হৃদয়ের স্পন্দন পর্ব ১৯

হৃদয়ের স্পন্দন পর্ব ১৯
নন্দিনী চৌধুরী

সায়িদকে দেখে চমকে গেলো শুভ্রতা।সায়িদ এখানে। তার মানে সায়িদ তাকে এখানে নিয়ে এসেছে।শুভ্রতাকে চমকে যেতে দেখে সায়িদ পাশে থাকা চেয়ারটা টেনে শুভ্রতার মুখোমুখি বসলো। নিজের লোকেদের ঈশারা করতে তারা শুভ্রতার হাতের বাধন খুলে দিলো। শুভ্রতা অবাক নয়নে তখন প্রশ্ন ছুড়ে দিলো সায়িদের দিকে,,
শুভ্রতা:আংকেল আপনি?

সায়িদ:হ্যা আমি।কেন অবাক হচ্ছো নাকি আমাকে দেখে।
শুভ্রতা:আপনি আমাকে এখানে নিয়ে এসেছেন কেনো?
সায়িদ:কি করবো বলো মামনি।তোমার স্বামী যে আমাকে বাধ্য করেছে আমাকে এখানে তোমাকে নিয়ে আসতে।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

শুভ্রতা:আরিয়ান!আরিয়ান আপনাকে বাধ্য করেছে মানে?
সায়িদ:আরিয়ান নয় শিশির।অবশ্য তোমার কাছেতো সে আরিয়ান।শুধু তোমার কাছে নয় সবার কাছে সে শিশির।সে যাই হোক তোমার স্বামী আমার পথে বার বার বাধা হয়ে দাঁড়ায়।তাই তোমাকে এইবার নিয়ে এসেছি।তোমাকে এখন তার থেকে দুরে করে দেবো।তাহলে সে বুজবে আমার পিছনে লাগার ফল।
শুভ্রতা:শিশির!আরিয়ান তাহলে শিশির।আর সে যদি শিশির হয়ে থাকে তবে সে আপনার ভাইয়ের ছেলে।সে আপনার পথে বাধা মানে?

শুভ্রতা:এই যে এতো নারী দেশ থেকে উদাও হচ্ছে এর পিছনেইতো আমিই আছি।আমারই ধান্দা এগুলো।কিন্তু তোমার অই শিশিরের জন্য আমার এই ধান্দা বার বার বিপদের মুখে পরে।প্রথম তোমার অই শশুড় আমার বাধা ছিলো এখন ওটাকেতো মেরেছি কিন্তু এখন আবার তার ছেলেরা আমার বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। তবে কি বলতো ব্যাপার না।বাপ আর এক ছেলেকে তো মেরেছি এভার মরবে শিশির আর তারপর তুমি হুসসস হয়ে যাবে দুবাইয়ে।

শুভ্রতা:তার মানে এই নারী পাচার চক্রের পিছনে আপনি ছিলেন।
সায়িদ:হ্যা আমিই ছিলাম।
শুভ্রতা:আপনি, আপনি আমার মামাকে ফাঁসিয়েছেন।আপনার জন্য উনি জেলে।
সায়িদ:হাহাহাহা বোকা মেয়ে।আমি তাকে ফাঁসাইনি।আজমিরতো আমাদের হয়ে কাজ করতো।নতুন নতুন মেয়ের হদিস দিতো।আর ফিরোজ তাদের বিয়ে করতো,বা আমার অন্য ছেলেরা প্রেমের প্রলোবন করে,কাজ দেওয়ার নাম করে সেই মেয়েগুলোকে তুলে আনতো।তোমার মামা তার নিজের দোষেই জেলে।
শুভ্রতা:ছিহ্ কতটা জঘন্য আপনি।

সায়িদ কিছু বলতে যাবে তার আগেই গোলাগোলির আওয়াজ পেলো।সায়িদের সাথের লোকেরা বাহিরে এসে দেখে পুলিশ সব দিক থেকে ওদের ঘেরাও করে ফেলেছে।ছেলেগুলো সায়িদের কাছে যেতে নিলে আরো কিছু পুলিশ এসে ওদের ধরে ফেলে।
সায়িদ কিছু বুজতে পারছেনা কি হচ্ছে।
সায়িদ:বাহিরে কি হচ্ছে এসব।
সায়িদ উঠে যেতে নেবে তখন দেখে শিশির আসছে।শিশিরকে দেখে ঠোঁটের কোণায় হাসি ফুটে ওঠে শুভ্রতার।শিশির এসে সায়িদের সামনে দাঁড়ালো।
সায়িদ:ওহ তাহলে চলে এসেছিস।

