এক চিলতে রোদ পর্ব ২৬ || golpo bazar

এক চিলতে রোদ পর্ব ২৬
Nondini Nila

আমি বিস্মিত হয়ে তাকিয়ে আছি ভাইয়ার দিকে। ভাইয়া সোফায় গিয়ে বসলো। হাতে ফোন ভাইয়ার দৃষ্টি এখন ফোনে।আমি হতভম্ব হয়ে সেদিকে তাকিয়ে আছি।
” কি হলো খাম্বার মত দাড়িয়ে আছিস কেন? শুয়ে পর রাত তো কম হলো না।একটু পর সকাল হয়ে যাবে। ”
বলেই আমার দিকে তাকালো।আমি তাকিয়ে ছিলাম তাই চোখাচোখি হলো।
আমি অবাক হয়ে মিনমিন গলায় বললাম,,
” আপনি কি সব বলছেন? আমি এখানে ঘুমালে আপনি কোথায় ঘুমাবেন? ”
ভাইয়া বিরক্ত হয়ে বলল,, ” আমার চিন্তা তোকে করতে হবে না। নিজেটা ভাব যা বলছি কর।”
” আমি এখানে ঘুমাতে পারবো না।প্লিজ জোর করবেনা।আমি ডয়িং রুমে ঠিক ছিলাম।একরাত না ঘুমালে কিছু হবে না‌। ”

কথাটা বলে ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে আঁতকে উঠলাম।
ভাইয়া চেয়াল শক্ত করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।আমি ভাইয়ার এমন রাগী ফ্রেস দেখে ভয়ে কাচুমাচু করে ভীতু মুখে তাকিয়ে র‌ইলাম।
ভাইয়া ফোন রেখে উঠে আমার কাছে এসে দাঁড়ালো আমি ভয়ে পিছিয়ে গেলাম এক পা। ভাইয়া আমার হাত ধরে টেনে নিজের কাছে নিয়ে গেলো। তারপর বাম গালে হাত ডুবিয়ে দিলো। আমি ভাইয়ার স্পর্শ পেয়ে কাঁপতে লাগলাম। আমার শরীরের লোম খাঁড়া হয়ে গেছে। বিস্মিত হয়ে ভাইয়ার চোখের দিকে তাকিয়ে আছি। ভাইয়া আমার দিকে ঝুঁকে পড়ল শান্ত ভঙ্গিতে।
আমি থমকে গেলাম। ভয়ার্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি। ভাইয়া আচমকা চোখ চোখ মুখ শক্ত করে ফেললো আর দাঁতে দাঁত চেপে বললো,

” এমনিতে আমি প্রচন্ড রেগে আছি ঊষা। আমাকে আর রাগাস না। যা বলছি কর‌, ঘুমিয়ে পর। আমি কোথা কিভাবে থাকবো ব্যবস্থা করে ফেলবো। ভয় পাস না তোর সাথে অন্তত ঘুমাবো না। ”
ভাইয়া মৃদু কন্ঠে রাগ নিয়ে বলল কথাগুলো। আমি স্তম্ভিত হয়ে তাকিয়ে আছি। আমার হৃদস্পন্দন বেড়ে গেছে। ভাইয়ার গরম নিঃশ্বাস আমার মুখে আছড়ে পড়ছে আমি। আমি ঢোক গিলে তাকিয়ে আছি। ভাইয়ার শেষের কথাটা কানে বাজছে ‘ তোর সাথে অন্তত ঘুমাবোনা ‘
আমি মাথা নামিয়ে ফেললাম। ভাইয়া ছেড়ে দিলো আমায়। আমি কাচুমাচু মুখ করে আরেকবার ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে চোখ সরিয়ে বিছানায় গিয়ে শুয়ে পরলাম। ঘুমে আমি তাকাতে পারছি না। তার উপর আবার ভাইয়া জোর করেছে। তার সাথে আমি পারবো না অযথা কথা না বাড়িয়ে ঘুমানোই বেটার। ভাইয়া কথা শেষ করে সোফায় বসেছে।

