এক চিলতে রোদ পর্ব ৩৩ || bangla valobashar golpo

এক চিলতে রোদ পর্ব ৩৩
Nondini Nila

ভাইয়া রুমে থেকে বেরিয়ে যেতেই আমি থপ করে বিছানায় বসে পরলাম। আমার সারা শরীর থরথর করে কাঁপছে। বুকের ভেতর ধুকপুক করছে। আমি চোখ বন্ধ করে বসে আছি নিজেকে শান্ত করতে। ভাইয়া যেমন দ্রুত গতিতে এসেছিলো তেমনি চলে গেছে। মাঝখানে থেকে আমার অবস্থা নাজেহাল করে গেছে।
আমার আর ড্রেস দেখা হলো না। ওই ভাবেই ভাঁজ করে আমার ব্যাগে ঢুকিয়ে দিলাম। এটার ভেতরেই আমার নতুন জামা কাপড় ভড়ে রাখি। ব্যাগের ভেতর ঢুকিয়ে রেখে আমি উঠে পরলাম দুপুরে রান্নার আয়োজন করতে হবে। আজকে আবার ঘর মুছতে হবে আমি আর লতা মিলে হাফ হাফ করে করব।
রান্নাঘরে এসে দেখি লতার ডাল ধুয়ে নিচ্ছে। আজ মুগের ডাল মাছের মাথা দিয়ে রান্না করা হবে। আমি এসে কাঁচামরিচ পেঁয়াজ কাটতে বসলাম। আমার হাত-পা এখনো কাঁপছে। ভাইয়া বলা কথাটা আমার কানে ফিসফিস করে বাজছে যেন এখনো ভাইয়াই বলছে। এসবের জন্য আমি অন্যমনষ্ক হয়ে বাম হাতের বুড়ো আঙুল কেটে ফেললাম। সাথে সাথে গলগল করে রক্ত বের হতে লাগলো। আমি আঙুল চেপে ঠোঁট কামড়ে ধরলাম ব্যাথায়। লতা ছুটে এসে বললো,,
“হায় হায় কি করলি একটু দেখে কাজ করবি না।
দিলি তো হাত কেটে।”

আমি হাত ধরে উঠে ব্যাসিং এ গিয়ে ধরলাম। রক্ত ধুয়ে ফিরে এসে মরিচ কাটতে বসলাম। লতা টেনে উঠিয়ে দিয়ে বললো,,
“পাগল হলি নাকি? এই কাটা হাত নিয়ে মরিচ করতে বসছিস তোর মাথা গেছে! উঠ আমি কেটে নেব এটা তুই অন্য কিছু কর।’
আমি নিঃশব্দে উঠে দাঁড়ালাম। কেন জানি কথা বলতে ইচ্ছে করছে না। মনটা ভাড় হয়ে আছে।
রান্না শেষ করে ঘর মুছতে উপরে চলে গেলাম। সব রুমে মুছে সিড়ির কাছে আসতেই লতা বললো ও মুছবে বাঁকি টুকু আমি রুমে এসে গোসল করে নিলাম।
খাবার টেবিলে দিতেই চাচি এসে খেয়ে নিলাম।ভাইয়া এলো সন্ধ্যায় কোথায় জানি গেছিলো। দুপুরের খাবার আর তার খাওয়া হলো না‌। চাচি সোফায় বসে আছে আর আমি তার পাশে বসে তেল লাগিয়ে দিচ্ছি। পরতে ও যেতে পারছিনা বলতেও পারছিনা। ছটফট করছি। লতা টিভি দেখছে ওর সন্ধ্যা থেকে টিভি না দেখলে হয়না চাচি এতো বকে তাও বসে পরেছে।
ভাইয়া সবুজ গেঞ্জি আর কালো ট্রাউজার পরে নিচে এলো চুল ঠিক করতে করতে। ড্রয়িং রুমে এসে আমাদের দিকে তীক্ষ্ণ নজরে তাকালো।আমি ভাইয়ার দিকে এক নজর তাকিয়ে চুল আঁচড়ে দিচ্ছি‌।
ভাইয়া গলার আওয়াজ বাড়িয়ে বললো,
“আমার খাবার দে ঊষা।”
চাচি বললো, “লতা ক‌ইরে ইহানকে খেতে দে‌।”
“লতাকে ডাকছো কেন?”
“কেন খাবি না।”
“খাবো কিন্তু আমার খাবার লতা না ঊষা দেবে।”
“ঊষা কেন দিবে?ও কাজ করছে দেখছিস না‌।”
“এসব কেন করাচ্ছো তাই তো বুঝছি না‌‌। আর মাত্র দশদিন আছে ওর পরিক্ষার আর তুমি ওকে দিয়ে এসব করাচ্ছো কেন?”

