জলকাব্য শেষ পর্ব
লেখিকা:সুরাইয়া আয়াত
রাতের আকাশে মিটমিট করে তারা জ্বলছে, ছাদের কার্নিশ ঘেষে দাঁড়িয়ে আছে শ্রাবণ , বাইরে শুষ্ক বাতাস বইছে , জোছনা রাত না হলেও শহরের ছোট অলিগলিতে থাকা ল্যাম্প পোষ্টের আলো গুলোতে চারিপাশে আলোর আবরণে ছেয়ে গেছে ৷ এই শহরে রাত হলেও তা আলোর ছটায় অনুভব করার জো নেই ৷ গ্রামাঞ্চলের পরিবেশ কতোই না সুন্দর হয়, সেখানে রাতের অন্ধকার সমস্তটাকে গ্রাস করে, থেকে থেকে ঝিঝি পোকার ডাক কানের মধ্যে একপ্রকার বেদনা দেওয়াতে মত্ত হয় ৷ শ্রাবন চোখটা বন্ধ করলো ৷ শরীরটা খুব দূর্বল লাগছে, কোন কিছুর চিন্তাতে ভীষন রকম একটা শরীর কাঁপানো নারভাসনেস কাজ করছে ওর মধ্যে ৷
হঠাৎ কারোর পায়ের আওয়াজে শ্রাবনের শরীরটা খানিকটা কেঁপে উঠলো ৷ বেশ চমকালো ভঙ্গিতে তাকিয়ে দেখলো নীলু দাঁড়িয়ে আছে ৷ মেয়েটার মুখটা কেমন যেন থমথমে লাগছে যা শ্রাবণ সেই নীরস শহরের বিষন্ন আলোতেও বুঝতে পারছে যে নীলু এসেছে ৷ নীলুর উপস্থিত বুঝেও শ্রাবণ চুপ করেই রইলো ৷ নীলু মিঠির সাথে দেখা করতে যাবে শ্রাবণ সেটা কখনো ভাবেনি, যদিও এতে তাদের উপকারই হয়েছে তবুও নীলুর ওপর কোন কারনবশত একটা চাপা অভিমানের জন্ম নিয়েছে ৷নীলু গিয়ে শ্রাবনের পাশে দাঁড়ালো তবে খানিকটা দূরত্ব বজায় রেখেই , কাছে আসার অধিকার টুকু হয়তো এখনো ও অর্জন করে উঠতে পারেনি ৷ কিছুখন চুপ থেকে নীলু একটা গম্ভীর নিশ্বাস ফেললো ৷ শ্রাবনের প্রতি ওর একটা অনুভূতির জন্ম নিয়েছে, তা নীলু আগে না বুঝলেও এখন বেশ ভালোই বুঝতে পারে , কিন্তু নীলু প্রকাশ করতে নিরুপায় ৷ মনের মাঝে একরাশ দোটানা কাজ করছে ৷ শ্রাবণকে নিজের জীবনসঙ্গী হিসাবে বেছে নিলে হয়তো জীবনের একটা সঠিক সিদ্বান্তটাই নেবে ও ৷ আসলেই শ্রাবণ ঠিকই বলেছিলো যে যেদিন নীলু ওর ভালোবাসা বুঝবে সেদিন বড্ড দেরি করে ফেলবে নীলু ৷
আর ঠিক তেমনটাই হয়ে চলেছে ৷ শ্রাবণ আর এখন আগের মতো নীলুর প্রতি অনুভূতির প্রকাশ করে না, বারবার আর নীলুকে এটা বোঝানোর চেষ্টা করে না যে সে নীলুকে কতোটা ভালোবাসে , সে নীলুকে ঠিক কতোটা চাই, সেই ভয়েই হয়তো মনের মাঝে দোটানাটা বেশী ৷ নীলুর গলা শুকিয়ে কাঠ ৷ এই কদিন ধরে কেবল শ্রাবণের গতিপ্রকৃতি লক্ষ করেছে,শ্রাবণকে দূর থেকে যতোটা সম্ভব বোঝার চেষ্টা করেছে , শ্রাবনের জন্য ওর মনের মধ্যে এক বিশাল অনুভূতির জন্ম হয়েছে যা না প্রকাশ করলেই নয় ৷ নীলু শ্রাবণের দিকে তাকালো আগের মতোই চুপচাপ আছে , যাতে করে ওর ভয়টা দ্বিগুন হচ্ছে ৷ নীলু একটা শুকনো ঢোক গিলে বললো
” মন খারাপ ?” শ্রাবন অন্ধকারের মধ্যে মাথা নাড়ালো যা নীলুর চোখকে ফাঁকি দিলো না, নীলু আবার প্রশ্ন করলো ” কোন কারনে চিন্তিত ?” শ্রাবন এবার নীলুর সাইড বরাবর দাঁড়িয়ে সামনের দিকে তাকালো ৷ তারপর চিন্তিত ভঙ্গিতে বলল ” হমম
আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন
নীলু প্রশ্ন করলো ” কারনটা বলবে ?”
