এক মায়াবতীর প্রেমে পর্ব ৪৮

এক মায়াবতীর প্রেমে পর্ব ৪৮
তানিশা সুলতানা

রেগে বম হয়ে আছে তারেক রহমান। ছেলে, মেয়ের জামাই এক জনও তাকে মান্য করে না। মেয়ের জামাই না হয় পরের ছেলে। কিন্তু তামিম সে তো নিজের ছেলে। এমন একটা বাঁদর কি করে জন্ম দিলো সে? এই ছেলে কখনোই তারেক রহমানের হতে পারে না। হয়ত হাসপাতাল থেকে কোনো বাঁদর বাবা মায়ের বাচ্চার সাথে পরিবর্তন হয়ে গিয়েছিলো। পরমুহূর্তেই আবার তারেকের মনে পড়ে তামিমের জন্ম তো বাড়িতেই হয়েছিলো। দুষ্টুটা পৃথিবীতে আসার সময়ও তাড়াহুড়ো শুরু করে দিয়েছিলো। হাসপাতালে নেওয়ার সময় দেয় নি।

অনবরত পায়চারি করে যাচ্ছে তারেক। ইতোমধ্যেই খবর পেয়ে গেছে ছেলে তার মেয়ের শশুর বাড়িতে গিয়েছে। এবং এটাও জেনে গেছে লাবিবা নামের ওই মেয়ের পেছন পেছন গিয়েছে।
ইতি বেগম কাচুমাচু হয়ে দাঁড়িয়ে আছে এক কোণায়। খাবার গরম করেছে। কিন্তু খেতে ডাকতে সাহস পাচ্ছে না। আবার না একটা ধমক লাগিয়ে দেয়। রাগী মানুষদের সাথে সংসার করা যে কি কঠিন হারে হারে টের পাচ্ছে ইতি বেগম।
তারেকের নজর পড়ে ইতির পানে। রাগটা যেনো তার মুহূর্তেই চাড়া দিয়ে ওঠে। দাঁড়িয়ে পড়ে স্থির হয়ে। দাঁতে দাঁত চেপে বলে

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“সত্যি করে বলো তো এটা কার ছেলে? এই বাঁদর ছেলে আমার হতেই পারে না।
ইতি বেগম কিটকিটিয়ে হেসে ওঠে। ভয় তার মুহুর্তেই গায়েব।
” উকিল সাহেব আপনার মনে নেই আপুর সাথে যখন প্রেম করতে গিয়ে বাবার কাছে ধরা খেয়ে গিয়েছিলেন। বাবা আপনাকে সাফ সাফ জানিয়ে দিয়েছিলো আপনার সাথে মেয়ে দিবে না। তখন আপনি বাবার লুঙ্গি টেনে ধরে বলেছিলেন “হয় মেয়ে দিবেন নয়ত লুঙ্গি খুলে নিবো”
উচ্চস্বরে হেসে ওঠে ইতি। তারেক কাচুমাচু করে। আসলেই সে এমনটা করেছিলো। বলা বাহুল্য তামিমের থেকেও বেশি দুষ্টু সে ছিলো। হেড মাস্টারকে প্রচন্ড রোদে মাঠের মধ্যে বেঁধে তার টাক মাথায় ডিম ভেঙেছিলো এটা পরিক্ষা করতে টাক মাথায় ডিম ভাজি করা যায় কি না?
এর জন্য অবশ্য তাকে স্কুল থেকে তাড়িয়ে দিয়েছিলো।
দীর্ঘ শ্বাস ফেলে তারেক। জিভ দ্বারা ঠোঁট ভিজিয়ে ছোট করে বলে
“খাবার দাও।
” আসুন

