এক চিলতে রোদ পর্ব ২১ || kase asar golpo

এক চিলতে রোদ পর্ব ২১
Nondini Nila

আমি মাথা নিচু করে ভাইয়ার সামনে আসতেই দরজা খুলে ভেতরে বসতে বললো।
আমি মাথা তুলে তাকালাম, ভাইয়াকে কিছু বলতে চাই।
ভাইয়া কপাল কুঁচকে তাকিয়ে আছে। আমার দাঁড়িয়ে থাকা তার রাগ বাড়ছে।
আমি আমতা আমতা করে বললাম,
‘ভাইয়া এভাবে চাচির বিরুদ্ধে না গেলে হতো না।এটা নিয়ে চাচি রাগারাগী করবেন!’
কথাটা বলেই ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে দেখলাম সে চুপ করেই আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
আমি তাকাতেই বলল,
‘ বলা শেষ হলে তারাতারি কর। আমাকে কলেজ যেতে হবে। ‘
‘আমার কথাটা…
‘ভেতরে যা।’
ভাইয়ার রাগী কন্ঠে আমি কেঁপে উঠলাম আর কিছু না বলে ভেতরে গিয়ে বসলাম।
ভাইয়া ড্রাইভিং সিটে বসে বললো,
সিট বেল বাঁধ।
আমি জানালা দিয়ে তাকিয়ে ছিলাম ভাইয়ার কথায় চমকে ফিরে তাকালাম।
হুম।

বলেই সিট বেল বাঁধতে লাগলাম। কিন্তু লাগাতে পারছি না। চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি হচ্ছে না কি মুশকিল। তখন একটা ঠান্ডা হাত আমার দিকে এগ এগিয়ে এলো আমি মাথা তুলে নিজের খুব নিকটে ভাইয়ার অস্তিত্ব পেলাম। হতভম্ব হয়ে হাত আলগা করে সরে গেলাম। ভাইয়া বিরক্ত মুখ করে বলল,
এটাও বাঁধতে পারিস না।
আমি কাচুমাচু মুখ করে তাকিয়ে আছি ভাইয়ার কুঁচকানো কপালের দিকে। ভাইয়া সিট বেল লাগিয়ে নিজের জায়গায় বসে ড্রাইভিং করতে লাগলো আমি ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে রইলাম। আমার জন্য এতো কথা শুনালো চাচিকে তার বিরুদ্ধে গিয়ে কোচিং এ ভর্তি করতে নিয়ে যাচ্ছে।
হঠাৎ মনের ভেতর সুখের আবাস খুঁজে পেলাম। সুখ সুখ অনূভুতি হচ্ছে খুব চাচির ভয় এক পাশে ফেলে নিজের সুখ অনুভব করতে লাগলো।
ভাইয়ার দিকে মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে আছি। তখন হঠাৎ ভাইয়া আমার দিকে তাকালো আমি তারাতাড়ি চোখ সরিয়ে জানালার বাইরে তাকালাম।

আরও গল্প পরতে ভিজিট করুন

গাড়ি থেকে নেমে ভাইয়ার পেছনে পেছনে যেতে লাগলাম। ভাইয়া আমার হাত ধরে লিফটে উঠে গেল। পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আছি দুজন ভাইয়া ফোন টিপতে ব্যস্ত আমি চুপ করে দাঁড়িয়ে একবার ভাইয়ার দিকে তাকাচ্ছি তো একবার নিচের দিকে।
আর একমাস আছে পরিক্ষার এখন কি কোচিং এ ভর্তি হ‌ওয়া যাবে।
নিচু কন্ঠে বললাম ভাইয়াকে।
ভাইয়া আমার কথায় ভ্রু কুটি করে ফোন থেকে চোখ সরিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বলল,
সেটা আমি দেখে নেব।তোকে ভাবতে হবে। তুই মন দিয়ে শুধু পড়ালেখা করিস।
আমি মাথা নাড়লাম।
আমাকে নিয়ে একটা কক্ষে গেল। যেখানে টিচার ছিলো। তার সাথে কথা বললো আমার ভর্তি নিয়ে তারা বললো এতো লেট কেন?
ভাইয়া নিজের মতো বলে ম্যানেজ করে নিলো। তারা দ্বিমত করলেও পরে মেনে নিলো।আমি পুরোটা সময় মাথা নিচু করে ছিলাম।

