এক চিলতে রোদ পর্ব ৩৪ || bangla love story

এক চিলতে রোদ পর্ব ৩৪
Nondini Nila

আমার মাথা ভনভন করছে। চোখের সামনে এতো সব স্তব্ধ কর ঘটনা দেখে আমি হতভম্ব। বিষ্ময়ে আমি হতবাক হয়ে গেছি।ভাইয়া এমন একটা কান্ড ঘটিয়ে ফেলবে আমার কল্পনায় বাইরে ছিলো।
কি থেকে কি হয়ে গেলো আমার হাতে ঝলমলে আংটির দিকে তাকালাম। এটা ভাইয়া আমাকে পরিয়ে দেয়েছে। ভাবতেই আমার সারা শরীর কাঁটা দিয়ে উঠলো। ভাইয়া এটা আমাকে পরিয়ে দিলো।
চাচির মুখটা দেখার মতো হয়েছিলো। যেন আমাকে চিবিয়ে খাবে। চাচা চাচি রাগী চোখে আমার দিকে তাকিয়ে ছিলো।
কাল হয়ে গেলো সব কিছু উল্টা পাল্টা। ভাইয়া সবার সামনে এতো সব কথা বললো।এর পরিণাম কি হবে মাথা খারাপ হচ্ছে আমি পাগল হয়ে যাচ্ছি এতো সব ভেবে।
আমার সমস্ত চিন্তাভাবনা নিমিষেই দূর হয়ে গেলো ভাইয়ার কন্ঠ শুনে। ভাইয়া বলছে,
“এমন করে বসে থাকার জন্য তোকে রুমে আনিনি‌।”
আমি বিস্মিত হয়ে মাথা তুলে তাকালাম। সাথে চোখের পলক পরলো আর চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে গাল বেয়ে পারলো।

ভাইয়ার কথা কানে আসছে না আমার শুধু ভাইয়ার বলা কথা মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে।
আমি অবাক চোখে তাকিয়ে আছি। ভাইয়া তার হাতে থেকে ব‌ই কলম তুলে কিন্তু দাগ দিলো আর আমার সামনে দিয়ে বললো,,
“এভাবে তাকিয়ে না থেকে পড়তে বস।পরীক্ষার আর ছয়দিন আছে।”
আমি চোখের পলক ফেলছি না। তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে আছি। ভাইয়া বিরক্ত হয়ে বিছানায় অপর প্রান্ত থেকে এগিয়ে আমার কাছে বসলো। আর নিজের হাত দুটো বাড়িয়ে আমার গাল মুছে দিলো।
আর নরম কন্ঠে বললো,” এভাবে বসে আছিস কেন তুই কি খুশি না। আমার ব‌উ হবি বলে। ”
আমি হকচকিয়ে তাকিয়ে আছি।
ভাইয়া কন্ঠটা একটু গম্ভীর করে বললো,
” খুশি না হলেও আমার ব‌উ ই তোকে হতে হবে।বিকজ আই লাভ ইউ। এখন আমি এসব নিয়ে কথা বলতে চাইছি না। পরতে হবে তোকে আর কাজ করবি না।”
আমি কিছু বলতে মুখ খুলতে যাব‌ ভাইয়া বলে উঠলো,
“আমি তোর মুখে এখন কিছু শুনতে চাইছি না।মন দিয়ে পরতে বস। যা বলার পরিক্ষার পর বলিস। এখন পড়া ছাড়া অন্য কিছুর প্রতি তোর খেয়াল আমি বরদাস্ত করবো না।”
আমি অসহায় মুখ করে তাকিয়ে আছি। ভাইয়া আগের জায়গায় গিয়ে ব‌ই নিয়ে বাংলা ব্যাকরণ লিখতে বলছে। শক্ত চোখে তাকিয়ে আছি আর কিছু বলার সাহস পেলাম না। কিন্তু পড়ায় মন দিতে পারছি না এতো কিছুর পর পড়া আমার হচ্ছে না।
তখন ভাইয়া বললো,

