এক চিলতে রোদ পর্ব ২৯ || Nondini Nila

এক চিলতে রোদ পর্ব ২৯
Nondini Nila

বাসা একদম ফাঁকা হয়ে গেছে। বিয়ের আমেজ শেষ হতেই সব আত্নীয় স্বজন রা চলে গেছে। যাওয়ার আগে শীলা আমাকে ওর সাথে নিয়ে যেতে চেয়েছিলো কিন্তু আমি যাইনি। যাব কি করে কোচিং আছে যে দুইদিন মিস গেলো।
ইমা আপু একদিন ছিলো তাতে আমাকে রিহান পাগল করে ছেড়েছে। আমি কোন রকম লুকিয়ে চুরিয়ে বেঁচেছি এতো ডিস্টার্ব করতে পারে।
আমি ভেবেছিলাম আজকে চাচির থেকে আমাকে কঠিন কথা শুনতে হবে। কিন্তু আমাকে অবাক করে দিয়ে আজকেও কিছু বলেনি। আমি বিষ্ময় হতভম্ব হয়ে রেডি হচ্ছি কোচিং এ যাওয়ার জন্য। চুল বিনুনি করে মাথা পিন করে বেরিয়ে এলাম। চাচি সোফায় বসে আছেন। আমাকে বের হতে দেখে জিজ্ঞেস করলো,

“কি রে তোর কাছে টাকা আছে? লাগবো নাকি কোচিং এ যেতে।”
আমি কিছু বলার ভাষা খুজে পাচ্ছি না। আমার মুখটা হা হয়ে গেছে। চাচি আমাকে টাকা লাগবে কিনা জিজ্ঞেস করছে। আমি কি স্বপ্ন দেখছি।
“কি রে এমন হা করে তাকিয়ে আছিস কেন?”
আমি জ্বিভা দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে দিয়ে মিনমিন করে বললাম,,,
“তুমি আমাকে টাকা দেবে?”
“যাওয়ার জন্য লাগলে দেবো না কেন?”
আমি শক নিতে পারছি না মাথা ঘুরছে আমার। চাচির থেকে এতো ভালো ব্যবহার আমার সহ্য হচ্ছে না‌। চাচি বিরক্ত হয়ে তাকিয়ে আছে। রাগ স্পষ্ট এখন হচ্ছে আমি তারাতাড়ি বললাম।
“না না আমার টাকা লাগবে না। আমি যাই দেরি হচ্ছে।”
বলেই বাইরে দিকে হাঁটতে লাগলাম।
চাচি পেছনে থেকে বলে উঠলো, “ভালো করে পরিস পাশ করতে হবে কিন্তু।”
আমি দরজার কাছে এসে অবাক হয়ে পেছনে তাকিয়ে চলে এলাম বাইরে।
চাচির হলোটা কি এমন করছে কেন?
আমি সারা রাস্তা চাচি কে নিয়ে ভাবতে ভাবতে কোচিং এ এলাম।

আরও গল্প পরতে ভিজিট করুন

কোচিং শেষ করে আবার সেই রিহান। এই ছেলে আমার পিছু ছারবে না। আমি লুকিয়ে দাঁড়িয়ে আছি। যাতে দেখতে না পায়। রিহান চারপাশে তাকিয়ে আমাকে খুঁজছে।
আমি আড়ালে দাঁড়িয়ে আছি। অটো একটা আসতেই চেঁচিয়ে থামতে বললাম। তারপর দৌড়ে উঠে বসলাম। এতেই রিহান বেটা আমাকে দেখে নিয়েছে। অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে নিজেও ঝড়ের গতিতে আমার পাশে এসে বসলো।
গায়ের সাথে লাগবে আমি তারাতাড়ি সরে বসলাম। রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি রিহানের দিকে।
রিহান আমার দিকে তাকিয়ে হাসি দিলো দাঁত বের করে আমার রাগে ফাজিল টার মাথা ফাটাই দিতে ইচ্ছে করছে।
” আরে ঊষা আমি কখন থেকে তোমার জন্য অপেক্ষা করছিলাম আর তুমি এভাবে চলে যাচ্ছিলে। ”
আমি চাপা রাগ নিয়ে বললাম,, ” আপনি গাড়ি এলেন কেন? আর এমন ভাবে আমার পেছনে কেন পরেছেন?”