আরও গল্প পরতে ভিজিট করুন

আমি অন্য কাত হয়ে শুয়েছি। ভাইয়া কি করছে দেখার জন্য। ঘাড় বাঁকিয়ে তাকালাম ভাইয়া সোফায় বসেই ফোন টিপছে। সারা রাত কি এভাবেই বসে থাকবে নাকি। আমি ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে ভাবলাম। আর এতো কি করে ফোনে সব সময় ফোন নিয়ে পড়ে থাকে। আমার ভাবনার মধ্যে ভাইয়া ফোন থেকে চোখ সরিয়ে আমার দিকে তাকালো আমি হকচকিয়ে গেলাম। ঢোক গিলে তারাতাড়ি অন্য দিকে মুখ করলাম। ভাইয়া কি এখনো আমার দিকে তাকালো আছে?
লজ্জায় আমার হৃদস্পন্দন দ্রুত গতিতে লাফাচ্ছে। বুকে হাত চেপে চোখ খিচে বন্ধ করে আছি। এইভাবে ভাইয়ার রুমে ঘুমাবো কল্পনাও করিনি‌। ভাই কোথায় ঘুমাবে কে জানে আমি কপালে সূক্ষ্ম ভাঁজ ফেলে আরেকবার তাকালাম। ভাইয়া এখনো আমার দিকে তাকিয়ে আছে। লজ্জা আমি মিইয়ে গেলাম। তারাতাড়ি এদিকে ঘোরে চোখ বন্ধ করে ফেললাম। ছিঃ ছিঃ ধরা খেলাম। আর তাকাবো না। ভাইয়া ওমন করে কেন তাকিয়ে আছে আমার দিকে?
এসব ভাবতে ভাবতে কখন ঘুমিয়ে পড়েছি জানিনা।

ঊষা ঘুমিয়ে পরতেই ইহান মুখ সেপে ধরে হেসে উঠে‌। ওর চোখের সামনে ঊষার ভীতু মুখ টা ভাসছে। চোরের মতো তাকিয়ে ছিলো কিন্তু ধরা খেয়ে একটু খানি করে তারাতাড়ি চোখ সরিয়ে নিয়েছে।
ইহান বসে ঊষার দিকে তাকিয়ে রইলো। ঊষার পেছনে দেখা যাচ্ছে। ওর নীল রঙের কামিজ আর গোলাপি ওরনা যেটা দিয়ে মাথা পেঁচিয়ে গুটিসুটি মেরে বিছানায় ঘুমিয়ে আছে। মুখ দেখা যাচ্ছে না‌। ইহান সোফা থেকে উঠে দাঁড়ালো সোজা ঊষার মুখ বরাবর এসে দাঁড়ালো। ঘুমিয়ে আছে ঊষা। ও না চাইতেও ঊষার পাশে বসে পরে। ঊষার ফর্সা নিষ্পাপ মায়াবী মুখটার দিকে মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে থাকে। মুখটা হলুদ হয়ে আছে। হলুদ ফর্সা লাগছে অনেক হলুদ দিয়েছে যে।একদম হলুদ কড়ি লাগছে।ওরনা দিয়ে মাথা ডাকার পর ও ওর কপালে কিছু চুল বাতাস এ ছুটাছুটি করছে চোখ মুখে।যেটা নড়তে নড়তে ঊষার গোলাপি ঠোঁটে গিয়ে ঠেকলো।

ইহান নেশাতুর দৃষ্টিতে সেদিকে তাকিয়ে আছে। না চাইতেও হাত বাড়িয়ে দেয় ঊষার দিকে। ঠোঁটের উপর থেকে চুল সরানোর সময় সেখানে হাতে স্পর্শ লাগে ঘুমের মাঝেও ঊষা কেঁপে উঠে।
ঊষার মায়াবী মুখের দিকে হা করে তাকিয়ে আছে ইহান। এই মায়ার জালে ও কি আটকা পরে গেলো। বুকের ভেতর টিপটিপ করছে ওর। ওর অশান্ত অবাধ্য মন একটা খারাপ ইচ্ছে পূরণ করতে চাইছে। ও কিছুতেই নিজেকে আটকাতে পারছে না‌। পারলাই না নিচু হয়ে ফট করে ঊষার কপালে ঠোঁট ছুঁয়ে দিলো। কাজটা করেই চমকে সরে এলো।ঊষা ঘুমের মাঝে কেঁপে উঠেছে। তারাতাড়ি বিছানায় ছেড়ে বারান্দায় চলে এলো। আজ আর রুমে যাবে না ও ঠিক করলো।
নিজের কাজে নিজেই অবাক ইহান।বেলকনিতে এসে চুপ করে বসে র‌ইলো। ওইখানেই ঘুমিয়ে পরলো।

