বৃষ্টি হয়ে নামবো পর্ব ১৪ || bristy hoye nambo golpo

বৃষ্টি হয়ে নামবো পর্ব ১৪
Writer Nondini Nila

ভাইয়া কুঁচি ঠিক করে ধরে নিচে বসে আছে আর আমি উপরে ঠিক করছি। এদিকে আমার বান্ধবীর দল এসে উপস্থিত হলো এখানে সব গুলো বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে আছে আমাদের দিকে।
এদিকে ভাইয়া আমার এতো দেরি দেখে বলল,,,
“আর কতো সময় লাগবে তোর?”
ভাইয়ার কথা শুনে তারাতাড়ি কাজ শেষ করলাম।
“হয়েছে।”
আমি কাচুমাচু করে বললাম,,,”হুম।”

ভাইয়া তরিৎ গতীতে উঠে দাঁড়ালো। তারপর শার্টের হাতা ঠিক করে বুকের কাছে থেকে সানগ্লাস বের করে চোখে দিল। তারপর আমার ফ্রেন্ডের দিকে একবার তাকিয়ে আমার দিকে তাকালো আর মুখ দিয়ে বিরক্তি এনে বলল,,
“যতসব ফালতু ঝামেলা।”
বলেই চলে যেতে নিল তখন আমার ফ্রেন্ড ইলমা ভাইয়া বলে ডেকে উঠলো আদনান ভাইকে,,,
ভাইয়া ঘাড় বাঁকিয়ে কপাল কুঁচকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো,,,
“কিছু বলবা।”
ইলমা বলল,,”কেমন আছেন ভাইয়া?”
ভাইয়া বলল,,”ভালো। তোমরা কেমন আছো?”
আমার বান্ধবী সব গুলো বলে উঠলো ভালো ভাইয়া।
আর কাউকে কিছু বলতে না দিয়ে ভাইয়া বলে উঠলো,,,
” এই ( আমাকে দেখিয়ে) ইডিয়েট টাকে দেখে রেখো কখন কোথায় কি ঘটিয়ে ফেলে। কেয়ারলেস একটা।”

আরও গল্প পড়তে ভিজিট করুন

ভাইয়া কথা শুনে আমি চমকে উঠলাম। গাল ফুলিয়ে ভাইয়ার দিকে তাকালাম। ভাইয়া কিছু না বলে সানগ্লাস ঠিক করে স্টাইল করতে করতে চলে গেল।
আমি কটমট করে ভাইয়ার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছি।
খাটাশ একটা আমাকে আবার বকে গেল।
“ওই এমন ফুসফুস করছিস কেন?”
ইলমার কথায় ভাইয়ার থেকে চোখ সরালাম।
“আমাকে কি বলে গেল দেখলি।”
“ঠিকই তো বলেছে।”
বলেই জ্বিভে কামড় দিল নেহা।
আমি রেগে ওর দিকে তাকিয়ে বললাম,,,”কি বললি তুই?”
নেহা ভীতু মুখ করে বলল,,
“ক‌ই কি বললাম? আমি তো বলেছি হ্যা তোর ভাইটা আসলেই খারাপ এইভাবে কেউ বলে। আমাদের দোলা কতো ভালো।”
আমি ভ্রু কুঁচকে বললাম,,,”তুই অন্য কথা বলছিলি।”
নেহা সবার দিকে তাকিয়ে বলল,,”এই তোরা বল আমি এটাই বলছিলাম তাই না।”
বলেই অসহায় মুখ করে তাকালো সবার দিকে।
“উফ তোরা কথা শেষ কর আর চল তো।”
আমি আস্তে আস্তে হাঁটতে লাগলাম শাড়ি পড়ে সাবধানে যাতে খুলে না যায়।
প্রথমেই যে আকাম হলো।
“দোস্ত তোকে তা লাগছে না আজকে। সব ছেলেরা তো তোকে দেখে আজ ফিদা হয়ে যাবে।”

