন দিয়ে বললো জলদি সুন্দর করে রেডি হয়ে স্কুলের পেছনে পুকুর পাড়ে চলে আয়।
মহুয়াঃ কেন.?

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন হউন

মাইশাঃ আল্লাহ মহু তুই জানিস না! আজ তো পলাশ ভাইয়ার জন্মদিন।
নিমিষেই মনটা খাারাপ হয়ে গেল মহুয়ার। আজ পলাশের জন্মদিন আর মহুয়া এটা জানে না৷ পলাশ একবার ওকে বললোও না! মন খারাপ করে স্কুল ড্রেস পড়ে নিল।
স্কুলে আসতেই কিছুটা অবাক হলো মহুয়া। রাস্তায় আশার সময় খেয়াল করল কিছু ছেলে মিটিমিটি হাসছে। কেউ বা ভাবি বলে সালাম দিচ্ছে।

মহুয়া ভয়ে মাথা নিচু করে রাখল।
আজ বুঝলো মাইশা ভুল বলে না মহুয়া আসলেই ভীষণ ভীতু। এমনিতেই কয়েকদিন আগে এতোগুলা মেয়ের কিডন্যাপ হয়ে যাওয়া তারপর আজ অচেনা ছেলেদের এমন আচরণে ভয়ে হাত পা কাঁপছে। দ্রুত পা চলাতে গিয়েও মনে হচ্ছে পা চলছে না।

স্কুলে এসে মাইশা কে দেখে হাত চেপে ধরলো।
মাইশাঃ কি হয়েছে মহু.? এতো ভয় পেয়ে আছিস কেন.?
মহুয়াঃ পানি দে..
মাইশা বোতল বের করে পানি দিল।

মহুয়া পানি খেয়ে ক্লাসের দিকে যেতেই মাইশা ওর হাত শক্ত করে ধরে বললো,’ ভয় কেন পেয়ে আছিস.? মামি কিছু করেছে.? মিম কিছু বলেছে..? শুধু বল আজ আমি একটা কেও ছাড়বও না কি পেয়েছে ওরা।
মহুয়াঃ তেমন কিছু না। ক্লাসে চল..
মাইশা মহুয়াকে জোর করে স্কুলের পেছনে নিয়ে গেলো। কিছু ছেলে মেয়ে ঘিরে আছে। মাইশা মহুয়ার দিকে তাকিয়ে ইশারা করলো সামনে যা।

মহুয়া কিছুই বুঝতে পারছে না এখানে হচ্ছেটা কি..??
মহুয়া সামনে যেতেই একটা কেক দেখলো। চারপাশে গোলাপের পাপড়ি ছড়িয়ে আছে। মহুয়া সামনে যেতেই গাছ থেকে আরও গোলাপের পাপড়ি পড়তে শুরু করলো ওর মাথার উপর।
মহুয়া কিছু বুঝে উঠার আগেই চশমা পড়া বোকাসোকা পলাশ ওর সামনে এক গুচ্ছ গোলাপ থেকে একটা গোলাপ নিয়ে ওর সামনে হাঁটু গেড়ে বসলো।

মহুয়ার মনে হলো সব স্বপ্ন!! আসলেই কি স্বপ্ন..? নিজের হাতে চিমটি কাটলো। না সবটা সত্যি..
সেদিন পলাশের সেই প্রপোজে লজ্জায় মিইয়ে পড়া মহুয়া সম্মতি দেয়। শুরু হয় এক নতুন অধ্যায়।
তাদের ভালোবাসা চলতে থাকে, সম্পর্ক আস্তে আস্তে ভীষণ গভীর হয়। কিন্তু পলাশ কখনো মহুয়ার গায়ে বাজে ভাবে হাত দেয়নি। শুধু ভালোবেসে কখনো হাতে ফুলের মালা পড়িয়ে দিয়েছে আবার কখনো শক্ত করে হাতটা ধরে রাস্তা পাড় হয়েছে, কখনো বা যত্ন করে হাতে চকলেট গুঁজে দিয়েছে।