ঘুম থেকে উঠে চারপাশে ভাইকে খুঁজলাম নাই। আমি বিছানায় থেকে উঠে ফ্লোরে পা রাখতে ইহান ভাইকে দেখলাম। বারান্দায় থেকে আসছে। আমি ওরনা ঠিক করতে করতে ভাইয়ার পা থেকে মুখের দিকে তাকালাম। ভাইয়া চোখ দুটো লাল টকটকে হয়ে আছে।‌আমি তাকিয়ে চমকে উঠলাম। মনে হচ্ছে সারা রাত ঘুমায় নি।ভাইয়া কি জেগে ছিলো সারারাত। আমি কপাল কুঁচকে তাকিয়ে আছি।ভাইয়া একবার তীক্ষ্ণ নজরে তাকিয়ে চোখ সরিয়ে সোজা বাথরুমে ঢুকে গেলো।আমি হতভম্ব হয়ে সেদিকে তাকিয়ে রইলাম থ মেরে।

আচমকা দাঁড়িয়ে ছুটে বেরিয়ে এলাম। চাচি আমাকে এই রুমে ঘুমানোর কথা জানতে পারলে মেরেই ফেলবে। আমি ভাইরে এহে চোরের মতো চারপাশে তাকাচ্ছি। তখন চমকে উঠলাম। আমার সামনে কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলে দাঁড়িয়ে আছে লতা।
আমাকে দেখে অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো,
” তুই ওই রুমে কি করছিলি রে ঊষা? ”
আমি ভয়ার্ত চোখে তাকিয়ে আছি। ও এসে আমার হাত ধরে ঝাকুনি দিয়ে বলল,
” কি রে বলছিস না কেন? সাত সকালে ওই রুমে কি করছিলি? দেখে তো মনে হচ্ছে ঘুম থেকে উঠেছিস? ”

বলেই বড় বড় চোখ করে তাকালো। আমি ঢোক গিলে তাকিয়ে আছি।
” ওই তুই ইহান ভাইজানের রুমে ছিলি আজ। ”
আমি কি বলবো বুঝতে পারছি না। ও আবার জিজ্ঞেস করলো। আমি মিথ্যে বলার সুযোগ পেলাম না ওর কাছে ধরা খেয়েছি সব বলে দিলাম ও মুখে হাত দিয়ে শুনলো সব।
” সত্যি ভাইজান ক‌ই ছিলো তাহলে। ”
” জানি না আমি। তুই চাচিরে কিছু বলিস না কিন্তু।”
” ধুর বলবো না চল। ”
আমি ওর সাথে নিচে নেমে এলাম। নিচে এসেই আমার কাঁপা কাঁপি বেড়ে গেলো। চাচি সোফায় বসে আছে। আমাকে উপরে থেকে নামতে দেখে ভ্রু বাকালো। আমার হাত পা কাঁপছে ভয়ে গলা শুকিয়ে আসছে চাচি গম্ভীর গলায় বলল,,
” তুই উপর থেকে আসলি কেন? ”
আমার জান বের হবার উপক্রম। আমার কলিজা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে। ভয়ে আমি এদিক ওদিক তাকাচ্ছি। এখন কি বলবো চাচি কে।
চাচি জোরে আওয়াজ করে বললো,,