শ্রাবণ বিরষ কন্ঠে বলল ” পরশু গানের কম্পিটিশনের ফাইনাল রেজাল্ট তারপর পরশু আবার কেসের ডেট , ভয় লাগছে আর তার সাথে একটা নারভাস নেস ও কাজ করছে প্রবল ৷ ভয়ে নীলুর চোখে জল জমে এলো, তবু নিজেকে সামলে বলল ” চিন্তা করো না ভাইয়া সব ঠিক হবে ৷” নীলুর মনের মাঝে ভয়টাও বেড়ে গেল, আজ শ্রাবণের চিন্তাগুলোকে নিজের চিন্তা বলে মনে হচ্ছে ৷ শ্রাবন শুকনো কন্ঠে বলল ” হমম ৷ তবে আমার পোগ্রাম রাতে তাই কেসের দিন আমিও তোর সাথেই যাবো ৷” কথাটা শুনে নীলু শ্রাবনের দিকে ছলছল চোখে তাকালো , মনের মাঝে পাথরটা যেন ক্রমে ক্রমে সরে গিয়ে ভয়টা কাটছে , এভাবে হয়তো মানুষটা পাশে থাকবে আর ওদের ও একটা দিন আসতে চলেছে , যেদিন থাকবে না কোন পিছুটান আর না কোন কষ্ট ৷
” একি তুমি আজ কোথায় যাচ্ছো ? তোমাকে বলেছিলাম না কোর্টে যেতে হবে সেখানে আমার হয়ে সাক্ষী দিতে হবে ৷ তুমি কি সব ভুলে গেছো ?”শার্টের বোতাম লাগাতে লাগাতে বলল রুদ্র ৷
মিঠি ওর ব্যাগটা কাঁধে নিয়ে বেরিয়ে যেতে যেতে বলল
” কোর্টে যাচ্ছি তোমার হয়ে সাক্ষী দেবো , গাড়িতে অপেক্ষা করছি তাড়াতাড়ি এসো ৷” অথাটা বলে মিঠি চলে গেল নীচে ৷ রুদ্র একটা বাকা হাসি দিলো আর বলল ” যাক ফাইনালি পাখি বশ মেনেছে ৷”
রুদ্র গাড়ি চালাচ্ছে আর মিঠি ওর পাশে বসে আছে ৷ মিঠি রুদ্রর সাথে আর একটাও কথা বলেনি দুজনেই চুপচাপ , মিঠি যেন দিনের পর দিন ডিপ্রেশনে চলে যাচ্ছে, অফিসের চাকরিটাও আর নেই, গতকাল রাতেই অফিসের ম্যানেজার মিঠিকে ফোন করে জানিয়েছে যে পরেরদিন থেকে তার আর অফিসে আসার দরকার নেই, কারন জিজ্ঞাসা করলে বলল ” স্যার বলেছেন যে অফিসে আপনার মতো স্টাফের দরকার নেই ৷” কথাগুলো শুনে মিঠি হতভম্ব হয়ে গিয়েছিলো ৷ নিখিলের বলা শেষ কথাগুলো ওর কাধে বাজে আজ চোখে ভেসে ওঠে সেদিধ সন্ধ্যার সেই ঘটনা আর জ্যাকের সেই হিংস্র রুপ ৷ মিঠি কথাগুলো ভাবে আর তখনই ওর চিৎকার করে কেঁদে উঠতে ইচ্ছ করে ৷ প্রথমে তো ওর বাঁচার ইচ্ছাই শেষ হয়ে গিয়েছিলো , পরে ভাবলো যে আজ নীলু এতো কিছু না করলে ওর এই পরিস্থিতি হতো না ৷ না নীলু ওর আর রুদ্রর জীবনে আসতো আর না ওকে ধর্ষিতা হতে হতো না ৷ তাই ওর এই অবস্থার জন্য ও নীলুকে দায়ী ভাবে ৷ তাই এই কেসে নীলুকে ফাসিয়ে দিয়ে ও শান্তি পেতে চাই , আর রুদ্রর সাথে সব,ঝামেলা মিটিয়ে আবার সংসার করতে চাই ৷ যদি রুদ্র ভুল করেও একবার নিখিলের কথা জানতে পারে তাহলে কখনোই ওকে মেনে নেবে না ৷ তাই মিঠিকে ঘূনাক্ষরেও রুদ্রকে কিছু আঁচ ও করতে দেয়নি , তাতে ওরই বিপদ ৷