শিশির:কি করবো একমাত্র চাচা ডেকেছে না এসে পারি।তবে মানতে হবে আসলেই আপনি খুব সাহসী নাহলে কি আর একটা নারী পাচারের মতো কাজের বস হতে পারেন।কিন্তু কি বলুনতো অনেক চালাক মানুষও কোথাও না কোথাও ছোট একটা ভুল করে ফেলে।আর সেই ভুল তাকে তার পাপের সাজা দেওয়াতে অবদান রাখে।
সায়িদ:মানে?
শিশির:মানে আপনি কি ভাবছেন আপনি আমাকে এখানে নিয়ে এসেছেন।উহুম বরং আমি আপনাকে এখানে নিয়ে এসেছি।আমিতো অনেক আগে থেকেই জানতাম শুভ্রতা আপনার কাছে আছে।ইভেন ভালোই আছে।

সায়িদ:মানে তুই কিভাবে জানলি?
শিশির:হাহাহা,আমি আগেই জানতাম আপনি শুভ্রতাকে কিডন্যাপ করবেন।তাইতো আমি শুভ্রতাকে সেভাবেই রেডি রাখছি যেনো আপনি ওকে কিডন্যাপ করলেই আমি তা জানতে পারি।
সায়িদ:মানে?

শিশির:মানে,, মানে এইযে শুভ্রতার চেইনে একটা ছোট স্পিকার লাগানো আছে।আর ওর কানের দুলের সাথে একটা হিডেন ক্যামেরা লাগানো আছে।যেটার মাধ্যমে আমি জানতে পারি শুভ্রতা কোথায় আছে কি করছে।আমি আগেই জানতাম এমন কিছু হবে। তাই আগে থেকেই আমি তৈরি ছিলাম।তোমার সামনে শুধু নাটক করেছি আমি।আমি জানিতো তোমার লোকেরা আমাদের অফিসারদের মধ্য মিলে আছে।তাই আরকি একটু কান্না কাটি করছিলাম।

সায়িদ:অহ মানে আমার চালের ওপর চাল চেলেছিস তুই?
শিশির:হ্যা কিছুটাই তাই বলতে পারেন।কিন্তু আমার জানা বাকি আছে কেনো আপনি আমার বাবাকে শুভ্রতার বাবাকে মারলে।একবার কি হাত কাপেনি নিজের বড় ভাইকে মারার সময়।আর আমার ভাই।তাকে কেন মারলেন?

সায়িদ:যাক সব যখন তুই জেনেই গেছিস তাহকে এটুকু কেন আমি বাকি রাখবো বলে দিচ্ছি।
আমি আর তোর বাবা কোনোদিন এক ছিলাম না।আমাদের বাবার আমার থেকে বেশি ভালোবাসা আর প্রিয় ছিলো তোর বাবা।এর কারন এটাই আমি ছিলাল প্রচুর খাপছাড়া।কোনো কিছু তেমন গুরুত্ব দিতাম না।কিন্তু তোর বাবা ছিলো একদম লেজেন্ডারি।সব কিছুতে তার একটিভিটি ছিলো।এভাবেই বড় হতে লাগি আমরা।আমি দিন দিন মদ ড্রাগস নারী নেশাতে ডুবে যাচ্ছিলাম।তোর বাবা আমাকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করেছিলো কিন্তু আমি ভালো হইনি।দেখতে দেখতে তোর বাবা হলো পুলিশ আর আমি হলাম একজন বেকার।

যার কারনে বাবা আমাকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়।আর আমার সাথে দেখা হয় নারী পাচার কারী দলের বস জসিফের সাথে।জসিফ খ্রিষ্টান ছিলো।জসিফ আমাকে ওর দোলে নিয়ে নেয়।তারপর আমরা শুরু করি নারী পাচার করা সাথে বাচ্চাও করতাম।এরপর জসিফ মারা যায় আর দলের বস হই আমি।আমার লিডে গ্রুপ চলতো।একটা সময় বাচ্চা পাচার করা রিস্ক হয়ে যাচ্ছিলো।এর মাঝে আমাদের একটা কন্টাক্ট আসলো ২০টা বাচ্চার।আমারা ১৮টা বাচ্চা জোগার করলাম কিন্তু বাকি দুইটা বাচ্চা পাচ্ছিলাম না।তখন ঠিক করলাম হাসপাতাল থেকে নিবো।কাজ মতো গেলাম হাসপাতালে।অই রাতে এক সাথে দুইটা ডেলিবারি হইছে।সেখানে জানতে পারি আমার ভাইয়ের বউও আছে।তখন মাথায় বুদ্ধি আসলো।

