হৃদয়ের স্পন্দন পর্ব ২১

হৃদয়ের স্পন্দন পর্ব ২১
নন্দিনী চৌধুরী

আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল ঝারছে শুভ্রতা।আর তার পাশে দাঁড়িয়ে শার্টের বোতাম লাগাচ্ছে শিশির।শাওয়ারে বেশ জ্বালিয়েছে সে শুভ্রতাকে।ভালোবাসা মিশ্রিত জ্বালানো যাকে বলে।শিশির শুভ্রতাকে আরেকটু জ্বালানোর জন্য বলতে লাগলো,
শিশির:শুভ্রতা তুমি তো একটা রাক্ষসি।দেখো আমাকে নখের আচড় দিয়ে কি করছো।ইসসস জ্বলছে এখনো।
শিশিরের এতোটুকু কথাই যথেস্ট ছিলো শুভ্রতাকে ফের রাগানোর জন্য।শুভ্রতা শিশিরের দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে বলে,

শুভ্রতা:আমি রাক্ষসি হলে আপনি রাক্ষস রাজ রাবণ।আমাকে বলছেন নখেড় আচর দিয়েছি আর আপনি,আপনি এইগুলো কি করেছেন হ্যা।এই দেখেন আমার গলার ধার এখানে লাল করে দিয়েছেন কামড়ে আর এইযে এই গালের এদিকেও কামড়ের দাগ।আমি এখন কিভাবে যাবো নিচে সবার সামনে হ্যা।উত্তর দেন কিভাবে যাবো।
শুভ্রতার কথা শুনে শিশির শুভ্রতার কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে,
“ঢাকার দরকার নেই সবাইকে তোমার স্বামীর দেওয়া লাভ বাইট দেখাবা।?”
শুভ্রতা:নির্লজ লোক কথাকার।কি সব বলছেন এগুলো।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

শিশির:পাগলি লজ্জা নারীর ভূষন পুরুষের নয়।নারীকে প্রতি মূহূর্তে লজ্জা ফেলা পুরুষের কাজ।আর সেই নারী যদি হয় নিজের স্ত্রী তখন লজ্জা দেওয়ার পরীমান বাড়িয়ে দিতে হয়।আর তুমি যতবার লজ্জা লাল হবে ততোবার আমি দুইটা ফ্রেশ লাল লাল টোমেটো খেতে পারবো।ইউ নো ইউর চিকস লাইক এ টামাটার।হোয়েন ইউ আর ব্লাসিং।সো এখন জলদি নিচে চলো।নাহলে সবাই ভাব্বে আমরা বিয়ের বাসর এখন আবার সারছি।

শিশির কথাটা বলে শার্ট পড়ে হাতে ঘড়ি লাগিয়ে নিচে চলে যায়।আর শুভ্রতা আবার লজ্জা পেয়ে তৈরি হতে থাকে।শুভ্রতা একটা কনসিলার আর কারেক্টর দিয়ে লাল হয়ে যাওয়া জায়গা গুলো শরিয়ে দেয়।তারপর চুল আচড়ে ঘোমটা দিয়ে নিচে চলে আসে।

সাবিনা আর মিসেস ইকবাল মিলে রান্না করেছে।আজ এতোদিন পর তাদের পরিবার এক হয়েছে।মৌ মেহেদি হাসান চলে গেছে।ওদের কাজ আছে বলে।সাবিনা থাকতে বলেছিলো কিন্তু থাকেনি।খাবার টেবিলে সাবিনা চাঁপা মিসেস ইকবাল খাবার সাজাচ্ছেন।ইকবাল সাহেব এসে টেবিলে বসলেন।মহুয়া মায়ের হাতে হাতে সাহায্য করছে।শিশির শুভ্রতাও চলে আসে।সবাইকে খাবার টেবিলে বসিয়ে খাবার বেড়ে দিচ্ছে সাবিনা আর মিসেস ইকবাল।বেড়ে দিয়ে তাড়াও খেতে বসে পরে।খাওয়ার এক মমেন্টে শুভ্রতার কাটা ঠোঁটের কোণায় মসলা লেগে যায় আর ও শব্দ করে ওঠে,

