এক চিলতে রোদ পর্ব ২৭ || Nondini Nila

এক চিলতে রোদ পর্ব ২৭
Nondini Nila

বিয়ে পরানোর সময় আপু খুব কাঁদলো। সাথে আমরা ও কাদলাম। চোখ থেকে একাই টপটপ করে পানি পরতে লাগলো।
আপু বিদায় এর সময় হলো। সন্ধ্যা সাতটায় আগে চলে যাবার তারা দিচ্ছে। সমস্ত আনন্দ নিমেষেই মাটি হয়ে কান্নার রোল পরলো। থমথমে অবস্থা বিরাজ করতে লাগলো। আপু কাঁদছে সবাই কাদছে আমি ঝাপসা চোখে আপুর দিকে তাকিয়ে আছি।এই মানুষটি আমাকে সব চেয়ে ভালোবাসতো আজ সে চলে যাচ্ছে ভাবতেই বুকটা ফেটে যাচ্ছে। তখন রিহান এলো আমি জল ভর্তি চোখে তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নিলাম। লোকটার থেকে আমি সারাটা সময় দূরে থেকেছি খুব ডিসটাব করছে আজ‌। গায়ে পড়া স্বভাবের।

” ঊষা তোমার সাথে আমার কিছু ইমপর্টেন্ট কথা ছিলো। ”
আমি ফুপাতে ফুপাতে তাকালাম।
রিহান ঢোক গিলে ঠোঁট ভিজিয়ে বললো, ” কি ভাবে বলবো ভাবছি? তুমি মাইন্ড করবে না তো।”
আমি বললাম, ” আপনি এখানে থেকে যান তো। একেতে দেখছেন কষ্ট পাচ্ছি তখন এসে আজেবাজে বকে যাচ্ছেন।”
” না মানে আসলে। তোমার চুল গুলো খুব সুন্দর। আর আমি …..”
আমি রেগে তাকালাম উনার দিকে! উনার কথা শুনার ইচ্ছে নাই তাই অন্যদিকে যেতে নিলাম। বড় বেহায়া লোকটা। রিহান লজ্জা মুখ করে বলছে তখন ঊষা ওর সামনে থেকে চলে গেলো । ও হালকা রাগ নিয়ে সেদিক তাকিয়ে র‌ইলো। আমি অন্যমনষ্ক হয়ে পেছনে ঘুরে হাঁটছি তখন ঠাস করে কারো বুকের সাথে বাঁড়ি খেলাম। কপালে হাত দিয়ে ডলতে ডলতে সামনে তাকিয়ে থ ইহান ভাইয়া দাঁড়িয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
আমি ঢোক চেপে পেছাতে গেলেই ভাইয়া আমার কোমর চেপে ধরে। আমি বড় বড় চোখ করে তাকায় ভাইয়ের চোখের দিকে। ইহান ভাই আমার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আমি ভয়ে মিনমিন করছি।

আরও গল্প পরতে ভিজিট করুন

ভাইয়ার ঠান্ডা হাত আমার পেট স্পর্শ করেছে। আমার সারা শরীর থরথর করে কাঁপছে। আমার লেহেঙ্গার ফতুয়া বড় অনেক তাই পেট বের হয়নি। ওরনা আমি শাড়ির মতো করে নিয়েছিলাম। যেটা পেছনে কোমরে গুজা হয়েছিলো ভাইয়ার হাত সেখানেই বিচরণ করছে। আমি বিস্মিত হয়ে তাকিয়ে বুঝার চেষ্টা করছি কি করছে উনি।
ফট করেই ভাইয়া আমার ওরনা টেনে নিয়ে এলো আমি হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছি। ভাইয়া এক হাতে ওরনা আমার মাথায় টেনে দিলো। আমি বিষ্ময় নিয়ে তাকিয়ে আছি ভাইয়ার দিকে কি করতে চাইছে ভাইয়া।
” ভাইয়….
কিছু বলার জন্য মুখ খুলতেই ভাইয়া ফট করে আমাকে ছেড়ে দিলো। আমি হাঁ হয়ে আছি‌। মাথা ডেকে আছে ওরনা।
ভাইয়া আমাকে ছেড়ে রুদ্ধ গলায় বলল,, ” তোর চুল নষ্ট হয়ে গেছে দেখতে বাজে লাগছে তাই ডেকে দিলাম। ”