মহুয়া পলাশের এই আচরণে ভীষণ মুগ্ধ।
চারমাস পেড়িয়ে গেছে ওদের সম্পর্কের।
আজকাল মামির সাথে হাঁটতে বসতে ঝগড়া হচ্ছে, মিম কখনো সখনো মহুয়া গায়ে হাত তুলছে। আজ তো সকাল, দুপুর দুই বেলাই খাবার পায়নি। রাতে সাইফ মহুয়াকে সব সময় নিজের সাথে খেতে বসায়। দিনে অফিসে থাকে বাড়ির খবর সে কিছুই জানতে পারে না।

রেনু বেগম আজ মুরশেদ তালুকদার বাড়িতে আসতেই মহুয়াকে নিয়ে নালিশ দিতে শুরু করলো।
মুরশেদ তালুকদার বউয়ের কথায় পাত্তা না দিয়ে রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে এসে মহুয়াকে ডাকলেন৷
রেনু ভাবলো হয়তো মহুয়াকে বকবে বলে ডেকেছে। মনে মনে অনেক খুশি হলো৷ কিন্তু উনার খুশি বেশি সময় টিকল না মুরশেদ তালুকদার মহুয়াকে পড়াশোনার বিষয়, এটা সেটা জিজ্ঞেস করে ভালো করে পড়তে বললো।

রেনু শুধু অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো মহুয়ার দিকে। মহুয়া দেখে ঘা জ্বালানো হাসি দিয়ে নিজের রুমে চলে গেলো।
রেনু অবাক হয়, যেই মেয়ে চোখ তুলে তাকাত না আজ সে মুখে মুখে তর্ক করছে, উনাকে টেক্কা দিয়ে চলছে। তাহলে কি সময়ের সাথে মানুষ পরিবর্তন হয়.?? ধৈর্য ধরতে ধরতে এক সময় তা ভয়ংকর রুপ নেয়.?? আজকাল মহুয়াকে দেখে চিন্তেই পারে না।

মুরশেদ তালুকদার সাইফকে ডেকে মহুয়ার দিকে নজর রাখতে বললো। এতোদিন টেনশন না হলেও এখন মহুয়া বড় হয়েছে। দেখতে পরীর মতো যে কোনো ছেলে এক দেখায় প্রেমে পড়বে। এমন মেয়েদের নিয়ে অবিভাবকের একটু টেনশন বেশিই থাকে। উনি সব সময় দোয়া করেন কোনো কাল নজর যেন মহুয়ার উপর না পড়ে। মেয়েটা দেখতে ওর মায়ের মতো সুন্দরী হয়েছে।
একদিন সন্ধ্যার কথা হুট করে সাইফ সন্ধ্যায় বাসায় চলে আসলো। খুব চিন্তিত হয়ে মিম আর মহুয়ার কথা রেনুকে জিজ্ঞেস করলো।

পড়ের দিন সাইফ ওদের স্কুলে দিয়ে আসল। আর মিম কে কলেজে।
মহুয়া স্কুলে গিয়ে শুনতে পেল গ্রাম থেকে দশজন মেয়ে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। সে সেদিন ভীষণ ভয় পেয়ে ছিলো৷
পলাশ ওকে বুঝালো ভয় পাওয়ার কোনো কারন নেই ওর পাশে সব সময় পলাশ আছে। ওর কিছু হবে না।
মহুয়া সেদিন পলাশের হাত শক্ত করে ধরে রেখে ছিলো।

ঠিক এই ঘটনার এক সপ্তাহ পর মাইশাকে আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না । মহুয়া ভীষণ কান্না শুরু করলো। মাইশা একমাত্র ওর বান্ধবী ছিল, শুধু বান্ধবী নয় বোন ছিল। পুলিশ এসে মহুয়াকে মাইশার বিষয় অনেক জিজ্ঞাসা বাদ করল। মহুয়া শুধু পাথরের মতো বসে ছিলো। কি হচ্ছে এই গ্রামে..? কে করছে এই কিডন্যাপ.? কে এই কিডন্যাপার.? পুলিশ এতো চেষ্টা করেও কেন খুঁজে বের করতে পারছে না.?