গাড়ি চালাতে চাহতে রুদ্র বলল ” কোর্টে হাজিরা দিচ্ছো মানে এই না যে তুমি ডিভোর্স পেয়ে যাবে ৷ তোমাকে আমি ডিভোর্স দেবো না , তোমাকে ডিভোর্স দিলে আমার চাহিদা পূরন করবে কে? নিজের চাহিদা মেটানোর জন্য কি আমি বারবার বিয়ে করবো নাকি ? তাই ডিভোর্সের চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে দাও ৷” মিঠি চুপচাপ শুনলো, কিছু বললো না , ও তো এটাই চাই এখন যে রুদ্র ওকে ডিভোর্স না দিক ৷ কথাগুলো বলে রুদ্র গাড়ি চালানোতে মন দিলো ৷
কোর্টের কেসের কার্য প্রক্রিয়া শুরু হবে 12 টাতে , এখন বাজে 11.55 , আর কিছুখন পরই জজ সাহেব চলে আসবেন, কিন্তু মিঠি এখনো এলো না, আর না রুদ্র এলো ৷ নীলুর মনের মধ্যে উথল পাথাল হচ্ছে, তাহলে কি মিঠি আসবে না ? মিঠিকে বিশ্বাস করাই ওর ভুল হয়েছে ৷ শ্রাবন নীলুর পাশে বসে আছে,আর নীলুর কার্যকলাপ দেখছে,সেই থেকে জিয়ল মাছের মতো ছটফট করছে নীলু , পারলে এখান থেকে বেরিয়ে মিঠিকে খুঁজতে শুরু করে ৷হঠাৎ নীলু খেয়াল করলো যে মিঠি আর রুদ্র ঢুকছে , নীলু মিঠিকে দেখে যেন আকাশের চাঁদ হাতে পেলো ৷ নীলুর সাথে মিঠির চোখাচোখি হতেই মিঠি অদ্ভুত এক ভঙ্গিতে নীলুরদিকে আক্রোশ নিয়ে তাকালো, নীলু মিঠির তাকানোর ভঙ্গি দেখে শিউরে উঠলো, তাহলে কি ওর ধারনাটাই ঠিক মিঠি ওর সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করলো ৷নীলুর শরীর থরথর করে কাঁপছে, শ্রাবন নীলুকে লক্ষ করে বলল ” কি হয়েছে এভাবে কাঁপছিস কেন? শরীর খারাপ ?” নীলু ক্রমাগত ভয়ে কাঁপছে ,শ্রাবন মিঠির দিকে তাকিয়ে নীলুর হাতটা শক্ত করে ধরলো আর নীলুর মাথায় হাত বুলিয়ে বলল
” এটুকু জেনে রাখিস যে তোর গায়ে কখনো কোন আঁচ আসতে দেবো না, ঢাল হয়ে তোর সাথে থাকবো ৷”
নীলুর চোখ দিয়ে টুপিয়ে টুপিয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে , শ্রাবন নীলুর চোখের জল মুছে বলল ” আমি আছি তোর সাথে সবসময় , আর তুই চাইলে আজীবন ৷”
নীলু শ্রাবনের দিকে জলভরা চোখে তাকিয়ে আছে , মুখের ভাষা যেন থেমে গেছে ৷ জর্জ যথা সময়ে আসাতে নীলু চোখ মুখে তাদের কাজে মনোযোগ দিলো ৷ নীলুর উকিল জরখজের থেকে পারমিশন নিয়ে মিঠিকে হাজিরা দিতে ডাকলেন আর সাথে ওনার প্রশ্ন শুরু করলেন ৷
” আচ্ছা আপনার নাম কি ?” মিঠি বেশ সাবলীল আর কনফিডেন্সের সাথে উত্তর দিলো ” জ্বি মিঠি আহমেদ, ওয়াইফ অফ রুদ্র আহমেদ ৷” উকিল বললেন ” তা মিসেস মিঠি আপনার সাথে মিঃ রুদ্রর বিয়ে হয়েছৈ ঠিক কতোদিন আগে ?”
