এক চিলতে রোদ পর্ব ২৮ || Nondini Nila

এক চিলতে রোদ পর্ব ২৮
Nondini Nila

গাড়িতে বসে ইমা কেঁদেই যাচ্ছে। চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পরছে রিফাত থামাতেই পারছে না। তাই উপায় না পেয়ে ওর মাথা টেনে নিজের বুকের মাঝে চেপে ধরে মাথা হাত বুলিয়ে দিতে লাগে।
“এমন করে কান্না করলে কিন্তু শশুর বাড়ি নিয়ে যাব না। গাড়ি ঘুরিয়ে তোমাদের বাসায় রেখে আসি কি বলো?”

ইমা ফুঁপিয়ে কাঁদছে তার মাঝে এসব করায় ও লজ্জা ও পাচ্ছে গাড়িতে আরো লোক আছে সামনে তাদের সামনে এভাবে। সরে আসতে চাইলে রিফাত শক্ত করে ধরে তাই আস্তে পারে না। ও কটাপ রাগ নিয়ে বলে,,
“ছারো কি করছো এমন চেপে ধরেছো কেন?সবাই দেখছে ?”
“দেখুক আমি আমার ব‌উকে ধরেছি কার বাপের কি?”
“তুমি এই ভাবে কথা বলছো?”
“হুম বলছি কেন?”
“না এমনি তোমার তো আবার মান সম্মান আগে ছিলো আমার হাত ধরো নাই কখনো কোন মানুষ থাকলে। আর এখন!”
“সে সময় ইচ্ছে করেই ধরিনি।”
“মানে?”
“তখন তুমি আমার ব‌উ ছিলে নাকি তাই। আর এখন তো ব‌উ সব কিছু করতে পারি অধিকার নিয়ে।”
‘তারমানে?”
রিফাত ইমাকে ছেড়ে দিলো।ইমা ভ্রু কুঁচকে বলল,
“ছারলে কেন?”
যার জন্য ধরেছিলাম তা এখন নাই তাই প্রয়োজন নাই ।
কি জন্য ধরেছিলে?
ইমার কান্না থেমে গেছে তাই রিফাত ওকে ছেড়ে দিয়েছে। কিন্তু ইমা সেটা বুঝতে পারেনি। তখন সামনে থেকে রিহান কথা বলে আর ওরা ওদের ধ্যান ভেঙে ফেলে।
দের ঘন্টা পর বাসায় এসে পৌছে ওরা। সবাই ব‌উ বরন করে ভেতরে নেয়।

আরও গল্প পরতে ভিজিট করুন

ঊষা বিছানায় বসে থরথরিয়ে কাঁপছে। কি হলো তখন সব ওর মাথার উপর দিয়ে গেছে। ভাইয়ার কাছে গেলে আমার বরাবরই এমন হয় কিন্তু আজকে ভাইয়ার আচরণ আর কথা সব কিছু আমার মাথায় উপর দিয়ে গেলো।
চোখ বন্ধ করতেই ভাইয়ার লাল চোখে ভয়ঃকর দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকা ভেসে উঠলো। ভাইয়া তখন আচমকা আমার ঠোঁটের দিকে এগিয়ে আসে আমি ভাইয়াকে আটকাতে পারছিলাম না। সে আমার খুব কাছে ছিলো ও হাত দিয়ে আমাকে জাপটে ছিলো আমি সরতে পারছিলাম না। এতো কাছে আসতে দেখে বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে ছিলাম। তার ঠোঁট আমার ঠোঁটে স্পর্শ করবে এমন সময় ভাইয়া ফট করেই আমাকে কোলের উপর থেকে ঠেলে উঠিয়ে দিলো। আর নিজেও উঠে অন্যদিকে তাকালো। আমি বিস্মিত হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলাম। ভাইয়া আমার দিকে আর তাকালো না। সোজা ভেতরে চলে গেলো আমি থমকে সেদিকে তাকিয়ে ছিলাম।
এদিকে ইহান নিজের রুমে এসে মাথার চুল খামচে ধরে।পাগল লাগছে নিজেকে কি সব করছিলো ও। এলোমেলো পায়ে বেলকনিতে যায় সিগারেট বের করে খেতে লাগে। ওইখানেই বসে পরে। নিজের অনুভূতি কন্ট্রোল করতে পারলাম না আমি। এইভাবে সব বলে দিলাম ঊষাকে। ও আমাকে খারাপ ভাবছে আমি জানি। কিন্তু আমি কা করতাম আমার এই অনূভুতি আমি লুকাতে পারছিলাম না।বুকের ভেতর ব্যাথা অনুভব করেছি আমি ভালোবাসার জন্য। এসব মায়ের কানে গেলে কি হবে? কখনো ঊষাকে মানবে না সে। এসব না জেনেই মা আমার কাছে ঊষাকে আস্তে বারন করেছে আর জানতে পারলে আরো আসতে দেবে না।