“ভালোবাসি বলেছিলাম তো।”
” আমি তো বাসি না তাহলে কেন ডিস্টার্ব করছেন? প্লিজ আপনি নেমে যান আর আমাকে ডিস্টার্ব করবেন না। এমন করলে আমি আর কোচিং এ আসবো না। ”
আমার কথা শুনে রিহান মুখটা একটু খানি করে ফেললো। আমি অটো ড্রাইবার কে গাড়ি থামাতে বললাম। মুখ কালো করে বললো,,
” কেন ভালোবাস না? ”
” বাসি না তাই।”
” আমি সত্যি তোমাকে ভালোবাসি বিয়ে করতে চাই।”
“বিয়ে?”
‘হুম।”
আমি কিছু বলার আগেই গাড়ি থামলো আমি কিছু এই বিষয়ে না বলে বললাম,,,
” নামুন। আর আমাকে বিরক্ত করবেন না।যান।”
” কিন্তু….
হাত দিয়ে নামতে বললাম। রিহান গোমড়া মুখে নেমে গেলো। আর নেমেও আমার দিকে তাকিয়ে র‌ইলো।
আমি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম।
বাসায় এসে বসতেই আযান দিলো। রাতে পরতে বসে ছিলাম তখন ইলা আপুর ডাক পরলো।
আমি তার রুমে যেতেই আমার হাতে রিমুভার দিয়ে হাত ছরিয়ে বসে পরলো। এখন আমাকে দিয়ে নেল পালিশ উঠাবে। পড়া ছিলো অনেক কিন্তু না ও করতে পারবো না। বাধ্য হয়ে বসলাম। আপু চান বললো,

কাল নাকি তার ফ্রেন্ডরা মিলে কক্সবাজার যাবে তাই ড্রেসের সাথে ম্যাচিং করে সব পরবে তাই এসব করাচ্ছে আমাকে দিয়ে।
আমি দীর্ঘ শ্বাস কাজ করতে লাগলাম। অর্ধেক হতেই আমাকে উঠিয়ে চা করতে চা করতে পাঠালো।
চা করছি আর বিরবির করছি। চা করে উপরে এসে ইহান ভাইয়ের রুমে তাকালাম। ইশ ভাইয়া কোথায় আছে তিন দিন হয়ে গেলো বাসায় নাই। না চাইতেই মনটা খারাপ হয়ে গেল। চা নিয়ে আপূকে দিয়ে কাজ করতে লাগলাম শেষ করে রুমে এসে একটু পরেই ঘুমিয়ে পরলাম।
সকাল সকাল ইলা আপু সেজে গুজে একটা ব্যাগ নিয়ে চলে গেল। না খেয়ে। রেস্টুরেন্টে নাকি খাবে তাই। আমি আপুর যাওয়ার দিকে তাকায় র‌ইলাম। কালো ড্রেস পরেছে আপু খুব সুন্দর লাগছে তাকে দেখতে।

চাচি খাবার পর আমাকে নিজের রুমে ডেকে নিলো। আমি ভয়ে ভয়ে গেলাম। চাচি বিছানায় পা ছরিয়ে বসে আছে। আমি যেতেই বলল,,
” পা একটু টিপে দে তো ব্যাথা লাগছে। ”
আমি নিঃশব্দে বসে পরলাম।
” ইহান কোথায় গেছে?”
আমি বসে পা টিপে দিচ্ছি তখন চাচি বলে উঠলো কথাটা আমি শুনেই চমকে উঠলাম। মাথা তুলে তাকালাম চাচির দিকে সে রেগে আমায় দিকে তাকিয়ে আছে। আমি ঢোক গিলে হাত থামিয়ে ফেললাম।
“কি হলো বলো? কোথায় আমার ইহান?”
আমি বিস্মিত হয়ে তাকিয়ে আছি।
আমাকে কেন জিজ্ঞেস করছে আমি তো জানি না।
“আমি কি করে জানবো চাচি ?”
“জানলে বল?”

“আমি জানি না কিছু। আমাকে কেন জিজ্ঞেস করছো আমি কিভাবে জানবো?”
চাচি রেগে কিছু বলতে যাবে তার ফোন টা বেজে উঠলো। সে আমার দিকে রাগি দৃষ্টিতে তাকিয়ে ফোন ধরলো। ফোনের দিকে তাকিয়ে চাচি হাসলো আমি তার দিকে তাকিয়ে আছি। চাচি হ্যালো আপা বলে উঠলো,
“আপা কেমন আছো? ইমা বিয়েতে এলে না কেন?
“বিজি ছিলাম রে।
“আমি তোমাকে মিস করেছি। এখন আসো ঘুরে যাও‌
“আমি না তুই আয়।
‘আমি কিন্তু…
“কিন্তু কি আয় আমার কাছে থেকে তা কয়দিন।
“আচ্ছা। ( ভেবে বললো কারণ এখন ইহান নাই ইলা ও নাই‌। যাওয়া যায়।)
“কাল‌ই আয় আমার অফ আছে কাল।
“আচ্ছা আসবো।

