এক চিলতে রোদ পর্ব ৩০ || valobashar golpo

এক চিলতে রোদ পর্ব ৩০
Nondini Nila

লোকটা কে চিন্তা করছি? যাই হোক কলিং বেল তো বাজাবো‌। আমি আবসা আলোতে ভেতরে এলাম। কলিং বেল বাজানোর আসায় আছি। কিন্তু বাজছে না অনেকক্ষন চলে গেলো আমি দাঁড়িয়ে আছি। এবার আমি হালকা আলোতে বেরিয়ে এলাম রুম থেকে। ড্রয়িংরুমে ডিম লাইট জ্বলছে এটা কারেন্ট না থাকলেও জ্বলে। আমি সেই আলোতে চারপাশে দেখছি কাউকে দেখতে পাচ্ছি না। আবার কলিং বেল ও বাজলো না তাহলে বাইরে কে ওটা। চোর নয়তো।
নাহ চোর কখনো গাড়ি নিয়ে আসে নাকি। আমার মাথা গেছে কি সব ভাবছি। আমি পা টিপে টিপে দরজার কাছে গেলাম না ভেতরে বন্ধ তাহলে কি কেউ আসে নি।

তাহলে বাইরে কে ছিলো? ঘুরতে গিয়ে লক্ষ্য করলাম আমার পা ভিজা অনুভব করছি। পায়ের নিচে পানি এলো কি করে? এক পা উঁচু করে হাত দিয়ে দেখি পানি। বাইরে বৃষ্টি তার মানে কেউ ভেতরে এসেছে? কিন্তু আমরা কেউ তো দরজা খুলি নাই তাহলে? তার কাছে কি এক্সটা চাবি আছে? চাবি তো শুধু ইলা, ইমা, চাচা আর ভাইয়ার কাছে আছে। তাহলে এটাই ভাইয়াই। আমি সিউর। একবার রুম এ থেকে উঁকি দিয়ে আসবো নাকি?

যেই ভাবা সেই কাজ আমি সিঁড়ি দিকে গেলাম ভাইয়া রুমে যাব তাই। আমার বুকের ভেতরে টিপটিপ করছে। যদি ভাইয়া না হয় এটা ভেবে ভয় ও করছে চোর ও তো হতে পারে।বাসা খালি দেখে আবার চোর আসে নি তো। আকাশ পাতাল ভেবে ভয়ে জরোসরো হয়ে ভাইয়ার রুমের কাছে এলাম। ভেতরে আলো দেখা যাচ্ছে আমি আড়ালে লুকিয়ে উঁকি দিলাম। রুমে চার্জার লাইট জ্বালানো। আর সেই আলোতে ইহান ভাইয়ের উদাম শরীর দেখা যাচ্ছে। ভেজা শার্ট খুলে সোফায় ছিটকে দিলো গা ভেজা তার। হাত দিয়ে চুলের পানি ঝারছে। ভাইয়ার বাম সাইট আমি দেখছি। ভাইয়াকে দেখে একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম। এই রকম উন্মুক্ত শরীর এ ভাইয়াকে দেখে আমার সারা শরীর কেঁপে উঠে। আমি চোখ সরিয়ে ভাবছি ভাইয়া তিন দিন পর কোথা থেকে এলো আর এতো দিন কোথায় ছিলো?
তখন ভাইয়া কন্ঠে আমার নাম শুনে আমার হৃদপিণ্ড কেঁপে ওঠে ভয়ে।

আরও গল্প পরতে ভিজিট করুন

ভাইয়া অন্যদিকে তাকিয়ে থেকেই বললো,,,” ঊষা আমার জন্য খাবার নিয়ে আয় তো।”
কথাটা শুনে আমার চোখ কপালে ভাইয়া আমাকে দেখলো কিভাবে? আমি হকচকিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়ালাম। বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে আছি ভাইয়ার দিকে। এদিকে না ফিরে বুঝলো কিভাবে আমি এখানে দাড়িয়ে আছি।
আমি বিস্মিত হয়ে তাকিয়ে আছি। তখন ভাইয়া আবার বলে উঠলো,,,
” সারাদিন কিছু খাইনি। প্রচন্ড মাত্রায় খিদে পেয়েছে। দাঁড়িয়ে চিন্তা ভাবনা না করে খাবার নিয়ে আয়। এই লাইট নিয়ে যা।”

