এক চিলতে রোদ পর্ব ২ || Nondini Nila

এক চিলতে রোদ পর্ব ২
Nondini Nila

কেবল‌ই ঘুমিয়েছিল ইলিনা বেগম( ইহানের মা) তখনই তার ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায় কাছের মেয়ে লতা এসে ডেকে তুলে। রেগে লতাকে এক ধমক দিয়ে উঠে ইলিনা।ঘুমের মধ্যে ডিস্টাব একদম পছন্দ করেনা। রেগে বলে উঠে,
ওই কি হয়েছে তুই এই সময় আমার ঘুমের বারোটা বাজিয়ে ডাকছিস কেন?
ম্যাডাম ঊষার তো জ্বর এসেছে।ও জ্ঞান হারিয়েছে তারাতাড়ি চলেন।
জ্বর এসেছে তো আমি কি করবো? আমি কি ডাক্তার যতসব আপদ। একটু শান্তিতে থাকতে দেবে না জ্ঞান হারিয়েছে মরে তো যায় নাই। এতো হাক ডাক করছিস কেন। তুই যা করার কর আমাকে একদম বিরক্ত করবি না।

বিরক্তের সাথে কথা বলেই ইলিনা ভেতরে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালো। তখন লতা বলে উঠলো,
ইহান ভাইজান ঊষার কাছে আছে তিনি আপনাকে যেতে বলেছে।
ইহান ঊষার কাছে আসে শুনেই চমকে উঠে ইলিনা। ফিরে তাকিয়ে বলে,
কি বললি তুই?
হ ম্যাডাম আমি ঠিকই ক‌ইছি।
চমকে উঠে তারাতাড়ি ঊষার রুমে আসতে লাগলো।
এদিকে ইহান লতার দেখানো রুমে এনে ঊষাকে বিছানায় শুইয়ে দিল।‌ তারপর কপালে নিজের হাতটা রাখলো নিজের কাছে সংকোচ হচ্ছিল হাত দিতে তবুও রাখলো। হাত রাখতে রাখতেই সরিয়ে নিলো এতো তাপ যে রাখা যাচ্ছে না।ও হাত সরিয়ে গভীর ভাবে তাকালো ঊষার শুকনো মুখের দিকে।
ও খেয়াল করলো ঊষার চোখ খুলে আছে। কান্না করলে এমন হয়। ইহান কপালে ভাঁজ ফেলে ভাবছে মেয়েটা কি কেঁদেছে?

আরও গল্প পরতে ভিজিট করুন

আশার পর তো একে একবার ও দেখি নি‌ তখন কোথায় ছিলো?
ভাবতে ভাবতে উঠে পানি আনলো জ্ঞান ফেরানো দরকার। হাত দিয়ে কিছু পানি ঊষার মুখে ছিটিয়ে দিলো।ঊষা নিজের চোখে মুখে ঠান্ডা পানির স্পর্শে পেয়ে পিটপিট করে চোখ মেলে তাকায়। আর তাকিয়ে নিজের মুখের কাছে একটা অপরিচিত ছেলেকে দেখতে পায় যে ওর দিকে ঝুঁকে তাকিয়ে আছে ওর দিকে। একটা অচেনা ছেলেকে নিজের দিকে ঝুঁকে থাকতে দেখে আমি চমকে উঠি। ছেলেটা আমার দিকে ভ্রু কুটি করে তাকিয়ে আছে আমি তাকাতেই সে বলে উঠে,,
আর ইউ অলরাইট।
আমি ভয়ার্ত দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আছি।সে আমার ভয়ার্ত মুখ দেখে নিজের মুখে হাসি এনে সোজা হয়ে দাড়ালো।আমি তাকে দাঁড়াতে দেখেই ধরফরিয়ে উঠে বসলাম,,
আর কাঁপা কাঁপা গলায় বললাম,,
কেএএএএ আপনি?
উনি আমার দিকে ঠোঁটে কোনে হাসি রেখে তাকিয়ে আছে।আমি ভীতু মুখ করে তাকিয়ে আছি।
ইহান ঊষার ভীতু মুখ দেখে না হেসে পারলো না মেয়েটা ওকে ভয় পেয়েছে দেখে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে।
আমি আবার বলে উঠলো,,, কে আপনি এখানে কি করছেন?
এবার ইহান বলে উঠলো, আমার বাসায় আমি কি করছি জিজ্ঞেস করছো? ভেরি ফানি, তুমি কে সেটা বলো?