পলাশ সারারাত ফোনে ওকে বুঝালো। মাইশা ফিরে আসবে মিথ্যা আশা দিল। এভাবে কেটে গেল একমাস। গ্রামের মানুষ এখন ভীষণ সচেতন। তারা নিজেদের মেয়েদের একা ঘর থেকে বের হতে দেয় না। কারন কিডন্যাপার শুধু কিশোরী মেয়েদের কিডন্যাপ করছে।

এর মধ্যে মহুয়া শুনতে পায় ওর বিয়ে ঠিক করেছে মুরশেদ তালুকদার।
মহুয়া আকাশ থেকে পড়ে। বলা নেই কওয়া নেই কিসের বিয়ে!.? সেই দিন অনেক কেঁদে ছিল মহুয়া। ওর সাহস নেই যে মুরশেদ তালুকদারকে নিষেধ করবে বা পলাশের কথা বলবে।
রাতে পলাশকে সবটা বলতে পলাশ হঠাৎ বললো, ” চলো আমরা এই গ্রাম ছেড়ে বহুদূরে পালিয়ে যাই!”
মহুয়াঃ পালিয়ে যাওয়া ঠিক হবে না। আমি মামাকে তোমার কথা বলি।

পলাশ ভয় পেয়ে যায়, ভয়ে বলে উঠে,’ মহুয়া তুমি আমাকে ভালোবাস না!! আমি তো গরিব একটা ছেলে আমার কাছে তোমাকে দেওয়ার মতো ভালোবাসা ছাড়া আর কিছু নেই তোমার মামা আমাদের সম্পর্ক কখনো মেনে নিবে না। আরও ইনিয়েবিনিয়ে হাজার কথা বলতে শুরু করলো। বোকা মহুয়া তাই বিশ্বাস করে নিল৷

মহুয়ার বিয়েতে সাইফ কোনো কিছুর বাদ রাখল না। যদিও এই বিয়ের বিরুদ্ধে সাইফ৷ পাত্রের আগেও একটা বউ ছিল। বয়স ৪০ হবে। বাবা কোন আক্কেলে এমন লোকের সাথে মহুয়ার বিয়ে ঠিক করলো..? কিছুই বুঝতে পারল না! অনেক ঝগড়াও হয়ে গেছে এই নিয়ে মুরশেদ তালুকদারের সাথে কিন্তু উনি উনার সিদ্ধান্ত অনর। মহুয়াও কিভাবে রাজি হলো! সাইফ অনেক বার মহুয়াকে জিজ্ঞেস করেছে কিন্তু এই মেয়ে প্রতিবার খুশি মনে রাজি বলেছে। সাইফের মনে প্রশ্ন জাগে মুরশেদ তালুকদারও কি রেনুর মতো মহুয়াকে কখনো দেখতে পারত না!??

শুধু মুখে আদর,ভালোবাসা দেখাত.? কিন্তু কেন.? এর পেছনে কিসের রহস্য.? আর এতো পাত্র থাকতে এই লোকের সাথেই কেন বিয়ে ঠিক করলো.? মহুয়া যথেষ্ট সুন্দরী, শুধু যথেষ্ট নয় আগুন সুন্দরী। ওর জন্য পাত্রের অভাব পড়ত না!

