এক চিলতে রোদ পর্ব ১৮ || Nondini Nila

এক চিলতে রোদ পর্ব ১৮
Nondini Nila

রুমে এসে ঢকঢক করে পানি খেয়ে নিয়েছে। বাপরে কি রাগ ভাইয়ার কিন্তু এতো লাগলোই বা কেন?
কিছু আমার বোধগম্য হলো না।
এটা বুঝতে পেরেছি তার কারণ ছবি তোলা। এতে এতো রাগের কি আছে? সেটাই আমার মাথায় আসছে না।
তখন,
“ক-ক-কি হ-হয়েছে ভাইয়া আপনি এতো রেগে আছেন কেন?”
তোতলাতে তোতলাতে বললাম।
ভাইয়া অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আমার দিকে‌। আমি ঢোক গিলে তাকিয়ে আছি।
আমি ভাইয়ার থেকে ছুটার চেষ্টা করছি ছটফট করছি ভাইয়া আমাকে ছারছে না।
তুই রিহান এর সাথে এতো কি নিয়ে হাসাহাসি করছিলি।
আমি ভাইয়ার কথা শুনে থ মেরে গেলাম। হাসলাম ক‌ই। একটু হাসি হাসি মুখ করে তাকিয়ে ছিলাম ওইটা জাস্ট ভদ্রতা বলে।

আমি কিছু বলতে যাব তখনি ভাইয়ার ফোন বেজে উঠলো।ভাইয়ার ফোন বাজতেই ভাইয়া আমাকে ফট করে ছেড়ে দিলো।
ভাইয়ার চোখে মুখে অস্বস্থি দেখা যাচ্ছে।
ভাইয়া পকেট থেকে ফোন বের করে কানে দিলো আর বললো,
আমি বিজি আছি প্লিজ ইউ ডোন্ট ডিস্টার্ব মি।
বলেই ফোন কেটে দিল। আমি বিস্মিত হয়ে দাঁড়িয়ে আছি।
রিহান ছেলেটার সাথে বেশি মাখামাখি করিস না ছেলেটাকে ভালো লাগে নি।
বলেই আমার দিকে তাকালো।আমি তাকিয়ে ছিলাম। আমি কোথায় ওই ছেলের সাথে মাখামাখি করলাম। ভাইয়া কি সব বলছে,
আমি মাখামাখি করলাম কোথায়?
অবাক হয়ে চোখ ছোট ছোট করে বললাম।
ভাইয়া বলল,একটু আগে না কতো ছবি তুললি তারপর হাসাহাসি।
আমি হতভম্ব হয়ে বলল, ছবি তো আমি তুলতে চাইনি উনি ফট করে তুলে ফেলল আর হাসিটা শুধু ভদ্রতার জন্য দিয়েছি আমি কথাও নিজে থেকে বলি নি ওনিই এসেছিলো যেসে পরে।
ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে ছিলো।এবার কপালে হাত রেখে আংগুল দিয়ে সাইফ করতে লাগলো চোখ বন্ধ করে। তারপর চোখ খুলে আমার হাত ধরে টেনে সবার কাছে চলে এলো আমি কিছু বুঝতে পারলাম না।

আরও গল্প পরতে ভিজিট করুন

গাড়ি থেকে নেমে বাসায় এসে পরলাম সবাই রুমে চলে গেছে আমি পেছন পরেছে তখন কোথা থেকে ভাইয়া ছুটে এসে আমার সামনে দাড়ালো। আচমকা ভাইয়া কে এভাবে ছুটে আসতে দেখে চমকে উঠলাম। ব্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছি ভাইয়ার দিকে ভাইয়া আমার দিকে ঝুঁকে পরল,
আমি চমকে মাথা পেছনে নিয়ে গেলাম ভাইয়া আমার মাথা চেপে ধরে রাখলো। আমি মাথা পেছনে নিতে পারলাম না। ফ্রিজ হয়ে দাঁড়িয়ে র‌ইলাম ভাইয়া নিজের মুখটা একদম আমার কাছে নিয়ে এলো। আমি পাথর হয়ে গেলাম বোধদয় তবুও অস্পষ্ট সুরে বললাম,
কি করছেন ভাইয়া?
কানে গেল কিনা জানি ভাইয়ার নিঃশ্বাস আমার চোখে মুখে বাড়ি খাচ্ছে। হার্টবিট দ্রুত গতিতে লাফাচ্ছে। আমি চোখ খিচে বন্ধ করে ফেললাম তখন আমার কানে মৃদু আওয়াজ এলো,
ভাইয়া বলছে,
সরি তখন কার জন্য আমার কেন জানি রাগ হচ্ছিল খুব। কিন্তু রাগের কারনটা আমার অজানা। তুই কিছু মনে করিস না।