আমি কিছু বললাম না। মিষ্টি করে হাসলাম শুধু। আর আমার ফ্রেন্ড সার্কেল আমাকে নিয়ে প্রশংসা করতে লাগলো।
আমিও ওদেরকে নিয়ে করলাম। কান ঝালাপালা হয়ে যাচ্ছে শব্দে আমাদের একটা স্যার দেশের গান গাইছে ওনার কন্ঠস্বর একটুও সুন্দর না কিন্তু উনি ওই বেসুরো কন্ঠে গান গাইবে। স্যার বলে ওনাকে সবাই সহ্য করে। সেই সাথে আমরা ও করছি। বিরক্ত আর রাগ নিয়ে থাকতে পারলাম না স্যার ওই বেসুরো গলায় একটা না দুইটা গাইছে রাগে ফোন বের করে গান ছেড়ে ইয়ারফোন লাগিয়ে কানে দিলাম। উফফ শান্তি।
গান আমার পছন্দ তাই বলে এমন পা ধা নি তা গান না।
এই রমিজ উদ্দিন স্যারের গান শুনলে আমার গান শুনার আগ্ৰহ কমে যায়।
এখন শুরু হলো নাচ। আমাদের ক্লাসের চৈতি নাচ্ছে ওর নাচ বরাবরের মতো আজকেও সুন্দর হলো। বাট এর সাথে আমি কথা বলি না। মেয়েটার খুব ভাব।
নাচ শেষে শুরু হলো বক্তব্য আল্লাহ আজ কতোবার বক্তব্য দিবে। বোরিং হয়ে বসে শুনছি।

“ওই উঠ তো আমার কোমর ব্যাথা হয়ে গেছে বসে এই বোরিং কথা শুনতে শুনতে।”
“হ ঠিক বলছিস। চল আমরা ওই দিকে যায়।”
সবাই চলে এলাম আর মাঠের অপর প্রান্তে এলাম।এখানে সবাই জোটা জোটা বসে আছে।
ছেলে মেয়ে আমি সবার দিকে হা করে তাকিয়ে আছি। এগিয়ে যাচ্ছি।
নেহা আমার হাত ধরে আটকে দিল।
“ওই আর যাস না।এই প্রেমিক প্রেমিকা দের দিকে।”
“না আমি ওইদিকে যাব।”
সমানে একটা পুকুর আছে ওইখানে গিয়ে ছবি তোলার ইচ্ছে করছে।তাই বললাম।
“পাগল নাকি ওইদিকে আর যাব না।চল।”
“চুপ কর তো ওদের যা ইচ্ছা করুক আমি ছবি তুলবো চল তো।”
বলেই নেহার হাত শক্ত করে ধরলাম।
আমার সাথে কেউ পারলে তো যেতে লাগলো।
তখন ভাইয়াকে চোখে পরলো আমার। আদনান ভাই ও তার সাথে কয়েকটা ছেলে বসে আছে সামনে আর হাসাহাসি করছে। আমরাও পুকুর এর কাছে এসে গেছি। ভাইয়া রাও এখানেই আমি বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে আছি।ভাইয়ার সামনেই আবার চলে এলাম।

ভাইয়া এখন ও দেখে নাই। আমি ফটাফট অন্য দিকে ঘুরে গেলাম।ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে আছে পেছনে দেখতে পাচ্ছে চিনে ফেলবে জানি কারণ গ্যাং নিয়ে এসেছি। ওদের দেখলেই আমি আছি বুঝে যাবে।
“ওই ছবি না বলে তুলবি। এইভাবে লুকিয়ে দাঁড়িয়ে আছিস কেন?”
আমি ওদের হাতের ইশারায় ভাইয়াকে দেখালাম।
“ভাইয়া এখানেও ও দেখিস এখানে আসার জন্য আমাকে কি বকাটাই না দেয়।”
“চল তাহলে চলে যাই। এজন্য আসতে মানা করছিলাম।”
“আমি কি জানতাম গরিলাটা এখানে এসে বসে আছে।”
আমাদের কথার মাঝেই ভাইয়া আমাকে ঠেকে উঠল আদনান ভাইয়ের আওয়াজ শুনে আমি ফ্রিজ হয়ে গেলাম।
“আমাকে খাটাশ দেখে ফেলেছে।”
কাঁদো কাঁদো মুখ করে তাকিয়ে বললাম।
আমি কাঁপতে কাঁপতে ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে দেখি ভাইয়া ওইখানে বসেই আমাকে ডাকছে।