এই সকল প্রশ্ন মাথায় নিয়ে সাইফ বিয়ের আয়োজন করে আর অন্য দিকে নিজের বন্ধুদের কল দিয়ে বলে। এই বুইড়া বেডা যখন বিয়ে করতে লোকজন নিয়ে আসবে রাস্তায় গাড়ি ভেঙে ওর মাথা ফাটিয়ে হসপিটাল ভর্তি করবি। তারপর আমি মুরশেদ তালুকদারের মুখোমুখি দাঁড়াবো। মহুয়াকে আমি সব সময় নিজের বোনের মতো দেখেছি। পুরনো সব স্মৃতি চোখের সামনে ভেসে উঠলো। সব সময় মহুয়ার রাগ, অভিমান, কষ্ট সাইদ বুঝত কিন্তু সাইদ বিদেশ চলে যাওয়ার পর থেকে সাইদের জায়গাটা সাইফ নিয়ে নিল। মহুয়াকে নিয়ে ফুচকা খেতে যাওয়া প্রতি সপ্তাহ, প্রতিদিন নিয়ম করে চকলেট, আইসক্রিম নিয়ে আশা।মহুয়া কি লাগবে সব ইচ্ছে পূরণ করা একজন বড় ভাই হিসেবে সব সময় চেষ্টা করেছে। আর এখন বড় ভাইয়ের কর্তব্য পালনও করবে।

বিয়ের দিন চলে আসলো৷ মহুয়াকে খুব সুন্দর করে সাজিয়ে দিয়ে গেল পার্লারের মেয়েরা। মিম এসে ঘা জ্বালানো কিছু কথা বলে হাসতে হাসতে চলে গেলো। রেনু বেগম ভীষণ খুশি আপদ চোখের সামনে থেকে দূর হচ্ছে। সাথে টাকাও লাগছে না আরও পাচ্ছে। ওই লোক পাঁচ লাখ টাকা দিয়েছে মুরশেদ তালুকদারের হাতে বিয়ের পর বলেছে আরও দিবে। আর এই বাড়ি ঘর জায়গা সম্পত্তি সব এখন উনাদের।

সাইফ এসে একবার দেখে গেল। মহুয়ার মাথায় হাত রেখে বললো” বড় ভাই এখনো তোমার পাশে আছি, এমন কিছু হতে দিব না যা তোমার জীবনে অন্ধকার নেমে আসে।”
খুব সাবধানে বাড়ির পেছনের দরজা দিয়ে বের হয়ে গেল মহুয়া। লেহেঙ্গা শক্ত করে ধরে দৌড় লাগালো। পায়ের জুতা হাতে নিয়ে দৌড়াচ্ছে বউ বেসে কি অপূর্ব সুন্দরী এক নারী। আজ মহুয়ার কী ভাগ্য রাস্তায় তেমন মানুষও নেই। সুনশান রাস্তা পেয়ে মহুয়ার দৌড় আরও বেড়ে গেল। নিশ্চয়ই এতোক্ষনে বিয়ে বাড়িতে মহুয়ার অনুপস্থিতি সবাই বুঝে ফেলেছে। ওকে খুঁজতে সবাই বের হয়ে গেছে৷ কিন্তু বেচারি কি জানে ওর না হওয়া বর এখন হসপিটালে ICU তে।

এরি মধ্যে সামনে এসে দাঁড়ালো একটা বাইক। মহুয়া ভয়ে চোখ বন্ধ করে নিয়ে ছিলো। আস্তে আস্তে চোখ খুলে তাকালো সামনে পলাশকে দেখে অবাক হয়ে তাকালো। আজ পলাশ কে চিনা যাচ্ছে না। সেই বোকাসোকা ছেলে লাগছে না। কালো পাঞ্জাবি সাথে চুলগুলো কি সুন্দর সিল্ক কপালে এসে পড়ে আছে।হাতে দামী ঘড়ি,সাথে বাইক মহুয়ার কাছে স্বপ্নের রাজপুত্র লাগছে।

পলাশঃ জলদি উঠ মহুয়া সুন্দরী।
ধ্যান ভাঙলো মহুয়া।
পেছনে তাকিয়ে দেখলো সাইফ আসছে।
মহুয়া ভয়ে কিছু বলার আগেই এক হাত ধরে বাইকে বসিয়ে দিল পলাশ। হাওয়ার বেগে বাইক নিয়ে সাইফের চোখের আড়াল হয়ে গেল।