চিন্তা ভাবনা করতে করতে সিগারেট খাচ্ছে কি করবে কিছু বুঝতে পারছে না। তখন ওর ফোনটা বেজে উঠলো,,
বিরক্ত হয়ে ফোনের দিকে তাকিয়ে মেজাজ গরম হয়ে গেলো। ফারিয়া কল করেছে। কয়েকদিন ধরে পাগল করছে ওকে বিদেশে যাওয়ার জন্য। বিয়ে করার জন্য। এখন এমনিতেই টেনশন তার উপর ওর কল রেগে ফোন রিসিভ করে কয়েক দফা ঝাড়ি দিলো ফারিয়াকে তারপর ফোন অফ করে দিলো।
ঊষা নিজের রুমে থেকে রাতে আর বের হলো না। পরদিন চাচির থমথমে মুখ দেখেছে ঊষা। ওর দিকে রেগে ও তাকায়নি বকেও নি। ও অবাক হয়ে সকালের খাবার খেয়েছে কিন্তু ইহান ভাইকে আশেপাশে কোথাও দেখেনি।
সবাই মিলে রেডি হয়ে এলো ইমা আপুর বাসায় যাবে বলে। তিনটার দিকে বের হলো সবাই আজকে লতাও যাবে আমার কাছে লতা বসেছে। আমি আজ আসতে চেয়েছিলাম না।আমাকে অবাক করে দিয়ে চাচি নিজে আমার কাছে এসে বলেছে,
” ঊষা তারাতাড়ি রেডি হয়ে যা। এখনো দাঁড়িয়ে আছিস কেন সবাই তো রেডি হয়ে গেছে। ”
আমি যাব না বলে বেড়ি হয়েছিলাম না। কিন্তু চাচির কথা শুনে অবাক হয়ে রেডি হয়ে এসেছি। তার ব্যবহার আমাকে চরম মাত্রায় অবাক করেছে।
এই বাসায় আসার পর আমার পেছনে ঘুরঘুর করছে রিহান। আমি ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছি। লতার হাত ধরে। লতা আমাকে দাড় করিয়ে বললো,,,
“কি হয়েছে এমন করছিস কেন?”
“আরে ওই ছেলেটা আমাকে জ্বালাতন করে খুব খালি বকবক করে এসে।”
“কোন ছেলে?”
দেখালাম। লতা দেখে বললো।
“তোরে পছন্দ করে মনে হয় প্রেম করতে চায় নাকি?”
আমি বোকা চোখে তাকিয়ে বললাম,, ” তা জানি না। কিন্তু ইহান ভাই ওর সাথে কথা বলতে মানা করছে।”

“কেন মানা করছে?
“তা জানি নাকি? কথা বললেই রেগে আসে আর ধমক দেয়। আচ্ছা লতা আজ ইহান ভাইকে দেখেছিস?”
বলেই ওর দিকে তাকালাম। কাল রাত ভর ভাইয়ার কথা ভেবেছি ওমন করার কারণ বুঝি নি‌। সকালে জিজ্ঞেস করবো ভেবেছিলাম কিন্তু আর তার দেখা নাই।
লতা বললো, ” সকালে দেখেছিলাম আর দেখি নাই।”
“সকালে দেখেছিলি?”
“হুম।”
” কোথায় আমি দেখলাম না তো। আর আজ এখানেও আসে নি নাকি।”
“আসবে কি করে? সে তো কোথায় জানি গেছে সকালে ব্যাগ একটা নিয়ে।‌আমি সকালে তাকে ম্যাডামের ঘরে কিছু নিয়ে রাগারাগী করতে দেখেছি। তারপর ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে গেছে। যাওয়ার আগে তোর রুমে উঁকি দিয়েছে।”
“কোথায় গেছে?” উত্তেজিত হয়ে বললাম।
“আমি কি জানি? কিন্তু তোর সাথে আমার ইম্পর্টেন্ট কথা আছে?”
“কি কথা? অবাক হয়ে বললাম।
“পরে বললো?”
আমরা চলে আসবো তখন রিহান এসে আমার হাত ধরে একটা ফাঁকা জায়গায় নিয়ে এলো আমি হাত ছারানো জন্য ছুটাছুটি করেছি। কিন্তু পারিনি।
“এসব কি আমাকে এখানে টেনে আনলেন কেন?”
রেগে বললাম।
“সরি এভাবে টেনে আনার জন্য। কিন্তু তুমি তো আমাকে পাত্তাই দিচ্ছো না আজ। তাই এটা করতে বাধ্য হলাম রাগ করো না প্লিজ।”
বিনীত সুরে বলল। আমি রাগ নিয়ে তাকিয়ে বলল,,
” রাগের কাজ করে বলছেন রাগ করবো না”
” সরি বললাম তো।”
” আচ্ছা বলুন কি বলবেন?”