” কি হলো আমার কথার উত্তর দিচ্ছিস না কেন? উপর থেকে আসলি কেন? কোথায় ছিলি তুই রাতে।”
চাচির চোখে সন্দেহ আমি হাত কচলাতে কচলাতে ভীতু মুখ করে দাঁড়িয়ে আছি।
কি বলবো আমি এখন? চাচির জোরে আওয়াজ এ আমি ভয়ে কুঁকড়ে যাচ্ছি।
চাচি দাঁড়িয়ে আমাকে শাসিয়ে কিছু বলবে তখন কিছু লোক আসে রুমে আর চাচিকে উদ্দেশ্য করে রান্নার কথা বলে। চাচি আমার দিকে গরম চোখে তাকিয়ে চলে গেলো।চোখ বলছে আমাকে চাচি পরে দেখে নেবে। আমি কোন রকম পালালাম।
বাসা ভর্তি লোকজন গমগম করছে। জোরে সাউন্ড বক্সে গান বাজছে। সকালের খাবার পরেই এগারোটার দিকে ইমা আপুকে বাসায় সাজাতে লোক চলে এলো। আমি আপুর পাশে বসে আছি। আপুর সাজ হচ্ছে আমি হাঁ করে তাদের সাজানো দেখছি।
আপু আমাকে ঠেলে তার বাথরুমে ঢুকিয়ে দিলো। গোসল করে নিতে। কারনে এখন নাকি আমাকেও এখানেই সাজতে হবে আমি না করলেও শুনবে না।

চাচির আশেপাশে আর যাইনাই লুকিয়ে আড়ালে থেকেছি। চাচি আমাকে দেখতে পারে না জানি কিন্তু এতো মানুষ আর ব্যস্ততার মাঝে আমার খেয়াল নাই।
বাইরে আসতেই আপু লাল খয়রে রঙের লেহেঙ্গা তুলে দিলো আমার হাতে।এটা নাকি আমাকে পরতে হবে আমি বিষ্ময়ে হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছি। এতো সুন্দর লেহেঙ্গা টা আমার জন্য। সপ্নের মতো লাগছে এতো সারপ্রাইজ হয়েছি বলে প্রকাশ করা সম্ভব না।
একটা মেয়ে শুরু করলো আমাকে সাজানো সাজানোর পর লেহেঙ্গা করতে বললো আমি বসলাম। আমার ও ইচ্ছে সাজার। কি সব ভালো আমার মুখে তারপর চোখে একগাদা কি যেন দিলো।আমি খালি উশখুশ করছিলাম। কিন্তু নিজেকে স্বাভাবিক রেখেছি আমি খুব ফূর্তি নিয়ে বসে আছি। মুখের সাজ শেষ হলে আমাকে ড্রেস পরে আসতে বললো। বাথরুমের যাব কিন্তু লেহেঙ্গা ভিজে যাবে তাই নিজের রুমে চলে এলাম মুখ ঢেকে ড্রেস নিয়ে।

যাদের রাতে থাকতে দিয়েছো কেউ নেই আমি ফাঁকা রুম পেয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে দরজা চাপিয়ে ড্রেস করে নিলাম। আয়না না থাকায় দেখতে পেলাম না। আমার কাছে একটা ছোট আয়না আছে তা দিয়ে মুখ দেখলাম আর কিছু দেখা যায় না। মুখ দেখে চেনাই যাচ্ছে না এতো মেকাপ দিয়েছে যে। খারাপ লাগছে না তবুও কখনো এতো সাজিনি তাই আমি খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখলাম কিন্তু ঝামেলায় পরলাম। জামার পেছনের হুক লাগাতে গিয়ে। আয়না রেখে নিজের হাত বাড়িয়ে লাগানোর ট্রাই করছি কিন্তু পারছিনা। কিন্তু এটা না লাগালে বাইরে কি করে যাব।
তখন একটা ঠান্ডা হাতের স্পর্শ পায় পেছনে কেউ আমার বুকটা লাগিয়ে দিচ্ছে কে? আমি পেছন ঘুরতে গেলে সে বলে উঠে,
” আমার কাজ শেষ হয়নি। ”
কথাটা শুনে থমকে গেলাম। আমার বুকের ভেতরে ধুকধুক শব্দ শুরু হয়ে গেছে। এই গলা আমি চিনি এটা ইহান ভাইয়ের গলার আওয়াজ।
” শেষ। ”

