এক চিলতে রোদ পর্ব ২০ || Nondini Nila

এক চিলতে রোদ পর্ব ২০
Nondini Nila

হতভম্ব হয়ে ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে আছি তার রাগের কারনটা আমার বোধগম্য হচ্ছে না।
আমি বুঝার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হলাম। ভাইয়ার মুখের দিকে তাকিয়ে আছি। তার ফর্সা মুখ লাল হয়ে আছে। হুট করে আমাকে ছেড়ে দিলো আমি হেলে পরেও সামলে নিলাম নিজেকে।
ভাইয়া আমাকে ছেড়ে দিয়ে সোজা দরজার দিকে হাঁটা ধরলো। আমি পেছন ঘুরে ভাইয়ার যাওয়ার দিকে পলকহীন তাকিয়ে আছি। তখন ভাইয়া দাঁড়িয়ে পরলো আমি উঁচু কন্ঠে বলল, কফিটা দ্রুত চাই।
বলেই দ্রুত পা চালিয়ে বেরিয়ে গেল। একবার ও পেছনে ফিরে তাকালো না। ভাইয়াকে দেখা যাচ্ছে না তবুও আমি সেদিকে হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে র‌ইলাম।

বুকের ধুকপুক কমে এসেছে।‌ ভাইয়ার ওতো কাছে আসলে এই ধুকপুক এতো বেড়ে যায় কেন? বুকে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে র‌ইলাম কমে গেছে একদম স্বাভাবিক এখন। বিছানায় বসে ভাইয়ার কথা ভাবছি। ভাইয়া কি? আমি তার আশেপাশে না যাওয়াতে রেগে আছে। কিন্তু এতে এতো রাগের কি আছে? আমি তো ইচ্ছে করে করিনি। চাচি তো বলেছে এটা। আর তার কথা অমান্য করলে আমার খারাপ বলে ভালো হবে না। যা হবে খারাপ হবে।
ভাইয়ার কফির কথা মনে পরতেই ঝট করে উঠে দাঁড়ালাম।‌ যে রাগ দেখিয়ে গেল এখন যদি কফি না দেয় আমার খবর আছে। ছুটে রান্না ঘরে আসলাম। কফি করে ভাবছি চাচি জানতে পারলে যে কি হবে? সে তো আমাকে বলেছে ভাইয়ার আশেপাশে কম যেতে। কিন্তু এখন না গেলেও ভাইয়া বকবে আজকে যাই চাচি তো বাসায় নাই‌ এখন। চিন্তা ভাবনা করে ভাইয়ার রুমের দিকে এলাম সিঁড়ির কাছে লতার দেখা পেলাম ও কফি হাতে দেখে বলল,
‘তুই নিয়ে যাবি নাকি আমি নেব।’
ভাইয়ার গম্ভীর কন্ঠের কথা মনে পড়ে আমার আমি লতাকে বললাম,
‘ না আমি যাই‌। ‘

