হৃদয়ের স্পন্দন পর্ব ১৭

হৃদয়ের স্পন্দন পর্ব ১৭
নন্দিনী চৌধুরী

সকালের মিষ্টি রোদে ঘুম ভাংলো শুভ্রতার।আড়মোড়া দিয়ে উঠে বসলো বিছানায়।আসে পাশে তাকিয়ে দেখলো।কিছুখনের ভিতরে মনে পরলো কাল তার বিয়ে হয়েছিলো।সে এখন তার শশুড়বাড়িতে আছে।শুভ্রতা পাশে তাকিয়ে দেখলো আরিয়ান নেই।সেদিকে পাত্তা না দিয়ে শুভ্রতা ফ্রেশ হতে চলে গেলো।ফ্রেশ হয়ে একটা হলুদ কালারের জামদানি শাড়ি পরলো।মাথায় ঘোমটা দিয়ে নিচে আসলো।আরিয়ানের মা শুভ্রতাকে দেখে মিষ্টি একটা হাসি দিলো।

আরিয়ানের মা:আরে তুইতো দেখি চলে আসছিস।আমি আরো যাচ্ছিলাম তোকে ডাকতে।কোনো অসুবিধা হচ্ছে নাতো এখানে?
শুভ্রতা:না মা কোনো অসুবিধা হচ্ছেনা।
আরিয়ানের মা:আচ্ছা চল নাস্তা করে নে।আরিয়ান সকাল হতেই থানায় চলে গেছে।বাড়িতে যে নতুন বউ তার খেয়াল নেই।তুই কিছু মনে করিস না মা।
শুভ্রতা:না মা কি যে বললেন না।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

তারপর আরিয়ানের মা আর শুভ্রতা নাস্তা করে নেয়।আরিয়ানের বাবা বাজারে গেছেন সকালে।শুভ্রতা নাস্তা করে রুমে আসে।আরিয়ানের রুমটা অনেক সুন্দর ঘুছানো।আরিয়ানের কয়েকটা ছবি দেয়ালো রাখা।আরিয়ানের ছোট বেলার ছবিও রাখা।শুভ্রতা ছবি গুলো দেখছে আর ভাবছে।
শুভ্রতা:কারো সাথে কারো চেহারার কি এতোটা মিল হতে পারে।এটাকি আসলেই কাকতালিও নাকি এর পিছনে অন্য রহস্য আছে।জানিনা কেন আমার মন বলে আপনি আমার শিশির।কিন্তু আপনি শিশির হলে কেন আমার থেকে দূরে দূরে ছিলেন।কেন এখানে আরিয়ান হয়ে আছেন।আর এই আরিয়ান!আসলে আরিয়ান আপনি নাকি আপনি শিশির।

শুভ্রতা এসব ভাবনার মাঝে ওর ফোনে কল আসে।ফোন হাতে নিয়ে দেখে সাবিনা কল দিছে।সাবিনার সাথে কিছু সময় কথা বলে আরিয়ানের মায়ের কাছে যায়।আরিয়ানের বাবা বাজার করে এনেছেন।শুভ্রতা তার কাছে গিয়ে রান্না ঘরে তাকে রান্নায় সাহায্য করে।আরিয়ানের না করার পরেও শুভ্রতা রান্না করে।
এদিকে,,,

আরিয়ান ওরফে শিশির বসে আছে একটা কফিনের সামনে।কফিনে একটা লাশ এসেছে আজকে সকালে।শিশিরের চোখে পানি চকচক করছে।কিন্তু ছেলে মানুষের তো সবার সামনে কাঁদতে নেই।মেহেদি চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে।আরিয়ান আর মেহেদি বর্তমানে একটা বাড়িতে আছে।আরিয়ানের বিষেশ ইনফর্মার তাকে জানিয়েছিলো আসল আরিয়ানের খোজ।কিন্তু শিশিরদের আসতে বড্ডো দেড়ি হয়ে গেছে।আসল আরিয়ান তাদের ফাকি দিয়ে দূর আকাশে চলে গেছে।আসল আরিয়ানকে কেউ মেরে এখানে কফিনে রেখে গেছে।শিশিররা এসে শুধু এখানে লাশটাই পেয়েছে।

মেহেদি:স.স্যার!
আরিয়ান:অনেক দেড়ি করে ফেললাম আমি মেহেদি অনেক দেড়ি করে ফেললাম।আমার ভাই.আমার ভাইয়কে ওরা মেরে ফেললো মেহেদি মেরে ফেললো।
মেহেদি:স্যার নিজেকে সামলান প্লিজ।আপনি ভেংগে পড়লে অই শয়তানরাতো জিতে যাবে।ওরাতো চায় আপনাকে ভেংগে দিতে।

আরিয়ান:মেহেদি আমার মা তো জানেই না তার যে আরেকটা নাড়িছেড়া ধন এই দুনিয়ায় ছিলো।আর মিসেস ইকবাল তাকে।তাকে আমি কিভাবে জানাবো এই কথা।
মেহেদি:স্যার।
শিশির মেহেদি যখন আসল আরিয়ানকে খুজে এখানে আসে এখানে এসে দেখে যে আসল আরিয়ানের লাস আর সাথে একটা লেটার,,

