হৃদয়ের স্পন্দন পর্ব ২০

হৃদয়ের স্পন্দন পর্ব ২০
নন্দিনী চৌধুরী

শিশির:আরিয়ান যে আমার ভাই সেটা পরে কিভাবে জানলেন।আর ওকে মারলেন কেনো।ও কি অপরাধ করেছিলো।
বেশ অনেকটা নিরবতা পালন করে শিশির আবার সায়িদকে প্রশ্ন ছুড়ে দেয়।সায়িদ আগের মতোই চেয়ারে পা তুলে বসে আছে।দেখে মনেই হচ্ছেনা তার কোনো প্রকার ভয় কাজ করছে।

সায়িদ:হাসপাতাল থেকে যে বাচ্চাটাকে কি করা হয়েছিলো সেটা আমি জানতাম না।যখন তোর বাবার পর কয়েক বছর পর আরেকজন অফিসার আমাদের কেস নিয়ে কাজে নেমেছে শুনলাম তখন আমি খোজ নিতে গিয়ে দেখি আরিয়ান। অনেক অবাক হয়েছিলাম হুবুহু তোর মতো দেখতে।প্রথমে ভেবেছিলাম হয়তো তুই।কিন্তু পরে খোজ নিয়ে জানতে পারি তুইও পুলিশ অফিসার হয়েছিস কিন্তু এটা তুইনা।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

তখন আমি বুজতে পারি এটা তোর সেই ভাই।আমি আরিয়ানের ব্যাপারে খোজ নিয়ে জানলাম হাসপাতালে এক নিঃসন্তান দম্পত্তি ওকে দত্তক নিয়েছে।কারন আরিয়ানকে আর তোর মা বাবার কাছে দেওয়া হয়নি বা তাদের জানানোও হয়নি আরিয়ানের কথা।ইকবাল ছিলো সেই দত্তক দম্পত্তি যারা আরিয়ানকে নেয়।আরিয়ান আমার জন্য বিপদ ছিলো তাই ওকে গায়েব করে দেই।

কিন্তু তোর মৃত্যুর পর যখন আবার শুনি যে আরিয়ান নামে আরেকজন নিউ অফিসার এসেছে তখন আবার আমি খোজ নেই।আর সেখানে দেখি তোকে।প্রথমে অবাক হয়েছিলাম।কারন আরিয়ান আমার কাছে তুই মরে গেছিস তাহলে এটা কে।পরে আমার লোকেদের তোদের লোকেদের মাঝে মিলিয়ে দেই।এরপর জানতে পারি তুই শিশির।আরিয়ান হয়ে আমাকে ধরতে এসেছিস।আরিয়ানকে মারতে ইচ্ছা ছিলোনা।কিন্তু ও বেশি ফরফর করতো।তাইতো ওকে মেরে ফেলেছি।কিন্তু আমার একটা কথা জানার আছে।তুই কিভাবে জানলি যে তোর ভাই আছে।আর সে কোথায় আছে।

শিশির:আপনার সব কুকর্ম আমার বাবা তার ফাইলে রেখেছিলো।আমার বাবা জানতে পেরেছিলো তার আরেকছেলের কথা।সেই সহ তথ্য প্রমান বাবা তার ফাইলে রেখেছিলো।ইভেন শুভ্রতার বাবার দেওয়া প্রমান ও।আমি যখন হেডকোয়াটার থেকে ফাইল নেই আর সব দেখি তখন আমি জানতে পারি আমার ভাই আছে একটা আমার মতো।আর সে আছে ইকবাল স্যারের কাছে।কিন্তু যখন আমি ইকবাল স্যারের কাছে যেতে চাইলাল তখন জানতে পারলাম আরিয়ানকে খুজে পাওয়া যাচ্ছেনা।

তখন আমি জানতে পারি আরিয়ান এই কেসটা নিয়ে কাজ করছিলো সেই অবস্থায় ও গায়েব হয়েছে।কিন্তু সেটা ইকবাল স্যারকে জানানো হয়নি।আমি জানতাম আমি চাইলেও তোমাকে ধরতে পারবোনা।তাই আমি নিজের মরার নাটকটা সাজাই।আমি জানতাম তুমি আমার মরার খবর পেয়ে ঠিক আসবে বাংলাদেশে।আর এসেছো।ফিরোজকে তুমি জেলোর কে দিয়ে জেল থেকে ছাড়িয়েছো।আমি সেটাও জানতাম।কিন্তু আমি চুপ ছিলাম।কারন সঠিক সময় তোমাকে ধাওয়া দেওয়ার অপেক্ষায় ছিলাম।নাউ আই এম সাকসেস।
সায়িদ:তোর কি আসলেই মনে হয় তুই সাকসেস।এতোক্ষনে তো মেয়ে সব পাচার হয়ে গেছে।আর এখন তুইও মরবি সাথে এয়েও মরবে।