আউচ!!
সাবিনা:কি হলো শুভ্রতা?
মহুয়া:ব্যাথা পেলা নাকি?
শুভ্রতা:না না অই ঠোঁটটা কেটে যাওয়ায় মসলা লাগাতে একটু জ্বলছে।তোমরা চিন্তা করোনা।
শিশির ভালোই বুজতে পারছে আসল ব্যাপারটা তাই ও চুপচাপ খাচ্ছে।শিশির খাওয়ার মাঝে শুভ্রতার পায়ে পা দিয়ে স্লাইড করছে।শিশিরের অপজিটে বসেছে শুভ্রতা মহুয়া আর চাঁপা।শুভ্রতা ঠোঁটে হাত রেখে শিশিরের দিকে তাকাচ্ছে শিশির সেটা দেখে হাসছে এর মাঝেই চাঁপা চিৎকার দিয়ে উঠে,
চাঁপা:ওরে মা গোওওওওও!! আম্মা গোওওওওও!! আমার পায়ে একটা ইন্দুর মনে হয় কামাড়াইতাছে গোওওওওও।

চাঁপা চিৎকারে সবাই ভড়কে যায়।শুভ্রতা মাথা নিচু করে দেখে শিশির চাঁপা পায়ে গুতা দিচ্ছে।এটা দেখে শুভ্রতা হেসে দেয় আর বুজতে পারে শিশির চাঁপাকে শুভ্রতা ভেবে এসব করছে।এভার শুভ্রতাও চিৎকার করে বলে,
শুভ্রতা:আম্মু গোওওওও কত বড় ইন্দুর।বাপরে কি কালা ইন্দুর রেএএএএএ।
শুভ্রতার চিৎকারে শিশির এভার নিচে তাকালো আর তাকিয়ে যা দেখলে তাতে ওর বিষম উঠে গেলো।শিশির কাশতে শুরু করে দিলো।লজ্জায় শেষ ও।ও কিনা চাঁপাকে শুভ্রতা ভেবে।ইসসসস এখন সবাই জানলে কি ভাবব্বে।

সাবিনা:ইঁদুর আসলো কই থেকে বাড়িতে?
শুভ্রতা:আরে আম্মু আজকাল ইঁদুরের কোন ফাকা দিয়ে ডুকে যায়।তবে এউ ইঁদুর তো বেশ বড় ইঁদুর।একদম বিলাইতী ইঁদুর।
শিশিরের দিকে আড়চোখে তাকিয়ে কথা গুলো বলছে শুভ্রতা।
সাবিনা:কালকেই তাহলে ইঁদুর ধরার জাল কিনে আনাতে হবে।
শুভ্রতা:হ্যা মা তাই করো।বলাতো যায়না বিয়্যাইত্তা ইঁদুর।আবার কার পায়ে গিয়ে কামড় দেয়।
চাঁপা:ইন্দুরটাকে পাইলে একটা আছাড় মারমু।কত্ত বড় কইলজা আমার পায়ে আইয়া কামড়ায়।
শুভ্রতা:হ্যা একদম ধরে আছার দিবি জোরসে।

শিশির এই সব কথা শুনে মাথা নিচু করে শুনে যাচ্ছে।লজ্জায় কিছু বলতে পারছেনা।খাওয়া দাওয়া শেষ করে যে যার যার রুমে চলে আসে।
শুভ্রতা রুমে এসে হাহা করে হাসছে ওকে এভাবে হাসতে দেখে শিশির ভ্রু কুচকে বললো,
শিশির:এভাবে হাসতেছো কেনো।হাসের মাংসো কি আজকে বেশি খেয়েছো নাকি।
শুভ্রতা:হাসের মাংস রান্না করলেতো খাবো।আর হাসছি এই জন্য আপনি আর ইন্দুর।আল্লাহ?ইসসস জোস জোস।

শিশির:দেখো এতো হাসার কিছু নাই।ও,ওটাতো একটা মিস্টেক ছিলো।আমি ভেবেছিলাম ওটা তোমার পা।তাইতো ওমন করছি।আমি কি জানতাম নাকি যে ওটা চাঁপার পা।জানলে তো আর করতাম না।
শুভ্রতা:হ্যা হ্যা জানলে তো আর করতেন না।কালা ইন্দুর?।
শিশির:দেখো আমাকে কালা ইন্দুর বলবানা।তুমি জানো কলেজ লাইফে আমি কত মেয়ের ক্রাশ ছিলাম।আমার জন্য কত মেয়ে পাগল ছিলো।এখনো যদি কাউকে পাত্তা দেই একটু একদম বউ হবার জন্য পাগল হয়ে যাবে।

