শাহজাহান তন্ময় পর্ব ৫+৬

শাহজাহান তন্ময় পর্ব ৫+৬
Nabila Ishq

তন্ময় ছেলে হিসেবে দারুণ। তার বয়সী ছেলেরা এলাকায় মারধর করে বেড়ায়। মেয়েদের রাস্তাঘাটে টিজ করে। গার্লফ্রেন্ড নিয়ে ঘুরে কিংবা পড়াশোনায় ফাঁকিবাজি করে। খারাপ কাজে লিপ্ত হয় অথবা আজে-বাজে ছেলেদের সঙ্গে ওঠবস থাকে। রাতবিরেত বাড়ি ফেরে। এমনটাই তো আজকালকার ছেলেরা করে। মোস্তফা সাহেব নিউজপেপারে এগুলোই দেখেন। আবার নিজের প্রিয়তম বন্ধু রওশন প্রায়সময় বলেন,

‘আমার ছেলেগুলো কথাবার্তা শোনে না। পড়ালেখায় ভালো না। রাতবিরেত বাড়ি ফেরে। আমার কথার মূল্য দেয় না। মুখেমুখে তর্ক করে। লাগামছাড়া হয়ে গিয়েছে একপ্রকার। আর তোর ছেলেটাকে দেখ। মাশাআল্লাহ। সবদিক দিয়েই পারফেক্ট। আমি একটা খারাপ দিক দেখিনা জানিস। আজকাল এতো ভদ্র হয় ছেলেমানুষ? পাব্লিকে চান্স পেল। ফার্স্টক্লাস রেজাল্ট। কী ঠান্ডা মাথার ছেলে! দেখলেই আদুরে লাগে। এতো শান্তি লাগে আমার। সেদিন তন্ময়ের সাথে দেখা হলো নীলক্ষেত। বই কিনছে। গেলাম সামনে। সালাম দিয়ে প্রশ্ন করল কই যাচ্ছি। আমি বললাম বই নিতে এসছি কিছু। উপন্যাসের বই। ফ্রি টাইমে পড়ব।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

ও সুন্দর আমাকে ফার্স্টক্লাস ইংরেজি বাংলা অনুবাদিত উপন্যাস গুলো একেক দোকানে নিয়ে কিনে দিল। বইয়ের টাকা গুলো ওই দিল। আমি মজা করে বললাম, যেদিন টাকা ইনকাম করবে সেদিন আংকেলকে কিনে দিও। আজ আমি দেই। সে জবাবে বলল, এগুলো আমার টাকা। আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম, তোমার টাকা কীভাবে? তুমিতো ইনকাম করছ না! তোর ছেলেটা বলল, টিউশনির টাকা। আমার ভাই-বোনদের আমি পড়াচ্ছি। বাবা-চাচ্চুরা আমাকে দারুণ ভাবে বেতন দেন। এই বিষয়টা আমার অনেক ভালো লাগল। এতো সুন্দর ভাবে ওকে কীভাবে বড়ো করলি বলতো? টিপস দে!’

মোস্তফা সাহেবের বুকটা ফুলে ওঠে তখন। গর্বে দাউদাউ করে জ্বলে রক্তের বিন্দু। ভীষণ ভাবে গর্ববোধ করেন ছেলেকে নিয়ে। তন্ময়কে কিছু শেখাতে হয়নি। ছেলেটা স্বেচ্ছায় ওমন। একটু গম্ভীর স্বভাবের তবে ভীষণ শান্ত। খুবই বুদ্ধিমান। অবশ্য রেগে গেলে অস্থির হয়। ঘরের জিনিসপত্র ভাঙে। তবে সেটা তার চোখে কখনোই বড়ো কোনো ইস্যু মনে হয়নি। এতগুলো ভালোর মধ্যে ওই অতটুকু খারাপ কোনো ব্যাপার না।
কিন্তু হঠাৎ করে সেই ছেলের জন্য বাড়িতে নালিশ এলে, ঠিক কী প্রতিক্রিয়া তার হওয়া প্রয়োজন বুঝে পেলেন না মোস্তফা সাহেব! তন্ময় মারধর করেছে। এলাকার ছেলেপেলে নিয়ে কোন লোককে নাকি পিটিয়েছে৷ ভিক্টিমের পরিবার হতে কোনোপ্রকার বিচার এখনো আসেনি বিধায় তিনি লিভিংরুম বসে। তার শান্ত ছেলেটা এতো বড়ো ধরনের কান্ড তো আর এভাবেই ঘটায়নি। নিশ্চয়ই কোনো কারণ রয়েছে। সেই কারণ জানার জন্যই তিনি বসে। অফিসে যাননি। ছেলে আসবে, কথা বলবেন তারপর অন্যকিছু।