ভাইয়ের বাচ্চাটা নেবো।সেই মত ডাক্তারের সাথে কথা বলে জানতে পারি ভাইয়ের দুইয়া জমজ ছেলে হইছে।বাচ্চা দুইটা আপাদত বেবি রুমে আছে।আমি ডাক্তারকে টাকা দিয়ে ওদের দুইজনকে দিতে বলি।কিন্তু ডাক্তার যতক্ষনে বাচ্চা আনবে তার আগে ভাইয়ার কোলে তার এক ছেলেকে দিয়ে দেওয়া হয়।তাই ডাক্তার আমাকে অন্য বাচ্চাটা দিতে চেয়েছিলো।কিন্তু অই সময় পুলিশ জেনে যায় এসবের কথা রেট মারলো আমাদের ওখানে আমি তাই আমার দলবল নিয়ে পালিয়ে আসলাম সব বাচ্চা ওখানে রেখে।পরবর্তিতে অই আরেকটা বাচ্চা কি হয় সেটা আমি জানতে পারিনি।এরপর একঅ বছর আমরা ঠান্ডা থেকে আবার কাজ শুরু করি।এভার শুধু মেয়ে পাচার করা আমাদের উদ্দেস্য ছিলো তাই করছিলাম।

তখন আমাদের দলে এসে যোগ দেয় আজমির।আজমির কে কাজ দিতো ফিরোজ।কখোন কোথায় কোন মেয়ে তুলতে হবে।নতুন মেয়ের খোজ দেওয়ার দায়িত্ব ছিলো ওর।ভালোই চলছিলো কাজ।কিন্তু এর মাঝে আবার পুলিশের লোকেদের হানা দেওয়ার কথা জানতে পারি।আর জানতে পারি আমার ভাই তাতে আছে।আমার ভাইয়ের হাতে আমার বিরুদ্ধে জোরালো প্রমান ছিলো।সেই প্রমান দিয়েছিলো শুভ্রতার বাবা।শুভ্রতার বাবা কোনোভাবে দেখে ফেলেছিলো আমাদের নারী পাচার করতে যেটা সে তার ফোনের ক্যামেরায় ধারন করে ফেলে আর সেটা আমার ভাইকে দেয়।আমি জানতাম এটা আমার জন্য কত বড় বিপদ।

হৃদয়ের স্পন্দন পর্ব ১৮

তাই আমি আগে শুভ্রতার বাবাকে মেরে ফেলি।এমন ভাবে মারি যে বুজাই যায়না জেনো ওটা মাডার।এরপর আমি ভাইয়াকে মারলাম সেটাও খুব প্ল্যানিং করে।আমি ভেবেছিলাম এরপর আর কোনো সমস্যা আমার থাকবেনা।কিন্তু তুই তোর বাপের মতো আমার কাজে নাক গোলালি।আমাদের মেয়ে পাচারকারী ব্যবসা চলছিলো ভালো কিন্তু তুই আবার ইনভেস্টিকেশন শুরু করলি।

ভেবেছিলাম সেদিনে এনকাউন্টারে তুই মরে গেছিস।কিন্তু তুই যে আরিয়ান হয়ে ফিরে আসবি ভাবিনি।আর দেখ কি ভাগ্য তোর ভাইকে আমি কিডন্যাপ করলাম।সেই জায়গায় তুই গেলি।আরিয়ানকে মারার ইচ্ছা ছিলোনা।কিন্তু তোর জন্যেই ওকে মেরেছি।তবে আজ তুইও মরবি আমার হাতে।ইউ নো আমি কোনো রিস্ক নেবোনা।

শিশির:মানুষ কতটা খারাপ হতে পারে তা আপনাকে না দেখলে জানতাম না।একটা অপরাধ ডাকতে কতগুলা অপরাধ করেছেন আপনি।আফসোস ও হচ্ছেনা আপনার।
সায়িদের সব কথা শুনে শুভ্রতা চুপ হয়ে গেছে। এই নোংড়া কাজে তার বাবার প্রান গেছে।এই লোকটার কারনে সে বাবা হারা হয়েছে।শুভ্রতা সব শুনে চোখের পানি অজরে গড়িয়ে পরছে।

হৃদয়ের স্পন্দন পর্ব ২০