তামিম অথৈয়ের রুমেই ঘুমবে। স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে অর্ণব। তার রুমে ঘুমলে আজকে জীবনটা ছারখার হয়ে যেতো। রাতের খাবার খেয়ে নিয়েছে সবাই। তন্নি শাড়ি খুলে সুতি থ্রি পিছ পড়ে নিয়েছে। এই মুহুর্তে অথৈয়ের রুমে বসে আছে। অথৈ খুবই যত্ন সহকারে পড়ার টেবিলে গোলাপ ফুল সাজাচ্ছে। সাদা রংয়ের বোতল ভর্তি পানি। সেই পানিতে ডুবিয়ে রাখছে ফুলগুলো। এতে না কি কয়েকদিন ভালো থাকবে। অথৈয়ের তো ইচ্ছে করছে এই ফুল গুলো সারাজীবন ভালো রাখতে। কিন্তু সেটা কি আর সম্ভব? ফুল এবং মানুষকে সারাজীবন বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব নয়৷ তন্নি ইতোমধ্যেই কয়েকবার জিজ্ঞেস করে ফেলেছে “ফুল গুলো কে কিনে দিয়েছে?”
অথৈ জবাব দিচ্ছে না। সে কাউকেই বলবে না ফুলের কথা। কি বলবে?

“আমি সাগর ভাইয়ের গলায় পা রা দিয়ে ফুল এনেছি?”
লজ্জা জনক বিষয় না?
তামিম অথৈয়ের বেলকনিতে দাঁড়িয়ে উঁকি ঝুঁকি মারছে সামনের বিল্ডিং এ। সে ঠিক দেখেছে লাবিবা এই বিল্ডিং এ ঢুকেছে। এবং তার মন বলছে এই রুমেই থাকবে সে। তামিমের ভাবনা সত্যি করে দিয়ে বেলকনিতে প্রবেশ করে লাবিবা। পরনে তার লাল রংয়ের ফ্রক। চুল গুলো দুই বিনুনি গেঁথেছে।
লাবিবাকে দেখেই তামিম তার ছোট ছোট চুল গুলো টেনে খাড়া খাড়া করার চেষ্টা চালায়। এবং পার্ট শার্ট নেওয়ার চেষ্টা আর কি। চুল টেনে টুনে ঠিক করতে না পেরে মনে মনে হতাশ হয় তামিম। বিরবির করে বলে “চুলের মাইরে বাপ পাকিস্তান। আর জীবনেও চুল কাটমু না। তখন দেখমু খাঁড়া না হয়ে যায় কোথায়”

লাবিবার নজর পড়ে তামিমের পানে। তামিম হেসে হাত নাড়ায়। লাবিবা ভেংচি কাটে।
তামিম বুকে হাত দিয়ে বলে
“ওহে সুন্দরী মুখ বাঁকা না করে ঠোঁট চৌকা করতেও তো পারো”
লাবিবা নিজের পায়ে থাকা স্যান্ডেল খুলে ফিক্কা মারে তামিমের পানে। তামিম সেটা ক্যাচ ধরে ফেলে। এবং বলে
“জুতো ফিক্কা না মেরে ভালোবাসাও তো ফিক্কা দিতে পারতে”
বিরক্ত হয়ে লাবিবা বেলকনি ছাড়ে।
তামিম হতাশার নিঃশ্বাস ফেলে লাবিবার জুতোর দিকে তাকিয়ে থাকে। হ্যালো কিটির মাথা আঁকা জুতোর ছাঁদে। একদমই নতুন জুতোটা।
“ওহে বালিকা আরেকটা জুতোও দিয়ে যাও। এই একটা জুতো আমি কার কাছে বিক্রি করবো?”

প্রথমবার তন্নি অর্ণবের রুমে ঘুমবে। অর্ণব নিজ উদ্যোগে গোটা কক্ষ গুছিয়ে নিচ্ছে। এমনিতেও রুমটা সাজানো গোছানো ছিলো তারপরও আর একটু টাচ আপ দিচ্ছে। যাতে মায়াবতী ঘুমতে এসে বলে “বাহহ আমার বরটা তো বেশ গোছালো”
একবার ফুল আনতে চেয়েছিলো পরে ভাবলো “যতবারই ফুল এনেছি ততবারই বাসর ভেস্তে গিয়েছে। আজকে আর ফুল এনে বাসরের বারোটা বাজাতে চাই না”
রাত বারোটা বেজে আট মিনিট। অথৈ ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে। তামিম এক কোণায় ঘুমিয়ে আছে। তন্নি দাঁড়িয়ে আছে। কি করবে না করবে বুঝতে পারছে না। তার কি এখানে ঘুমনো উচিত? না কি অর্ণবের কক্ষে যাওয়া উচিত?