তন্ময় এলো দুপুরে। মুখশ্রী থমথমে। টি-শার্ট নোংরা। জুতোয় ধুলাবালি। চুল উষ্কখুষ্ক। ক্লান্তি মুখমণ্ডল জুড়ে। লিভিংরুমে সকলেই উপস্থিত ছিল। তন্ময়কে দেখতেই জবেদা বেগম ছুটে গেলেন। ছটফট নয়নে ছেলেকে পর্যবেক্ষণ করছেন। মোস্তফা সাহেব গুরু গম্ভীর স্বরে বলেন, ‘আসতে দাও ওকে। কথা আছে।’
জবেদা বেগম না চাইতেও সরে দাঁড়ান। তন্ময় এগিয়ে যায় বাবার দিক। তার চাচারাও পাশাপাশিই বসে। মোস্তফা সাহেবের প্রশ্ন করতে হলো না। তন্ময় নিজেই সম্পূর্ণ বিষয় খুলে বলে।

লোকটার নাম রাজু। এখানকার নয়। হুট করেই তাদের এলাকায় আগমন। অল্পবয়সী মেয়েদের নজরে রাখছে। লোভ দেখিয়ে নিয়ে গিয়ে পাচার করার ধান্দায়। ইতোমধ্যে দু-তিনটে বাচ্চা মেয়েকে কিডন্যাপ করেছে। তথ্যসূত্র পেয়েছে তন্ময়। সব শুনে হাঁফ ছাড়লেন মোস্তফা সাহেব। জানালেন নিজে যাবেন পুলিশ স্টেশন। এই বিষয় নিয়ে খোলামেলা আলোচনা হওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাদের মেয়ের যদি কিছু হয়ে যেতো? আর তার ছেলেটা…মোস্তফা সাহেব নরম গলায় বললেন, ‘যাও ফ্রেশ হয়ে রেস্ট নাও। এরপর থেকে কিছু হলে আমায় জানাবে কেমন? আমিতো আছি সাহায্যের জন্য। তোমার যদি কিছু হতো?’

তন্ময় মাথা দোলায়। ওপরে যেতে নিচ্ছিল। কিছু একটা ভেবে ফিরে এল। দাঁড়াল আনোয়ার সাহেবের সামনে। অসম্ভব গভীর গলায় বলল, ‘চাচ্চু। সুমনা মেয়েটা ভালো না। অরুর সঙ্গে মিশতে দেওয়া ঠিক হচ্ছে না।’
আনোয়ার সাহেবের মখশ্রী থমথমে। তন্ময়ের মাথায় হাত রাখলেন। চুল বুলিয়ে বললেন, ‘তুমি যা বলবে তাই। আমি কথা বলে নেব তোমার চাচীর সঙ্গে।’

গোসল সেড়ে তন্ময় বিছানায় টানটান হয়ে শুয়ে পড়ল। চোখজোড়া বুঁজে নিলো চট করে। ক্রোধে মাথাটা এখনো ব্যথিত। দরজা হতে ঠকঠক শব্দ ভেসে আসছে। তন্ময় আওয়াজ দিল, ‘কে? কী প্রয়োজন?’
অরুর মেয়েলী গলার স্বর শোনা গেল, ‘আমি। কফি পাঠাল বড়ো মা।’
তন্ময় বিছানা ছাড়ল। একটা টি-শার্ট গায়ে জড়িয়ে নিল। দরজা খুলতেই অরু ভেতরে ঢুকল হুড়মুড়িয়ে। কফির মগটা বাড়িয়ে ধরল। তন্ময় গাধাটিকে ভালোভাবে দেখে কফির মগ নিল। চুমুক বসিয়ে চেয়ারে বসল। পিছু-পিছু অরুও আসলো। গাল ভরে হেসে বলল, ‘তন্ময় ভাই। আপনি যখন শয়তান লোকটাকে মারছিলেন না, অনেক হ্যান্ডসাম লাগছিল আপনাকে। একদম হিরো!’

