এক চিলতে রোদ পর্ব ২২ || Nondini Nila

এক চিলতে রোদ পর্ব ২২
Nondini Nila

আমি থমকে দাঁড়িয়ে আছি মাথা নিচু করে। চাচি দাঁতে দাঁত চেপে বললো,
“তোকে ইহানের আশেপাশে যেতে মানা করছি না। তাও কোন সাহস এ যাচ্ছিলি।”
আমি চাচির রাগী কন্ঠ ভয়ে জরোসরো হয়ে দাঁড়িয়ে আছি।
চাচি রেগে বলতে লাগলো,,
“বিয়েটা যেতে দে! তারপর তোর ব্যবস্থা করবো। লেখাপড়া করে ডিপ্টি হ‌ওয়ার শখ মেটাবো।”
বলেই চাচি গরম চোখে তাকিয়ে বেরিয়ে গেল রান্না ঘর থেকে। আমি ভয়ে গুটিয়ে গেলাম। চাচি তো খুব রেগে আছে কি যে হবে? আমি ভেতরে ভেতরে ভয়ে কাঁপতে লাগলাম। ইহান ভাইয়া তো আমাকে নিয়ে যেতে বলেছে সেও রেগে গেল বোধদয় কিন্তু চাচির সামনে আমি বা কি করতাম।আর তখন এতো রেগে কেন ছিলো ভাইয়া চেয়াল শক্ত করে তাকিয়ে ছিলো আমার দিকে।
আর ইহান ভাই এর খোঁজ নিতে পারলাম না। চাচি আমার উপর কড়া নজর রাখলো।রাতে ভাই খেতে এলো না। আমার চোখ দুটো তার জন্য অপেক্ষা করে নিরাশ হলো।

সবার খাওয়া শেষ হতেই ইমা আপু আমাকে বলল তার রুমে যেতে খেয়ে।
আমি খাওয়া শেষ করে আপুর কাছে গেলাম আপুর বিয়ের পোশাক বের করে রেখেছে আমি যেতেই আপু সব দেখালো। গায়ে হলুদ এ হলুদ সবুজ রঙের কাতান শাড়ি, সাথে ফুলের গহনা।বিয়েতে লেহেঙ্গা কালো খয়রি মধ্যে ক্রিম কাজ, ওরনা হালকা গোলাপি রঙের। বৌভাতের ড্রেস শশুর বাড়ি তাই সেটা দেখতে পেলাম না।
সব ড্রেসের প্রশংসা করলাম হাত দিয়ে ছোঁয়ে ছোঁয়ে দেখলাম। আপু আমাকে একটা শাড়ি দিলো কাঁচা হলুদ গায়ে হলুদ এ পড়ার জন্য। আমি শাড়িটা হাতে নিয়ে আনন্দে আত্মহারা হয়ে গেলাম। গিফট পেতে কার না ভালো লাগে আমি চমকে উঠে তাকিয়ে আছি শাড়িটার দিকে।
এটা আমার আপু?
হুম তোর হলুদ এ এটা পরিস।
আচ্ছা।
তোর পছন্দ হয়েছে?
খুব।

ঊষার উজ্জ্বল মুখ দেখে ইমার মুখে হাসি ফুটলো। ও নিজে পছন্দ করে এনেছে এই ড্রেস। বিয়েতে পরার জন্য ও একটা এনেছে সেটা বিয়ের দিন দিয়ে ওকে সারপ্রাইজ হবে।
আমি আপুকে দিয়ে এলাম শাড়ি। পরশু দিন নিয়ে পরবো আপুর থেকে।আপুর রুমে থেকে হাসি মুখে বেরিয়ে এলাম নাচতে নাচতে। আমার খুব খুশি লাগছে। আমি নিচে নামার জন্য পা বাড়াবো তখন হঠাৎ একটা ঠান্ডা হাত আমার হাত চেপে ধরে। আমি কারো স্পর্শ পেয়ে চমকে পেছনে তাকানোর আগেই সেই লোকটা আমাকে টেনে একটা রুমে নিয়ে আসে। ততক্ষনে আমি বুঝে গেছি এটা কে এটা তো ইহান ভাই। কিন্তু আমাকে এভাবে টেনে রুমে নিয়ে এলো কেন?
ভাইয়া আমাকে রুমে এনে দেয়ালের সাথে চেপে ধরলো আমি ভয়ার্ত চোখে ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে আছি‌। ভাইয়া চেয়াল শক্ত করে এক হাতে আমার হাত ধরে আছি অন্য হাতে আমার কোমর পেঁচিয়ে নিজের সাথে মিশিয়ে রেখেছে।

আরও গল্প পরতে ভিজিট করুন

আমি বড়সড় চোখ করে ভাইয়া চোখের দিকে ঢোক গিললাম। ভাইয়া চোখ লাল বর্ণ ধারণ করে আছে। সে আমার দিকে সেই ভয়ংকর চোখ দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। একেতে ভাইয়ার এতো কাছে আমি তার জন্য আমার হৃদস্পন্দন বেড়ে গেছে।আমি কাঁপা কাঁপি করছি এখন আবার রাগ আমি ভয় চোখে তাকিয়ে আছি। তখন কফি না আনার জন্য কি ভাইয়া এমন করছে?
ভাইয়া আমার মুখোমুখি হয়ে বললো, কফি তোকে আনতে বলেছিলাম।
ভাইয়ার নিঃশ্বাস আমার মুখে আছড়ে পরছে আমি চোখ বন্ধ করে মাথা নাড়লাম।
তাহলে লতাকে কেন পাঠালি?
কি বলবো আমি পিটপিট করে চোখ মেলে ভাইয়ার দিকে তাকালাম,,
কি হলো উওর দে? চুপ করে না থেকে!
আমি আসলে…
কি হলো আমতা আমতা করছিস কেন?
আমি ভাইয়া কঠিন চোখ মুখ দেখে ভয়ে চুপসে গেলাম।কথা বলতে পারছি না।
তোকে আমি কোচিং এ পাঠিয়ে ছিলাম সেখানে ওই ছেলেটা কোথায় থেকে আসলো? রিহানের সাথে তোর কি সম্পর্ক সত্যি করে বল।