আমি ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে আছি। ভাইয়ার সাথে আর ও তিনজন ছেলে আছে যারা আমার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে।
আমি তাকাতেই ভাইয়া উঁচু গলায় জিজ্ঞেস করলো।
“দোলা এখানে কি করছিস?”
আমি হকচকিয়ে গেলাম ভাইয়ার প্রশ্ন শুনে এই এতো লোকের মাঝে না জানি কতো বকা খেতে হয়।
ঢোক গিলে এদিক ওদিক তাকিয়ে নিলাম লোকজন ভালোই‌।
এক হাত দিয়ে আরেক হাত মুচরাতে মুচরাতে বললাম,,,,”ওই আমি তো…
ভাইয়া বলল,,,”তোতলাচ্ছিস কেন ভালো করে কথা বল?”
“আমি…
“ওয়েট আমি আসছি।”
বলেই ভাইয়া আমার দিকে এগিয়ে আসতে লাগলো।
আমি শাড়ির আঁচল ধরে কাঁচুমাচু করে দাঁড়িয়ে আছি।
ভাইয়া আমার দিকে এগিয়ে এসে একদম আমার সামনে দাড়িয়ে বলল,,,
“এখানে কি করছিস?”

শক্ত গলায় বলল। আমি চুপ করে আছি।
“কি হলো কথা বলছিস না কেন?”
আমি চমকে ভাইয়ার দিকে তাকালাম।
“ভাইয়া আমি আসলে ওই ছবি তুলতে এসেছি।”
আদনান ভাই আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।
“ছবি তুলতে।”
আমি মাথা নেড়ে সায় দিলাম।
“এখানে কেন আর জায়গা পাসনি।”
আমি অবাক হয়ে তাকালাম।
“এখানে কি হয়েছে। তুমি ও তো এখানেই আছো।
আমি আছি বলে কি তোকেও এখানে আসতে হবে।”
“আমি তো জানতাম‌ই না তুমি এখানে আছো জানলে আমি ভুলেও এখানে আসতাম না।”
“কি বললি।”
“ঠিক‌ই বলছি তোমার বকা খাওয়ার কোন ইচ্ছা আমার নেই। আর তোমার সাথে দেখা হ‌‌ওয়া মানে‌ই বকা খাওয়া।”
ভাইয়া আমার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।আমি হকচকিয়ে এদিকে ওদিকে তাকাতাকি করতে লাগলাম।
“আমি তোকে খালি বকি।”
আমি ঢোক গিলে বললাম,,,”না না। তুমি আমাকে বকবে কেন? তুমি তো বকতেই পারনা।”

বৃষ্টি হয়ে নামবো পর্ব ১৩

মিনমিন করে বললাম,,,” গরিলা একটা বকে কিনা জিজ্ঞেস করছে? সারাক্ষণ আমার পেছনে পুলিশের মতো ঘেরাও করে বলে।”
“আচ্ছা চল আমি তোকে পিকচার তুলে দেব।”
ভাইয়ার কথা শুনে আমি স্তব্ধ হয়ে গেলাম। চমকে ভাইয়ার দিকে তাকালাম। ভাইয়া ও আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
“কি হলো এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন? এখন তো বকছি না তাহলে ভয় পাচ্ছিস কেন?
আমি মিনমিন করে বললাম,,,”বকছো না বলেই তো ভয় আরো বেশি পাচ্ছি।”
‘কি বললি‌?”
‘তুমি আমাকে ছবি তুলে দিবে।”
“হুম চল।”
“কিন্তু।”
“আবার কিন্তু কিসের?”
আমি আর কিছু বললাম না। হতদম্ব হয়ে তাকিয়ে আছি ভাইয়ার দিকে। ভাইয়া আমাকে বলেই নিজের ক্যামেরা বের করলো।

বৃষ্টি হয়ে নামবো পর্ব ১৫