আরও গল্প পরতে ভিজিট করুন

লতা আচ্ছা বলে চলে গেল।আমি ভাইয়ার রুমে সোজা ঢুকে গেলাম। আমি ভেবেছি রুমে ঢুকে ট্রি-টেবিলের উপর কফি রেখে চলে আসবো তাই। আমি ভেতরে ঢুকে কফি রেখে পেছনে ফিরতেই চোখ যায় ভাইয়ার উপর। ভাইয়া মনে হয় এখন গোসল করে এসেছে। ভাইয়ার ফর্সা জীম করা বডিতে লেগে আছে বিন্দু বিন্দু জল। মাথা ভেজা চুল বেয়ে পানি নাক মুখ ছুঁয়ে লোমহীন বুকে গিয়ে ঠেকছে। আমি সেদিকে তাকিয়ে ছিলাম। বুকের ভেতর টিপটিপ করছে। তারাতাড়ি চোখ সরিয়ে পেছনে ঘুরে গেলাম। লজ্জায় আমার কান গরম হয়ে আসছে। বুকে হাত চেপে জোরে জোরে শ্বাস নিয়ে দরজার দিকে পা বাড়ালাম।
তখনি ভাইয়ার মোটা কন্ঠে বলে উঠলো, স্টপ,
আওয়াজটা কানে আসতেই থমকে দাঁড়িয়ে পরলাম। বুকে হাত দিয়ে ওইভাবেই দাঁড়িয়ে আছি।
আবার দাঁড়াতে বলছে কেন?
ভাইয়া আবার বলে উঠলো,
‘তোর সাথে আমার কথা আছে?’
আমি হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে আছি। আমার সাথে কি কথা আছে ভাইয়ার।
‘ কথা কানে যাচ্ছে না কথা আছে বললাম তো।’
আমি মাথা নিচু করে ভাইয়ার দিকে ফিরলাম হাত কচলাতে কচলাতে।
‘কি কথা ভাইয়া?’

‘এদিকে আয়। আর কফি আমার কাছে দে। ‘
বলতে বলতে ভাইয়া বিছানায় গিয়ে বসলো।
আমি তুলে দেখি উনি কালো টাউজার পরে আছেন। আর নীল গেঞ্জি। আমি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে ট্রি টেবিলের উপর থেকে কফি নিয়ে ভাইয়াকে দিলাম।
‘জি কি কথা বলুন?’
তারাতারি জানতে হবে। আবার চাচি কখন চলে আসে। আমার তারাতাড়ি আছে।
ভাইয়া আয়েশ করে বসে কফিতে চুমুক দিয়ে শান্ত চোখে আমার দিকে তাকিয়ে বলল,
‘তুই আমার সাথে কথা বলিস না কেন?’
আমি ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে ছিলাম ভাইয়ার কথা শুনে হকচকিয়ে গেলাম। আমি তো ভাইয়ার আশেপাশেই যাইনা কথা কখন বলবো।
‘দুইদিন ধরে দেখছি আমার কফি নিয়ে আসিস না। এই রুমেই আসিস না।আমি যেখানে থাকি তার ধারের কাছেও যাস না।’
আমি বিস্মিত হয়ে ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে আছি। ভাইয়া এসব খেয়াল ও করেছে আমি তো বিশ্বাস করতে পারছি না।

‘কি হলো হ্যাবলার মতো তাকিয়ে আছিস কেন? উওর না দিয়ে।’
আমি সাথে সাথে চোখ সরিয়ে নিলাম আমি নাকি হ্যাবলার মতো তাকিয়ে আছি‌। কিন্তু ভাইয়াকে কি বলবো?
ভাইয়া উওরের আশায় তাকিয়ে আছে ভ্রু কুঁচকে।
আমি বললাম,
‘এমনটা না আসলে আমি ব্যস্ত থাকি অন্য কাজে তাই আর একজন দিলেই হলো কফি তাইনা। আর কথা কি বলতাম? কথা বলার দরকার ও হয়নি তাই বলিনি।’
ভাইয়া কপাল কুঁচকে তাকিয়ে র‌ইলো। তারপর কি যেন ভেবে বলল,
‘তুই সারাদিন বাসায় থাকিস যে কোচিং করিস না।’
কোচিং এর কথা শুনে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললাম, নাহ।
‘কেন? তোর না এস এস সি পরীক্ষা এবার তাহলে পড়া বাদ দিয়ে সারাদিন এসব করিস কেন? কখনো তো পরতের দেখি না।’
‘রাতে পরি একটু একটু।’