খুশিতে আটখানা হয়ে বললো। এই বোন সবার বড় আর ধনী। ইয়া বড় বিজনেস একা সামলাতে পারে তার বোন। এই জন্য এই বোন কে সব চেয়ে ভালোবাসে টাকার যে তার খুব লোভ।
আমি হাঁ করে তাকিয়ে আছি। চাচি কে কি খুশি দেখাচ্ছে এটা নতুন না তার বড় বোন ফোন করেছি এমন খুশি হয় সে আর লাফিয়ে চলে যায়। এবারো তাই হবে। চাচি আমাকে আমার কিছু জিজ্ঞেস করলো না আর না পা টেপালো। উঠে নিজের আলমারি খুলে কাপড় বের করছে।
নিয়ে যাবার জন্য না একটা পরে যাবে আর দশটা নিয়ে আসবে।‌
আমি তারাতাড়ি বেরিয়ে এলাম। আর বকা বাকি করতে পারবে না। কয়েকদিন চাচি বাসায় আসবে না। পরদিনের যাওয়া আজকে বিকেলেই চলে গেলো। চাচা অফিসে আছে তাকে বলেও গেলো না আমাকে ডেকে বলতে বললো।

এক চিলতে রোদ পর্ব ২৮

আমি আচ্ছা বলে দিলাম। এখন পুরো ফাঁকা বাসায় আমি আর লতা। চাচা আসতে সন্ধ্যায় পরেই। তাই হলো সাথে সাতটায় চলে এলো। তারেক খেতে দিয়ে বললাম। চাচি চলে গেছে বোনের বাড়ি। শুনেই চাচা কয়েকটা বকা দিলো চাচি কে বাসা এমনিতেই খালি তার উপর তার ও যেতে হবে কেন? খাওয়া শেষ করে নিজের রুমে গিলো। চাচার রুমে আমি জগ ভর্তি পানি দিয়ে এলাম। চাচা আর উঠবে না জানি। আমি আর লতা সোফায় বসে টিভি দেখছি কেউ নাই তাই বকার ও কেউ নাই। হিন্দি ছবি দেখছি কথা বুঝি না তাও দেখছি ভালো লাগে তাই। দুজনে হেসে কুটিকুটি হচ্ছি খুব হাসির ছবি এটা কথা না বুঝলেও কান্ড কারখানা দেখেই হাসছি। আচার আমার খুব পছন্দ আজ ফ্রিজ খুলে একটু আচার এনে আমি আর লতা গেলাম।

“আমার খুব ঘুম পাচ্ছে রে।”
লতার কথায় আমিও হামি দিয়ে বললাম,,
” আমার ও আর শীত ও লাগছে। বাইরে বৃষ্টির ভাব করছে চল শুয়ে পরি।”
“হ্যা আমি গেলাম।”
লতা ঘুম ঘুম চোখে চলে গেলো। আমি টিভি অফ করে দিলাম।
দশটার দিকে টিভি অফ করে দুজনের রুমে গিয়ে শুয়ে পরলাম।
বিছানায় শুয়ে পরেছি বাইরে বাতাস হচ্ছে। আমি আবার উঠে জানালা খুললাম। বাতাসে আমার চুল এলো মেলো করে দিলো। খোপা খুলে গেল আমি চুলে হাত দিয়ে ধরার চেষ্টা করছি আর বাইরে তাকিয়ে আছি। গুরিগুরি বৃষ্টি পরতে লাগলো আমি তাকিয়ে আছি তখন কেউ গাড়ি নিয়ে ভেতরে এলো আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি। এটা তো ভাইয়ার গাড়ি। আমি বিস্মিত হয়ে তাকিয়ে আছি তাহলে কি ভাইয়া এলো আমি উৎসুক হয়ে তাকিয়ে আছি। গাড়ি থেকে কেউ বেরুলো দেখার আগেই সব অন্ধকার হয়ে গেলো কারেন্ট চলে গেছে। অন্ধকার এ দেখলাম লোকটা দৌড়ে ভেতরে আসছে। আমি অন্ধকারে এ দাড়িয়ে তাকিয়ে আছি।

এক চিলতে রোদ পর্ব ৩০