বলেই বিছানায় লাইট রেখে বাথরুমে ঢুকে গেলো। আমি থমকে দরজা খুলে ভেতরে এলাম। ধরা খেতেই হলো। সারাদিন না খেয়ে কেন ছিলো? এসেই খাবার চাইছে ভাইয়া। আমি চোখ বড় করে ভাবতে ভাবতে লাইট নিয়ে নিচে এলাম। আজকে ইলিশ মাছ রান্না হয়েছিলো যেটা ভাইয়ার ফেবারিট। চাচি চলে যাওয়ায় বেচে গেছে মাছের টুকরো আমি মাছের তরকারি, বাজি, ভাত বেড়ে হাতে নিলাম প্লেট। কোথায় ছিলো যে না খেয়ে থাকতে হলো।
আমি রুমে এসে দেখি এখনো বাথরুমে থেকে বের হয় নি খাবার এনে টেবিলে রাখলাম সোফায় বসে খেতে পারবে।
পানির বোতল হাতে নিয়ে আবার বেরিয়ে এলাম। বোতল ভর্তি করে পানি এনে খাবারের প্লেট এর পাশে রাখলাম। তখন ভাইয়া বেরিয়ে এলো। আমি তাকিয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম ভাইয়া গেঞ্জি আর ট্রাউজার পরে এসেছে। তাকে খালি গায়ে দেখলেই আমার বুকের ভেতর ধুকপুক বেড়ে যায়।
বাইরে এসে আমার দিকে তাকালো তার সেই ভয়ংকর চাহনী দিয়ে যা দেখেই আমার বুকের ভেতরে তোলপাড় শুরু হয়ে গেল। আমি তোতলাতে তোতলাতে বললাম,,
“খা-বা-র দি-য়ে-ছি। আমি যাই।”

তারাতাড়ি বলেই চলে আসার জন্য ব্যস্ত হয়ে পরলাম। এখানে থাকা যাবে না কেমন জানি লাগছে?
ভাইয়া ফট করেই আমার হাত ধরে আটকে ফেললো আমি থমকে দাঁড়িয়ে পরলাম। বুকের ভেতর ধুকপুক বেড়েই চলেছে। তার উপর ভাইয়া স্পর্শ আমার সারা শরীর কেঁপে উঠলো।
আমি চোখ বন্ধ করে কিছু বলতে যাব ভাইয়া তার আগেই একটা কান্ড ঘটিয়ে ফেললো আমাকে টেনে নিজের কাছে নিয়ে শক্ত করে জরিয়ে ধরলো। আমি বিষ্ময়ে হতভম্ব হয়ে গেলাম। ভাইয়া শরীর ঠান্ডা গোসল করেছে যে তার ঠান্ডা শরীর এর স্পর্শে আমি থরথর করে কাঁপছি। ভাইয়ার মাথা থেকে চুলের পানি আমার ঘাড়ে পরছে আমি চোখ বন্ধ করে আছি। দম বন্ধ হয়ে আসছে এতো জোরে কেউ চেপে ধরে হাড় গুড়ো করে ফেলবে নাকি‌।
আমি ছাড়ানোর চেষ্টা করা পারছি না।ভাইয়ার শক্তির কাছে আমার শক্তি কিছু না আমি জানি তাই তো ছুটতে পারছি না।