বলেই ভাইয়া সামনের দিকে গেলো ইমা আপু ইলা আপুকে ধরে কাঁদতে কাঁদতে আসছে।ভাই যেতে তাকে জরিয়ে ধরলো। আমি ভাইয়ার কাছে অবাক হয়ে থমকে ছিলাম কান্না দেখে আবার মনটা খারাপ হয়ে গেলো।
ইলা আপু আজ গোলাপি কালারের লেহেঙ্গা পরে ছিলো খুব সুন্দর দেখাচ্ছে তাকে। আপু ইমা আপুর থেকে সরে এসে নাক মুখ কুঁচকে ফেললো ওরনা ও চুল ঠিক করতে করতে বলল,
” Did you ruin my makeup? I don’t understand why they is so much mud. ”
বলেই অন্যদিকে চলে গেলো আমি তার কথা বুঝলাম না কিন্তু তার মুখ দেখে বুঝেছি সে বিরক্ত। আমি অবাক হলাম বোন চলে যাচ্ছে আর সে এমন করছে একটু কাঁদছে ও না।
আপুরা এগিয়ে এলো আমাকে দেখেই কাছে ডাকলো আমি আপুকে ধরে হু হু করে কেঁদে উঠলাম শব্দ করে। আপু আমাকে শান্তনা দিচ্ছে। আমি থামছি না। হঠাৎ বাহুতে কেউ শক্ত করে চেপে ধরে টেনে সরালো। হাতে ব্যাথা পেয়েছি। আমি ঘাড় বাঁকিয়ে চাচির মুখ দেখে চুপ করে গেলাম। চাচি আমাকে সবার থেকে টেনে দূরে নিয়ে এলো। আমি ভয়ে কাঁপছি।‌

আমার হাত ঝামটা দিয়ে ছারিয়ে বলল, ” ন্যাকামি হচ্ছে, আমার মেয়ে শশুর বাড়ি যাচ্ছে আর তুমি মাঝখানে গিয়ে নাটক শুরু করে দিলি। ”
লাগে গমগম করে বলল।
আমি কেঁপে উঠে বললাম,” আমি নাটক কেন করবো চাচি আমার তো খুব কষ্ট হচ্ছে আপুর জন্য। আমাদের ছেড়ে ….
” চুপপ ( চাচি চিৎকার করে বললো আমি ভয়ে কুঁকড়ে উঠলাম।) একদম নাটক করবি না নাটক করেই তো এসব নিয়েছিস? খুব পাখনা গজিয়েছে তোর। বিয়ে বাড়ি বলে কিছু বলছি না। না হলে তোর এই উড়া আমি ছুটিয়ে দিতাম। রাজকন্যা হয়ে ঘুরছিস তুই‌। এমনিতেই তো আমাদের ঘাড়ের উপর পাড়া দিয়ে খাচ্ছিস তার উপর এই দামী ড্রেস। ”
বলেই চাচি আমার গাল চেপে ধরলো। আমি ব্যাথায় কুঁকড়ে উঠলাম। চোখ মুখে আমার অসহায় ও তো ফুটে উঠেছে খুব কষ্ট হচ্ছে কি সামনের মানুষটার কিছু যায় আসে না তাতে।

“তোর এই উড়া আমি ছুটিয়ে ছারবো। সেজে গুজে বেরানো এই ড্রেস কিনার জন্য তুই বলেছিলি ইহানকে তাইনা। ওকেও বস করেছিস? তোকে আমি ওর আশেপাশে যেতে মানা করেছিলাম। তাও গিয়েছিস। আমার এতো বারন এই ড্রেস তোকে দিলো। রুপে ভুলাচ্ছিস। আমার খেয়ে আমার সবনার্শ করবি। সব আমার চোখে পরেছে তুই ইহানের রুমে কি করেছিলি কাল বল। আমি কিছু দেখিনি ভেবেছিস। ”
আমি বিষ্ময় নিয়ে তাকিয়ে আছি চাচির দিকে চাচি দাঁতে দাঁত চেপে কথা বলছে। আর আস্তে আস্তে আমার গাল আরো চাপ দিচ্ছে মনে হচ্ছে চাপা ভেঙে দেবে।
আমি ব্যাথায় চোখ বন্ধ করে আছি। টপটপ করে পানি পরছে। আপুরা বোধহয় গাড়িতে উঠছে আমরা স্টেজের দিকে আছি চাচি আমার গাল ছেড়ে দিয়ে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলো তারপর গটগট করে চলে গেলো।