ক্লাস টাইম বিকেল এ। তাই কাজ শেষ করে আমরা চলে এলাম।
মুখ এমন করে রেখেছিস কেন? কি হয়েছে?
লিফটে ঢুকে দাড়াতেই ভাইয়া এই কথা বললো।
আমি মলিন মুখেই ভাইয়ার দিকে তাকালাম তিনি কপাল কুঁচকে তাকিয়ে আছে।
লিফটে আরো লোক আছে আমি তাদের দিকে এক নজর তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নিলাম।
কিছু হয়নি।
ভাইয়া আর কিছু বললো না। আসার সময় একটা রেস্টুরেন্টে নিয়ে ভাইয়া থামালো।
এখানে কেন?
ভাইয়া তার উওর এ কিছু না বলে আমাকে তার সাথে যেতে বললো।
খাবারটা খা।
এখানে খাবার এর কি দরকার ছিলো।
তুই না খেয়ে এসেছিস ভুলে গেলি নাকি‌।
আমার খিদে পায়নি।
তোর সব কিছু তেই না করতেই হবে তাইনা।এখন না খেলে এগুলো নষ্ট হয়ে যাবে। তারাতাড়ি খা।
কিন্তু…

ভাইয়ার চাহনি দেখে আর না করতে পারলাম না খেতে লাগলাম। বিরিয়ানি অডার‌ করেছিলো আমি খেতে না চাইলেও এখন তৃপ্তি করে খাচ্ছি খুব খিদে পেয়েছিল।তার উপর বিরিয়ানি আমি হাত দিয়ে খেলাম। আশেপাশে তাকিয়ে খাওয়া অফ হয়ে গেল অনেকে তাকিয়ে আছে।
সবাই চামচ দিয়ে খাচ্ছে আমি একা হাত দিয়ে খাচ্ছি। খানিক লজ্জা পেলাম খেতে ইচ্ছে করছে না এখন আমার।
কি হলো খাচ্ছিস না কেন?
ভাইয়া তীক্ষ্ণ চোখে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আমার দিকে।
আমি মাথা নিচু করে বললাম,
আমি আর খাব না।
ভাইয়া অবাক হয়ে বলল, কেন?
আমার পেট ভরে গেছে।
ইহান ঊষার দিকে থেকে চোখ সরিয়ে সবার দিকে তাকিয়ে বলল,
বাঙালিরা হাত দিয়ে খেয়েই অবস্থ। তাই এই হাত দিয়ে খাওয়ার জন্য লজ্জিত হয়ে খাওয়া অফ করিস না।

আমি চমকে মাথা তুলে তাকালাম ভাইয়ার দিকে।
বাসায় আসার পর থেকে আমি ভয়ে ভীতু মুখ করে বসে আছি।এটা ওটা করছি। চাচি গম্ভীর মুখ দেখেছি কিন্তু আমাকে কিছু বলেনি রেগে তাকিয়েছে শুধু।
আমি চাচির সামনে এলেই ভয়ে কাঁপা কাঁপি করেছি। তাকে সাহস করে সরি বলতে চেয়েছিলাম। কিন্তু সাহস হয়নি কথা বলার।
সন্ধ্যায় ভাইয়া আমার রুমে দুইটা ব‌ই নিয়ে এলো।
আমি তখন নামাজ থেকে উঠে বসেছিলাম তখন ভাইয়াকে আসতে দেখে চমকে দাঁড়িয়ে পরলাম।
এই ধর ব‌ই।
এগুলি আবার কিসের ব‌ই?
অবাক হয়ে বললাম।
এই ব‌ই থেকে পরতে হবে। বোর্ড প্রশ্ন আছে।
ব‌ই আমার হাতে দিয়ে চলে যেতে গিয়ে আবার ফিরে এসে বলল,
আম্মু তোকে কিছু বলবে না ভয় পাস না।
কথাটা বলেই ভাইয়া গটগট করে চলে গেল আমি বিষ্ময়ে হতভম্ব হয়ে ভাইয়ার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে র‌ইলাম।

পরদিন কোচিং এ গেলাম একা। ভাইয়া আস্তে চেয়েছিলো আমি মানা করেছি একাই পারবো বলে। বাসায় অনেক কাজ এখন দুইদিন পর গায়ে হলুদ আপুর।
আজ সবাই মার্কেটে যাবে। আমি কোচিং এ এসে চুপচাপ একটা সিটে বসে আছি আগেই চলে এসেছি।একে একে সবাই আসলো আমাকে নতুন দেখে জিজ্ঞেস করলো আগে কেন ভর্তি হয়নি। আমি সমস্যা বললাম পারিবারিক। সবাই টিটকারি মারা কথা বলে চলে গেল।
আমি একাই এক সিটে বসে র‌ইলাম।
কোচিং শেষে বের হয়ে গাড়ির জন্য দাঁড়িয়ে আছি তখন একজনকে দেখে চমকে উঠলাম,
রিহান এখানে কি করে?
সেও আমাকে দেখে অবাক হয়েছে তারপর মুখে হাসি টেনে আমার কাছে এসে বলল,
হাই ঊষা, তুমি এখানে?
আমি ভদ্রতা দেখিয়ে হেসে বললাম,
হুম। আমি এখানে কোচিং করি।
ওহ আচ্ছা।কতোদিন পর দেখা হলো। তোমাকে দেখে খুব চমকিয়েছি খেয়েছি। আচ্ছা বলো কেমন আছো?