আমার নরাচরা ধপ করেই থেমে গেলো ভাইয়ার কথা শুনে। ভাইয়া বলছে,,
” তোর মায়ায় আমাকে কঠিন ভাবে আটকে ফেলেছিল ঊষা। এই মায়া থেকে আমি কিছুতেই বের হতে পারছি না। তোর এই মায়া কাটানোর জন্য বাসা ছেড়ে চলে গেলো। ভেবেছিলাম তোর থেকে দূরে থাকলে তোকে না দেখলে হয়তো আমি তোর এই বিচ্ছিরি মায়া থেকে বের হতে পারবো‌। কিন্তু না! কিছু হলো না। সব উল্টা হলো। আমি আড়ালে তোর দূরে গিয়ে আরো তোর মাঝে আটকা পরে গেলাম। প্রতিটা মুহুর্তে আমি তোকে মিস করেছি খুব মিস করেছি। বুকের ভেতর তোর জন্য কষ্ট অনুভব করেছি আর তাতে আমি বুঝে গেছি আমি তোর মাঝে থেকে আলাদা হতে পারবো না। আমার তোকে চাই শুধুই তোকে চাই। তোকে বুকের মাঝে শক্ত করে রাখবো। যাতে এই বুক থেকে কেউ তোকে নিতে না পারে। এই বুকে কতো ব্যাথা হচ্ছিল জানিস একটুও শান্তি পায়নি। এখন সেই ব্যাথা চলে গেছে তোকে নিজের বুকে নিতে পেরে। মনে হচ্ছে আমার সমস্ত সুখ এই তোর মাঝে আছে।”
আমি হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে আছি ভাইয়া আমাকে ছেড়ে সরে দাঁড়ালো আমি থমকে দাঁড়িয়ে আছি। মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছে না। হাত পা কাঁপছে ও না মনে হচ্ছে আমি পাথর হয়ে গেছি। ভাইয়া আমার দিকে একনজর তাকিয়ে সোফায় বসে পরলো,,

খেতে বসলো। এক লোকমা মুখে দিয়ে বললো,,
“জানিস এই কয়দিন আমি খেতেও পারিনি। আমার খেতেই ইচ্ছে হয়নি। সব যেন একজনের দূরত্ব এ শেষ হয়ে গেছিলো।এখন আমি প্রাণ ভরে খাবো। ”
বলেই ভাইয়া খাচ্ছে আমি তার দিকে তাকাচ্ছি না। ভাইয়ার বাচ্চা মো কথা শুনে আমি আরো অবাক হলাম। আমার সব কিছু তাল গোল পাকিয়ে যাচ্ছে। আমি আর তাকালাম না ভাইয়ার দিকে। এক হাত উঁচু করে আরেক হাতে চিমটি কাটলাম। তারপর মৃদু আওয়াজ করলাম এসব সপ্ন না সত্যি ভাই এসব বলেছে আমি থমকে গেলাম আবার। ভাইয়া আমার আওয়াজ শুনে তাকিয়ে ছিলো আমি তখন দৌড়ে বেরিয়ে আসি রুমে থেকে ভাইয়া পাগল হয়েছে। কি সব বললো? এসব সত্যি হতেই পারেনা। আমি বিরবির করতে করতে নিজের রুমে এসে দরজা আটকে বিছানায় বসে পরলাম।
আমার হাত পা অসম্ভব কাঁপছে। আমি হাঁটু ভাঁজ করে বসে মাথা রেখে চোখ বড় করে ভাইয়ার কথা ভাবছি। সব কথা গুলো আবার রিপিট হচ্ছে আমার কানে।

তখন জানালা দিয়ে বাতাসে এক ঝাপটা পানি এসে আমার নাক মুখ ভিজিয়ে দিলো।আমি চমকে মাথা তুলে সামনে তাকালাম। আবসা অন্ধকারে বুঝা যাচ্ছে না কিন্তু আমি সিউর জানালা খুলে রাখার জন্য রুমের ফ্লোরে ভিজে ছুপছুপে হয়ে আছে। তারাতাড়ি উঠে গেলাম। জানালা অফ করে ঘুটঘুটে অন্ধকারে বিছানায় শুয়ে পরলাম। চোখে ঘুম মাথা চিন্তা নিয়ে চোখ বন্ধ করতেই ঘুমিয়ে পরলাম। অনেক রাত গেছে তাই ঘুমের মাত্রা বেড়ে গেছে।
আজকে বৃষ্টিতে বজ্রপাত ছিল না শুধু বাতাসার বৃষ্টি ছিল। এজন্য আমি একটুও ভয় পাইনি।

আযানের শব্দ শুনে চোখ পিটপিট করে তাকালাম।
সাথে সাথে ধরফরিয়ে উঠে বসলাম। রাত ভর ইহান ভাইকে নিয়ে স্বপ্ন দেখেছি। তাও স্বপ্নেও শুধু সেই কথা গুলো শুনেছি। যা আমাকে জরিয়ে ধরে বলেছিল।‌ আর একটু বাড়িয়ে দেখেছি ভাইয়া আমাকে বুকে থেকে উঠিয়ে গালে হাত দিয়ে বলে,,,
“ঊষা আমি তোকে ভালোবাসি। খুব ভালোবাসি। তোর ভালোবাসা ছাড়া আমি নিঃস্ব। তুই আমাকে ভালোবাসবি তো।”
ভাইয়া মায়া ভরা চোখের আমার দিকে তাকিয়ে কথা গুলো বলছে। আমি বিষ্ময়ে হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছি তার অসহায় মুখের দিকে। এমন ভালো বলছে যেন আমি না ভালোবাসলে সে মরেই যাবে। আমি তার অক্সিজেন হয়ে গেছি যেন। আমি ঢোক গিলে এদিকে ওদিকে তাকাচ্ছি।