আরও গল্প পরতে ভিজিট করুন

‘তুই আমাকে কথা শুনাচ্ছিস কেন? আমার মাথা ব্যাথা করছিলো তাই তো।”
“তো লতা কে দিয়ে করাতে পারতে!”
“লতা কেন আমার মাথায় হাত দিবে‌। ঊষায় করবে সব করে পরতে পারলে পরবে না হলে নাই।”
“আম্মু পড়াশোনা করে কাজ করতে পারলে করবে নাহলে নাই‌। ঊষা আমার খাবার দিতে বলেছি তোকে উঠ আর তারাতাড়ি খাবার দে।তারপর আমার রুমে ব‌ই নিয়ে পড়তে বসবি।”
ভাইয়া এক দুমে বলে ফেললো। আমার চুল বেনি করা শেষ আমি চুপ করে দাঁড়িয়ে আছি এখন। চাচি ভাইয়ার রুমে পড়ার কথা শুনে চেঁচিয়ে উঠলো।
“কি তোর রুমে কেন পরতে যাবে?”
“আমি বলেছি তাই।”
” তুই বলেছিস কেন? ”
“আম্মু প্লিজ এতো প্রশ্ন করো না। আমি ঊষা পড়ানোর জন্য যেতে বলেছি।
‘তোর রুমে পরতে হবে কেন ওর কি রুম নাই?”
‘আছে কিন্তু সেখানে আমি নাই‌। ওর পড়া দেখার জন্য কাউকে দরকার তাই সেই কেউ আমি হয়েছি।”
“ইহান ঊষাকে তুই পড়াবি না।”
“তোমার সাথে আমি আর তর্ক করতে চাই না। ”
বলেই ইহান ভাই শক্ত চোখে আমার দিকে তাকালো। আমি তার তাকানো দেখে ভয়ে কেঁপে উঠলাম।
‘তুই এখনো এখানে দাঁড়িয়ে কেন আছিস?
আমি বলার আগেই চাচি বললো,
“ও যাবে না। লতা তোকে খাবার দেবে!”
ভাইয়া রেগে চাচির দিকে তাকিয়ে আমার দিকে তাকালো। তারপর আমার দিকে এগিয়ে এলো। আর আমার হাত শক্ত করে ধরে টেনে রান্না ঘরে নিয়ে এলো। পেছনে থেকে চাচি চেঁচিয়ে যাচ্ছে ভাইয়া তার কথা তোয়াক্কা করলো না।
আমার হাত ছেড়ে বললো,
“তারাতাড়ি খাবার নিয়ে আয়।”