বাইক থেকে ট্রেন, ট্রেন থেকে বাস তারপর টেক্সি করে আসলো একটা জায়গায়। মহুয়া অসুস্থ হয়ে গেছে এতো বড় জার্নিং করে। ৯ ঘন্টার পথ।
পলাশ মহুয়ার হাত শক্ত করে ধরে প্রবেশ করলো এক নিষিদ্ধ জায়গায়। ইসস বোকা মহুয়া বুঝতেই পারলো না ওর সাথে কি হতে যাচ্ছে!!।

পলাশ এখানে এসেছে ওর খালার থেকে দোয়া আর পারমিশন নিতে। সেই ছোটো থেকে বড় হয়েছে খালার কাছে। আজ জীবনের এতো বড় সিদ্ধান্ত নিবে খালার দোয়া তো অবশ্যই লাগবে।
মহুয়া চারপাশে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো,’ পলাশ ভাই জায়গাটা এমন কেন.? সবাই এভাবে তাকিয়ে আছে কেন.? মেয়েদের জামা কাপড় এমন কেন.?

পলাশঃ মাথা নিচু করে রাখ মহুয়া। একদম মুখ থেকে কাপড় সরাবে না।
মহুয়াঃ সবাই আপনার দিকে এভাবে তাকিয়ে আছে কেন.?
পলাশ মুচকি হাসলো। এখানে আসলে সব মেয়েরা পলাশের আশেপাশে ঘুরঘুর করে। বিভিন্ন ভাবে আকৃষ্ট করার চেষ্টা করে। আজ হয়তো সাথে এক নতুন মেয়ে দেখে অবাক হয়েছে তাই এভাবে তাকিয়ে আছে।
পলাশ দরজা দিয়ে ভেতরে ঢুকলো। এক মধ্যে বয়সী মহিলা লাল শাড়ি পড়ে বসে আছে। ঠোঁটে কড়া লাল লিপস্টিক মুখে ভাড়ি মেকআপ, মুখে ভেতর পান। পলাশকে দেখেই ঠোঁটের কোনে হাসি রেখে বলে উঠলো, ‘ আমার বাঘের বাচ্চা হঠাৎ না বলে আসলি যে..? .’

পলাশ ইশারায় মহুয়াকে দেখাল। তারপর বললো,’ দেখ তো খালা তোমার বাঘের বাচ্চার চয়েস কেমন.?’
মহিলাটা দুষ্টু হাসি দিয়ে হেলতে দোলতে মহুয়ার সামনে এসে এক টানে মহুয়ার মুখের কাপড় সরিয়ে ফেললো। অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো, ‘ মাশাল্লাহ এই যে পরী নিয়া আইছস, কই পাইলি এই হুরপরী!!??’
পলাশ মুচকি হেঁসে বললো ” আমরা আজ বিয়ে করছি খালা তোমার থেকে দোয়া নিতে আসলাম।
মহুয়া মহিলাটিকে সালাম করতে গেলে পলাশ আঁটকে বলে উঠলো ” মুখে সালাম করো ”

মহুয়া তাই করলো। মহিলাটি মুগ্ধ হয়ে বললো,’ এই যে কোকিলের কন্ঠ। ‘
পলাশ আবারও হাসলো যাক খালার পছন্দ হয়েছে।
~ আমি ফুলবানু এই মহল্লার সরদারনী। তুমি আমাকে ফুলবানু খালা বলে ডাকতে পারো।