তখন ভাইয়া আবার বললো,, কি হলো আমার উওর দিচ্ছি না কেন ভালোবাসবি না আমাকে।
আমি কিছু না বলে ভাইয়ের হাত অনেক কষ্ট করে ছারিয়ে দৌড়ে বেরিয়ে এলাম। বুকের ভেতর টিপটিপ করছে বুকে হাত দিয়ে শ্বাস নিলাম। তখন ভাইয়ার আওয়াজ। পেছনে আসছে আর একটা কথাই বলে যাচ্ছে কি বিপদ বলুনতো? আমি চমকে উঠলাম। তখন কি করবো ভাবছি ওমনি আযানের শব্দ শুনে ঘুম ছুটে গেলো।
আমার শরীর কাঁপছে। কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম হয়েছে। আমি ভয়ে গুটিয়ে গেলাম তারমানে সব স্বপ্ন ছিলো। কিন্তু ভাইয়া ভালোবাসি না বললেও ওই কথা গুলো তো বলেছেন। এমন কথা কেন বললো। কেন বলবে এসব?
আমি ওরনা বালিশের কাছে থেকে নিয়ে কপালের ঘাম মুছে নিলাম। কাঁপা পায়ে উঠে দাঁড়ালাম। শরীর ভয়ে এখনো কাঁপছে। আমি ওই ভাবেই বাথরুমে গিয়ে ওযু করে নিলাম। নামাজ পরবো‌। আমি টুলছি। কারন ঘুম হয়নি রাত ভর স্বপ্ন দেখেছি ঘুম হবে কি করে? ওযু করে নামাজ শেষ করে নিলাম। নামাজ পরে ঘুম চলে গেছে। আমি জানালা খুললাম বাইরে একটু একটু আলো হচ্ছে। আর ঠান্ডা বাতাস বয়ে যাচ্ছে। রাতে বৃষ্টি হ‌ওয়ায় এমন মিষ্টি ঠান্ডা বাতাস ব‌ইছে আমি তা উপভোগ করছি। ফুলের দিকে তাকিয়ে বেরিয়ে এলাম। গাছে পানি দেবো তাই। বাইরে এসে পানি দিতে লাগলাম। একটু একটু করে ফর্সা হচ্ছে আমি পানি দিচ্ছি আর আমার মনে হচ্ছে আমার পাশে দাঁড়িয়ে আছে ভাইয়া। আমি চারপাশে কাউকে না দেখে তারাতাড়ি পানি দিয়ে চলে এলাম ভেতরে। দিন হয়ে গেছে একদম। ভেতরে এসেই লতার সাথে দেখা হলো।

“কিরে ক‌ই গেছিলি?”
আমি বললাম, “বাইরে গাছে পানি দিলাম।”
“একা গেছিলি কেন? আমিও যেতাম সাথে‌।”
“সমস্যা নাই। রান্নার যোগার কর। মাংস বের করিস।”
“মাংস কেন বড় স্যার তো মাংস খায়না।”
“চাচা জানের জন্য না ইহান ভাইয়ের জন্য বলেছি।”
আমার কথা লতা অবাক হয়ে বললো,,
” ইহান ভাইজান রে ক‌ই পাইলি সে বাসায় নাই‌।”
‘কাল রাতে এসেছে।”
“কাল রাতে( অবাক হয়ে) কখন এলো? আমি তো দশটা পর্যন্ত জেগে ছিলাম তখন তো আসে নি‌।”
‘আরো পরে আসে।”
“তুই জাগানা পেলি কি করে নাকি? তোকে ভাইজান আগে বলেছিলো আজ আসবে।”
“আমাকে কি করে বলবে? আমার কি ফোন আছে।”
‘তাহলে?”
“আরে দরজা নিজেই খুলে এসেছে তার কাছে তো এক্সটা চাবি আছে।”
“হুম তাহলে জানলি কি করে আসছে?”
“উফ তুই আমায় পুলিশের মতো জেরা কেন করছিস? সকালে গিয়েছিলাম তাই দেখেছি।”
“কেন গিয়েছিলি ওই রুমে সকালে। ” সন্দেহ চোখে।
আমি রেগে চেঁচিয়ে বললাম, ” আমার ইচ্ছে হয়েছে গিয়েছি জেনেছি। সব কিছু তোকে কেন বলতে হবে? যা বলছি কর না হলে আমি করে নিচ্ছি‌‌।”
বলেই বালতি নিয়ে রেগে চলে গেলাম।