বলেই চেয়ার টেনে বসে পরলো। আমি হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে আছি। চাচি রেগে চিৎকার করছে।আমি নরছি না ভাইয়া এমন কেন করলো। আমি খাবার নিয়ে যাচ্ছি না দেখে ভাইয়া আবার এলো আর ধমক সুরে বললো,
“কথা কি কানে যাচ্ছে না?”
আমি হকচকিয়ে মাথা তুলে তাকালাম অসহায় মুখ করে। আর বললাম,
“ভাইয়া আপনি চাচির সামনে এমন কেন করলেন? চাচি কতো রেগে গেছেন দেখেন চেঁচিয়ে কথা বলছে।”
“বলুক তোকে আমি যা করতে বলেছি কর।”
“চাচি আমাকে বকবে।”
আমার কথা শুনে ভাইয়া রাগ কমিয়ে আনলো আর দুহাতে আমার গাল ধরে বললো।
“এতো ভয় পাচ্ছিস কেন? আমি আছি তো।”
আমি ভাইয়া দিকে তাকিয়ে র‌ইলাম। তখন চাচির আওয়াজ এদিকে আসতে লাগলো ভাইয়া আমাকে ছেড়ে দিলো। চাচি আমার কাছে এসে আমি সহ ভাইকে বকছে ভাই চাচিকে টেনে নিয়ে গেলো ওই ভাবেই। আর আমি ওইখানেই দাঁড়িয়ে তাকিয়ে আছি। চাচি আমার কি যে করবে এর জন্য আমাকে। ভাবতেই ভয়ে হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছে।
মিনিট পাঁচেক পর সব শান্ত হয়ে গেলো। চাচির চেঁচামেচি আর শুনা যাচ্ছে না। আমি বিস্মিত হয়ে তাকিয়ে আছি কান খাড়া করে চাচির আওয়াজ আসছে না।
ভাইয়া এগিয়ে এলো আর আমাকে এখনো দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বললো,
“আজ রাত এখানে দাঁড়িয়ে কাটানোর ইচ্ছা আছে নাকি।”
ভাইয়ার কথায় আমি হকচকিয়ে নড়েচড়ে দাঁড়ালাম।
“এখনো খাবার দিস নি এতো ঘাড়তেরা কেন তুই? আর পড়ার ইচ্ছে কি নেই আজীবন অন্যের চাকর হয়ে কাটানোর ইচ্ছে নাকি। লেখাপড়া করে নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে তাদের মুখের উপর জবাব দিতে শিখবি না।”

আমি বিস্মিত হয়ে তাকিয়ে আছি। ভাইয়ার কথা গুলো ভালো লাগছে। ভাইয়া চেয়ারে টেনে বসলো আমি খাবার এনে টেবিলে রাখলাম।
ভাইয়া প্লেটে খাবার দিয়ে আমি নিচু সুরে বললাম,
” চাচি থেমে গেলো কি করে?”
ভাইয়া মেখে এক লুকমা খাবার মুখে দিতে গিয়েও থেমে আমার দিকে তাকালো কথা শুনে।
আর বললো,
“সেসব তোর জানার দরকার নাই‌।”
আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি। ভাইয়া আর তাকালো না খেতে লাগলো।
আর বললো,
“সব রেখে ব‌ই নিয়ে আমার রুমে যা আমি খেয়ে আসছি।”
“একটু পর তো চাচা চাচি দুজনকে খেতে দিতে হবে।”
“লতা দেবে তোকে যা বলেছি তাই কর!”
গম্ভীর গলায় বলল।
আমি কেঁপে উঠে পেছনে ফিরে চলে আসতে নিলে ভাইয়া আবার ডেকে উঠলো,
আমি দাড়াতেই বললো।
“তুই ও খেয়ে যা।”
আমি না করলাম।
“কেন?”
“পরে খাবো।”
“পরে না এখন খেয়ে নে।”
আমি বললাম,, এখন আমার খিদে পায়নি।আপনি খান‌।”
বলেই চলে এলাম।