রিহান ফট করেই আমার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে পরলো। আমি বড় চোখ করে তা দেখছি। পাগল হলো নাকি বসে আছে কেন?
আমাকে অবাক করে দিয়ে একটা ফুলের তোড়া এনে আমার সামনে ধরলো আর বললো,,
“আই লাভ ইউ ঊষা। আমি তোমাকে ভালোবাসি। সেই প্রথম দিন তোমাকে আমি পছন্দ করেছিলাম আস্তে আস্তে তা ভালোবাসায় পরিনিত হয়েছে। তোমাকে আমি বিয়ে করতে চাই।”
আমি বিস্মিত হয়ে তাকিয়ে আছি। রিহান একের পর এক কথা বলেই যাচ্ছে সে আমাকে খুব ভালো বাসে হ্যানত্যান। আমি কথা বলছি না দেখে রিহান জোর করেই আমার হাতে ফুলের তোড়া দিয়ে উঠে দাঁড়ালো।
আমি চমকে উঠে ফুল ফেলে দৌড়ে গাড়ির কাছে চলে এলাম।
লতা আমাকে দেখে বললো,,
“কোথায় গেছিলি? আর এমন দৌড়ে এলি কেন?”
আমি কিছু না বলে গাড়িতে উঠে বসলাম। লতা সারা রাস্তা অনেক জিজ্ঞেস করলো আমি আস্তে আস্তে সব বললাম ও কিছু ক্ষন হা করে তাকিয়ে বলল,,
“আমি উনার হাবভাব দেখেই বুঝেছিলাম। এমন কিছু বলবে?”
” তুই বুঝেছিলি। ”
” হুম তোর মতো গাধা নাকি!”
“আমি গাধা?”
“তুই কি রাজি হয়েছিস?”
“কিসে?”
“প্রপোজ এ?”
“না কিছু বলিনি দৌড়ে চলে এসেছি আমি শক খেয়েছি খুব রে।”
“রাজি হবি।”
” না না।”

“কেন দেখতে কিন্তু ভালোই। রাজি হয়ে বিয়ে করে নে। চাচির বাসা থেকে চলে যা। শান্তিতে থাকতে পারবি। উনি আর তোকে কষ্ট দিতে পারবে না। না কথা শুনাতে পারবে।”
“কি সব বলছিস? ”
“ঠিক‌ই তো বললাম। ভেবে দেখিস?”
সারা রাস্তা আর কথা বললাম না। রাতে বাসায় এলাম। আসার পর ইমা আপু কথায় থেমে গেলাম। আপু চাচি কে বলছে?
” ইহান কোথায় মা?”
চাচি বলল, ” আমি জানি না রে কোথায় গেলো যে? ফোন করেছিলো কিন্তু কোথায় তা বলেনি।”
“এইভাবে আমার বিয়ের অর্ধেক সময় কোথায় গেল ফাজিল টা। ”
আমি ধীরপায়ে রুমে চলে এলাম। মাথায় একটা কথাই ঘুরপাক খাচ্ছে। ভাইয়া গেলো কোথায়?
কাল ওমন করলো আমাকে শাস্তি দেবে এসব বললো আর আজ সকাল থেকে লাপাত্তা হয়ে গেলো। ভাইয়া লাপাত্তা সাথে চাচি আমাকে একদম বকা ঝকা করছে না কেমন গুটিয়ে আছে। ভালো করেই কথা বলতে সব মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে আমার।

