এক চিলতে রোদ পর্ব ১৯ || Nondini Nila

এক চিলতে রোদ পর্ব ১৯
Nondini Nila

‘পালাচ্ছিস কেন না বলে?’
ভাইয়ার কথা শুনে আমি চমকে উঠলাম। ভাইয়ার নিঃশ্বাস আমার চোখে মুখে আছড়ে পড়ছে। ভাইয়া দেয়াল এক হাত রেখে আমাকে আটকে দাঁড়িয়ে আছে।আরেক হাত আমার কোমর ধরে আছে। আমি চোখ খিচে বন্ধ করে দাঁড়িয়ে আছি।ঘনঘন শ্বাস নিচ্ছি হার্টবিট দ্রুত গতিতে লাফাচ্ছে। ভাইয়ার এতো কাছে আসাতে আমি থরথর করে কাঁপছি।
কথা বলতে পারছি না। চোখ বন্ধ করেই বুঝতে পারছি ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে আছে। তাও চোখ খুলতে পারছি না। শক্ত করে দাঁড়িয়ে চোখ বন্ধ করে আছি। দুহাতে শক্ত করে ওরনার কোণা ধরে আছি। আচমকা ভাইয়ার ঠান্ডা হাতের স্পর্শ আমার গালে পেলাম। ভাইয়ার স্পর্শ পেতেই আমি কেঁপে উঠলাম। সারা শরীরের লোম খাড়া হয়ে গেল। আমি খিচে বন্ধ করা চোখ খুলে ফেললাম।
চোখ পিটপিট করে তাকালাম। ভাইয়া আমার থাপ্পড় দেওয়া গালে নিজের এক হাত ডুবিয়ে রেখেছে। আলতো হাতের স্পর্শ দিচ্ছে। তার দৃষ্টি ও আমার গালে সীমাবদ্ধ। আমি বিস্মিত হয়ে তাকিয়ে আছি। কি করছে কি? ভাইয়া! বিষ্ময়ে হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছি। আমি কাঁপা কাঁপা গলায় বললাম,
‘কি করছেন ভাইয়া আপনি?’

ভাইয়া আমার কথা শুনে গালে থেকে হাত সরিয়ে নিলো। আমার থেকে সরে দাঁড়ালো। আমি বিস্মিত হয়ে দাঁড়িয়ে আছি। আমার সারা শরীর এখনো কাঁপছে ভাইয়া আমার এতো কাছে ছিলো। ভাইয়া হকচকিয়ে দূরে দাঁড়িয়ে আছে। তারপর বলল,
‘ যা এখানে থেকে।’
ভাইয়ার আওয়াজ পেয়ে চমকে মাথা উঁচু করে তাকালাম। ভাইয়া অন্য দিকে তাকিয়ে আছে।আমি দৌড়ে বেরিয়ে এলাম। বুকের ভেতর টিপটিপ করছে।
নিজের রুমে চলে এলাম। হাপাচ্ছি আমি। বিছানায় শক্ত হয়ে বসে পরলাম।
চাদর খামচে ধরে।‌ইহান ভাইয়া আমার এতো কাছে কেন এলো? আর এলেই আমার এমন লাগে কেন?
তখন চাচি এলো থমথমে মুখ করে।
আমি চাচিকে দেখে চমকে দাঁড়িয়ে পরলাম।
চাচি এসে রেগে তাকিয়ে অনেক কিছু বলল।আমি নাকি ইহান ভাই এর কাছে বিচার দিয়েছে মার এর কথা বলে।তাই নিয়ে অনেক বকে গেল আমি মাথা নিচু করে চাচির বকা শুনছি আর আমার চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পরছে।

আরও গল্প পরতে ভিজিট করুন

‘ এই পানি দেখিয়েই তো আমার ছেলেকে নিজের দলে নিয়েছিস। সে তোর জন্য আমাকে কথা শুনায়। একদম ওর কাছে ঘেষবি না নাহলে আমার থেকে খারাপ আর কেউ হবে না। ‘
বলেই চাচি গটগট করে চলে গেল।
আমি ঝাপসা চোখে তাকিয়ে র‌ইলাম তার যাওয়ার দিকে। আমি কখন ইহান ভাইকে বললাম। আমি তো কিছু বলিনি। না বলেও কথা শুনতে হলো।
চোখ বন্ধ করে কাঁদতে লাগলাম লতা এসে আমার পাশে বসলো।
নিজেকে স্বাভাবিক করে ওকে নিয়ে বাগানে চলে এলাম। বাইরে এসে পানি দিতে লাগলাম গাছে। ফুল আমার খুব প্রিয়। পানি দিচ্ছি আর চোখ বন্ধ করে তার গন্ধ শুকছি। তখন মনে হলো কেউ আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি বাসায় দিকে তাকালাম। বাগান দেখা যায় ইহান ভাই এর রুম থেকে আমি ভাইয়ার রুমের দিকে তাকালাম। ভাইয়া দাঁড়িয়ে আছে তার দৃষ্টি আমার উপর। আমি ও ভাইয়ার দিকে তাকালাম তখন মনে পরলো চাচির কথা। আমি চোখ সরিয়ে ফুল গাছের পানি দিলাম। লতা ঘাস পরিষ্কার করছে।