“বার বার বেচেঁ যে ফিরবি তার আশা রাখিস না শিশির।তুই কি মনে করেছিস তুই আমার চোখ ফাকি দিতে পারবি।তোর বাবার কাছে তোর ভাইকে পাঠিয়ে দিলাম।যদিও তুইতো জানতিস না এটা তোর।ভাই যাক আজকে জানিয়ে দিলাম এটা তোর ভাই।এভার নিজের পরিবারের দিকে নজর দে।আমার কাজে বাধা দিলে এভাবেই একজন একজন করে হারাবি তুই।”

মেহেদি:কিন্তু স্যার ওরা জানলো কিভাবে যে আপনি শিশির?
শিশির:ওদের লোক আমাদের মাঝেই আছে মেহেদি।তাইতো ওরা আমাদের সব পদক্ষেপ জেনে যাচ্ছে।আর আমাদের আগে সব কাজ করে ফেলছে।
মেহেদি:তাহলে স্যার এখন কি হবে?আর স্যার আরিয়ান আপনার ভাই কিভাবে আমি এখনো সেটা বুজতে পারছিনা।

শিশির:বলছি আমি,,,,
আমার মায়ের যখন প্রথম বাচ্চা হয় মানে আমি হই তখন আমার মায়ের অবস্থা অনেক খারাপ ছিলো।আমার মায়ের বিয়ের ৪বছরেও বাচ্চা হচ্ছিলোনা।কিন্তু একটা সময় আমি আমার মায়ের গর্ভে আসি।কিন্তু ডাক্তার জানায় যে আমার মায়ের এই প্রেগ্নেন্সিতে অনেক সমস্যা দেখা দিতে পারে।আর সেরকমই হয়।মায়ের শরীল ৫মাসে পরতেই অনেক সমস্যা দেখা দেয়।সেই সমস্যা নিয়েই মা আমাকে পেটে রাখে।কিন্তু ডেলিবারির সময় আমার পজিশন উলটা ছিলো।তাই আমার আর মায়ের অনেক রিস্ক ছিলো।

মায়ের অবস্থা খুব খারাপ হয়ে যাচ্ছিলো।কিন্তু আল্লাহর রহমতে আমি মা দুজনেই সুস্থ ভাবে বেচেঁ আসি।তখন ডাক্তার আমার মাকে জানায়নি যে আমার সাথে সাথে আরো একটা ছেলে বেবি মায়ের হয়েছে।মানে টুইন বেবি হয়েছে মায়ের।আমাকে মায়ের কোলে পরেরদিন সকালে দেওয়া হলেও আমার ভাইকে দেওয়া হয়নি।আমার মা বাবাকে বলাই হয়নি আমার ভাইয়ের কথা।আর আমার সেই ভাই আর কেউ না আরিয়ান।আরিয়ানকে মিস্টার আর মিসেস আহমেদ দত্তক নিয়েছিলো ওই হাসপাতাল থেকে।
মেহেদি:কিন্তু আরিয়ান ওনাদের কাছে গেলো কিভাবে আর ওই হাসপাতালের ডাক্তার আরিয়ানের কথা কেন জানালেন না আপনার মা বাবাকে।

শিশির:ডাক্তারকে কেউ এমনটা করতে বলেছিলো তার বদলে টাকা পেয়েছিলো সে।আমাকেও নাকি এভাবে সরিয়ে দিতে বলা হয়েছিলো।কিন্তু আমি হবার পরেই নার্স আমাকে আমার বাবার কাছে দিয়ে দিয়েছিলো তাই আমাকে সরাতে পারেনি।

আরিয়ান আমার ভাই সেটা আমি নিজেও জানতাম না কিন্তু শিশির থাকা অবস্থায় হেডকোয়াটার থেকে বাবার ফাইলটা যখন নেই তখন আমি বাবার ফাইলটা থেকে অনেক কিছু জানতে পারি।এটাও জানতে পারি কে এসবের পিছনে আছে।ইকবাল মাহমুদের কাছেই বড় হয়েছে আরিয়ান।ও একজন পুলিশ অফিসার হয়েছে।আরিয়ান ঈ এই নারী পাচার কারী চক্সটাকে ধরার কাজে লেগেছিলো।

কিন্তু একদিন হঠ্যাৎ করেই আরিয়ান নিখোঁজ হয়ে যায়।হেডকোয়াটার থেকে ইকবাল স্যারকে জানানো হয় আরিয়ান একটা গোপন কেসে গেছে।কিন্তু আসলেতো আরিয়ান নিখোঁজ ছিলো।এরপর সেদিন যেদিন আমরা ফিরোজকে ধরতে যাই।সেদিন প্ল্যানিং ছিলো আমার।যে আমি ফিরোজের ফায়ারিং এ মারা যাবো আর আরিয়ান হয়ে আবার ফিরে আসবো।হেডকোয়াটার থেকে আমি সব ঠিক করে নিয়েছিলাম।সব প্ল্যানিং মতোই হলো।আরিয়ান হয়ে ফিরে আসলাম ইকবাল স্যারের কাছে।জয়েন হলাম থানায় শিশিরের পদে।তারপর তোমাকে সব জানালাম।