শুভ্রতা:ভালোইতো এমন হলে ভালোই হবে।আপনার দুইটা বউ হবে।যে ২য় জনকে আনবেন ওকে দিয়ে বাড়ির সব কিছু করাবো আমাদের বাচ্চা কাচ্চাকে সামলানোর কাজ করবে।তারপর সব বাড়ির কাজ করবে।আমার সেবা করবে।কিন্তু শুধু আপনাকে পাবেনা।আর দেখুন অন্য সব সতীন তাদের স্বামীর বউকে মানেনা।কিন্তু আমি মানবো।তাহলে আমার নামটা ইতিহাসের পাতায় লেখা হবে।উফফফ ভাবতেই কি যে আনন্দ লাগছেনা শিশির।উফফ তাড়াতাড়ি বিয়ে করে ফেলেন।আমার ইতিহাসের পাতায় নাম লেখানোর অপেক্ষা করতে পারছিনা।

শুভ্রতার কথা শুনে শিশির পুরো বেকুবহয়ে যায়।শুভ্রতা শিশিরের ফেস দেখে আবার হাসিতে লাগে।শিশির গাল ফুলিয়ে খাটে গিয়ে শুয়ে পরে।আর শুভ্রতা হেসেই যায়।
পরেরদিন সকালে,,,,
সবাই টেবিলে নাস্তা করছে।
শিশির:আমি একটা কথা বলতে চাচ্ছিলাম।
সাবিনা:হ্যা বল কি?
শিশির:আসলে আমি চাই ইকবাল স্যারেরা এখানেই আমাদের সাথে থাকুক।
ইকবাল:সেটা কিভাবে হয় বাবা।আমরা এখানে কিভাবে থাকবো?

সাবিনা:শিশির ভুল কিছু বলেনি।আমার যেই সন্তান আমার কাছেই ছিলোনা যার অস্তিতের কথা আমি জানতাম না। তাকে নিজেদের সন্তান করে মানুষ করেছেন।আজ সে নেই তো কি তাই বলে আপনাদের পর করে দেবো আমরা।আপনারা এখানেই থাকবেন।আমার শিশির শুধু আমার না আপনাদের ও সন্তান।আর শিশির ছাড়াও মহুয়া শুভ্রতা এড়াও আপনাদের সন্তান।এদের রেখে কোথায় যাবেন আপনারা।
মহুয়া:একদম।আপনারা এখানেই থাকবেন।আমাদের সাথেই থাকবেন।

হৃদয়ের স্পন্দন পর্ব ২০

শুভ্রতা:হ্যা মা আমিও চাই আপনি বাবা এখানে থাকুন।একটা সুখি ভোরা পরিবার হবে আমাদের।
ইকবাল:ঠিক আছে।আমরা এখানেই থাকবো এতো ভালোবাসা ফেলে দেওয়ার সাহস আমাদের নেই।
শিশির:আর তো কোনো প্রব্লেম নেই।আর একটা কথা বলতে চাই।আমি মহুয়ার বিয়ে দিতে চাচ্ছি।
সাবিনা:এটাতো ভালো কথা।ছেলে দেখেছিস?

শিশির:হ্যা।
সাবিনা:কে?
শিশির:আমার জুনিওর অফিসার।মেহেদি।
মেহেদির নাম শুনে মহুয়া চুপ হয়ে যায়।মেহেদিক মনে মনে পছন্দ করলেও সরাসরি বলার সাহস হয়নি।
সাবিনা:মেহেদি।হ্যা ছেলেটা ভালোই।অনেক ভদ্র।
শুভ্রতা:হ্যা মহুয়া আপুর জন্য একদম পার্ফেক্ট ছেলে।আমার তো ভালোই লাগে অনাকে।
শিশির:হ্যা আগামিকাল আমি তাদের আসতে বলেছি।আর আজকেও আমি কাউকে আসতে বলেছি।কিছুক্ষনের মাঝেই আসবে হয়তো তারা।

সাবিনা:কারা?
শিশির:আসলেই দেখবা।
বলার মাঝেই কলিংবেল বেজে উঠলো।চাঁপা উঠে গিয়ে দরজা খুলতে গেলো।চাঁপা দরজা খুলে অবাক হয়ে গেলো।চাঁপা সহ উপস্থিত সবাই দরজার দিকে তাকালো।শুভ্রতা দরজার বাহিরে যাদের দেখলো দেখে বসা থেকে দাঁড়িয়ে গেলো।

হৃদয়ের স্পন্দন পর্ব ২২