লতা গোমড়া মুখে দাঁড়িয়ে র‌ইলো। আমি এসে দেখি মাংস বের করে রেখেছে। আমি কফি করে ওর হাতে দিলাম দিয়ে আসার জন্য। লতা নিয়ে চলে গেল আর কিছু জিজ্ঞেস করেনি।
একটু পর কফি নিয়ে মুখটা বাংলার পাঁচের মতো করে এলো। আমি বিস্মিত হয়ে বললাম,
” কি হয়েছে?”
“তুই না গিয়ে আমাকে কেন পাঠালি। ভাইজান একটা ধমক দিছে আমারে বলেছে তোকে নিয়ে যেতে।”
আমি হকচকিয়ে গেলাম। ঢোক গিলে বললাম,
“আমি যেতে পারবো না।”
“কেন?”
‘এতো কেনোর উওর নাই ফেরত দিয়েছে ভালো হয়েছে। রেখে দে খেতে হবে না।”
‘এভাবে বলছিস কেন ভাইজান বকবে কিন্তু।”
“বকুক।”
লতা ভারী অবাক হলো আমার কথায়।
আমাকে বললো,,
“কি হয়েছে বল তো এভাবে বলছিস কেন? ভাইজান রাগ করবে বকবে জেনে ও যাবিনা।”
আমি ভয়ে কাঁপছি ভেতরে ভেতরে। ভাইয়ার সামনে আমি যেতে পারবো না। কিছু তেই না।
আমাকে ঝাকায়ে দিয়ে লতা আবার বললো।
আমি না করে দিলাম কিছুতেই যাব না। ও অবাক হয়ে আমার মুখ পানে তাকিয়ে র‌ইলো।
রান্না শেষ করেই চাচাকে খেতে দিলাম। সকাল সকাল খেতে বসে বললো,
“ইহান কখন এলো?”

আমি বললাম, “রাতে বোধহয়।আমি সকালে দেখেছি।”
মিথ্যা বললাম। চাচা খেতে খেতে ইহান ভাইয়ের অপেক্ষা করলো ভাইয়া এলো না তাই খাওয়া শেষ করে চলে গেলো অফিস এ। ভাইয়া গাড়ি নিয়ে এসেছে তাই সেটা নিয়ে গেলো। বাসায় একটা গাড়ি আছে সেটা ভাইয়া ইউস করে আসার পর থেকে তাই এখন খালি পেয়ে আর নিজের তারাতাড়ির জন্য নিয়ে গেলো।
আমি বারবার সিঁড়ির দিকে তাকাচ্ছি। ভাইয়া খেতে এলো না কেন? আমি কফি দেয়নি তাই? নাকি উঠেই নি।
ভাবলাম কিন্তু দেখার জন্য আর তার রুমের ধারের কাছেও গেলাম না‌। গোস্ত দিয়ে আমি আর লতা ভাত খেয়ে নিলাম। তাও ভাইয়া আসে নি লতা কে পাঠাতে চাইলাম ফাজিল যাবেনা বলে টিভি দেখতে বসলো।আমি যেতে ও পারছিনা আবার ভাইয়ার জন্য চিন্তা হচ্ছে খেতে কেন আসছেনা।
সারে এগারোটার সময় ভাইয়া নিচে এলো। হলুদ গেঞ্জি ও নীল ট্রাউজার পরে। চোখে মুখে রাগ স্পষ্ট তাকে দেখেই আমার ভয় বেড়ে গেলো। আমি পেছন ঘুরে নিজের রুমে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালাম। কিন্তু যেতে পারলাম না। ভাইয়া আমার হাত শক্ত করে ধরে আটকে বললো গম্ভীর গলায়।
“টেবিলে খাবার দে।”