ভাইয়া রুমে বিছানার বসে পড়ছি।প্রথম দিন আমি বসতে চাইছিলাম না বিছানায় কিন্তু ভাইয়ার জোরের কাছে আমি না বসে পারিনি। ভাইয়া দশ মিনিট পর এলো। ইংরেজি একটা প্যারা গ্রাফ লিখতে দিল। এটা আমি মুখস্ত পারি এজন্য ঝটপট লিখে ফেললাম। দু’ঘণ্টা পর ভাইয়া খাওয়ার জন্য বলল আমি নিচে এসে চাচির কাছে কয়েকটা বকা খেলাম তাও আড়ালে। তারপর মুখটা মলিন করে খাবার খেয়ে ভাইয়ার রুমে গেলাম। ভাই তখন ফোন টিপছিলো। আমি রুমে যেতেই আমার দিকে তাকিয়ে আমার মলিন মুখ দেখে বলল কি হয়েছে আমি কিছু না বলে বই নিয়ে চলে এলাম। ভাইয়া জন্য যে আমাকে বকা খেতে হয়। এজন্য ভাইয়ের উপর আমার চাপা রাগ তৈরি হচ্ছে।
রমে এসে দরজা বন্ধ করে নিজে পড়তে লাগলাম। আমাকে ভালো করে পড়তে হবে। ভাবলাম নিজেই মনোযোগ দিয়ে পড়তে লাগলাম। পরদিন ইলা আপু আসলো।
পড়ার যেন সময় পাইনা এদিকে আমার পরীক্ষার সময় ঘনিয়ে আসছে। আর মাত্র আট দিন আছে।
বিকেলে ভাইয়া আমাকে কোচিং এ নিয়ে এলো এ নিয়ে ও বাসায় অশান্তি। কিন্তু ভাইয়া সেসব এ তোয়াক্কা করছে না। আমি পরেছি জ্বালায় কোন দিকে যাব। এদিকে চাচির বকা আবার ভাইয়ার ধমক দুজনের জন্য পাগল হয়ে যাচ্ছি।

তাই আজ রাতে যখন ভাইয়া আমাকে পড়তে নিজের রুমে নিয়ে যেতে এলো আমি আমার রুমে বসে ছিলাম। আমি কঠিন কথা শুনিয়ে দিলাম।
“আপনি এমন করে আমাকে কেন চাচির কাছে বকা খাওয়াচ্ছেন।ভাইয়া আপনার এসবের জন্য আমি খুব কষ্ট পাচ্ছি এতো কষ্ট কেন দিচ্ছেন?এদিকে আপনি আপনার কথা না শুনলে আমাকে ধমকান ওদিকে চাচি আপনার কথা শুনলে আমাকে বকে আমি কোন দিকে যাব বলেনতো আমাকে আমার কথা ছেড়ে দিন না প্লিজ।”
কথাগুলো বলতে বলতে আমার চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়তে লাগল খুব কষ্ট হচ্ছে আমার। আমাকে কতো বাজে কথা বলে আমি নাকি ভাইয়াকে নিজের রুপে নিজের বস করেছি। কিন্তু এইসব কিছুই করিনি আমি। নিজে থেকে আমার কাছে আসে ভাইয়া আমি কি কিছু করতে বলেছি।তাকে বলিনি তো। তাহলে কেন এত কথা শুনতে হবে আমাকে।কষ্টে আমার মুখ দিয়ে চাচীর বলা সব বাজে কথা বেরিয়ে এলো আমি সব অভিযোগ সুরে সুরে ভাইয়াকে বললাম।
ভাই সব শুনলো।‌কিন্তু আমাকে কিছু বলল না আমাকে রাগ ও দেখালো না আমি কথা শেষ করে চুপ করে দাঁড়িয়ে আছি আর ফুপাচ্ছি‌। ভাইয়া আচমকা আমার হাত ধরে টেনে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো আর আমার চোখের পানি মুছে দিয়ে বলল,
“আম্মু তোকে এসব কথা বলেছে?”
আমি ভাইয়ার দিকে তাকাচ্ছি না নিচে দিয়ে তাকিয়ে চোখের জল ফেলছি। ভাইয়া বললো,
“তুই বলিসনি কিছু?”