“আমি জানি এতো সব ঘটনায় তুই চমকেছিস। সব কিছু তোর মাথার উপর দিয়ে গেছে।এসব তুমি ভাবসনি। এসবের জন্য তোর মনে অনেকটা অস্বস্তি করছে। কিন্তু আমি চাইনা এসব ভেবে পড়ায় গাফিলতি করিস। জীবনে ঘুরে দাঁড়াতে হলে নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে। তার জন্য লেখাপড়া করাটা ইম্পর্টেন্ট। নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে সবাইকে তোর যোগ্যতা দেখাতে হবে এসব কি তুই চাস না। নিজেকে গড়ে তুলতে। আজকের ঘটনা নিয়ে তোর মনটা খারাপ জানি তুই আমাকে ভাই ভাবিস তাই হয়তো এমনটা কিন্তু আমি তোকে আমার মনের কথা আগেই জানিয়েছি। আমি জানি তুই একটু হলেও বুঝিস আর আমাকেও ভালোবাসিস কিন্তু বুঝতে পারছিস না। কিন্তু একসময় বুঝবি সমস্যা নাই। নিজের ভালো চাইলে পড়া শুরু কর।”
ভাইয়া দিকে তাকিয়ে ছিলাম কথা শেষ হতেই আমি ব‌ই হাতে নিলাম।
সত্যি আমাকে পড়তে হবে এসব ভেবে নিজের জীবন আমি অন্ধকারে এ ঠেলতে পারবোনা। আমাকে নিজেকে বড় করতে হবে।
আমি পড়ায় মনোযোগ হয়ে গেলাম ভাইয়া নিজে গার্ড করে পড়ায় কোচিং শেষ হয়ে গেছে। ভাইয়া সেদিনের পর আর এসব নিয়ে কথা বলেনি। শুধু শিক্ষক এর মতো আমার লেখা পড়ার খেয়াল রেখেছে সাথে আরেকটা জিনিস তাকে বাসায় ই দেখা যায় সব সময়। কলেজ এ ও যায় না‌।
বাসায় প্রতিদিন চেঁচামেচি লেগেই থাকে সবটা ইলা আপু আর চাচির করা কেউ আমার সাথে লাগতে আসতেই পারে না ভাইয়া ছায়ার মতো পাশে আছে। আমাকে কাজ ও করতে হয়না‌। পরদিন ই একজন কাজের লোক এনেছে ভাইয়া যে লতার সাথে কাজ করে।লতা কে কম করতে হয়। আমার খাবার রুমে নিয়ে আসে লতা সব সময়। এই নিয়ে ও চেঁচিয়ে বলে অনেক কথা।

আরও গল্প পরতে ভিজিট করুন

আমি সারাদিন রুমে থাকি। পড়ার জন্য। এদিকে মন দিতে পারিনা পরিক্ষার আর এক দিন আছে পরশু থেকে পরিক্ষা প্রথম দিন বাংলা। তো আজকে এডমিট কার্ড আনতে স্কুল এ যাব ভাইয়ার সাথে। আমি একা যেতে চাইছিলাম কিন্তু ভাইয়া নিয়ে যাবে বললো। বললেও সে কথা শুনে না। তাই তার সাথেই যেতে হবে।
রুমে থেকে বের হতেই চাচির চিৎকার শুনলাম। সব সময় আমাকে নিয়ে চেঁচামেচি করে। আজ ভাইকে নিয়ে করছে তাকে বকছে।
ভাইয়া দাঁড়িয়ে ছিলো আমার জন্য। আর চাচির বকা খাচ্ছিল। আমাকে আসতে দেখেই আর কাছে চলে এলো চাচি তখন চেঁচিয়ে বললো,
“ওই রাক্ষসীর জন্য তুই চাকরি ছেড়ে দিলি সব শেষ করে দিবে রাক্ষসী। আমার ছেলেকে আমার থেকে কেড়ে নিয়েছে। এখন ওকে নিঃশ্ব করে দিবে।”
চাচির কথায় আমার চোখ দুটো ছলছল করে উঠলো। কান্না গলায় ধলা পাকিয়ে এলো।ভাইয়া রেগে একবার চাচির দিকে তাকিয়ে আমার হাত ধরে টেনে বাইরে চলে এলো,
গাড়ি বসে আছি। আমি ফুঁপিয়ে কাঁদছি।
ভাইয়া বিরক্ত হয়ে ধমক দিলো,