” 1 মাস প্রায় ৷”
“আপনার স্বামীর বিপরীত পক্ষ মিস সারিকা নীলাঞ্জনা দাবী করেছেন যে আপনি এবং আপনার স্বামীর যৌথ কাজে এবং তা অত্যন্ত পরিকল্পনা মাফিক আপনারা তার থেকে টিপছাপ নিয়ে তাকে ডিভোর্স নিতে বাধ্য করেছেন ৷ কথাটা কতোটা ঠিক ৷”
মিঠি নীলুর দিকে ক্ষোভের দৃষ্টিতে তাকালো আর বলল ” উনি যা বলেছেন তার কোনটাই সত্য নয় ৷ উনি আদালতকে মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন ৷ তিনি রুদ্র আহমেদের সাথে সম্পর্ক রখতে চাননি, তাছাড়া ওনার পাশে যেই পুরুষটি বসে আছেন তার সাথে ওনার গভীর সম্পর্ক আছে আর ছিলো তাই তিনি নিজের ইচ্ছাতেই ডিভোর্স দিয়েছেন ৷”
মিঠির থেকে এমন কথা শোনার জন্য নীলু মোটেও প্রস্তুত ছিলো না, শেষমেষ শ্রাবণের সাথে ওর পরকীয়ার সম্পর্ক ছিলো এটা প্রমান করতে চাইলো মিঠি ৷ নীলুর ইচ্ছা করছে এখন এখান থেকে দূরে কোথাও চলে গিয়ে নিজের প্রান বিষর্জন দিতে , এগুলো যে শোনাও পাপ ৷ নীলু চোখ বন্ধ করে আছে ৷ হঠাৎ ওকে ওর মন্তব্য পেশ করার জন্য ডাকা হতেই ও চমকে গেল ৷
নীলু শ্রবনের দিকে ভয়ার্ত দৃষ্টিতে তাকালো, শ্রাবন চোখের ইশারায় নীলুকে আশস্ত করলো ৷ নীলু ভয়ে ভয়ে যেতেই নীলুর উকিল ওকে প্রশ্ন করলো
” তো মিস সারিকা নীলাঞ্জনা আপনি মিঠিআহমেদের সব কথায় শুনলেন , ওনার এবং আপনার দাবী সম্পূর্ণ বিপরীত , আপনি কি বলতে চান ৷ আপনি কি এখনো আপনার দাবীতে অটল ?”
নীলুর মুখ দিয়ে আর কোন কথা বার হচ্ছে না, ওর মুখের ভাষা যেন কেউ কেড়ে নিয়েছে ৷ ওকে চুপ থাকতে দেখে রুদ্রর উকিল বলে উঠলো
” মাই লর্ড মিস সারিকা নীলাঞ্জনার এই নীরবতাই কি যথেষ্ট নয় ?”
তখন নীলুর উকিল জর্জকে উদ্দেশ্য করে বললেন
” মাই লর্ড আমার মক্কেল সারিকা নীলাঞ্জনা তিনি হয়তো নারভাস ফিল করছেন তাই আমি চাইবো শ্রাবন আরহামকে তার মতামত পেশ করতে ৷”
ওনার কথার সপক্ষে জর্জ হাজিরাতে শ্রাবনকে ডাকলেন ৷ রুদ্রর মুখে পৌশাচিক হাসি ৷নীলু মাথা নীচু করে ওর জায়গায় বসলো, আর বেঁচে থাকার কোন মানেই খুজে পাচ্ছে না ও ৷ ও আর নিজেকে রাখবে না শেষ করে দেবে এই ভাবনা ভাবতে লাগলো ৷
নীলুর উকিল বলল
” তা মিঃ শ্রাবন আপনি সারিকা নীলাঞ্জনাকে চেনেন?”
শ্রাবন সততার সাথে উত্তর দিলো ” জ্বি ৷”
” ঠিক কতোদিন বা কতো বছর ধরে চেনেন?”
” কতো দিন বললে ভুল হবে, আমি ওকে আমার ছোট্টবেলা থেকে চিনি, আমরা একই কলোনীতে থাকি , সে আমার প্রতিবেশী সেই সূত্রে ৷”
” আপনার সাথে ওনার সম্পর্কটা ঠিক কেমন ?”