আমি উনার কথা শুনে থতমত খেয়ে গেলাম।উনার বাড়ি মানে কি সব বলছে? আমি চিন্তা করছি কে উনি উনার বাড়ি কিভাবে হলো? তখন উনি একাই বলে উঠলো,
আমি ইহান। এই বাড়ির একমাত্র ছেলে।
ওনার কথা শুনে আমার চোখ দুটো রসগোল্লার মত বড় বড় হয়ে গেল। আমি ঢোক গিলে উনার দিকে ভীতু মুখ করে তাকিয়ে আছি। উনি তাহলে ইহান ভাইয়া। একদমই চিনতে পারিনাই চিনতে পারবো কিভাবে উনার চেহারা তো আমার মনেই নাই। আগেও খুব একটা দেখা হয় নাই দুই বারের মত দেখা হয়েছিল। কারণ আমরা তো এখানে থাকতাম না আমি আব্বু আম্মু আমরা তো চিটাগাংয়ে থাকতাম। আর ইহান ভাইয়া তো আমাকে চিনে বেশি আর আগে চিনলেও এখন আমার মতো হয়তো মনে নাই।
“এবার তোমার পরিচয় দাও তোমাকে তো ঠিক চিনলাম না।

আমি নিজের পরিচয় দিতে যাব তখনই চাচি এলো এক ছুটে। আর এসেই একবার আমার দিকে তো একবার ইহান ভাইয়ের দিকে তাকালো। আমি চাচীকে দেখে ভয়ে মাথা নিচু করে ফেললাম,,
ইহান নিজের মাকে দেখে বলে উঠল,
আম্মু তোমরা কি বলতো বাসায় একজন অসুস্থ তার খোঁজ না নিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছো?
ইলিনা ছেলের দিকে তাকিয়ে চোখ ঘুরিয়ে গরম চোখে ঊসার দিকে তাকালো তারপর মুখে হালকা হাসি টেনে বললো,
আমার মাথা থেকে একদম বেরিয়ে গিয়ে ছিল রে। ওর এতো শরীর খারাপ আমি তো জানতাম ই না। ও তো বিকেল ভর ঘুমিয়ে কাটিয়েছে রাতে খেতে ও এলো না কতো ডাকলাম সারাদিন এতো ধকল গেছে খেয়াল করিনি।

দাঁতে দাঁত খিচে গরম চোখে ঊষার দিকে তাকালো। চাচীর মিথ্যে কথা শুনে আমি অবাক হয়ে গেলাম।
ইহান মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল,
হুম আমিও ওকে দেখি নি আসার পর আর।কে ও চিনলাম না তো?
ভ্রু কুঁচকে মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল।
তখন পেছনে থেকে ইমা বলে উঠলো,
ভাইয়া ওকে চিনতে পারছিস নি। ও তো আমাদের বোন ঊষা। হুমায়ূন কাকার মেয়ে।
কথাটা বলতে বলতে ভেতরে এসে আমার কাছে এসে আমার কপালে হাত রাখলো।
ইশ কি জ্বর এসেছে রে ঊষা। দাঁড়া, আমি তোর জন্য ওষুধ নিয়ে আসছি। খেয়েছিস কিছু?
আমি মাথা উঁচু করে আপুর দিকে তাকালাম আপু আমার মুখের দিকে তাকিয়ে বলল,
মুখ দেখেই বুঝা যাচ্ছে কিছু খাচ্ছ নি‌।লতা ঊষার জন্য খাবার নিয়ে আয়।
বলে আপু চলে গেল।

আমি মাথা উঁচু করে চাচী’র দিকে তাকালাম চাচী আমার দিকে চোখ গরম করে তাকিয়ে আছে। চাচীর থেকে চোখ সরিয়ে ইহান ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে দেখি ভাই আমার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আমি তাকাতেই দুজনের চোখাচোখি হয়ে গেল। আমি তাড়াতাড়ি চোখ সরিয়ে নিলাম।
তখনই ভাইয়া আমাকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো,
এই তুমি হুমায়ূন কাকার সেই পিচ্চি মেয়ে। ও মাই গড আমারতো বিলিভ হচ্ছে না। এত বড় কিভাবে হয়ে গেল? তখন তো একটা হাঁফ প্যান আর ফতোয়া পড়ে আমার সামনে ঘুরঘুর করত।
ইহান ভাইয়ার কথা শুনে আমি চমকে তাকালাম। ভাইয়া আমার দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আমি লজ্জায় মাথা নীচু করে ফেললাম কি বলল হাফ প্যান আর ফতুয়া পরে আমি তার সামনে ঘুরঘুর করতাম। ছি ছি কি লজ্জা?