শিশির:নিজেকে এতো চালাক ভাবো।ভুলে যেওনা আমি একজন পুলিশ অফিসার।তুমি যদি অপরাধ শিরায় শিরায় নিয়ে বেরাও।তবে আমি বুদ্ধি শিড়ায় শিড়ায় নিয়ে থাকি।তোমার কি মনে হয়না।যে মেয়ে যদি পাচার হয়ে যেতো তাহলে এতক্ষনে তোমার কাছে কল আসতো।এসেছেকি কল।আসেনিতো।আমি বলছি কেন আসেনি।কারন মেয়েগুলোতো পাচার হয়নি।

সব মেয়েদের আমাদের অফিসাররা সেভ করে যার যার বাসায় পৌছে দিয়েছে ইতিমধ্য।তোমার এখানে আসার আগেই সব মেয়েদের আমরা সেভ করে নিয়েছি।আরো একটা তোমাকে দুক্কের খবর দেই চাচামীয়া।তোমার যত বেআইনি অর্থ সম্পত্তি আছে তা সব পুলিশের আন্ডারে চলে গেছে।ইভেন তোমার দুবাইয়ের সব বেআইনি সম্পত্তি দুবাই পুলিশ সিল করে দিয়েছে।পাশাপাশি দুবাইয়ের চক্রদের ও তারা ধরে ফেলেছে।আর এখন তুমি যদি ভাবো এখান থেকে তুমি পালাতে পারবে উহুম এটা সম্পুর্ন তোমার ভুল।এই পুরো যায়গাটা আমার অফিসারদের দিয়ে ঘেরাও করা।তোমার সব।

গুলো লোকেদের আমরা ধরে ফেলেছি।সো তুমি এখন পুরা একা।এন্ড ইট’স ইউর টাইম মিস্টার সায়িদ আহমেদ।চাইলেই এখানে আপনাকে এনকাউন্টার করে মেরে দিতে পারি।কারন আপনি আমার বাবা, ভাই আর শুভ্রতার বাবার খুনি।ইউনো আমি পুলিশ হয়ে আপনাকে মেরে দিলে কেউ কিছু জিজ্ঞেশ করবেনা।আমি একটা কিছু বানিয়ে ডেকে দিতে পারবো।কিন্তু ছুঁচো মেরে হাত গন্ধ করার মতো মানুষ আমি নই।

আরিয়ান ওর আফিসারদের ভিতরে আসতে বলে কল দিয়ে।অফিসারা ভিতরে এসে সায়িদকে হাতকোরা পড়িয়ে দেয়।সায়িদ এভার মাথা নিচু করে নেয়।আর কোনো পথ খোলা নেই তার।শিশির এভার শুভ্রতার কাছে যায়।শুভ্রতার চোখ দিয়ে পানি পরছে।অনেকটা শোকড সে খেয়েছে।শিশির শুভ্রতার পায়ের বাধন খুলে ওকে কোলে তুলে নেয়।শুভ্রতা এতে চমকে যায়।শিশির শুভ্রতাকে নিয়ে বেরিয়ে আসে।

শিশিরদের বাসায় সবাই উপস্থিত।ইকবাল ইকবালের স্ত্রী,সাবিনা মহুয়া, চাঁপা।মৌ,মেহেদি,হাসান সবাইকে সব জানিয়ে দিয়েছে।মৌ হাসানকে সব জানিয়েছে মেহেদি।সব শুনে ইকবাল আর স্ত্রী খুব ভেংগে পড়েছেন।সাবিনা একটা বড় ধাক্কা খেয়েছে।আর এটা হবেই।যেই সন্তানের কথা এতো গুলো বছর তিনি জানতেন না আজ তার কথা জানতে তো পারলেন।কিন্তু সেই সন্তান এই দুনিয়ায় আর নেই।কিছু সময়ের মাঝে শিশির শুভ্রতা বাসায় আসলো।সাবিনা শিশিরকে দেখে উঠে গিয়ে ছেলেকে জরিয়ে ধরলো।