এক চিলতে রোদ পর্ব ২৯

আমি বললাম,, ” লতা দেবে আমি ওকে বলছি। আমার হাত ছারুন।”
“আমি তোকে দিতে বলেছি।”
বলে হাত ছেড়ে দিলো আর চেয়ার টেনে বসলো।আমি কি করবো দ্বিধা দ্বন্দ্ব নিয়ে রান্না ঘরে গেলাম। তারপর মাথা নিচু করে খাবার প্লেট এ রাখলাম। ভাইয়া আমার দিকে যে হা করে তাকিয়ে আছে। আমি না তাকিয়ে ও বুঝতে পারছি। আমার হাত পা কাপছে। কাঁপা হাতে খাবার বাড়ালাম। তখন ভাইয়া বললো,,
” আমাকে ইগনোর করে কিন্তু তুই পার পাবিনা। তাই এটা করার কথা চিন্তাও করছিস না। নিজের অনূভুতি যেহেতু বুঝেছি। তোকে কি করে নিজের করতে হয় আমার জানা আছে। আমাকে এরিয়ে চলতে পারবিনা তাই এসব করিস না। ”
আমি হতবুদ্ধি হয়ে ভাইয়ার দিকে তাকালাম। সে আমার দিকে তাকিয়ে ছিলো।
আমি তাকানো মাত্রই বললো,, “আজকে ক্ষমা করলাম। আর কখনো জানি কফি দিতে অন্য কাউকে না দেখি। মাইন্ড ইট।”

ভাইয়া বলেই চোখ সরিয়ে খাবারে হাত দিলো। আমি আমার শুকিয়ে আসা ঠোঁট ভিজিয়ে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি। এই মানুষটি কে আমি চিনতেই পারছিনা। এতো পরিবর্তন।
আমি হাঁ করে তাকিয়ে আছি। হুট করেই আমার হা করা মুখে ইহান ভাই গুস্ত পুড়ে দিলো আমি চমকে উঠলাম। ভাইয়া ঠোঁট টিপে হেসে বললো,,
“হা করে কি বুঝাচ্ছিস? তোর আমার হাতে খেতে ইচ্ছে করছে। ওকে নে খাইয়ে দিলাম। চাইলে প্রতিদিন খাইয়ে দিতে পারি।”
আমি মুখ ভর্তি খাবার নিয়ে চোখ বড় বড় তাকিয়ে আছি। লোকটা পাগল হয়ে গেছে কি সব বলছে। কেমন করে হাসছে হাসিটা অবশ্য সুন্দর কিন্তু এসব ভালো লাগছে না একদম।
আমি হাত দিয়ে পিছন গিয়ে দাঁড়ালাম। খাবারের জন্য কথা বলতে পারছি না। তাই খাবার চিবুতে লাগলাম।ভাইয়া খাচ্ছে তো আমার দিকে তাকাচ্ছে। আমি অবাক চোখ তাকিয়ে আছি ভাইয়ার দিকে।
ভাইয়া আমার মুখের খাবার শেষ করতেই বললো আরো খাবি।

আমি সাথে সাথে না করে দিলাম। ভাইয়া নিজে খেয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বললো,,
“কাজ বাদ দিয়ে পরতে বস। পরিক্ষার আর আঠারো দিন আছে কিন্তু।”
আমি মাথা নাড়লাম। ভাইয়া আমার দিকে থেকে চোখ সরিয়ে পেছন ফিরে সিঁড়ির কাছে গেলো। আমি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে খাবার ঢাকতে লাগলাম। তখন ভাইয়া চেঁচিয়ে উঠে বললো,,
“একা না! ব‌ই নিয়ে আমার কাছে আয়। আমি পড়া দেখিয়ে দেবো।”
আমি চমকে উঠলাম। ভয় ও পেয়েছি ভেবেছিলাম ভাইয়ার চলে গেছে কিন্তু এতো দেখি যায় নাই।
আবার পড়ার জন্য তার কাছে যেতে বলছে। যার থেকে পালাতে চাই সে আরো কাছে আসছে উফফ

এক চিলতে রোদ পর্ব ৩১