নতুন জামাই বাড়ি এসেছে তার জন্য পিঠা বানানোর ধুম পরেছে। আসার পর থেকে রান্না ঘরে বসে পিঠা বানাচ্ছি। আমি একা না। সাথে ফুপিরা ও আছে। লতা পিঠা বানাতে পারে না তাই ও বসে আছে। এটা ওটা এগিয়ে দিচ্ছে। আমি সংসার পিঠা করছি। তখন আমার ছোট ফুপি বলল,,
” ইশ সংসার পিঠা ইহান টার কি পছন্দের ? ছেলেটা বাড়ি নাই কতো কিছু মিস করছে?”
আফসোস সুরে বললো। তখন খালা( ইহানের খালা) বললো,, ” কি নাকি কাজ এ গেছে আপা তো তাই বললো।”
সবাই ভাইকে নিয়ে কথা বলতে লাগলো আমি চুপচাপ কাজ করছি আর তাদের কথা মনোযোগ দিয়ে শুনছি। চাচি সবাইকে মিথ্যা বলেছে। সবাই চিন্তা করবে বার বার জিজ্ঞেস করবে তাই বলেছে তার জবের জন্য যাওয়া হয়েছে। সবাই এতে বলেছিলো কলেজে জব নিলো তাতে আবার কোথায় গেল। চাচি তখন বলেছে আমাকে ওতো বলেছে নাকি।
আর কেউ কিছু বলে নাই। পিঠা বানানোর কাজ শেষ হলে আমি হাফ ছেড়ে বাঁচি। কোমর ব্যাথা হয়ে গেছে উঠে রুমে চলে আসি। হাত মুখ ধুয়ে চুলে চিরুনি দেয়। যেভাবে আপুদের বাসায় গেছিলাম সেভাবেই ছিলাম চুল ঝট হয়ে আছে। চুল আঁচড়ে খোঁপা করে নেয় তখন হুরমুর করে লতা রুমে আসে।

আমি বড় চোখ করে ওর দিকে তাকিয়ে বলি,,
“কি হয়েছে এভাবে ছুটে এলি কেন?”
“ও এসেই বলে রিহান ভাই এসেছে দেখলাম। আমাকে দেখেই তোর কথা জিজ্ঞেস করলো।”
আমি বিরক্ত হয়ে বললাম,, ” তো আমি কি করবো?”
“আয় দেখা করবি।”
“ছার তো হাত। লোকটার মতিগতি ভালো না আমি যাব না তার সামনে।”
“আরে আয় না।”
‘যাব না বললাম না জোরে করিস কেন? ভাইয়া কোথায় গেলো আমার চিন্তা হচ্ছে।”
আমার কড়া কথা শুনে চমকে উঠলো লতা।
“আচ্ছা সরি। তোর সাথে আমার কথা ছিলো।”
“কি বল?”
“ওই সকালের কথা। ইহান ভাইজান তার মাকে কি যেন বলে বকাবকি করছিলো। অনেক রেগে কথা বলছিল। কি কথা আমি ঠিক শুনি নি কিন্তু আমি তোর নাম বলতে শুনেছি। তোকে নিয়ে কথা হয়েছে। ম্যাডাম প্রথমে পাল্টা জবাব দিলেও পরের দিকে কেমন ভয় পেয়ে ছিলো।”
আমি হাঁ করে লতার কথা শুনলাম। আমার মাথায় হাত আমাকে নিয়ে কথা বলছে চাচির সাথে। হায় আল্লাহ বলে কি? তাহলে চাচি এর জন্য আমাকে তো বকবে এখন আমি কি করবো? কিন্তু চাচি আজ তো একটু ও বকলো না আচ্ছা বাসায় মানুষ তাই কি ভালো আচরণ? সবাই চলে গেলে আবার শুরু হবে নতুন বিপদ।আমি ঢোক গিলে ভয়ার্ত মুখ করে দাঁড়িয়ে আছি।