আমাকে পরা সময় দিলে তো পরবো। রাতে ক্লান্তিতে আর পরতেই মন চায়না।
‘একটু একটু পরলে হবে।’ খানিক রাগ নিয়ে।
‘না হলে না হবে। সেটা আপনাকে ভাবতেই হবে না।কাজ করে আর পড়ার সময় পেলে তো পরবো।’
‘এতো কাজ করার কি দরকার?’
‘আছে দরকার। না করলে করবে কেন?’
‘কেন লতা?’
‘ও একা এতো কিছু করতে পারবে না।’
‘তাহলে কাজের লোক রাখলেই হয়।’
‘আমি থাকতে তার কি‌ দরকার ?’
‘তুই নিজেকে কাজের লোক ভাবিস?’
অবাক হয়ে।
‘আমি কি তার থেকে বেশি কিছু এই বাড়িতে আমার তো মনে হয়না?’
জিজ্ঞাসু চোখে তাকিয়ে।

ইহান কিছু বলতে পারলো না। চুপ করে ঊষার দিকে তাকিয়ে আছে ওর চোখ ছলছল।
ও তীক্ষ্ণ নজরে তাকিয়ে আছে সেই মায়াবী কষ্টে ভড়া চোখের দিকে। ইহানের বুকের ভেতর ধুক করে উঠে এই পানি দেখলে।ঊষা সাথে সাথে আসি বলেই ছুটে চলে যায়।
রাতে খাবার টেবিলে রেখে রান্না ঘরের দরজায় দাঁড়িয়ে তাকিয়ে আছি।সবাই খাচ্ছে সবাই আছে ইহান ভাই নাই।কেন নাই জানি না সেই বিকেলে কথা হয়েছিল আর তাকে দেখি নি।
আমার উৎসুক চোখ তাকে খুঁজছে। সবাই খেয়ে চলে গেল লতা ও খেতে বসে পরলো আমিও আর দেরি না করে খেতে বসলাম। রুমে এসে ভাবলাম।
ভাইয়া খেতে এলো না কেন?

কিন্তু ফলাফল শূন্য আমি কি করে জানবো।
পরদিন খাবার টেবিলে ভাইয়ার দেখা মিললো চোখ লাল হয়ে আছে যেন রাতে ঘুম হয়নি।
খাওয়ার মাঝে ভাইয়া আমাকে বললো,
‘ঊষা রেডি হয়ে খাবার খেয়ে নে তারাতাড়ি।’
আমি সহ খাবার টেবিলের সবাই অবাক হয়ে তাকালো ভাইয়ার দিকে।
ভাইয়া খাবার মুখে দিয়ে সবার দিকে তাকিয়ে বলল,
কি হয়েছে এভাবে তাকিয়ে আছো কেন সবাই?
চাচি বলল, ঊষাকে রেডি হতে কেন বলছিস? ও কোথায় যাবে?
ভাইয়া খেতে খেতে শান্ত ভঙ্গিতে বলল, ওকে কোচিং এ ভর্তি করাতে যাব‌। কয়েকদিন পর ই তো এক্সাম।

সাথে সাথে চাচি হুংকার দিয়ে উঠলো,
‘কি বললি তুই? কোচিং এ ভর্তি করার কি দরকার? ওকে কোচিং এ ভর্তি করলে বাসায় কিছু কে করবে শুনি। ও কোথাও ভর্তি হবে না‌।’
‘হবে আম্মু। আমি করাবো। আর কাজ করার জন্য অবশ্যই ওকে রাখা হয়নি বাসায়। তোমার কাজের যদি অবহেলা হয় আমি একজন ভালো কাজের লোক এনে দেবো। ডোন্ট ওয়ারি।’
‘কাজের জন্য রাখা না হলেও আমি ওকে বসিয়ে খাওয়াতে পারবো না।’
তীব্র রাগ নিয়ে বলল।
‘আম্মু তুমি ওকে খাওয়ানোর খোটা দিচ্ছো।’
‘হুম দিচ্ছি। আর কোচিং করার কি দরকার ভারতি টাকা খরচ। বাড়িতে পরে যা পারবে তাই পরিক্ষা দেবে।’
‘বাড়িতে ওকে পরার সময় কি দাও?’
‘কি বলতে চাইছিস? আমি ওকে সারাদিন খাটায়?’
‘আমার বলার দরকার নাই। তুমি নিজেই জানো কি করো?’
‘তুই আমার সাথে এইভাবে কথা বলছিস?’
‘তুমি বাধ্য করেছো? কাকার তো কম টাকা ছিলো না সেগুলো দিয়ে তো ঊষা পায়ের উপর পা তুলে খেতে পারতো কি হয়েছে সেগুলো?’
‘আমি কি জানি?’ ভয় পেয়ে বললো।