শ্রাবন নীলুর দিকে তাকালো , মেয়েটা ভয়ে আর অপমানে মাথা নীচু করে চোখ বন্ধ করে আছে ৷ শ্রাবন নীলুর থেকে চোখ সরিয়ে বলল ” জ্বি ,তাকে আমি কখনো আমার বোনের চোখে দেখেনি, তাকে আমি আমার জীবনসঙ্গী হিসাবে পেতে চেয়েছিলাম কিন্তু পাইনি , তার আগেই ওনার রুদ্র আহমেদের সাথে বিয়ে হয়ে যাই ৷”
সকলের সামনে শ্রাবন নীলুর প্রতি ওর ভালোবাসা ব্যাক্ত করলো দেখে নীলু চমকে উঠলো । একটা মানুষ ঠিক কতোটা ভালোবাসলে আর কতোটা তাকে চাইলে এতো সাহসিকতার সাথে বলতে পারে নীলু জানেনা ৷ নীলুর উকিল বলল
” আপনার সাথে ওনার বিয়েটা হয়নি কেন?”
“জ্বি, তার প্রধান কারন নীলুর মা , তিনি বরারই লোভী প্রৃতির মানুষ তাই নিজের মেয়েকে একজন উচবিত্তশালী মানুষের সাথে বিয়ে দিতে চেয়েছিলেন তাই রুদ্র আহমেদের সাথে বিয়ে দিয়েছিলেন এটা বলায় বাহুল্য ৷”
” তা আপনি কি রুদ্র আহমেদের মতো অর্থনৌতিক ভাবে সচ্ছল নন?”
” জ্বি না, আমি তার মতো এতৈ সচ্ছল পরিবার থেকে নয় বলেই হয়তো আজ এই পরিনতি ৷”
” সারিকা নীলাঞ্জনার মা কোথায় থাকেন তিনি এখন?”
” তিনি তার স্বামী মারা যাওয়ার পরপরই তার সব জমিজমা বেঁচে টাকা নিয়ে নিজের মতো আছেন ৷”
” তো আপনি কতোটা যুক্ত দেবেন এ বিষয়ে যে রুদ্র আহমেদের বিরুদ্ধে করা অভিযোগ সত্য ৷ আপনার কাছে কি উপযুক্ত কোন প্রমান আছে ?”
তখন শ্রাবন মুচকি হেসে বলল ” জ্বি আছে ৷” শ্রাবনের এমন কথা শুনে নীলু শিউরে উঠলো ৷ শ্রাবন প্রমান কোথায় পাবে ? রুদ্র আর মিঠিও চমকে গেল তবে কি এমন প্রমান শ্রাবন দেবে তা দেখার অপেক্ষায় রইলো ৷
” তা আপনার কাছে কি প্রমান আছে সেটা আপনি মহামান্য আদালতের সামনে পেশ করূন তাতে তার সিদ্ধান্ত গ্রহনের ক্ষেত্রে সুবিধা হবে ৷”
শ্রাবন তখন একটা পেনড্রাইভ দিয়ে বলল ” এতে মিসেস মিঠির কালকের একটা সাক্ষাতকারের ভয়েজ রেকর্ডিং আছে তা যদি শুনতেন ৷ পুরুষের কন্ঠস্বরটি আমার আর বাকি দুইজন নীলাঞ্জনা এবং মিঠির ৷ তিনি 2 দিন আগে গড়িয়াতে আমাদের সাথে মিট করেছিলেন রুদ্র আহমেদের বিরুদ্ধে প্রমান দেবেন তাই ,এবং তিনি তার নিজের এবং রুদ্র আহমেদের সমস্ত কুকির্তি স্বীকার করেছেন এবং ইতিমধ্যে তিনি যে একটি তৃতীয় সম্পর্কে জড়িত তাও স্বীকার করেছেন ৷ তবে দুঃখ একটাই তিনি আজ সমস্তটা অস্বীকার করে সারিকা নীলাঞ্জনাকে দোষী প্রমান করার চেষ্টা করেছেন ৷ তবে আশা রাখা যায় যে এটা শুনলে আর কোন প্রশ্ন থাকবে না আর না থাকবে কিছু অজানা ৷”
মিঠি ভয়ে শুকিয়ে কাঠ ৷ ওর কথাগুলো যে কেউ রেকর্ড করতে পারে তা ও কখনোই ভাবেনি ৷ এটা শুনলে নিশ্চিত ওদের সব কার্যকলাপ ফাঁস হবে ৷ রুদ্র মিঠিকে দাঁতে দাঁত চেপে বলল” এগুলো কি মিঠি ৷”