“সব সময় এমন কাঁদিস কেন বুঝিনা মুখের উপর কিছু বলে দিতে পারিসনা।এতো চোখের জল কোথায় থেকে আসে তোর আল্লাহ জানে।”
ভাইয়া রেগে গাড়ি থামিয়ে দিলো।
আমি চমকে তাকালাম, “আর একটু কাঁদলে থাপ্পড় দিয়ে গাল লাল করে দিবো।”
চরম রাগ নিয়ে বললো, আমি মাথা নিচু করে কান্না থামানোর চেষ্টা করতে করতে বললাম,
“আপনি চাকরি ছেড়ে কেন দিছেন?”
“আমার ইচ্ছা তাই।”
“কিন্তু চাচি তো ভাবছে আমার জন্য।”
“ভাবতেই পারে আর সবার ভাবনা ঠিক এটা তো না। আমি জানি আমি কেন এটা করেছি?”
আমি ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে র‌ইলাম। ভাইয়া বললো,
“কখনো আমার সামনে এনে নাক মুখ লাল করে কাদবি না।”
আমি চমকে উঠে বললাম, কেন ?
“আমার রাগ লাগে।”
আমি চমকে তাকিয়ে আছি। আমি কাঁদলে রাগ কেন লাগে?
‘তুই ওমন কিউট করে আর আমার সামনে কাদবি না। কাঁদলে তোর গাল লাল হয়ে যায় মন চায় গাল টেনে দেয়। ঠোঁট কামড়ে ধরে কাঁদিস আমার অনেক অনুচিত কাজ করে ফেলতে ইচ্ছে করে। নিজের কন্ট্রোল হারিয়ে ফেলতে বসি।”
আমি হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছি। ভাইয়ার কথা শুনে আমার কান্না থেমে গেছে। আমি অবাক চোখে তাকিয়ে আছি। ভাই নিজের হাতে আমার নাক টিপে ধরে বলে,
“নাক টিপে ধরতে ইচ্ছে করে কাঁদলে ওমন কিউট করে নাক টানিস একদম পিচ্চি মেয়ে লাগে দেখতে।”

এক চিলতে রোদ পর্ব ৩৩

কথা শেষ করেই গাড়ি স্টার্ট দিলো।আমি বড় চোখ করে তাকিয়ে আছি। ভাইয়া আর তাকায়নি।
স্কুলে এসে আমার একটা বান্ধবী ওর সাথে দেখা হলো। এতো দিন পর আমাকে দেখে নিজের সাথে মিশিয়ে জরিয়ে ধরলো‌।ভাইয়াকে দেখে জিজ্ঞেস করলো কে?
আমি বললাম ও কেমন করে জানি তাকালো। আমি ওর সাথে ক্লাস রুম এ চলে এলাম। ভাইয়া বাইরে থেকে অফিস রুমে চলে গেলো। আর সেখানে থেকে আমাদের পরিক্ষা দিতে যাওয়ার কথা শুনলো পরিক্ষা হবে অন্য স্কুল এ। আমাদের স্কুল থেকে একঘন্টার রাস্তা।
সবার যাওয়ার জন্য বাস ঠিক করেছে। নিয়ে যাবে নিয়ে আসবে। ভাইয়া সেটা ঠিক করে এলো টাকা দিয়ে এলো। আমি জানতে পারলাম। আমাকে পিয়ন মামা ডেকে নেওয়ার ভাইয়ার আসার কারণ বুঝতে পারলাম এখ‌ন অফিস থেকে আমার এডমিট কার্ড দিলো। তারপর চলে আসতে হলো।আর কি?
বাসায় এসে ইমা আপু আর রিফাত ভাইকে দেখলাম। আপু আমাকে দেখে জরিয়ে ধরলো। আমি ভয়ে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি‌ ভাইয়া যা সব করেছে তারপর আপুও কি সবার মতো? চাপা কষ্ট পেতে লাগলাম কিন্তু আপু অবাক করে দিয়ে ভাইয়াকে জড়িয়ে বললো,,