এতোদিন পর ছেলেকে কাছে পেয়ে কোনো মাকি নিজেকে আর সামলাতে পারে।সাবিনা শিশির দুজনেই কান্না করছে।কয়েক মুহুর্ত পর দুজনে থামলো।সাবিনা আদরে আদরে ছেলেকে ভরিয়ে দিচ্ছে।শিশির মায়ের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে ইকবালের কাছে গেলো।মাথা নিচু করে বললো,
শিশির:আই এম সরি স্যার।আমি আপনাকে সত্যি কথা আগে বলিনি।যদি আমি আগে জানাতাম তাহলে আপনারা অনেক কষ্ট পেতেন।আমি চাইনি সেটা।আমাকে ক্ষমা করে দেবেন।
ইকবাল শিশিরকে জরিয়ে ধরে বলে,

ইকবাল:তোমার প্রতি আমাদের কোনো রাগ নেই।বরং আমার খুব ভালো লাগছে যে তুমি অনেক দায়িত্ববান একজন ছেলে।নিজের পরিবারের কথা না ভেবে আমাদের কথা ভেবেছো।নিজের দায়িত্ব পালন করেছো।আমরা জানতাম না যে আরিয়ান তোমার ভাই।জানলে তোমাদের কাছে ফিরিয়ে দিতাম।
শিশির:এভাবে বলবেন না।আমার ভাইকে আপনারা অনেক ভালোবাসা দিয়েছেন।মামনি নিজের ছেলের মতো ওকে বড় করেছে।সেই মামনিকে আমি এটা বলতাম কি করে যে আরিয়ান….।
শিশির মিসেস ইকবালের কাছে গেলেন।তিনি সোফায় বসে আছে।শিশির হাটুগেরে বসে তার কোলে মাথা রেখে বলে,

শিশির:তুমি কি রেগে আছো আমার উপর মামনি।আমি তোমাকে কষ্ট দিতে চাইনি তাই সত্যি বলিনি।রাগ করে থেকোনা আমার উপর মামনি।
মিসেস ইকবার শিশিরের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে,
মিসেস ইকবাল:কোনো মা কি তার ছেলের উপর রেগে থাকতে পারে।তুইতো আমার আরিয়ানের প্রতিচ্ছবি।তোর মাঝে আমি আরিয়ানকে দেখি।
শিশির:আমিতো তোমারো ছেলে তাইনা।নাকি আমি আরিয়ান না শুনে আমাকে পর করে দেবে।
মিসেস ইকবাল:মার খাবি একদম।
সাবিনা:হ্যা আপা দেন তো ওকে কয়েকটা মাইর।আজ থেকে আপনিও ওকে ধরে ধরে শাষন করবেন।আমার কথা তো শুনেনা।আপনার মার খেলে শুনবে।
সাবিনার কথায় সবাই হেসে দেয়।

সাবিনা:ওনেক ঝরঝাপটার পর আমার পরিবারটা এক হয়েছে।আজ আমি অনেক খুশি।
মিসেস ইকবাল:হ্যা তোমরা যাও সবাই ফ্রেশ হয়ে আসো।আমি আর সাবিনা তোমাদের জন্য রান্না করছি।
সাবিনা:হ্যা চাঁপা তুই মৌ,মেহেদি, হাসান ওদের কে ওদের রুম দেখিয়ে দে।
চাঁপা:আইচ্ছা।
সাবিনা:আর শিশির তুই শুভ্রতাকে নিয়ে তোদের রুমে যা।
শুভ্রতা এই কথা শুনে গটগট করে চলে গেলো উপরে।
মহুয়া তখন হেসে বলে,
আজ ভাইয়া কপালে সেই দুক্ষ আছে?।
শিশির:তুই চুপ।