মেহেদি:এবার বুজতে পারছি স্যার।সবটা এবার ক্লিইয়া।শুভ্রতা ম্যাম এর মামা আজমির যাদের হয়ে কাজ করতো তারা ছিলো ফিরোজ।আর ফিরোজ যাদের হয়ে কাজ করে তারা হলো আপনার শত্রু।আজমির কে তো আমরা জেলে রেখেছি।কিন্তু ফিরোজকে কেউ বের করে নিয়ে গেছে।
শিশির:হ্যা আর তাতে জেলের কেউ জরিতো আছে।তবে এসবের সমাপ্তি খুব তাড়াতাড়ি আমি করতে চলেছি খুব তাড়াতাড়ি।

রাতে,,,,
রাতে আরিয়ান বাসায় আসলো।সারাদিনের এতো ক্লান্তি তার উপর আসল আরিয়ানের মৃত্যু সব মিলিয়ে একদম চুপসে গেছে আরিয়ান।আরিয়ান বাসায় আসা মাত্র ওর মা ওর কাছে এগিয়ে আসলেন।
আরিয়ানের মা:কিরে বাবু তোর চোখ মুখ এমন লাগছে কেন?
আরিয়ান মায়ের কথায় কি বলবে জানেনা।এই মা যখন জানতে পারবে যে তার আরিয়ান আর নেই তখন কি হবে।আরিয়ান মাকে জরিয়ে ধরে বলে,

আরিয়ান:কিছুনা মা একটু ক্লান্ত।তুমি কি খেয়েছো।শুভ্রতা খেয়েছে?
আরিয়ানের মা:হ্যা খেয়েছি।কিন্তু শুভ্রতা তোর জন্য অপেক্ষা করছে।
আরিয়ান:আচ্ছা মা। তুমি তাহলে এখন ঘুমাও বাবা ঘুমিয়েছে।
আরিয়ানের মা:হ্যা।আচ্ছা যা রুমে যা।

আরিয়ান রুমে চলে আসলোশুভ্রতা বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে।বাহিরে বৃষ্টি হচ্ছে।শুভ্রতা বৃষ্টি উপভোগ করছে।আরিয়ান এসে সোজা ওয়াশরুমে চলে যায়।রুমে কারো আসার শব্দ পেয়ে শুভ্রতা রুমে এসে দেখে বিছানায় গাড়ির চাবি মোবাইল ওয়ালেট পড়ে আছে।শুভ্রতা সেগুলো গুছিয়ে রাখে।কিছু সময় পর আরিয়ান গোসল করে রুমে আসে।শুভ্রতা তখন বিছানায় বসা।শুভ্রতাকে দেখে আরিয়ান বলে,

হৃদয়ের স্পন্দন পর্ব ১৬

আরিয়ান:আমার জন্য অপেক্ষা করবেনা।আমার আসতে রাত হয় অনেক।খেয়ে নেবে মা বাবার সাথে।
শুভ্রতা:আপনি এতো রাত করে আসেন।না খেয়েই নাকি ঘুমিয়ে যান।এতে তো আপনার শরীল খারাপ করবে।দেখুন আমি আপনাকে ভালোবাসিনা বা স্বামী হিসাবে মানতে সময় লাগবে কিন্তু আমি একজন মানুষ।আর একজন মানুষ হয়ে কাউকে এভাবে থাকতে দেখতে পারবোনা।তাই আপনি আসলে আপনার সাথেই আমি খাবো।

আরিয়ান আর কিছু না বলে চুপচাপ বসে পরলো খাটে।শুভ্রতা নিচে গিয়ে খাবার গরম করে নিয়ে আসলো।এসে দেখে আরিয়ান ঘুমিয়ে গেছে।শুভ্রতা গিয়ে দুইবার ডাক দিলো কিন্তু উঠলোনা।অনেক ক্লান্ত থাকায় গভীর ঘুমে আছে।শুভ্রতা খাবার ঢেকে রেখে আরিয়ানের পাশে বসলো।আরিয়ান ঘুমের ঘোরে বীড়বীড় করে বললো,

“সরি শুভ্রতা আমি সরি।আমি তোমাকে ইচ্ছা করে দূরে রাখছিনা।আমি চাইলে তোমাকে কাছে আনতে পারছিনা।পারছিনা তোমাকে সত্যিটা বলতে।আমি হেল্পলেস শুভ্রতা।আমি হেল্পলেস।আমি একজন ভালো ভাই হতে পারলাম না।পারলাম না ভালো ছেলে হতে।”
শুভ্রতা আরিয়ানের কথাগুলোর মানে কিছুই বুজতে পারছেনা।তবে এটা সে বুজতে পারছে এই আরিয়ান যে কতটা রহস্যময়।

হৃদয়ের স্পন্দন পর্ব ১৮