মহুয়া শুধু আড়চোখে চারপাশে তাকাচ্ছে। মেয়েদের আকার ভঙ্গি কেমন অদ্ভুত লাগছে।এইগুলো কি পড়ছে.? সব দেখা যাচ্ছে!! চকচকে লিপস্টিক দিয়ে, মুখে মেক-আপ করে, চোখে গাড় কাজল কি উদ্ভুত লাগছে চারপাশের মেয়েদের। মহুয়া পলাশের হাত শক্ত করে ধরতেই ফুলবানু তা দেখে হাসলো৷ যত যাই হোক এই টকটকে আপেল উনি কিছুতেই হাত ছাড়া করবেন না। এই একটা মেয়েই পারবে এই পল্লী মহলকে আরও উপরে নিয়ে যেতে৷ অনেক দামে এই মেয়েকে পেতে চাইবে লোকজন। কিছুতেই হাত ছাড়া করা যাবে না এতো সুন্দরী কে। এর রুপে যেন চারপাশ আলোয় ঝলমলে করে উঠেছে।

ফুলবানু পান চিবিয়ে চিবিয়ে বললো,’ কতো দূর থাইকা আইছস যা ফ্রেস হইয়া ল। আর এই মাইয়ারে একটু বিশ্রাম নিতে দে।
পলাশঃ না খালা আমাদের এখনি যেতে হবে। আমি থাকার জন্য জায়গা আর কাজি কে বলে রেখেছি।
~ যাবি ত এতো তারা কিসের । আগে কিছু খাইয়াল। আমার মহল্লায় গার্লফ্রেন্ড লইয়া আইছস খালি মুখে যাবি.? কিছু খাইয়া তারপর যাবি। এখন বাদ একটু পর বউ হইব। নাকি আমারে আপন মনে করস না.?
ফুলবানুর জোরাজুরিতে রাজি হয়ে গেল পলাশ। মহুয়াকে একটা মেয়ে নিয়ে যেতে চাইলে পলাশ নিজে একটা রুমে নিয়ে গেল। ফ্রেশ হয়ে বিশ্রাম নিতে বলে নিজে অন্য রুমে গেল।

খাবার সাজিয়ে শয়তানি হাসলো ফুলবানু। পলাশ আর মহুয়া আসলো। মহুয়ার ভয় লাগছে সব অচেনা মানুষ, জায়গা সব। শুধু পলাশ একমাত্র পরিচিত । পলাশ মহুয়ার হাত শক্ত করে ধরে আছে যেন ভয় না পায়। পলাশের নিজেরও ভালো লাগছে না মহুয়াকে এখানে বেশিক্ষন রাখতে।এই জায়গা সম্পর্কে ওর থেকে ভালো কে জানে.??
পলাশ ফুলবানুকে বললো,’ তুমিও বস না খালা’

~ না তোরা খা আমি নিজ হাতে বেরে দেই। নতুন বউ বলে কথা আমি নিজ হাতে খাওয়াব।
নতুন বউ শুনে লজ্জায় মাথা নিচু করে নিলো মহুয়া এখনো তো বিয়ে হয়নি।
পলাশ খাবার খাওয়ার মাঝে অনুভব করলো মাথা ঘুড়াচ্ছে সাথে মহুয়ারও। এক পর্যায়ে দুইজন জ্ঞান হারায়।
ওদের দিকে তাকিয়ে ফুলবানু হেঁসে বলে সরি আমার বাঘের বাচ্চা। এতো সুন্দর পবিত্র ফুল নিয়ে এখানে আশা তোর উচিত হয়নাই। এই ফুলের খুশবুয়ে আমার মহল্লা এখন থেকে জমজমাট থাকব।

মেঘের আড়ালে রোদ পর্ব ২১

একজনকে ইশারা করলো পলাশকে সরিয়ে নেওয়ার জন্য।
” এক রুমে আঁটকে রাখবি কয়েকদিন। খেয়াল রাখবি যেন বের না হতে পারে। এই মেয়ের কথা জিজ্ঞেস করলে বলবি, কিছুই জানিনা। আমি যতোদিন না ছাড়তে বলব ছাড়বি না। নিয়ে যা…”

মেঘের আড়ালে রোদ পর্ব ২২