“তুই ঊষা কে ভালোবাসিস। বিয়ে করতে চাস ওর পাশে আছিস শুনে এতো খুশি হয়েছি কল্পনা করতে পারবি না‌। তোর এই সিদ্ধান্ত এ আর কেউ পাশে না থাকলেও আমি আছি। কিন্তু চাকরি কেন ছারলি?”
আপুর চোখে মুখে খুশির ঝিলিক কেন জানি এটা দেখে আমার মন থেকে বড় একটা নিঃশ্বাস বের হলো। প্রশান্তি হতে লাগলো।
“আমার ইন্জিনিয়ার এ জব হয়েছে।”
“সত্যি”
অবাক হয়ে বললো আপু।
ভাইয়া হাতের মিষ্টি দেখিয়ে বললো।
“এটা দেখে বুঝে নে।”
চাচি এখানেই ছিলো সেও খুশি হয়ে এগিয়ে এলো। আমি ছিলাম তাই আমাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে ভাইয়ার কাছে গেলো।
আমি পরতে পরতে বাঁচলাম।
আপু বিকেলে চলে গেলো।
প্রথম পরিক্ষার দিন ভাইয়া আমার সাথে বাসে এসেছে।ভাইয়া দুইসিটের টাকা দিয়েছে তাই সমস্যা হয়নি।সারা রাস্তা আমি চিন্তা ছটফট করেছি। ভাইয়া আমার একহাত ধরে বুঝিয়েছে।
ঠান্ডা মাথায় যেন পরিক্ষা দেয়। আমি ভাইয়ার হাত খামচে ধরে গাড়ি থেকে নেমেছি। ভাইয়া আমার কাঁপা হাতে চুমু খেয়ে সাহস দেয়। আমি ভেতরে চলে যায়। গেটের বাইরে ভাইয়া দাঁড়িয়ে ছিলো।
প্রথম পরিক্ষা ভালোই হলো আমি খুশি মনে বের হয়ে ভাইয়ার ক্লান্ত মুখ দেখলাম। ঘেমে একাকার হয়ে রোদ্রের তাপে দাঁড়িয়ে আছে একহাত কপালে দিয়ে আমি এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে তার দিকে এগিয়ে এলাম।

খুব মায়া হলো ভাইয়ার জন্য আমার। এতো কষ্ট করে এখনো দাঁড়িয়ে আছে আমার জন্য।আমার মুখটা ছোট হয়ে গেলো।
আমি কাছে আসতেই ভাইয়া তার ক্লান্ত মুখেও হাসি টেনে বলে,
“পরিক্ষা কেমন হলো? সব প্রশ্নের উওর দিয়েছিস তো?”
আমি না চাইতেও ভাইয়ার গাল স্পর্শ করলাম। তিন ঘন্টা দাঁড়িয়ে ছিলো ভাইয়া আমার জন্য এতো রোদ্রে ভাবতেই ভেতরটা কষ্টে ফেটে যাচ্ছে।
ভাইয়া হকচকিয়ে কথা অফ করে হাতের দিকে তাকালো। আমি মায়া ভরা চোখে তাকিয়ে বললাম,
“আপনি এতো সময় দাঁড়িয়ে ছিলেন কেন? চলে যেতেন। আপনার তো খুব কষ্ট হয়েছে এভাবে দাঁড়িয়ে কেন ছিলেন?”

এক চিলতে রোদ পর্ব ৩৫