রিহানের কথা ভাইয়ার মুখে শুনে শক খেলাম।ভাইয়া কি করে জানালো রিহানের সাথে এসেছে আর কিসের সম্পর্কের কথা বলছে। আমি ভীতু চোখে তাকিয়ে আছি।
রাগে গলার আওয়াজ উঁচু করে উঠলো,,আমার প্রশ্নের উত্তর দে।
ভাইয়া উঁচু কন্ঠ শুনে আমি ভয়ে কুঁকড়ে চোখ খিচে বন্ধ করে নিলাম।
আমার চোখ ঠোঁট থরথর করে কাঁপছে।
ভাইয়া তা দেখে কিছু শান্ত হলো আমার থেকে সরে এলো মাথা চুলে দুই হাত চেপে ধরে বিছানায় বসলো।

এক চিলতে রোদ পর্ব ২১

আমি ভাইয়া অস্তিত্ব না পেয়ে চোখ খুলে দেখি ভাইয়া বিছানায় বসে চুল খামচে ধরে চোখ বন্ধ করে আছে।আমি বিস্মিত হয়ে তাকিয়ে আছি। এমন করছে কেন? মাথা ব্যাথা নাকি?
আমি এগিয়ে এলাম ঢোক গিলে। ভাইয়া সামনে দাঁড়িয়ে কাঁপা কাঁপা গলায় বললাম,
ভাইয়া আপনার কি মাথা ব্যাথা করছে? করলে বলতে পারেন আমি মাথা টিপে দেব। দেখবেন ভালো লাগবে।
বলেই ভাইয়ার রিয়াকশনের জন্য দাঁড়িয়ে আছি।
ভাইয়া মাথা থেকে হাত সরিয়ে রক্ত লাল চোখে তাকালো।কেমন যেন দেখা যাচ্ছে ভাইয়াকে আমি হতভম্ব হয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছি।কি হয়েছে ভাইয়ার এমন লাগছে কেন?
ভাইয়া বিছানায় শুয়ে পরলো ফট করে আমি তার দিকে তাকিয়ে কাচুমাচু করে দাঁড়িয়ে আছি। কি করবো বুঝতে পারছি না। ভাইয়া আমাকে মাথা টিপতে ও বলে নাই সে বিছানায় শুয়ে চোখ বন্ধ করে আছে।আমি হাত কচলাতে কচলাতে উনার দিকে তাকিয়ে আছি।চলে যাব নাকি নিজে থেকে মাথায় হাত রাখবো।
ভাবনার মাঝে ভাইয়া চোখ মেলে তাকালো আর আমার দিকে তাকালো আমি তাকিয়ে ছিলাম ভাইয়ার তাকাতেই চোখাচোখি হয়ে গেল। আমি ভাইয়ার চোখের দিকে তাকিয়ে কেঁপে উঠলাম। কি ভয়ংকর চাহনী দিয়ে তাকিয়ে আছে আমার দিকে আমি শুকনো ঢোক গিলে বললাম,
টিপে দেবো।

ভাইয়া হাতের ইশারায় ডাকলো আমি বুঝতে পারলাম টিপতে বলছে। আমি তারাতাড়ি ভাইয়ার কাছে গিয়ে বসলাম। ভাইয়া চোখ বন্ধ করে আছে।
আমি কাঁপা হাত এগিয়ে নিলাম ভাইয়ার মাথায় সিল্ক চুলের দিকে।আমার হাত কাঁপছে অসম্ভব রকমের।
চোখ বন্ধ করে হাত চুলের মাঝে রেখে চোখ খুললাম। ভাইয়া ভ্রু কুঁচকে আছে চোখ বন্ধ করেও । আমি আলতোভাবে হাত বুলিয়ে দিতে লাগলাম। আমার বুকের ধুকপুক বাড়ছে মনে হচ্ছে বাইরে থেকে শুনা যাচ্ছে। আস্তে আস্তে আমার কাপাকাপি কমে এলো আমি আরামে ভাইয়ার মাথা টিপতে লাগলাম।
রিহানের সাথে সাক্ষাৎ হলো কি করে বললি না?
ভাইয়া চোখ বন্ধ থেকেই কথাটা বলছে আমি চমকে উঠে তাকিয়ে দেখি‌।
তারপর সব বলি কি করে তার সাথে দেখা হলো।ভাইয়া সব শুনে চোখ মেলে তাকালো আমার দিকে আমি ঝুঁকে ছিলাম ভাইয়ার তাকানো দেখে চমকে সোজা হয়ে বসলাম।
আর কফি?

চাচি বলেছে আপনার আশেপাশে না আস্তে বলেছিলাম না।
আমার কথা শুনে থমকালো ভাইয়ার তারপর চোখ বন্ধ করে র‌ইলো। ঊষার নরম তুলতুলে হাতের স্পর্শ নিজের কপালে অনুভব করতে লাগলো।
হুট করেই ইহান ঊষার বামহাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে নিলো আমি আচমকা ভাইয়ার স্পর্শ নিজের হাতে পেয়ে চমকে উঠলাম।
ভাইয়া আমার হাত টেনে নিজের বুকের বাম পাশে চেপে ধরলো আমি হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছি।

এক চিলতে রোদ পর্ব ২৩

1 COMMENT

Comments are closed.