আমি ধাক্কা সামলাতে না পেরে ধপ করে মাটিতে পড়ে যায়। উঠার ইচ্ছে নাই। তাই ওইখানেই লেহেঙ্গা গুটিয়ে হাটু উঁচু করে তাতে মাথা দিয়ে কাঁদতে লাগি। আমি জানতাম এমন কিছু হবে বিয়ে শেষ হতেই। কিন্তু চাচি ভাইয়াকে নিয়ে আমাকে এমন কথা বলবে আমি ভাবিনি। আমি নাকি ভাইয়াকে নিজের রুপ দেখিয়ে বস করেছি। ছিঃ ছিঃ এমন কথা কি করে বললো চাচি। তাকে তো আমি ভাই ভাবি শুধুই ভাই। আর চাচি এসব।
গাড়ির আওয়াজ এলো তারমানে আপুরা চলে গেছে।আমি মাথা নিচু করে বসে আছি। ওইভাবেই বসে আছি নরতেও ইচ্ছে করছে না। চোখ দিয়ে অনবরত পানি পরছে। তখন মনে হলো কেউ আমার সামনে দাড়িয়ে আছে। আমি মাথা তুলে কান্না মুখেই সামনেই তাকিয়ে তার পা দেখতে পেলাম। এটা তো পরিচিত পা ভাইয়া মনে বাজতেই মাথা তুললাম। ঠিক ভাইয়া আমার সামনে দাড়িয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। তার চোখে মুখে বিষ্ময়। আমি তাকিয়ে আতকে উঠলাম। ভাইয়া আমাকে এভাবে কেন বসে থাকতে দেখে তো জিজ্ঞেস করবে কি হয়েছে? কি বলবো চাচির ওইসব কথা কি করেই বা বলবো।

মাথা ভনভন করছে আমার। তার মাঝেই ভাইয়ার আওয়াজ আমার কানে এলো,,
” কি হয়েছে তোর এইভাবে এখানে বসে আছিস কেন?”
আমি চমকে উঠলাম। তারাতাড়ি উঠে চলে যাব ভাবছিলাম তার আগেই ভাইয়া আমার সামনে বসে পরলো আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি। ভাইয়া বসে আমার গালে হাত এগিয়ে দিলো আমি মাথা সরিয়ে উঠতে গেলে বেজে গেলাম। লেহেঙ্গার জন্য আমার লেহেঙ্গার অংশ ভাইয়ার তলে। আমি উঠতে গিয়ে পারলাম না উল্টো ঠাস করে পরে গেলাম ভাইয়ার উপর।আমি তার হাঁটুতে পরে আছি। মাথা বেকে যেত ভাইয়া আমার পিঠে নিজের হাত দিয়ে জাপটে ধরে আটকে দিয়েছে।
আমি শিউরে উঠলাম তার হাত নিজের শরীরে পেয়ে। আমার হৃদস্পন্দন বেড়ে গেছে। হাত পা কাঁপছে। মুখ ঠোঁট কাঁপছে আমি কাঁপা থামানোর জন্যে নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরলাম। লজ্জায় মাটির সাথে মিশে যেতে ইচ্ছে করছে। ভাইয়া আমার গান গালে নিজের বাম হাত ডুবিয়ে দিভে পানি মুছে বললো,,