আলহামদুলিল্লাহ ভালো, আপনি?
ভালো না থাকলেও এখন তোমাকে দেখে ভালো হয়ে গেছি‌।
আমি বিস্মিত হয়ে তাকালাম।
মানে,
কিছু না তোমাকে খুব মিস করছিলাম।
আমি বিস্মিত হয়ে বললাম, কেন?
ওই এমনি।তোমার ফোন নাম্বার টা দেওয়া যাবে‌। আসলে একটু আধটু কথা বলতাম।
ছেলেটাকে একটুও সুবিধার লাগে না, তবুও কিছু বলতে পারছি না,,
আমার ফোন নেই।
কথাটা বোধহয় বিশ্বাস হলো না অবাক হয়ে হালকা কেশে বললো,
আরে আমি ওতো ডিস্টাব করবো না। মিথ্যা কেন বলছো দাওনা।
মিথ্যা কেন বলবো সত্যি আমার ফোন নেই।
খানিক রেগে বললাম।
ও আচ্ছা। কিছু মনে করো না কেমন তুমি কি এখন বাসায় যাবে।
হুম।

তাহলে চলো তোমাকে পৌঁছে দেয়।
না না তার দরকার নেই আমি একাই যেতে পারবো।
আরে চলো তো। ওই যে গাড়ি দাঁড়াও থামাচ্ছি‌‌।
আমার কথা শুনলোই না গাড়ি থামিয়ে নিজে উঠে বসলো আমাকেও বসার জন্য ডাকতে লাগলো। আমি যাব না মন স্থির করেছি। কিন্তু এখন না গিয়ে ও উপায় নাই অটো থেকে ড্রাইভার ও আরেকজন লোক তারাতাড়ি উঠতে বসছে।
উফফ বিরক্ত হয়ে উঠে বসলাম। এনার সাথে দেখা যে কেন হলো যতসব।
সারা রাস্তা পাগল করে ফেলেছি কথা বলতে বলতে আমি হু হা করেছি।গাড়ি বাসায় সামনে আসতেই আমার আগে রিহান বেরিয়ে এলো। আমি বিরক্তিকর চাহনি দিয়ে নামলাম। রিহান হুট করেই আমার দিকে ঝুঁকে পড়ল আমি চমকে পিছিয়ে গেলাম।
রিহান বলল,

এক চিলতে রোদ পর্ব ২০

তোমার সাথে দেখা হয়ে আমার মনটা ফুরফুরে হয়ে গেছে। কালদিন পর তো দেখা হবে।
আমি ভ্রু কুঁচকে বললাম, কিভাবে?
আরে বিয়েতে আমি ছেলে পক্ষ আর তুমি মেয়ে পক্ষ।
উফ এটা তো ভুলেই গেছিলাম। এতো জ্বালাতন করতে পারে জাস্ট অসহ্য।
আমি সরে গেটের ভেতরে চলে গেলাম।
রাগ লাগছে লোকটা কে একটুও ভালো লাগেনা। গায়ে পড়া টাইপের।
এসব ভাবতে ভাবতে ভেতরে ঢুকে পরলাম। বাসার সবাই সোফায় বসে ছিলো ডয়িং রুমে।আমি সেদিকে তাকিয়ে নিজের রুমে যাবে তখন চোখ পরলো ইহান ভাইয়ের দিকে সে সিঁড়ির কাছে দাঁড়িয়ে আছে চেয়াল শক্ত করে। চোখ মুখ লাল টকটকে হয়ে আছে। রাগী চোখ আমার দিকে তাকিয়ে আছে‌। আমি সেদিকে তাকিয়ে আছি ভীতু মুখ করে।

ভাইয়া ঠোঁট নাড়িয়ে মৃদু আওয়াজ করে বললো,
ঊষা আমার কফিটা নিয়ে আয়।
বলেই গমগম করে উপরে চলে গেল।আমি হাঁ করে তাকিয়ে র‌ইলাম।
এমন রাগ দেখালো কেন?
আমি রুমে গিয়ে ব্যাগ রেখে রান্না ঘরে থেকে কফি করে নিয়ে যেতে লাগলাম তখন চাচি এসে ছিনিয়ে নিলো কফি, আমি চমকে উঠলাম,
লতা ক‌ইরে কফিটা দিয়ে আয় তো ইহান কে!যা।
আমি থমকে দাঁড়িয়ে র‌ইলাম।

এক চিলতে রোদ পর্ব ২২