মিঠি চুপ আছে , কি বলবে বুঝতে পারছে না ৷”
কিছুখনের মধ্যেই সমস্তটা জর্জ সহ সবাই শুনলেন এবং প্রমান হলো যে নীলুর করা অভিযোগ সত্য ৷ শ্রাবন নীলুর পাশে বসে আছে ব দুজনের কেউ কারোর দিকে তাকাচ্ছেনা, নীলু যেন এখনো বিশ্বাস করতে পারছে না সবটা ৷
জর্জ বললেন
” এতদ্বারা সকল প্রমানের ভিতিতে আদালত এই সিদ্বান্তে আসে যে সারিকা নীলাঞ্জনার করা অভিযোগের পক্ষে যথেষ্ট যুক্তি আছে এবং তাই প্রমানিত তাই আদালত এই কেসের পক্ষে রুদ্র আহমেদ ও মিঠি আহমেদকে 15 বছরের সশ্রম কারাদন্ড ঘোষনা করছে ৷”
নীলু ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো ৷ রুদ্র নীলুর দিকে তেড়ে এসে আচমকাই নীলুর গলা চেপে ধরতেই চারিপকশ থেকে পুলিশ এসে ওকে ধরে নিয়ে গেল টানতে টানতে আর মিঠিকেও নিয়ে গেল ৷ শ্রাবন নীলুর মাথায় হাত বুলিয়ে বলতে লাগলো ” জীবনটা এতো সহজ না নীলু, আমাদের কে বাঁচার জন্য প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করতে হয় ,
হার মানলে তুমি পিছিয়ে পড়বে তাই সব পিছুটান রেখে এগিয়ে যাও ৷”
নীলু আর পারলো না সহ্য করতে শ্রাবনকে আকড়ে ধরে শ্রাবনের বুকে অঝোরে কেঁদে উঠলো ৷ রাঙাবে দুজন ভালোবাসার রঙিন কাব্য যা হবে #জলকাব্য ৷
ফরমাল গেটআপে রেডি হয়েছে শ্রাবন ৷ সন্ধ্যা 7টা বাজে, ওদের অনুষ্ঠান শুরূ 8টা তে ৷ শ্রাবন নীলু আর শাবনের মা রেডি হয়েছে, নীলু একটা লাল রঙের শাড়ি পরেছে যেটা শ্রাবন কোর্ট থেকে ফেরার সময় ওকে কিনে দিয়েছিলো ৷ শাবনের থেকেও নীলুর মনের মাঝে ভয়টা যেন একটু বেশিই কাজ করছে ৷ প্রথম ভয় হলো শ্রাবনের রেজাল্ট নিয়ে আর দ্বিতীয় ভয় আজ ও শ্রাবনকে ওর মনের কথা বলতে চাই , তবে তা এক্ষুনি কিন্তু কীভাবে শুরু করবে বুঝতে পারছে না ৷ নীলু ওর ঘরের মধ্যে পাইচারি করছে ৷ ও এতদিন অপেক্ষা করেছিলো এই দিনটার যেদিন এই কেসটা সলভ হবে আর ও কোন দ্বিধা ছাড়াই শ্রাবনকে নিজের মনের কথাটা জানাতে পারবে ৷ চাইলে ও পরেও বলতে পারে শ্রাবনকে কথাটা কিন্তু ও আজই বলবে কারন আজ যদি শ্রাবন বিজয়ী হয় এবং নীলু যদি পরে ওর মনের কথা বলে তাহলে শ্রাবনের যদি মনে হয় যে নীলু কেবল শাবনের ফেম আর সাফল্য দেখে শ্রাবনকে ভালোবেসেছে , কিন্তু সেটা তো ভুল, নীলুর ভালোবাসা নিঃস্বর্থ ৷নীলু কথাগুলো মনে মনে ভাবলো ৷ ওর ভাবনার মাঝখানে শ্রাবন আসলো ” নীলু, কিরে রেডি হলি ?”
নীলু চমকে উঠলো, থতমত মুখ করে বলল ” হ্যাঁ ,হ্যাঁ আমি তো রেডি ৷”
শ্রাবন নীলু দিকে একবার তাকিয়ে নিলো, মেয়েটাকে একদম অন্যরকম লাগছে শ্রাবনের ভাষায় চোখ ধাঁধানো ৷ শ্রাবন নীলুকে একবার ভালো ভাবে দেখে নিয়ে বলল “চল !”