লতা আমার কাছে এসে বললো, “কাল বাগানে তোর আর ইহান ভাইজানের সব কথা আমি শুনছি।”
“মানে।”
বড় বড় চোখ করে।
“হুম আমি আড়ালে লুকিয়ে ছিলাম।”
“কেন?”
“না মানে তুমি কাদছিলি আমি তোর কাছে আসবো তখন ভাইজান কে আসতে দেখলাম তাই দাঁড়িয়ে লুকিয়ে দেখলাম কি হয়? সব দেখে আমি তো স্তব্ধ হয়ে গেছি। আচ্ছা তুই আর ভাইজান দুজন দুজনকে কি ভালোবাসিস?”
আমি ওর কথা শুনে চমকে উঠলাম। আমার মনে ভাইয়ার জন্য আলাদা একটা ফিলিংস আসে। সেটা ক্রাশ শুধুই। ভাইয়ার উপর আমি ক্র্যাশিত কিন্তু ভালোবাসা নাই‌।
আমি বললাম,, ” তোর এমন কেন মনে হলো।”
” আরে ভাইজানের বিহেভিয়ার দেখে। আমার মনে হয় ভাইজান তোকে ভালোবাসে। ”
তখনি চাচির ডাক এলো লতাকে ডাকছে লতা দৌড়ে চলে গেলো। আমি থমকে দাঁড়িয়ে র‌ইলাম। ভাইয়া আমাকে ভালোবাসে। না না এটা সম্ভব না তাকে তো আমি তার গার্লফ্রেন্ড এর সাথে কথা বলতে শুনেছি হুম ফারিয়া নাম। অনেক দিন আমি তার গানের আওয়াজ পেয়ে চুপিচুপি উপরে গিয়েছি। তখন দেখতাম একটা মেয়ের সাথে কথা বলতো।

ওতো রাগে গার্লফ্রেন্ড ছারা আর কার সাথে কথা বলবে?
কিন্তু ভাইয়া আমাকে চুমু খেলো কেন? ভুল করে হয়তো আমি আর ভাইয়া কাছে যাব না। ভাবতে লাগলাম।
বাইরে আসতেই আমাকে আর লতাকে দিয়ে পিঠা পাঠালো আপুর রুমে যেখানে রিফাত ভাইয়ারা আছে।সেখানে গিয়ে চোখ পরলো রিহানের দিকে আমার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে।আমি পিঠা করে তার তাকানো দেখে গটগট করে বেরিয়ে আসতে চাইলাম। এমন হা করে তাকিয়ে থাকলে কি সেখানে থাকা যায়।
কিন্তু আপুর জন্য সেটা হলো না আমাকে ডেকে সাথে বসালো আমি তার কথা ফেলতে পারলাম না সাথে লতা কে বসলাম। রিহানের দিকে তাকিয়ে দেখি হেসে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি চোখ সরিয়ে বিরক্ত হয়ে বসে একটা পিঠা দিলো আপু সেটা খেলাম।
আধা ঘন্টার মতো থেকে বেরিয়ে এসে হাফ ছেড়ে বাঁচলাম। অসভ্য ছেলে কেমন বেহায়ার মত তাকিয়ে থাকে।

আমি নিজের রুমে চলে এলাম। এখন ঘুম দেবো। বিছানায় শুয়ে ঘুম আসছে না বারবার ভাইয়ার কথা মনে পরছে। কেন করছে জানা নেই আমি ছটফট করে উঠে বসলাম। চোখ বন্ধ করলেই ভাইয়ার টোল পড়া গালের হাসি চোখের সামনে ভেসে ওঠে। কিন্তু সুন্দর সেই হাসি অফ। কালকে কতোটা কাছে ছিলো আমার ভাইয়া ভাবতেই গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠে। আচ্ছা ভাইয়া বাসা থেকে গেলে কোথায় আর কেন গেলো? চাচির সাথে রাগারাগী আমার জন্য করে থাকলেও কোথাও যাওয়ার কি দরকার।
আবার শুয়ে ঘুমানোর ট্রাই করলাম। আর ঘুমিয়ে পরলাম। পরদিন ঘুম থেকে উঠে বেরিয়ে মুখোমুখি হলাম রিহানের সে আমার সামনে এসে হেসে বললো,
“আমার উওর টা দিলে না কিন্তু?”
আমি হকচকিয়ে গেলাম। এই লোকটার সামনেই পরতে হলো অফ বিরক্তিকর।
“কি হলো ঊষা আমার উওর দাও?”
“কিসের উওর দিবো?”
“কাল যেটা না বলে চলে এলে। তুমি লজ্জা পেয়ে চলে এসেছো আমি মাইন্ড করিনি।”
“আমি লজ্জায় পেয়ে আসিনি।”
“তাহলে?”
“আমি..