বলেই ভাইয়া আমাকে ছেড়ে দিয়ে চলে গেল। আমি পাথর হয়ে সেখানে দাঁড়িয়ে র‌ইলাম। কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে কথা বলার সময় ভাইয়ার স্পর্শ অনুভব করেছি। আমার শরীর কাঁটা দিয়ে উঠছে শিরায় শিরায়।
আমি দৌড়ে রুমে এসে ঢকঢক করে পানি খেলাম।
আপু এসে আমার দিকে অবাক তাকিয়ে বলল,
কিরে এমন হাঁপাচ্ছিস কেন?
আমি চমকে উঠলাম আপুর কথায়।
কিরে চমকালি কেন?
আমি কি বলবো বুঝতে পারছি না।আপু সন্দেহ চোখে তাকিয়ে আছে।
আমি ঢোক গিলে বললাম,
এমনি আপু আমার ক্লান্ত লাগছে ঘুমাবো‌।
আচ্ছা ফ্রেশ হয়ে আয়।
আমি ফ্রেশ হয়ে এসে শুয়ে পরলাম একটু আগের কথা খালি মনে পরছে।
পরদিন ভাইয়ার মুখোমুখি হতে লজ্জা লাগলো ওইভাবে সরি না বললেও হতো।
আমরা সবাই বাসায় চলে এলাম আসতে আসতে আমাদের সন্ধ্যা হয়েছে। বাসায় আসতেই লতা ছুটে এলো আমার আছে। ওর জন্য আমার খুব খারাপ লেগেছে আমরা সমবয়সী ও যদি যেতে পারতো কি তা সম্ভব না।

চাচির দিকে চোখ গেল সোফায় বসে পান খাচ্ছে আমার দিকে কটমট করে তাকালো। আমি সাথে সাথে মাথা নিচু করে ফেললাম। আমার কপালে যে কি আছে আল্লাহ মালুম জানে।
সবাই সামনে কিছু বললো না ইমা আপু বসে পরলো তার কাছে ইহান ভাই রুমে চলে গেল ইলা আপুও গেছে আমি ও চলে গেলাম।
সেদিন আর কিছু হলো না রাতে খেলাম ও না ঘুম দিয়েছি‌। সকালে ককর্শ আওয়াজ এ আমি ধরফরিয়ে উঠে বসলাম। বাইরে কেবল আলো হচ্ছে তারমানে ভোর সকাল।
সামনে তাকিয়ে আতকে উঠলাম, চাচি কঠিন মুখ করে তাকিয়ে আছে।
আমি কাঁপা কাঁপা গলায় বললাম,
চাচি তুমি এতো সকালে আমার রুমে কোন দরকার ছিলো কি লতা…

কথাটা শেষ হলো না তার আগেই চাচি এগিয়ে এসে আমার গালে ঠাস করে চড় বসিয়ে দিলো। চড় টা এতো জোরে ছিলো আমার মাথা ভনভন করে উঠলো। ব্যাথায় চোখ বন্ধ করে ফেললাম। এই ব্যাথা সহ্য করতে না করতেই আমার সবঙ্গ কেঁপে উঠলো, মাথার চুল শক্ত করে ধরেছে চাচি,
“বান্ধীরবাচ্চা তুই আমার নাকের ডগার উপর দিয়ে চলে গেল ধৈধৈ করে সিলেট। আমার এক মেয়ের মতো ছেলেটাকেও বস করে ফেলেছিস? সে তোর যাওয়া নিয়ে আমার কাছে আসে। ওই তুই না করলি না কেন কোন সাহসে গেলি। নিজেকে রাজকন্যা ভাবতে শুরু করেছিস।”
চাচি ছার আমার খুব ব্যাথা করছে। কান্না গলায়। কথা বলতে কষ্ট হচ্ছে এতো জোরে চেপে ধরেছে
সবাইকে বস করে লাফাতে লাফাতে চলে গেলি। তোকে আজ এর মাসূল দিতে হবে। খুব ভার বেরেছিস তুই।