আমি তাও কথা বলতে পারছি না আমার শুধু কান্না পাচ্ছে আমি ফুঁপিয়ে কাঁদছি।ভাইয়া নিরাশ হয়ে আমার মাথা টেনে নিয়ে বুকের সাথে চেপে ধরলো। আমি সরতে চাইলে শক্ত করে ধরে র‌ইলো। আমি ধরতে পারছি না। তাই বাধ্য হয়ে ভাইয়ার বুকের সাথে লেপ্টে ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগলাম। ভাইয়া আমার মাথা হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।
আমি কেঁদে ভাইয়ার গেঞ্জি ভিজিয়ে দিলাম। অনেক সময় এভাবেই কেটে গেলো আমার কান্না কমে আসতেই ভাইয়া একটা কান্ড ঘটিয়ে ফেললো।
যা আমি কল্পনাও করিনি।আমি চোখ বড় বড় তাকিয়ে আছি।বিষ্ময়ে হতভম্ব হয়ে গেছি আমি।

ভাইয়া আমার হাত টেনে রুমের বাইরে নিয়ে এলো আর চেঁচিয়ে চাচি কে ডাকতে লাগলো। একটু আগেই সবাই খেয়ে নিজের রুমে গেছে এখন ডাক শুনে বিরক্ত হয়ে রাগে গজগজ করতে করতে চাচি এলো। কিন্তু ছেলেকে কিছু বলবে না নিজের ই রাগ লাগছে। চাচির পেছনে চাচা ও এলো ভাইয়ার এমন চিৎকার শুনে না এসে পারলো না।
ইলা আপু এখনো বাসায় আসেনি‌। তার আজ রাতে পার্টি আছে। লতা দৌড়ে এলো।চাচি এসে আমার হাত ভাইয়ার হাতে দেখে গোল গোল চোখ করে আমাদের হাতের দিকে তাকিয়ে আছে। আমি চমকে মাথা নিচু করে আছি। হাত ছুটানোর চেষ্টা করেও পারিনি তাই এখন চেষ্টা বন্ধ করে দিছি।
কিন্তু আমি বুঝতে পারছি না ভাইয়া এমন করছে কেন? চাচি কে এমন চেঁচিয়ে ডাকলো কেন আর সবার সামনে এভাবে আমার হাত‌ই বা ধরে রেখেছে কেন?

চাচা ও অবাক হয়ে আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে। আমি লজ্জায় কি করবো বুঝতে পারছি না।
নিচু কন্ঠে ভাইয়ার উদ্দেশ্যে বললাম,,” ভাইয়া আমার হাত ছারুন প্লিজ।”
ভাইয়া আমার কথা কানেও নিলো না তাকালো ও না আমি ভয়ার্ত চোখে তাকিয়ে আছি চাচির দিকে তিনি কড়া চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছি। যেন চোখ দিয়েই গিলে খাবে। আমি ভয়ে চোখ নামিয়ে নিলাম। ভাইয়া তখন বলে উঠলো,
” তুমি ঊষাকে বলেছো? ও আমাকে ওর জালে ফাঁসিয়েছে। আমাকে বস করেছে। এই সব কিছু করেছে এই বাড়ির বউ হ‌ওয়ার জন্য? ও ওর রুপ দেখিয়ে আমাকে নিজের করতে চাইছে ।এসব তুমি বলেছো?”
ভাইয়া চেঁচিয়ে বলে উঠলো।
আমি সহ বাসার সবাই কেঁপে উঠলো ভাইয়ার চেঁচিয়ে বলা কথা শুনে।
চাচি এবার ভয় পেয়ে গেছে কারন চাচাও তার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
‘এসব কি ইলিনা তুমি ঊষা কে এসব বলেছো?”
চাচা আমাকে দেখতে না পারলেও এসব মেনে নিচ্ছে না।তিনি আমাকে সহ্য না করলেও কখনো খারাপ কথা বা ভালো কথাও কোনটাই বলেন না। আজ তিনি চাচির এসব কথা শুনে চমকে উঠেছে। ভাইয়া চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে আমার হাত ধরে চাচা চাচিকে প্রশ্ন করছে দেখে।চাচি কিছু বলছে না চুপ করে মুখটা বাংলার পাঁচের মতো করে রেখেছে।
“কি হলো কথা বলছো না কেন? তুমি এই বাজে কথা ঊষাকে নিয়ে কি করে বললে? ওকে আমি সহ্য করিনা ঠিক কিন্তু তাই বলে এসব আমি মানতে পারছিনা।”
চাচি কথা বলছে না দেখে ভাইয়া বললো,