এক চিলতে রোদ পর্ব ২৭

তখন চাচিকে দেখে আমার চোখ বড় বড় হয়ে গেল। আমাদের দেখেছে কিনা জানি না কিন্তু এদিকে আসছে আমি চমকে উঠলাম।
রিহানকে পাশ কাটিয়ে চলে গেলাম। রিহান বোকা চোখে আমার দিকে তাকিয়ে র‌ইলো।
চাচির কাছে যেতেই চাচি বললো,,
“কি করে ক‌ই যাস? আর ওই ছেলের সাথে কি কথা বলছিলি।
আমি ভয় পেয়ে গেলাম।
“ক‌ই কিছু না তো।
“মিথ্যা বলছিস?
“না তো। ওই আসলে বলছিলি চা দিতে।”
চাচি তাকিয়ে কিছু বলতে গিয়েও বললো না চলে গেলো। আমি তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে র‌ইলাম।
চাচি যদি আবার এসে দেখে আমি চা করছি কিনা তাই চা করে নিলাম। ওই লোকটা এখনো সোফায় বসে আছে আমি গিয়ে বললাম,,
“ধরেন চা খান।”
চমকে আমার দিকে তাকিয়ে বলল,, “চা আমার জন্য আমি তো তোমাকে চা করতে বলিনি।”
“বলেননি তো কি হয়েছে আমি নিয়ে এলাম। ধরেন খান।”
“কিন্তু আমি তো…
বলতে গিয়ে ও থেমে গেলো আমি কপাল কুঁচকে তাকিয়ে বললাম,,
” আপনি কি?”

রিহান চা খায় না কিন্তু বললো না। ভালোবাসার মানুষটির হাতের চা মিস করতে চাইনা।
তাই হেসে তারাতাড়ি চা দিয়ে চুমুক দিলো।
আমি হতবুদ্ধি হয়ে দাঁড়িয়ে তাকিয়ে আছি।
তারপর চলে এলাম।ভাইয়াকে এই সময় কফি দেয় সব সময় আজ ও কফি করে বোকা হলাম ভাই তো বাসায় নাই‌। সবার জন্য চা করে দিয়ে এলাম। ইমা আপুর রুমে গেলাম না খালি।
আমি রান্না ঘরে এসে কফির দিকে তাকিয়ে আছি। এটা ভাইয়া খায় আমি কখনো খাইনি কিন্তু শুনেছি তিতা এটা একটু খেয়ে দেখবো আজ তো ভাই নাই। এটা ফালানো যাবে।
আমি কফির দিকে গভীর ভাবে তাকিয়ে থেকে ঠোঁটের কাছে নিলাম। এক চুমুক দিতেই মুখ তিতা বিচ্ছিরি হয়ে এলো। গল্পের আসল লেখিকা নন্দিনী নীলা সাথে সাথে থু থু করে ফেলে দিলাম সব। ছিঃ কি বাজে খেতে এটা ভাইয়া খায় কি করে? ওয়াক থু। কফির কাপ রেখে আমি করি করতে লাগলাম। তখন রিহান এলো আর বললো ওকে কফি করে দিতে আমি বললাম,,

“আপনি ও ওই বাজে জিনিস টা খান?”
রিহান ব্রু কুঁচকে বলল,,” কোন বাজে জিনিস?”
আমি কফি দেখিয়ে বললাম। “এই যে এটা?”
রিহান হেসে উঠলো,, “আরে কফি করছো দেখি আমি তো তোমাকে বলিনি করতে করলে যে। ভালোই হয়েছে।”
বলেই এগিয়ে কাপ হাত নিলো আমি চোখ বড় করে বলল, “এটা নিচ্ছেন কেন?”
“খাব তাই। তোমাকে তো করার কথা বলতেই এসেছিলাম। যাই হোক করা আছে এটাই খাই।”
“এটা আপনার না দিন এটা!”
‘কার এটা?”
‘ইহান ভাইয়ের!”
“আরে সে তো বাসায় নাই! আমাকেই দাও।”
“না দিন তো এটা বলেই হাত থেকে কেড়ে নিলাম আমার খাওয়াটা কিছুতেই দেওয়া যাবেনা।”
রিহান অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।আমি কাচুমাচু মুখ করে বললাম,,
“আমি আপনাকে আরেকটা করে দেয় আমি যান সোফায় বসুন।”
রিহান সন্দেহ চোখে তাকিয়ে থেকে চলে গেলো। আমি বুকে হাত দিয়ে শ্বাস নিলাম। ইশ আমার টা নিচ্ছিলো।

এক চিলতে রোদ পর্ব ২৯