যাবে যে অথৈকে কি বলবে?
ইসস এমন লজ্জা জনক পরিস্থিতিতে আগে পড়ে নি তন্নি।
মাথা নুয়িয়ে দাঁত দিয়ে ঠোঁট কামড়ে ভাবছে তন্নি। অথৈ বালিশ ঠিকঠাক করে এসির পাওয়ার কমিয়ে দেয়। লাইট অফ করতে গিয়ে তাকায় তন্নির পানে৷
“দাভাই এর রুমে চলে যা। নাহলে দেখা যাবে রাত দুপুরে তোকে টেনে টুনে নিয়ে যাবে
বলতে বলতেই বালিশে গা এলিয়ে দেয় অথৈ। টেবিলের ওপর থেকে ফোন নিয়ে চেক করে নেয়। সাগর নক করেছে। কপালে ভাজ পড়ে অথৈয়ের। মহারাজ কি মনে করে তাকে স্মরণ করলো?
তন্নি এখনো দাঁড়িয়ে আছে। অথৈ কপালে ভাজ ফেলে বলে

” যাচ্ছিস না কেনো?
জলদি যা লাইট অফ করবো আমি৷
তন্নি গুটিগুটি পায়ে বেরিয়ে যায় রুম থেকে। কষ্ট পেলো কি? অথৈ ভাবে। এভাবে বলা ঠিক হয় নি৷ সাগরের সাথে কথা বলার এক্সাইটমেন্ট এ বলেছে ফেলেছে। পেছন থেকে একবার ডাকতে চায় তন্নিকে। তখনই দ্বিতীয় বার টুংটাং শব্দে মেসেজ আসে। আর ডাকে না অথৈ।
ফোনের লক খুলে মেসেঞ্জারে ঢুকে পড়ে। সাগর লিখেছে
“অথৈ
থ্যাংক ইউ এতো সুন্দর একটা বিকেল গিফট করার জন্য”
ঠোঁট কামড়ে হাসে অথৈ। রিপ্লাই করে না। ফোন বন্ধ করে ফেলে রাখে বালিশের তলায়।

অর্ণবের রুমের সামনে এসে ইতস্ততবোধ করতে থাকে তন্নি। কিভাবে ঢুকবে এই রুমে? লোকটা কি করছে? একটু কি বের হতে পারে না? তন্নিকে টেনে নিয়ে যেতে পারে না?
আক্কেল জ্ঞান হীন লোক৷
“মায়াবতী এসো
ভাবনার মাঝেই অর্ণবের মৃদু স্বরের নেশালো ডাক কানে বাজে তন্নির৷
শুকনো ঢোক গিলে। লোকটা তাকে দেখলো কোথা থেকে? কই তন্নি তো তাকে দেখতে পাচ্ছে না।
ভাবতে ভাবতে এক পা বাড়ায় তন্নি। তখনই অর্ণব বলে ওঠে

” স্টপ
তন্নি দাঁড়িয়ে পড়ে। অর্ণব দরজার আড়াল থেকে বের হয়। এগিয়ে যায় তন্নির নিকট। এবং টুপ করে কোলে তুলে নেয়। ভয় পায় তন্নি। পড়ে যাওয়ার ভয়ে শক্ত করে আঁকড়ে ধরে অর্ণবের গলা৷
“ফুলহীন বাসর ঘরে তোমাকে স্বাগতম জান”
কান গরম হয়ে ওঠে তন্নির। বাসর? আজকে তাদের ফাস্ট নাইট? বুকের ধুপ বুকনি বেড়ে যায়। অস্বাভাবিক ভাবে কাঁপতে থাকে হৃদপিণ্ড। তন্নি কি ভয় পাচ্ছে? অবশ্যই পাচ্ছে। অর্ণব তন্নিকে নিয়ে বিছানায় শুয়িয়ে দেয়। এবং গিয়ে দরজা বন্ধ করে এসে নিজেও তন্নির পাশে শুয়ে পড়ে। দুজনেরই দৃষ্টি মাথার ওপরে বিদ্দমান গোলাপি রংয়ের দেয়ালে। অশান্ত হয়ে আছে দুজনেরই হৃদয়।
কিছু মুহুর্ত নিরবতা পালন করে অর্ণবও প্রথমে বলে ওঠে