“আম্মু কে জিজ্ঞেস করে লাভ নাই। তিনি এখন কিছু বলবে না।এমনিতেই ঊষাকে বাসার কাজের লোক করে রেখেছো তোমরা। তার উপর অত্যাচার তো আছেই এখন আবার আরেক অপবাদ যেটা ও করেই নি। আম্মু, আব্বু শুনো ঊষা আমাকে ওর জালে ফাঁসায় নি আমি নিজে থেকেই ওর মায়ায় ফেঁসে গেছি।ও তো আমাকে ইগনোর করে সব সময় আমার থেকে দূরে লুকিয়ে থাকে। আর আমি জোর করে ওর কাছে যাই।কারন আমি ঊষাকে ভালোবাসি। ঊষা নয়। আম্মু তোমার বুঝতে ভুল হয়েছে।ঊষা আমার পেছনে ঘুরে না আমি ওর পেছনে ঘুরি। তাই ওকে দোষারোপ না করে আমাকে যা বলার বলো। আর তোমরা যাই বলো না কেন আমি ঊষাকে ছারতে পারবো না। বিকজ আই লাভ হার সো মাচ। ওকে আমি বিয়ে করবো।‌আর এতে যদি তোমাদের মত না থাকে তাও আমি এটাই করবো। বোনের দোহাই দিতে পারবে না কারণ আমি ওকে কখনো বোন ভাবিনি। প্রথম দেখেই ওকে নিয়ে আমার চিন্তা ভাবনা ছিলো অন্যরকম। যাকে আমি আমার হৃদয় এ জায়গা দিয়েছি। আজকের পর থেকে ও আমার হবু বউ এই বাসার কেউ আর ওকে দিয়ে কাজ করাবানা কাজের লোকের মতো।যদি তোমাদের কাজের লোক লাগে বলো আমি এনে দেবো। ঊষাকে আর কেউ অপমান করবা না।”
এক নিঃশ্বাসে কথা বলে থামলো ভাই। তার বোধহয় পানি পিপাসা পেয়েছে। সে লতার দিকে তাকিয়ে ইশারা করলো লতা দৌড়ে পানি এনে দিতেই একহাতেই ঢকঢক করে পানি শেষ করে ফেললো।
এদিকে তার কথা শুনে আমি হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছি তার দিকে। ভাইয়া পানি খেয়ে একনজর আমার দিকে তাকিয়ে সামনে তাকালো।
আমি স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে ছিলাম এবার ভয়ার্ত চোখে সামনে তাকালাম। চাচি ও চাচা দুজন স্তম্ভিত হয়ে তাকিয়ে আছে চোখ গোল গোল করে।দুজনের চোখে মুখে রাগ স্পষ্ট।
চাচির আগে এবার চাচা বলে উঠলো,,
“এসব কি বলছিস ইহান?”
রাগে চাচার কপাল কুঁচকে এসেছে।তিনি হতবাক করা শুনে। কিন্তু তার এই কথা গুলো একটু ও পছন্দ হয়নি।