নীলু আমতা আমতা করে বলল ” ভাইয়া একটা কথা ছিলো ৷” শ্রাবন পিছন ঘুরে মুচকি হাসলো,ও হয়তো কিছুটা আন্দাজ করতে পেরেছে কিন্তু তা নীলুকে বুঝতে দিলে হবে না, শ্রাবন চাই যে নীলু মাঝেও একপ্রকার ছটফটানি হোক ৷ তাই বলল ” পরে শুনবো, এখন চল নাহলে লেট হয়ে যাবে ৷”নীলু আবার বললো
” ভাইয়া এখনই কথাটা শোনোনা প্লিজ , খুব দরকারি ৷” শ্রাবন হাসি কন্ট্রোল করে বলল ” বলেছি না পরে তো পরে ৷” নীলুর মাঝে অস্থিরতা বাড়ছে, ও শ্রাবনকে এখনই বলতে চাই কিন্তু শ্রাবন তো শুনতে নারাজ ৷ এরপর ওরা তিনজন বেরিয়ে গেল ৷ ওয়েটিং রুমে বসে আছে সবাই, এবার মধ্যেই চিন্তার ছাপ ৷ নীলুর শ্রাবনের রেজাল্টের থেকে বেশি ও কিভাবে কথাটা শ্রাবনকে বলবে তাই চিন্তা করছে ৷ নীলু শ্রাবনকে নরম সুরে ডেকে বলল ” ভাইয়া প্লিজ এবার কথাটা শুনবে ?” শ্রাবনের পেট ফাটা হাসি আসছে নীলুর অবস্থা দেখে ৷তবুও নীলুর মধ্যে চঞ্চলতাটা ওর বেশ লাগছে ৷ তাই আবার বলল ” এখন না নীলু পরে শুনবো এখন আমার চিন্তা হচ্ছে ৷”
শ্রাবনের মা বলে উঠলো ” এমন করছিস কেন! মেয়েটা সেই থেকে কি বলবে বলছে তুই শুনতেই রজি না, কি বলছে শুনে দেখ ৷” শ্রাবন আবার বলল ” মা পরে শুনবো বললাম তো ৷” নীলু এবার পারলে কেঁদেই দেবে ৷ শ্রাবন বেশ এনজয় করছে মোমেন্টটা ৷ ও এতবছর ধরে নীলুকে ভালোবেসে গেছে নিরবে আর নীলু এটুকু সময় সহ্য করতে পারছে না !
এবার আসলো সকলের নাম এনাউন্সের পালা ৷ সবাই স্টেজের দিকে চাতক পাখির মতো চেয়ে আছে, সবার সাথে শ্রাবন ও ৷ নীলু এবার শ্রাবনের পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে শ্রাবনের শার্টটা ধরে কাদোকাদো গলায় বলল
” প্লিজ ভাইয়া শোনো না ৷” শ্রাবন মুচকি হেসে বলল
” বল কি বলবি ৷” নীলুর চোখ দিয়ে টপটপ করে জল গড়িয়ে পড়ছে ৷ শ্রাবন নীলুর চোখ মুছে বলল ” কাঁদলে তোকে পুরো পেতনির মতো লাগে, তা এখন না কেঁদে বল কি বলবি ৷” নীলু চোখ মুছে বলল ” আমি তোমাকে ভালোবাসি ভাইয়া ৷” শ্রাবন মজা করে বলল ” ভালোবাসি ভাইয়া ৷ আমাকে তুই ভাই হিসাবে ভালোবাসিস তাইতো ?” নীলু শ্রাবনের দিকে তাকিয়ে বলল ” তুমি কি সত্তিই বোঝোনি ?” ওদের কথার মাঝেই শ্রাবনের মা শ্রাবনের কাছে এসে বললেন ” এই শ্রাবন তোর নাম ডেকেছে , তুই প্রথম হয়েছিস ৷ উনি আবেগে কেঁদে ফেললেন ৷ শ্রাবন ওনার কপালে ভালোবাসার পরশ একে বললেন ” আমি পেরেছি মা ৷”