তন্ময় কেশে ওঠে। বড়ো বড়ো চোখে তাকায়। অরুও তখন অবাক চোখে তাকিয়ে। হয়তো তন্ময়ের এমন রিয়াকশন আশা করেনি। তন্ময় চোখ ফেরায়। এদিক-ওদিক তাকিয়ে আদেশ ছুড়ে, ‘পড়া কমপ্লিট করছিস? আজ পড়া দিতে না পারলে খবর আছে কিন্তু!’
অরু তড়িঘড়ি করে বেড়িয়ে যায়। তন্ময় সেদিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে। পরপর আরও দু’চুমুক পান করে।
এইযে.. এই দিনগুলো বড্ড সহজসরল ছিল। তন্ময়ের ভালো লাগার দিন ছিল। ভালোবাসার নয়! তার ভালোবাসার শুরুটা ঠিক অরুর সতেরোতম জন্মদিন থেকে শুরু হয়েছিল। সাথে শুরু হয়েছিল… তার ধৈর্যের পরিক্ষা। নিজেকে আটকে রাখার লড়াই। ভালোবাসার মানুষকে কাছে পেয়েও দূরে ঠেলে দেবার এক অবিশ্বাস্য সংযম।

আজ অরুর ষোলো-তম জন্মদিন। জন্মদিন উপলক্ষে সন্ধ্যায় অনুষ্ঠান হবে। বার্থডে কেকের অর্ডার তন্ময় দিয়েছে। রেড-ভেলবেট চার তলা কেক। কেকের অর্ডার দিয়ে মাত্রই ছাঁদে এসে দাঁড়িয়েছে। হাতে কফি। কফি থেকে গরম ধোঁয়া উড়ছে। ইতোমধ্যে বাগানে আয়োজন শুরু। হৈচৈ, ছোটাছুটি, চেঁচামেচি চারিপাশে। হাতে থাকা কফির মগে চুমুক বসিয়ে অদূরে নজর দিল। শাবিহা লুকিয়ে-চুরিয়ে বাগানে এসছে ফুল তুলতে। খালি পায়ে ওদিকে যাবার কী মানে? মেয়েটার পায়ে কাঁটা না ঢুকে! তন্ময় গম্ভীর স্বরে চেঁচিয়ে ডাকে,
‘শাবিহা! কী সমস্যা? জুতো কই?’
শাবিহা থমকে যায়। জিহ্বা দাঁতে চেপে ধরে। বোকাবোকা ধাঁচের হাসে। বিড়বিড় করে বলে,
‘ভাই-এইত পড়ছি।’

এরপর ফুল না তুলেই দ্রুত বাড়ির ভেতর চলে যায়। তন্ময় কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকে। তারপর পকেটে হাত ঢুকিয়ে একটু ঘুরেফিরে ফুলের টব গুলো দেখে। এ-সময় মেয়েলী গলার স্বর শুনতে পায়। ফুসুরফাসুর করছে। তন্ময় তাকায় না। পাশের বাড়িটায় ইতর দুটো মেয়ে থাকে। একটা পাঁচতলায় আরেকটা দু-তলায়। তন্ময়কে দেখলেই বারান্দায় ওঁৎ পেতে দাঁড়ায়। যেন মধু এসেছে এখন তারা একটু চেখে দেখবে। পাঁচ তলায় থাকা মেয়েটার নাম হৃদ৷ ওই ফুসুরফাসুর সুরে ডাকছে। তন্ময় পাত্তা দিচ্ছে না দেখে এবার একটু শব্দ করেই ডাকে, ‘এইযে, শুনছেন!’
তন্ময় এম্নিতেই বিরক্ত! এখন তার বিরক্ততা কয়েকগুণে বেড়ে গেল। এভাবেই আজ অফিস যেতে পারেনি বলে মহাবিরক্ত ছিল। অফিসে তার সবে নতুন জয়েনিং। অনেক কিছুই শেখার আছে, শিখছে।