পানি দিয়ে বাসায় চলে এলাম রান্নাঘরে গিয়ে থালা বাসন ধুয়ে নিলাম। চাচি তারপর আমাকে ডেকে রুমে মুছালো। তার নামাজ আদায় করতে হয় ঘর নাকি অপরিষ্কার। মুছে দিলাম।ইলা আপু ডাকলো তার জামা কাপড় ধুতে হবে। না খাওয়ার জন্য খারাপ লাগছিলো কি না শুনে উপায় নাই।
সারাদিন এভাবেই গেল রাতের আগে খেতে পেলাম না। যা আমি লতা ছাড়া আর চাচি ছাড়া কেউ জানে না। রাতে বেশি খেতে পারলাম না সারাদিন না খেলে একসাথে এতো খাওয়া যায় না। সারদিনের ক্লান্তিতে শুতেই ঘুমিয়ে পরলাম।
মাঝরাতে ঘুমের মধ্যে মনে হলো কেউ আমার ঘরে এলো। এসেই সে আমার পাশে বসলো। তারপর আমার মুখের দিকে গভীর ভাবে তাকিয়ে র‌ইলো। সে আমার কষ্ট টা উপলদ্ধি করতে পারলো। আমার থাপ্পড় দেওয়া গালে সে মাথা ঝুকে ঠোঁটের পরশ বুলিয়ে দিলো। আমি ঘুমের মাঝে কেঁপে উঠলাম যা দেখে যে মৃদু হাসলো। একটা মলম বের করে খুব আলতো ভাবে আমার ব্যাথা গালে লাগিয়ে দিলো। তারপর আমার দিকে তাকিয়ে থেকে কপালে কিস করে বেরিয়ে এলো।

ইমা রাত জেগে রিফাত এর সাথে কথা বলে আজ ও বলছে। পানি পিপাসা পায় কিন্তু আজ পানি আনতেই ভুলে গেছে আর ঊষা ও পানি দিয়ে যায়নি‌। ঊষা আজ ক্লান্ত বলে পানি দেয়নি রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পরেছে।
ইমা ফোন টেবিলের উপর রেখে পানির বোতল নিয়ে বের হয়ে সিঁড়ি দিয়ে নামতে সময় কারো সাথে ধাক্কা খায়।
চমকে উঠে বলে,
‘ কে কে ? ‘
ভয়ে ভয়ে। ইমার ভয়ার্ত কন্ঠ শুনে ইহান কেশে বলে,
‘ আমি ইহান। ‘
ইমা ইহানের কথা শুনে বুকে ফূ দিয়ে বলে,
‘ তুই এতো রাতে নিচে কি করছিস? ‘
ইহান আমতা আমতা করে বলে, ‘ ওই আমার পানি প্রয়োজন পরে তাই। ‘
‘ পানি কেন ঘরে পানি নেই।’
ইহান না বলে।
‘ ওহ আচ্ছা যা।’
ইহান তারাতাড়ি চলে আসে।

পরদিন সকালে ধরফরিয়ে উঠে বসি। কাল রাতে মনে হয়েছিলো কেউ এসেছিলো কিন্তু কে? অতিরিক্ত ঘুমে ছিলাম তবুও তার স্পর্শ আমার মনে আছে।কে ছিলো নাকি আমার মনে ভুল সব কি সপ্ন ছিলো।
খাবার টেবিলের সব রাখলাম আমি আর লতা তারপর দাঁড়িয়ে র‌ইলাম। একটু দেরি করে ভাইয়া এলো। ভাইয়া আজ খয়েরি রঙের শার্ট পরেছে খুব লাগছে। আমি একনজর তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নিলাম। ভাইয়াকে দেখলেই আমার বুক টিপটিপ করে। খাওয়ার মাঝে যত বার তাকালাম ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে আছে দেখলাম। আমি ভাইয়ার তাকানো দেখে সাথে সাথে চোখ সরিয়ে নিলাম।
ভাইয়া বেশি খেল না হালকা খেয়ে চলে গেল কলেজে যেখানে জব নিয়েছে সেখানে। দুপুরের পর ভাইয়া এলো আমি রান্না ঘরের দরজায় থেকে দেখলাম লতাকে দিয়ে কফি পাঠিয়ে দিলাম।চাচি ভাইয়ার কাছে যেতে মানা করেছে তাই।