শাবন স্টেজে গেল, ওর গলায় একটা মেডেল পরিয়ে একটা সম্বদ্ধনা দেওয়া হলো , আর 5 লাখ টাকার একটা চেক ও সাথে গান করার জন্য একটা এ এগ্রিমেন্ট সই করলো ৷” শ্রাবনকে নিজের সমন্ধে কিছু বলতে বললে সে নীলু আর ওর মাকে স্টেজে আসার জন্য বলল ৷ ওনারা স্টেজে যেতেই একপাশে নীলু ও অপর পাশে শ্রাবনের মা দাঁড়ালেন, নীলু মাথা নীচু করে আছে, আজ হাজার হাজার মানুষ ওকে দেখছে গানের জগতে নতুন এক প্রতিভা শ্রাবন আরহামের সাথে ৷ শ্রাবন বলতে শুরু করলো ” প্রত্যেক মানুষের জীবনের সাফল্যের পিছনে একজন নারীর অবদান থাকে আর সেই নরী হলেন আমার মা ৷ অনেক অভাব অনটনের সংসার থাকলেও তিনি কখনো আমাকে অভাবের ছোঁয়া পেতে দেননি ,আগলে আগলে রেখেছেন সবসময় ৷ তাই ওনাকে নিয়ে বললেও আমার ভাষার শেষ হবে না ৷ আর আমার আর এক পাশে যিনি আছেন তিনি হলেন আমার ভবিষ্যৎ জীবনের অর্ধাঙ্গিনী , সারিকা নীলাঞ্জনা ৷ ”
জলকাব্য পর্ব ১৮
সারিকা নীলাঞ্জনা নামটা শুনতেই রুদ্র চমকে উঠলো ,জেলের ভিতরে কয়েদিদের পোশাক পরে বসে আছে ও আর জেলের বাইরে ওর সামনে থানার ওসি শ্রাবনের লাইভ ফাংশন দেখছেন,ফোনের ভলিউম ফুল স্পিডে দিয়ে, তাই ওর কানে কথাগুলো পৌচ্ছাছে৷ নীলুর নাম শুনে রুদ্রর চোখজোড়া ভরে এলো ৷ মেয়েটা ওর থেকে মুক্তি পেয়ে কতো সুখী ৷ এই জন্যই হয়তো বলে কাউকে আঘাত দিয়ে সুখী হওয়া যাইনা, যার ফলস্বরুপ রুদ্র আজ জেলে ৷
শ্রাবন আবার বলতে শুরু করলো ৷
” জীবনে চলার পথে অনেক কঠিন পথ পার করেছি তবে আজ আর একটা কঠিন রাস্তা পার করতে যাচ্ছি,,,,,
কথাটা বলে ওর নীলুর সামনে হাটুগেড়ে বসে বলল
” উইল ইউ বি মাই কাব্য ? যেটা হবে জলের মতো স্বচ্ছ আর কাব্যগ্রন্থেরর মতো সুন্দর ৷ যাকে আমার ভাষায় আখ্যায়িত হবে # জলকাব্য ৷” নীলু আবেগে কেঁদে ফেলল ৷ চারিদিক থেকে হাততালির আওয়াজে কান ঝালাফালা করার উপক্রম ৷ সকলের জীবনে ভালোবাসার মানুষটা যদি এভাবেই ভালোবাসতো তাহলে সবার জীবনই হতো এক একটা কাব্য ৷ #জলকাব্য ৷
সমাপ্ত,,,
অল্পের মধ্যে আমি অনেক কিছু ফুটিয়ে তুলতে চেয়েছি , জানিনা কতোটা সক্ষম হয়েছি তবে নিজের সাধ্য মতো চেষ্টা করেছি ভালো ভাবে উপস্থাপন করার ৷গল্পটা যেদিন প্রথম পর্ব দিই সেদিন গল্পটাতে আমি প্রচুর খারাপ মন্তব্য শুনেছিলাম যাতে করে আমার মনোবল সম্পূর্ণ ভেঙে গিয়েছিলো, তবে সেদিন নিজেকে মানিয়ে নিয়েছিলাম বলেই গল্পটা সুন্দরভাবে উপস্থাপন করছে পেরেছি ৷ এখন আর কেউ খারপ মন্তব্য করলে গায়ে লগেনা এসব , ইগনোর করি ৷ তবে একটাই কথা বলবো যে বিঞ্জদের মতো গল্পের প্রথম পর্ব পড়ে খারাপ মন্তব্য করবেন না বা পুরো গল্প বিচার করবেন না , এতে আপনি নিজের বুদ্ধিহীনতার পরিচয় দেন ৷ যাইহোক অনেক কিছু বলে ফেললাম, অবশেষে একটাই কথা বলবো গল্পটা কেমন হয়েছে জানাবেন , আর অনুভূতি প্রকাশ করবেন ৷ ধন্যবাদ ৷
অসাধারন…..বলে বোঝানো যাবে না কত সুন্দর হয়েছে গল্পটা,
thanks
Khub Khub Khub Khub Khub Khub Khub Khub sundor hoeache just osm khub valo legeche
Khub khub khub sundor hoiche……