শিশির চলে যায় রুমে।দরজার বাহিরে দাঁড়িয়ে আছে শিশির।ভিতরে যাওয়ার সাহস হচ্ছেনা ওর।
শিশির:আল্লাহ ভিতরে আমার জন্য সং ঘূর্ণিঝড় অপেক্ষা করছে।আমাকে উড়িয়ে দেয়না যেনো আল্লাহ।আমাকে সেফ করো প্লিজ।
শিশির আসতে করে দরজা খুলে ভিতরে গেলো।ভিতরে যেতেই শুভতা চিৎকার দিলো,
শুভ্রতা:খবরদার কালা ইঁদুর ভিতরে আসবিনা।নাহলে আজ তোর একদিন কি আমার একদিন।
শিশির:উইমা,এতো অনেক খেপে আছে।
শিশির ম্যাকি হাসি দিতে দিতে ভিতরে এসে বললো,
শিশির:বউ তুমি রাগ করছো কেনো।আমার লক্ষ্যি বউ।আমার সাথে রাগ করেনা।আমি তোমার ১০টা না ৫টা এক মাত্র জামাই।
শুভ্রতা:খেতা পুড়ি তোর জামাইয়ের কপালে।অই অই বান্দর তুই কেন বলস নাই তুই শিশির।তুই জানস আমি কত কষ্ট পাইছি এই কয়েকমাস।ইন্দুর এর ঘরের নাতী।তোর সাথে কোনো কথা নাই আমার তুই এই ঘর থেকে যা।

শিশির:শিশির বাবা বউ তোমার অনেক খেপে গেছে।এখন তাকে লাভ থ্যারাপি না দিলে রাগ কমবেনা।চলো বাবা লেগে পড়ো লাভ থ্যারাপি দিতে।
শুভ্রতা শিশিরকে বকেই যাচ্ছে শিশির চোট করে ওকে কোলে তুলে নিলো আর ওর ঠোঁট জোরা বন্ধ করে দিলো নিজের ঠোঁট দিয়ে।শিশিরের এমন কান্ডে স্তব্দ হয়ে যায় শুভ্রতা।কয়েক সেকেন্ড লাগে বুজে উঠতে যে কি হচ্ছে।শুভ্রতা যেনো হারিয়ে গেছে এক আলাদা ভালোবাসায়।

শিশিরের শার্টের কোলার জোরে চেপে ধরে।আর শিশির সেতো একদম হারিয়ে গেছে শুভ্রতার ওষ্টোদ্বয়ের মাঝে।বেশ কিছুটা সময় পর শিশির শুভ্রতার ঠোঁট ছাড়লো।শুভ্রতা শিশির দুজনে জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে।শুভ্রতার দুই গাল টোমেটোর মতো লাল হয়ে গেছে লজ্জায়।শিশির সেটা দেখে বাকা হাসি দিলো আর নিজে নিজে বললো,

হৃদয়ের স্পন্দন পর্ব ১৯

আরে শিশির তোর শরৎ শুভ্রতা দেখি লজ্জায় লাল হয়ে যাচ্ছে।চল তাকে আরেকটু লজ্জা দেয়া যাক।
শিশির শুভ্রতাকে আরো লজ্জা দেওয়ার জন্য বলে,
শিশির:ওমা বউ তোমার গাল দেখি টোমেটোর মতো লাল হয়েগেছে।তোমার গালে আবার কে কামড়ালো মশা নাকি।
শিশিরের কথা শুনে শুভ্রতা গাল ফুলিয়ে বলে,
গালে কামড় দেয়নি দিয়েছেন তো আপনি আমার ঠো……বলতে বলতে শুভ্রতা থেমে গেলো।শিশির তা দেখে মুচকি হেসে শুভ্রতার কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে,
তুমি তোমার এই ঠোঁট নাড়িয়ে যখোনি আমাকে বকবে আমি তখোনি এই ঠোঁটের মধু আহরন করবো।ইউনো এই মধু সব মধুকে হার মানাবে।বলেই শুভ্রতার লাল হয়ে যাওয়া গালে কামড় বসিয়ে দেয় শিশির।
আউচ!!

এভাবে কামড়াচ্ছেন কেনো।রাক্ষস নাকি হ্যা।এভাবে কেউ কামড়ায়।ছাড়ুন আমাকে।আমি শাওয়ার নেবো।
শিশির:ওকে চলো আজ তোমার শাওয়ার ও হবে আমার খুদাও মিটবে।আসলে আমি অনেক হাংড়ি।তাই আজকে তোমাকে কামড়ে কামড়ে খাবো।সো আর ইউ রেডি শুভ্রতা।
শিশিরের কথা শুনে শুভ্রতা লজ্জা লাল হয়ে যায় আবার।আর শিশির শুভ্রতাকে নিয়ে পা বারায় ওয়াশরুমের দিকে।

হৃদয়ের স্পন্দন পর্ব ২১