আমি বিস্মিত হয়ে পেছনে তাকালাম। ভাইয়া বিরক্ত হয়ে বলল,,
” দরজা না আটকে কেউ জামা চেঞ্জ করে তোর মতো হাধারামকে না দেখলে জানতাম না।”
ভাইয়ার কথা শুনে চমকে উঠলাম। ভাইয়া আমার থেকে চোখ সরিয়ে বেরিয়ে গেলো। ভাইয়া এখানে কি করছিলো? ভাইয়া আমার হুক লাগাতে সাহায্য করলো ভেবেই লজ্জায় লাল হয়ে গেলাম। হতবুদ্ধি হয়ে দাঁড়িয়ে আছি শক্ত হয়ে।
মিনিট খানেক থ মেরে দাঁড়িয়ে র‌ইলাম।

চুল খোঁপা করে বেরিয়ে এলাম। সবাই সাজ খোঁজ করে ফেলেছে আমার ফুপাতো বোনরা আমাকে দেখে প্রশংসা করলো। আমি হাসি দিয়ে আপুর রুমে এলাম। আমার চুল বেঁধে দিলো। সামনে প্যাম দিয়ে ফুলিয়ে। আমার কানের দুল ছিলো সেটা কানে পরে নিলাম।হাতে চুড়ি পরলাম, গলা খালিই আমি। একপাশে চুল এনে রাখলাম।তারপর সাদা আর লাল দুইটা ফুল নিয়ে কানে দিয়ে বেরিয়ে এলাম। বড় চলে এসেছে সবাই চিৎকার চেঁচামেচি করছে।

আমি নিচে আসতেই চাচির সামনে পরলাম। চাচি আমার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে আছে। আমি ভয়ার্ত চোখে তাকিয়ে আছি। চাচি গরম চোখে তাকিয়ে চলে গেলো আমি হাফ ছেড়ে বাঁচলাম। স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে বেরিয়ে এলাম। বাইরে এসেই ইহান ভাইকে দেখলাম। ভাইয়া ও খয়েরি রঙের পাঞ্জাবি পরে আছে। সাদা পাজামা, চুল গুলো বাতাসে নরছে। কানে ফোন ধরে কারো সাথে কথা বলছে আর চুল নড়েচেড়ে কথা বলছে। হাতের ঘড়ি চিকচিক করছে। রোদের আলোতে আমি করে তাকিয়ে আছি।কথা বলতে বলতে ভাইয়া আমার দিকে নজর দিলো আমি লজ্জায় চোখ সরিয়ে নিলাম। আমি আড়চোখে তাকিয়ে দেখি ভাইয়া আমার দিকে নেশা ভড়া চোখে তাকিয়ে আছে। আমি গেটের কাছে চলে এলাম।
সবাই মিলে গেট ধরেছে আমিও গিয়ে সেখানে দাঁড়ালাম।
এখানে এসেই আমার মেজাজ খারাপ হয়ে গেল। আমার সামনাসামনি দাঁড়িয়ে আছে রিহান। আমার যেতেই হা করে তাকিয়ে বলল,
” ওয়াও, তোমাকে তো আজকে সেই সুন্দর লাগছে। চোখ ফেরানোই যাচ্ছে না। ”
তার কথা শুনে আমি রাগ নিয়ে রিফাত ভাইয়ের সাথে কথা বললাম। তাকে শরবত নিতে বলছি। এখানে পাঁচ টা গ্লাস আছে একটা নি খেতে হবে। মরিচ এর শরবত ও আছে।
রিহান আমার উওর না পেয়ে মাথাটা আমার দিকে এগিয়ে এনে বললো, ” কি ব্যাপার কথা বলছো না যে? ”