আমি ছাড়া পাওয়ার জন্য ছটফট করছি চোখ দিয়ে গলগল করে পানি পরছে।
আমি তো জানতাম এমন কিছু হবে তবুও তখন নিজের যাওয়ার লোভটা সামলাতে পারিনি তাই তো আমি রাজি ছিলাম।
কিন্তু এখন আমার যে খুব কষ্ট হচ্ছে কি করবো আমি।
চাচি ছার তেই আমি বড় দম নিলাম।
কাঁদতে কাঁদতে বললাম, আমাকে ক্ষমা করে দাও চাচি আমি আর তোমার কথার অবাধ্য হবো না। এবারের এর মতো মাফ করে দাও।
চাচি এক গাদা জামা কাপড় দিয়ে গেল সব কাচতে হবে তারপর সকালে খাবার রান্না করতে হবে।
চাচি যেতেই আমি হু হু করে কেঁদে উঠলাম। লতা এসে আমার পাশে দাঁড়ালো।ওর চোখেও জল আমি কাদতে কাদতে জামা কাপড় নিয়ে বাথরুমে চলে গেলাম। রান্না করতে গিয়ে আজ হাত পুরে ফেললাম। ওইভাবে খাবার টেবিলে সব এনে রাখলাম তখন লতা সাহায্য করলো। হাত পুরেছে কাউকে বললাম না আর না বলার মতো কেউ আছে আমার।

সবাই এসে টেবিল এ বসলো ইহান ভাই সবার পরে আসলো এসেই আমার দিকে তাকালো। আমি মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছি। ইলা আপু ডেকে উঠলো,
ঊষা পানি দে তো।
আমি মাথা উঁচু করে তাকিয়ে আচ্ছা বলে পানি ভড়ে দিলাম। ইমা আর ইহান ভাই মুখোমুখি ছিলো তাই পানি দিতে গিয়ে ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে দেখি ভাইয়া খাচ্ছে কম আমার দিকে তাকিয়ে আছে বেশি‌। আমি হকচকিয়ে পিছিয়ে দাঁড়িয়ে র‌ইলাম সবার খাওয়া শেষ হতেই সবাই চলে গেল।
ইহান ভাই যাওয়ার আগে কফি চেয়ে গেল।
লতা খেতে বসেছে আমাকে আজ খেতে মানা করেছে। চাচি বলছে রাতের আগে খেতে দেবে না। এটা আমার শাস্তি। তাই আমি কফি করে ভাইয়ার রূমে এলাম। ভাইয়া বিছানায় বসে ছিলো কপালে হাত দিয়ে আমি যেতেই উঠে দাঁড়ালো।
আমি কফি বারিয়ে বললাম,
আপনার কফি ভাইয়া।

এক চিলতে রোদ পর্ব ১৭

ভাইয়া আমার কফি নিলো না। ভ্রু কুঁচকে আমার মুখের দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। আমি ভাইয়ার তাকানো দেখে জরোসরো হয়ে দাঁড়ালাম।
কফি নিন।
এবার ও রেসপন্স নাই। এমন করে তাকিয়ে আছে কেন? হঠাৎ আমার হাত গালে চলে গেল। সকালে চাচির থাপ্পড় এর আঘাত কি বুঝা যাচ্ছে নাকি‌।
তোর গালে কি হয়েছে?
আমি ভাইয়ার কথা শুনে চমকে উঠলাম। যা ভেবেছিলাম তাই হলো।
আমি কাচুমাচু করে দাঁড়িয়ে আছি।
কি হলো কথা বল? তোর গালে কি হয়েছে?
আমি হকচকিয়ে এদিক ওদিক তাকাতে লাগলাম,
এতো লাল হয়ে আছে কেন? মনে হচ্ছে…
ভাইয়ার কথার মাঝে বললাম, কিছু হয়নি। রাতে এক কাত হয়ে শুয়ে ছিলাম।তাই হয়তো লাল হয়ে আছে।

ভাইয়া এগিয়ে এসে তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে বলল,
এটা তো থাপ্পড় এর দাগ লাগছে। পাঁচ আঙুলের ছাপ স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। কে মেরেছে তোকে সত্যি করে বল মিথ্যা না বলে।
ভাইয়ার কথা শুনে থমকে গেলাম। ভাইয়া বুঝে গেছে এখন যদি চাচির কথা বলি আর ভাই যদি চাচি কে কিছু বলে তাহলে চাচি যে আমার কি অবস্থা করবে। না বলবো না।কফি ট্রি টেবিলের উপর রেখে দৌড়ে বাইরে আসতে গেলাম। এখান থেকে যেতে হবে।
দরজার বাইরে পা রাখতে যাব ভাই আমার হাত ধরে আটকে ধরলো। আমি থমকে দাঁড়িয়ে পরলাম। ভাইয়া টেনে আমাকে ভেতরে নিয়ে দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে আটকে ধরে বলল,
পালাচ্ছিস কেন না বলে‌।

এক চিলতে রোদ পর্ব ১৯