এক চিলতে রোদ পর্ব ১৯

‘তাই তো তুমি কিছু জানো না? আব্বু তুমি এমন চুপ করে আছো কেন? নিজের ভাইয়ের মেয়েকে কি একটু ভালো করে মানুষ করতে পারতে না। এইভাবে কাজের লোক না বানিয়ে।’
তিনি মাথা নিচু করে আছে সে তার স্ত্রীর সাথে পেরে উঠে না তাই তো ঊষার জন্য কিছু করতে পারেনি। চোখের সামনে ওর কষ্ট ও দেখতে পারেনা তাই তো বাসায় ও থাকে না বেশি সময়।
আমি হতভম্ব হয়ে সব কান্ড কারখানা দেখছি। কি সব হচ্ছে? আমার জন্য সবার সাথে এইভাবে কথা বলছে ভাইয়া! চাচি একটু পর পর রাগী চোখে তাকাচ্ছে আমার দিকে। যেন চোখ দিয়েই গিলে খাবে।
চাচি আর ভাইয়ার তর্ক বিতর্ক সৃষ্টি হলো আমি তাদের ঝগড়া দেখছি চাচি কিছুতেই আমাকে কোচিং এ ভর্তি হতে দেবে না। আর ভাইয়া ভর্তি করেই ছাড়বে।
চাচি রেগে গমগম করে চলে গেল চিল্লাচিল্লি করতে করতে নিজের রুমে।
আমি হতবুদ্ধি হয়ে দাঁড়িয়ে আছি।

আচমকা ভাইয়া এসে আমার সামনে দাড়ালো। আমি বড়সড় চোখ করে তাকিয়ে আছি।
ভাইয়া শক্ত গলায় বলল,
এভাবে দাঁড়িয়ে আছিস কেন? তোকে রেডি হতে বললাম না।
আমি বিস্মিত হয়ে তাকিয়ে আমতা আমতা করে বললাম, আমি কোচিং এ ভর্তি হবো না।
তোকে আমি জিজ্ঞেস করেছি কি না তো ? তাহলে নিজের মতামত প্রকাশ করছিস কেন? রেডি হতে বলেছি চুপচাপ রেডি হয়ে আয়।
গম্ভীর গলায় কঠিন চোখ মুখ করে উঁচু কন্ঠে বলল ভাইয়া। তার কথায় আমি ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেললাম। ভয়ে আমার বুক ধুক করে উঠলো যেন।
ভাইয়া কিছু বলতে পারছি না।ইমা আপু এগিয়ে এসে বলল,
যা তারাতাড়ি রেডি হয়ে আয়।
তার চোখ মুখ উজ্জ্বল।
আমি মৃদু কন্ঠে বললাম, কিন্তু চাচি ..
সেসব নিয়ে চিন্তা না করে নিজেকে নিয়ে ভাব এই সুযোগ আর নাও পেতে পারিস।
জানিনা আমার কি হলো আমি রেডি হতে চলে গেলাম। আসলে ভাইয়া রাগ দেখে আমি প্রচন্ড ভয় পেয়ে গেছি। রেডি হয়ে বাইরে এসে দেখি ভাইয়া গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছে। আমি‌ গুটিশুটি পায়ে এগিয়ে এলাম।

এক চিলতে রোদ পর্ব ২১