লজ্জায় আমার কান গরম হয়ে আসছে।
ভাই আমাকে উদ্দেশ্য করে বলল,
ইউ লজ্জা পাচ্ছ। দেখো তখন তুমি ছোট ছিলে কিন্তু এখন তো আর ছোট নাই সত্যি অনেক বড় হয়ে গেছো। এখন কোন ক্লাসে পড়ো?
আমি চমকিত হয়ে বললাম,,জি ক্লাস টেন।
আমার কথা শেষ হতেই চাচি ভাইয়ার কাঁধে হাত দিয়ে বলল,,
ইহান আব্বু যাও তুমি ঘুমিয়ে পড়ো। আমরা তো আছি।ইস কত রাত হয়ে গেল ক্লান্ত শরীর নিয়ে এখনো জেগে আছো যাও আব্বু বিশ্রাম নাও।
ইহান ভাইয়া যাওয়ার আগে আমার দিকে তাকিয়ে বলল,
ওকে টেক কেয়ার ফর ইউ।

এক চিলতে রোদ পর্ব ১

বলে ভাইয়া চলে গেল। আমি ভাইয়ার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে ছিলাম। তখন চাচী আমার দিকে গরম চোখ করে এগিয়ে এলো। আমি ভয় পেয়ে বলে উঠলাম,,
চাচীঃ আমি ইচ্ছে করে ভাইয়ার সামনে যায়নি। আমি তো পানি খেতে গিয়েছিলাম। তখন ভাইয়া চলে এল আর আমি….
চুপ আপদ একটা। তোর কোন কথা আমি শুনতে চাইনা। তোর জন্য আমার ঘুমের ব্যাঘাত ঘটলো। নিজের মা-বাবাকে তো খেয়েছিস এখন আমাদের জ্বালিয়ে পুড়িয়ে শেষ করবি।
চাচির কথা শুনে আমার চোখ ঝাপসা হয়ে এলো। বিরক্ত মুখ করে চাচি গটগট করে বেরিয়ে গেল। তখন লতা খাবার নিয়ে এলো। খাবার আর আমার পেটে গেলো না। আমার ইচ্ছে নাই আর খাওয়ার। খিদে ছিল কিন্তু ওই কথা শোনার পর আর খাওয়ার ইচ্ছে জাগলো না। তখনই ইমা আপু এসে ওষুধ দিল আর খাবার খায়নি দেখে খেতে বলল।
আপুকে বললাম আমি খাবারটা খাব না।

আপু বুঝতে পেরেছে চাচী আমাকে কিছু বলেছে তাই। বুঝিয়ে-শুনিয়ে খেতে রাজি করালো। আপুর কথা ফেলতে পারলামনা । এই বাড়িতে একজন মানুষ আমাকে ভালোবাসে সেই হল আপু। তাই আপুর কথা শুনে কিছুটা খাবার খেলাম ঔষধ খেয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম।
পরদিন শরীর হালকা জ্বর ছিল ওই ভাবেই সকাল সকাল উঠে গেলাম না হলে আবার চাচী বকাবকি করবে।ওঠে বাসা ঝাড়ু দিতে গিয়ে দেখি লতা ঝাড়ু দিয়ে দিয়েছে। নিচে লতা চা করছিল আমি রান্নাঘরে গিয়ে রান্নার কাজে হাত লাগাতে যাব তখনই লতা আমাকে ডেকে বলল,
ঊষা তুই একটু ইহান ভাইজানের কফিটা দিয়ে আয় না।

আমি বললাম, আমি কেন? তুই যা আমার কাজ আছে আবার স্কুলে যেতে হবে।
তুই যা না একটু আমার না ভাইজানকে দেখলে লজ্জা করে।
আমি অবাক হয়ে বললাম কেন?
আর কইস না ভাইজান কি সুন্দর একদম নায়কের মত আমার না খালি লজ্জা লাগে।
আমি লতার দিকে তাকিয়ে বোকা বনে গেলাম। বাবারে কি লজ্জা ওর কথাতেই কফিটা হাতে নিলাম । ভাইয়া আসলে অনেক সুন্দর একদম নায়কের মত।
তাকালে শুধু তাকিয়ে থাকতে মন চায়।
আমারও যে লজ্জা করেনা এমন না! কালকে আরো কি সব ঘটনা ঘটলো?কিন্তু কফিটা তো দিতে হবে তাই সাহস জুগিয়ে কফি নিয়ে ভাইয়ার রুমে গেলাম।

এক চিলতে রোদ পর্ব ৩