এসময় একদমই ছুটি কাটাতে চাচ্ছিল না। যতোই নিজেদের কোম্পানি হোক না কেন! কাজ, কাজই হয়। নিজের বা পরের! কিন্তু মোস্তফা সাহেব মানলে তো? তিনি কড়াকড়ি ভাবে বলেছেন আজ বাড়িতেই থাকতে। অগ্যত তন্ময় বাড়িতেই রয়ে গেল।
ছাঁদ থেকে নেমে বাগানের দিকে আসতেই ডেকোরেশন ম্যানেজমেন্ট ম্যানেজারের সঙ্গে দেখা হলো। আলাপ-আলোচনা করছিল দুজন। সেসময় তন্ময়ের দৃষ্টি গিয়ে ঠেকে পশ্চিম দিকটায়। তাদের বাড়ির বড়ো এক অরু নামক আপদ চোরের মতো, হুড়মুড়িয়ে ছুটছে বাগানের দিক। ফর্সা উদোম পা-জোড়া জমিন ছুঁয়ে যাচ্ছে তাড়াহুড়ায়। হালকা কুকড়ানো চুলগুলো কোমর ছাড়িয়ে নিচে নেমেছে। বাতাসে সেগুলো দুলছে-উড়ছে। টইটই করে বাগানের ভেতরে ঢোকার জন্য তৈরি মেয়েটা। এখন যদি পায়ে কাঁটা বিঁধে, ও বাড়ি কাঁপিয়ে কান্না করবে। নাকের পানি চোখের পানি তার শার্টে মুছে বলবে,

‘তন্ময় ভাই, তন্ময় ভাই ব্যথা।’
তখন তন্ময়ের ইচ্ছে করবে চাটিয়ে একটা চড় মারতে। তবে সে সেটা কখনোই করবে না। অত্যন্ত না রাগলে তার দ্বারা এসব মারামারি অসম্ভব ব্যাপার স্যাপার। অগোচরে দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে তন্ময়। কপাল মধ্যিখানে ভাঁজ পড়েছে। বিরক্ত সুরে গলা উঁচিয়ে বলে,
‘এই! তোর ওখানে কী কাজ?’
অরু থতমত খেয়ে ওঠে। থমকে পড়ে। ফিরে তাকায় মাথা উঁচু করে। পরপরই দাঁত বের করে হাসে। ফুলের পাপড়ির ন্যায় সুন্দরতম ঝকঝকে নয়নের পাপড়ি ঝাপটে ঝাপটে জবাব দেয়,
‘ফুল নিব। চুলে গুজব। সুন্দর দেখাবে না বলুন?’

তন্ময় দৃষ্টি ফিরিয়ে নেয়। আঁড়চোখে ফের তাকায়। অরুর চোখ ঝাপটানো তার অন্যতম পছন্দের দৃশ্য। ওই মায়াবী নয়নের লম্বা ঘন পাপড়ি যখন ঝাপটা খায়, দারুণ দেখতে দেখায়।
অবিশ্বাস্য রকমের টান লাগে মনে। ভীষণ আদুরে লাগে।
তন্ময় নিজেই এগোয়। শার্টের হাতা কনুইয়ের ওপর তুলতে তুলতে ফুলের বাগানে ঢোকে। যা যা ফুল লাগবে তুলে দেয়। অরু ফুলগুলো হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে। সবগুলো ফুল ফ্রোকে নিল। একটা ফুল হাতে নিয়ে কানে গুঁজে নিল। তন্ময়ের দিক লাজুক হাসি নিক্ষেপ করে শুধায়,
‘তন্ময় ভাই সুন্দর না ফুলটা?’
তন্ময় অপলক তাকিয়ে থাকল। ঢোক গিলল। দৃষ্টি ফিরিয়ে নিল। এলোমেলো ভঙ্গিতে চারিপাশে তাকাল, ‘হু।’
অরু জবাব পেয়ে ধেইধেই করে ছুটে চলে গেল। শুনতে পেল না তন্ময়ের বিড়বিড় করে বলা, ‘এই ফুলের থেকেও সুন্দরতম ফুল তুই।’