“কাঁদছিলি কেন?”
আমি থমকে নিচের দিকে তাকিয়ে ভাইয়ার কোলে থেকে সরে আসতে চাইছি। কিন্তু ভাইয়া এক হাতে আমাকে শক্ত করে নিজের কোলের মধ্যে চেপে ধরেছে নরতে বা সরতে কিছু করতে পারছি না।তার উপর এক হাতে আমার গাল স্পর্শ করে আছে আমার বুকের ভেতরে ধড়াস ধড়াস করছে।
“ভাইয়া ছারুন আমাকে প্লিজ।” কাঁপা কাঁপা গলায় বললাম।
ভাইয়া ছারলো না উল্টা আরো নিজের দিকে টেনে নিলো এক হাত আমার মাথার পিছনে রেখে আমার মুখ তার মুখের কাছে নিয়ে গেলো। আমি বিস্মিত হয়ে বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে আছি।কি করছে কি ভাইয়া? ভয় লজ্জায় আমি চোখ খিচে বন্ধ করে ফেললাম। ভাইয়া নিজের কপালের সাথে আমার কপাল ঠেকিয়েছে। আমি চমকে চোখ মেললাম। কি‌সব করছে ভাইয়া ভাইয়ার চোখ লাল হয়ে আছে।
আমি কাঁপা গলায় বললাম,, ” কি করছেন এসব?”

এক চিলতে রোদ পর্ব ২৬

ভাইয়া নেশা জড়ানো কণ্ঠে বলে উঠলো,,, জানি না আমি। আমি কি সব করছি ঊষা। নিজেকে পাগল পাগল লাগছে আমার। সব কিছু ধ্বংস করে ফেলতে ইচ্ছে করে যখন তোকে আমি রিহানের সাথে কথা বলতে দেখি হাসতে দেখি। বিলিভ মি আমার এমন কেন হচ্ছে বুঝতে পারছি না। আজকেও মা তোকে বকেছে তাইনা আমার জন্য, তুই আমার কাছে আসি বলে।
বলেই ভাইয়া থামলো। চোখ বন্ধ করে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো আমি অবাক হয়ে ভাইয়ার কথা শুনছি। এক থেমে আবার বললো,,
” কিন্তু মা তো জানে না তুই না উল্টো আমি তোরে কাছে আসি। কেন আসি? জানি না তোকে নিয়ে অন্য রকম ফিলিংস আসে কিন্তু এটা তো ঠিক না বল তুই তো আমার বোন সম্পর্কে কে? বোন তুই আমার হুমায়ূন কাকার মেয়ে তাহলে তোর প্রতি আমার বোন ফিলিংস না এসে এমন অদ্ভুত অনুভূতি হয় কেন? তুই আমাকে ইগনোর করলে কথা না বললে খারাপ কেন লাগে? এসব কেন হয় জানিস তুই ঊষা। ”

বলেই কপালে থেকে নিজের মাথা সরিয়ে আমার গালে হাত রেখে জিজ্ঞেস করলো। আমি হতভম্ব হয়ে তার কথা শুনছি কিছু মাথায় ঢুকছে না আমার আমি হতবাক। ভাইয়ার জিজ্ঞেস করতেই আমি কাচুমাচু মুখ করে বোকা চাহনি দিলাম কি বললো আমি তো কিছু বুঝি নি। ভাইয়া জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আমি ঢোক গিলে মাথা নাড়িয়ে না বুঝালাম।
ভাইয়া আবার দীর্ঘশ্বাস ফেলল। আর বললো,,
“তোর কাছে থাকাটা বিপদ জনক তুই মানুষটাই বিপদ জনক আমার জন্য। তোকে দেখার পর থেকে বুকের ভেতরটা কেমন কের। ব্যাথা করে শ্বাস নিতে কষ্ট হয়। নিজেকে হারিয়ে ফেলি তুই আমাকে এলোমেলো করে দিয়েছিস ঊষা।আমি তোকে এর জন্য একটুও ক্ষমা করবো না। তুই কঠিন শাস্তি পাবি।”

আমি ভয়ার্ত মুখ করে তাকিয়ে আছি‌। ভাইয়া কি সব বলছে কি করেছি আমি। আমি তো কিছু করিনি তাহলে শাস্তি কেন দিবে?
আমার ভয়ার্ত মুখ দেখে ভাইয়া এগিয়ে এসে ফট করে আমার গালে চুমু খেলো। আমি চমকে উঠলাম ভাইয়ার কাছে। সারা শরীর শিউরে উঠলো। ভাইয়া মাথা উঁচু করে দুই গালে চুমু খেল।আমি থমকে পাথর হয়ে বসে আছি আমার মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছে না।

এক চিলতে রোদ পর্ব ২৮