ভাইয়া বললো,
” হুম আব্বু আমি ঠিক বলছি। আমি ঊষাকে ভালোবাসি।ওকে আমি বিয়ে করবো। কিন্তু এখন না ওর আঠারো বছর হলে।এখন আমি এই মুহূর্তে ওকে নিজের হবু বউ এর স্বীকৃতি দেবো যাতে তোমরা বাজে কথা বলতে না পারো।”
চাচা বললো,” মানে কি করতে চাইছিস তুই? তুই কি ভুলে গেছিস ও তোর বোন সম্পর্কে তাকে তুই….
ভাইয়া কথা শেষ করতে দিলো না। নিজে বলে উঠলো,,
“প্লিজ আব্বু বার বার বোন বলোনা। ও আমার মায়ের পেটের বোন না তাই ওকে আমি বিয়ে করতেই পারবো।আর আমি ওকে বোন ভাবিনি কখনো কতো বার বলবো।”
এবার চাচি বললো,
“তোর ভাবতে হবে কেন ওর তোর বোন?”
“তাই নাকি তো বোন কেন বাসার কাজের লোক বানিয়ে রাখার সময় মনে ছিলো না। আর ও আমার বোন হলে ইমা ইলার মতো থাকতো। তাই ও আমার বোন না ব‌উ, হবু বউ।”
“কখনো না। এই ফকিন্নির বাচ্চারে আমি কখনো ব‌উ মানবো না। ওকে তুই বিয়ে করতে পারবি না!”
ভাইয়া বললো,” ফকিন্নি ও নাকি তুমি?”
চাচি চেঁচিয়ে উঠলো,,”তুমি আমাকে ফকিন্নি বললি?”
“না তুমি যা বলেছো তা শুধু দেখালাম।”
“এই মেয়ে তোর যোগ্য না।ওকে আমি ব‌উ মানবো না।”
“তোমার মানতে হবে না আমার বউ আমি মানলেই হবে।”
বলেই ভাইয়া আমার হাত ছেড়ে দিলো। আমি থমকে দাঁড়িয়ে আছি মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছে না।আমি অতিরিক্ত শক খেয়ে পাথর হয়ে গেছি।
নরতে ও পারছি না কথা ও বলতে পারছি না।

এক চিলতে রোদ পর্ব ৩২

হুট করেই ভাইয়া নিজের হাত থেকে একটা আংটি খুলে আমার অনামিকা আঙ্গুলে পরিয়ে দিলো।
আমি হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছি ভাইয়ার মুখের দিকে।চাচি চেঁচিয়ে বকাবকা করছে। এবার ছুটে এলো আর আমার হাত টেনে আংটি খুলার চেষ্টা করলো। আমি হাত পা ছেড়ে দাঁড়িয়ে আছি যে যেদিকে টানছে যাচ্ছি। আংটি খুলছে না কারণ এটা আমার আঙুলে ঢুকাতে ও কষ্ট হয়েছে
ভাইয়ার।ছোট হয়েছিলো বোধহয়। চাচি আংটি খুলতে না পেরে রেগে আমার গালে হাত উঠানোর চেষ্টা করলো আমি ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেললাম।
কিন্তু হাত আমার গালে আসার আগেই ভাইয়া ধরে নিলো আর আমাকে টেনে এক হাতে জরিয়ে বললো।
“সাবধান আম্মু আমার ব‌উয়ের গায়ে হাত তোলার চেষ্টা করবেনা। নাহলে এর ফল ভালো হবে না।”
“তুই ওই মেয়ের জন্য আমাকে চোখ রাঙাচ্ছিস?”
“হুম।”
হবেই ভাইয়া আমাকে টেনে রুমে নিয়ে এলো। চাচি পেছনে থেকে চেঁচামেচি করতেছে। সাথে ইলা আপুর আওয়াজ এলো সে এসে এসব দেখে অবাক লতা তাকে সব বলছে। ভাইয়া রুমে এসেই শব্দ করে দরজা বন্ধ করে দিলো।
আমি থপ করে বিছানায় বসে পরলাম।

এক চিলতে রোদ পর্ব ৩৪