“মায়াবতী?
তন্নি অর্ণবের দিকে ঘুরে। চোখে চোখ রেখে বলে
” হুমম?
অর্ণব মুহুর্তেই তন্নিকে টেনে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়। জিভ দ্বারা ঠোঁট ভিজিয়ে বলে ওঠে
“আ…আই ওয়ান্ট টু বি ই…….ইন্টিমেট উইথ ইউ। পারমিশন দিবে?
না দিলেও শুনবো না আমি।
তন্নি চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে নেয়। অর্ণবের নিঃশ্বাস গুলো আঁচড়ে পড়ছে তন্নির চোখেমুখে। হালকা সিগারেটের গন্ধ ভেসে আসছে অর্ণবের মুখ থেকে। বিরক্ত হয় তন্নি। কপাল কুঁচকে অর্ণবের থেকে সরতে চায়।

অর্ণব আরও শক্ত করে জড়িয়ে নেয়। ওষ্ঠ রাখে তন্নির ঘাড়ে। লম্বা করে শ্বাস টানে৷ ভূমিকম্পের ন্যায় কেঁপে ওঠে তন্নির সমস্ত সত্তা। খাঁমচে ধরে অর্ণবের চুল।
অর্ণব সেভাবে থেকেই ফের বলে
“I can’t live without you.
Please let me be intimate for once?
বলতে বলতে ওষ্ঠ জোড়া তন্নির ওষ্ঠের ভাজে নিয়ে আসে। ওষ্ঠ ছুঁয়িয়ে অপেক্ষায় থাকে তন্নির জবাবের আশায়। আঁখিপল্লব তন্নির বন্ধ চোখের পাতায়৷
তন্নি মুখ খোলে না। আর না চোখ মেলে তাকায়৷ শুধু ওষ্ঠের ভাজে থাকা অর্ণবের ওষ্ঠে ছোট্ট করে চুমু খায়।

ব্যাসস বেপারোয়া অর্ণব অনুমতি পেয়ে যায়। মুহুর্তেই তন্নির ছোট্ট সত্তা নিয়ে নেয় নিজ দখলে। ওষ্ঠের ভাজে ওষ্ঠ মেলাতে থাকে বেপারোয়া ভঙ্গিমায়৷ অবাধ্য হাতের বিচরণ চলতে থাকে বক্ষদেশে। অস্থির করে তুলে তন্নিকে।
গোটা কক্ষ মুখরিত হতে থাকে দুজনার ভাড়ি নিঃশ্বাসের শব্দে।
কতক্ষণ অর্ণবের বেপারোয়া অত্যাচারে বিভোর ছিলো ঠিক জানা নেই তন্নির। তবে দীর্ঘক্ষণ পরে ছেড়ে দেয় তন্নিকে। ক্লান্ত ভঙ্গিমায় বড়বড় নিঃশ্বাস নিতে থাকে তন্নি।
তখনই অর্ণব তন্নির দুই গালে হাত রেখে বলে ওঠে

এক মায়াবতীর প্রেমে পর্ব ৪৭

” আর একবার কাঁদবা জান প্লিজ?
তন্নি বুঝতে পারে না কি বললো। ভ্রু কুচকে তাকায় অর্ণবের পানে। অর্ণব ফের বেপরোয়া হওয়ার তাদিগে ব্যস্ত৷ মৃদু স্বরে অনুন্নয় করে বলে
“এইবারই শেষ প্লিজ। তোমার কান্নার শব্দ আমার হৃদয় শান্ত করতে সক্ষম জান।

এক মায়াবতীর প্রেমে পর্ব ৪৯