ভ্রুকুটি করে বললো।
আমি তার দিকে তাকিয়ে অনিচ্ছা সত্ত্বেও হেসে বললাম।
” ধন্যবাদ ভাইয়া। ”
” আরে ভাইয়া বলছো কেন? ”
আমি কপাল কুঁচকে বললাম,, ” তো কি বলবো? ”
” নাম ধরে বলো। ভাইয়াটা ঠিক তোমার সাথে যায় না। ”
আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি। পাগল‌ নাকি লোকটা। ভাইয়া আমার সাথে যায় না মানে কি?
আমি হতবাক হয়ে তাকিয়ে আছি।
বিরক্ত হয়ে চোখ সরিয়ে নিলাম। রিফাত ভাইয়া লবনেরটা খাইছে শরবত তারপর থু থু ফেলতেই আছে সবাই তা দেখে হেসে কুটিকুটি।
আমি সেখানে থেকে সরে দাড়ালাম ওই ফালতু লোকটা ফালতু কথা শুনার ইচ্ছে নাই।
রিফাত ভাইয়ারা সবাই ভেতরে এলো গেটের টাকা চেয়েছিলো ত্রিশ হাজার সেখানে দিয়েছে বারো হাজার তা নিয়ে তর্কাতর্কি হলো অনেক। রিফাত ভাই কে স্টেজ এ বসানো হলো।
ইহান ভাই গিয়ে তার সাথে কথা বললো। লতার সাথে দেখা হলো এতোক্ষণে। ও গ্ৰাউন পরেছে মিষ্টি কালারের। আপু নাকি দিয়েছে ওকে সুন্দর করে সেজেছে। লতাকে খুব খুশি লাখছে আমার কাছে এসেছে ঘুরে ঘুরে জামা দেখালো তারপর আমাকে দেখে বললো,

এক চিলতে রোদ পর্ব ২৫

তোকে তো একদম রাজকুমারী লাগছে রে। পুতুলের মত দেখাচ্ছে লাল পুতুল।
আমি তার উওরে মিষ্টি হেসে বলেছি, তোকে একদম পরী লাগছে মিষ্টি পরী।আমার কথা শুনে লজ্জায় লাল নীল হয়ে গেলো।
আমি শীলা মিলে আপুকে নিয়ে এলাম। তারপর হলো খাওয়া দাওয়া আমার পাশে একটা সিট। রিহান সেটা দেখেই নিজের সিটে থেকে উঠে আমার কাছে আসার জন্য উঠে দাঁড়ালো। আমি মনে মনে বলছি। আল্লাহ এই অসভ্য লোকটা যেন আমার পাশে না বসতে পারে আমার কথা শুনলো আল্লাহ। রিহান আসার আগেই ইহান ভাই এসে বসলো আমার পাশে। জানিনা কি হলো আমি ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে হাসি দিলাম।
” তোর এতো সাজা উচিত হয়নি।”
খাচ্ছিলাম হঠাৎ ভাইয়ার নিচু স্বরে বলা কথাটা কানে আসতেই , খাবার মুখে নিয়ে অবাক হয়ে ভাইয়ার দিকে ঘাড় বাঁকিয়ে তাকালাম। ভাইয়া আমার দিকে তাকাচ্ছে না। খাবারের দিকে তাকিয়ে খেয়ে যাচ্ছে শুধু।

” মানে। “‌ বিষ্ময় নিয়ে বললাম।
ভাইয়া তাও আমার দিকে তাকালো না। ওইভাবেই বললো, ” আমার সামনে বেশি আসবি না। ”
বলেই খাবার টেবিলে ছেড়ে উঠে চলে গেলো।আমার বিষ্ময়ে হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছি ভাইয়ার যাওয়ার দিকে।‌ একবার ও পেছনে ফিরে তাকালো না। চলে গেলো। আমি বিস্মিত হয়ে তাকিয়ে ছিলাম। খাওয়া শেষ ও করলো না। আমাকে ভাইয়ার সামনে যেতে মানা করলো কেন? আচ্ছা আমাকে কি দেখতে খারাপ লাগছে। কিন্তু সবাই যে সুন্দর বললো। আমিও খেতে পারছিনা ভাইয়া কথা গুলো কানে বাজছে।

এক চিলতে রোদ পর্ব ২৭