অনুষ্ঠান শেষ হলো রাত বারোটায়। তন্ময় এসেই হট সাওয়ার নিয়েছে। রাতে গোসল না করলে তার ভালো ঘুম হয়না। ব্যাড-হ্যাবিট বলা যায়। মাত্রই গোসল সেড়ে বিছানায় বসেছে। সে-সময় দরজা ঠেলে একটা মাথা ঢুকে পড়ল। উদোম তন্ময়কে দেখে মাথাটা দ্রুততম গতিতে চলে গেল। পরপর দরজায় করাঘাত। তন্ময় আনমনে সামান্য হাসে৷ গলার স্বর গম্ভীর করে বলে,
‘কে?’
‘আমি।’
‘কী লাগবে?’
অরু এবার বিড়বিড় করে জবাব দেয়,
‘আমার গিফট।’
তন্ময়ের ঠোঁট ঘেঁষে ছুটে দুষ্টু হাসি৷ উঠে দাঁড়ায়। একটা টি-শার্ট জড়িয়ে বলে, ‘আয়।’
অরু পারমিশন পেয়ে হুড়মুড়িয়ে ঢুকে। সাদা প্রিন্সেস গ্রাউন এখনো পড়ে। পরীর মতো মাথায় ক্রাউন। হাতে সাদা গ্লোভস। তাকে এক ছোটো পরী বলাই যায়। সে হাত বাড়িয়ে দেয়,

‘আমার গিফট।’
‘কী গিফট চাই!’
‘বাইসাইকেল।’
‘সাইকেল দিয়ে কী হবে?’
‘মারজি চালিয়ে স্কুল যায়। ওর সাথে মিলেমিশে আমিও যেতে চাই।’
‘আচ্ছা।’
অরু বাইসাইকেল পাবার খুশিতে ছুটে বেরোয়। তন্ময় সেলফোন হাতে নেয়। সে কয়েকটা বাইসেকেলের পেজ ঘুরে। বেশ কয়েকটা সাইকেল দেখেশুনে সে সাদা-লাল কম্বিনেশনের একটা সাইকেল পছন্দ করে। পরপর অগ্রীম পেমেন্ট করে, অর্ডার প্রেস করে ফেলে। কাল নাগাদ চলে আসবে হয়তো।

তন্ময় বন্ধুমহলের সবথেকে গম্ভীর, নীরব ব্যাক্তি তন্ময়।
প্রয়োজন ব্যাতিত তার মুখ থেকে শব্দ বেরোয় না। নীরব দর্শকের মতো শুনে এবং দেখে। তাই বন্ধুমহলের সকলের ক্যারেক্টর সম্পর্কে তার অবিশ্বাস্য রকমের প্রেডিকশন রয়েছে। এবং তা সত্য হয়। খুব কম কথা বলা তন্ময় যখন কিছু বলে তা অনেকটাই স্বর্ন যেন! এবং তার স্বর্নযুক্ত কথাবার্তার মান রাখা হয় দারুণভাবে।
যেমন সেদিন রিহান আড্ডায় এসে পৌঁছাল মন খারাপ নিয়ে। মারাত্মক ধরণের ডিপ্রেসড সে। বন্ধুমহলের সকলেই প্রশ্ন করল,

‘কী হয়েছে।’
রিহান ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়ে খুলে বলে। সে শুহানিকে পছন্দ করতে চায় না। তাও কেন দিনদিন পছন্দের মাত্রা বাড়ছে? আশ্চর্যজনক ভাবে তন্ময় সেদিন মুখ খুলে। খুব সাবলীল গলায় বলে,
‘When you try not to fall for someone you will fall harder and stronger.’
রিহান অসহায় চোখে তাকিয়ে থাকে। তন্ময় উপদেশ দেয়,

শাহজাহান তন্ময় পর্ব ৩+৪

‘সমদ্রের স্রোত কী থামাতে পারব আমরা? কখনোই না। থামানোর প্রচেষ্টায় হয়তো ডুবে যাব নাহয় মরে। তবে সেই স্রোতের সঙ্গে আমরা তাল মিলিয়ে চলতে পারব। চলতে গিয়ে উপভোগ করব, আনন্দ পাব, বৈরাগী হব।’
রিহান তন্ময়ের সেই উক্তি আজ ও মনে রেখেছে। সেই উক্তি মনে গেঁথে নিয়ে মনের স্রোতের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এতদূর এসেছে। এখন পছন্দের ভীষণ গভীরে সে। সেখানটার নাম ভালোবাসা। এক নিদারুণ ভালোবাসার জন্ম হয়েছে। যার অন্ত নেই। যার কোনো সীমান্ত নেই। রিহান ভাবে, খুব করে ভাবে। তন্ময় বুঝি ভালোবাসা নামক স্রোতের সঙ্গে তাল মিলিয়ে অনেকদূর চলে গিয়েছে। এতটাই দূর যেখান থেকে ফেরার রাস্তা নেই।

শাহজাহান তন্ময় পর্ব ৭+৮

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here