দুইদিন চলে গেল আমি ভাইয়ার রুমে যাইনা। আশেপাশে ও যাইনা চাচির কড়া নিষেধ। আমি আড়াল থেকে ভাইয়াকে দেখি।
আপুর বিয়ের আর তিনদিন আছে।তাই এখন বিয়ের তোরজোর হচ্ছে।
দুপুরে খেয়ে চাচি আর ইলা আপু মার্কেট এ চলে গেল।
লতা আর আমি খাবার খেয়ে নিলাম গোসল করে। রুমে এসে ভেজা চুল ছেড়ে দিয়ে ছোট একটা আয়না আছে আমি তার সামনে বসে পরলাম। নিজের মুখের দিকে তাকিয়ে আছি। চুল থেকে টপটপ করে পানি পরছে আমি হাত দিয়ে ঝাড়া দিলাম চুল এজন্য আমার বড় চুল ভালো লাগে না। সামলানো কষ্ট। ব্লো কামিজ ভিজে কালো হয়ে গেছে। ওরনা একপাশে ফেলে চুল সামনে এনে হাত দিয়ে পানি ফেলছি। তখন আমার মনে হলো কেউ আমার সামনে দাড়িয়ে আছে তার ফর্সা পা আমি দেখতে পাচ্ছি।
ব্রাউন রঙের প্যান্ট পড়া এটা তো ভাইয়া পরেছিলো। আমি চুল ছেড়ে দিয়ে চমকে মাথা তুলে তাকালাম।
ভাইয়া ব্লো রঙের শার্ট পড়ে আছে। সে তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। আমি হকচকিয়ে উঠে দাঁড়ালাম।
কাঁপা গলায় বললাম।

এক চিলতে রোদ পর্ব ১৮

‘ ভাইয়া আপনি আপনার কিছু লাগবে? ‘
ভাইয়া কিছু বললো না সেখানেই দাঁড়িয়ে র‌ইলো শক্ত হয়ে। আমার দিকে কেমন করে যেন তাকিয়ে আছে।আমি ওরনা ভালো করে গায়ে জরিয়ে সামনের দিকে পা বাড়ালাম আর করলাম ভুল।আমি তো ভুলেই গেছিলাম আমার চুলের পানি পরে ফ্লোর পিছিল হয়ে আছে।
আমি পা পিছলে পড়ে যাচ্ছি ভয়ে আমি চোখ বন্ধ করে চিৎকার করে উঠলাম।
আমি পরলাম না আমাকে ঝড়ের গতিতে ছুটে এসে ভাইয়া কোমর পেঁচিয়ে দুহাতে আগলে ধরলো। নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে।আমি ভাইয়ার শার্ট খামচে ধরে চোখ বন্ধ করে আছি।
ভয়ে আমার হাত পা কাঁপছে।
কপালে ভাইয়ার হাতের স্পর্শ পেয়ে চোখ মেলে তাকালাম। ভাইয়া আমার চুল সরিয়ে দিচ্ছে মুখে থেকে। আমার চুল মুখে এসেছিলো তা সরিয়ে দিয়েছে।
আমি কেঁপে উঠলাম।

ভীতু মুখ করে তাকিয়ে আছি ভাইয়ার দিকে।
ভাইয়া হা করে তাকিয়ে আছে আমার দিকে।
আমি নড়াচড়া করতেই ছেড়ে দিলো।
কিন্তু হাত ছারলো না। আমি হাতের দিকে তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে আছি। ছুটানোর চেষ্টা করছি পারছিনা শক্ত করে ধরে আছে।
ভাইয়া তার ভ্রুক্ষেপ না করে বলল,
‘ আমার কফি লাগবে! ‘
আমি বিস্মিত হয়ে তাকালাম এটা বলতে এসেছে নাকি।
আমি বিস্মিত, আচ্ছা লতাকে পাঠাচ্ছি।
আমার কথা বলতে দেরি হলো ভাইয়ার রেগে তাকাতে সময় লাগলো না।
আগুন চোখে আমার দিকে তাকালো শুধু তাকালো না নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো। আমার হাত টেনে নিলো আমি আচমকা টানে ভাইয়ের বুকে গিয়ে পরলাম।
ভাইয়া হাত বাড়িয়ে আমার থুতনিতে ধরে উঁচু করে বলল,

‘ একদম আমাকে ইগনোর করার চেষ্টা করবি না।আমি তোকে বলেছি মানে তুই দিবি আমার কফি।’
বলেই ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে র‌ইলো। আমি হতভম্ব হয়ে ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে আছি।ভাইয়া রেগে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। এতো রাগ কেন?

এক চিলতে রোদ পর্ব ২০